বর্ষায় শাক খাওয়ায় সতর্কতা

মো. ইকবাল হোসেন 
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৪, ০৭: ৫৪

আমাদের দেশ ষড়্ঋতুর। ঋতুর ভিন্নতার কারণে আমাদের খাদ্যে বৈচিত্র্য বেশি। এখানে ছয় ঋতুতে আলাদা আলাদা খাদ্যের উপকরণ পাওয়া যায়। এগুলোর প্রতিটিই পুষ্টি উপাদানে পরিপূর্ণ। এই খাবারগুলো প্রতিটি ঋতুতে আমাদের শরীরকে রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম।

অন্য সব ধরনের খাবারের পাশাপাশি, বর্ষায় শাকসবজিতেও বৈচিত্র্য আসে। এ সময় পটোল, ঢ্যাঁড়স, করলা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, বরবটি, চালকুমড়া, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, কচুশাক, কলমিশাকসহ অনেক শাকসবজি পাওয়া যায়। এগুলো আমাদের শরীরের সব ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণ করে।

বর্ষাকালে এমনিতেই পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেশি থাকে। এ সময় আবহাওয়া স্যাঁতসেঁতে হওয়ার কারণে শাকসবজির মাধ্যমেও কিছু রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।

শাকে কী সমস্যা হতে পারে
বর্ষাকালে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজাতীয় জীবাণুর আধিক্য বেশি থাকে। এদের বেশির ভাগই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া বর্ষাকালে বিষাক্ত পোকামাকড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এসব পোকামাকড় শাকের কাণ্ড ও পাতায় বাসা বাঁধে এবং ডিম পাড়ে; বিশেষ করে যেসব শাকের গাছ মাটির খুব কাছাকাছি থাকে, সেগুলো খেলে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন লালশাক, মাচা ছাড়া পুঁইশাক, কলমিশাক, কচুশাক, সবুজ শাক, বর্ষাকালীন পালংশাক, পাতাকপি ইত্যাদি। বর্ষাকালে এগুলো থেকে হতে পারে ডায়রিয়া ও খাদ্যে বিষক্রিয়ার মতো মারাত্মক সমস্যা।

পুঁইশাকের পাতা সারকোস্পোরা বেটিকোলা নামের ছত্রাকে আক্রান্ত হয়। বৃষ্টির পানিতে এর বিস্তার ঘটে দ্রুত। এমন আক্রান্ত পাতাযুক্ত পুঁইশাক খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া পুঁইশাকের কাণ্ড পচা রোগও বর্ষায় বৃদ্ধি পায়। সেই ব্যাকটেরিয়া শরীরের ক্ষতি করতে পারে।

কলমি ও লালশাকের ছত্রাকজনিত পাতার রোগ, কলমিশাকের পাতার দাগ রোগ—সবকিছু বর্ষাকালে বৃদ্ধি পায়। এসব রোগের কারণে শাকগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়। কচুশাকে বিভিন্ন রকমের পোকামাকড়ের প্রকোপ বাড়ে এ সময়। এসব শাকে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের আক্রমণের পাশাপাশি বিভিন্ন পোকামাকড় ডিম পেড়ে বংশ বিস্তার করে।

বর্ষাকালীন পাতাকপি হতে পারে আরও বিপজ্জনক। প্রতিটি পাতার ভাঁজে ভাঁজে বৃষ্টির পানি জমে যেতে পারে। সেখানে খুব সহজে অনেক বেশি ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকসহ ছোট ছোট পোকামাকড় বংশবিস্তার করতে পারে। ফলে এগুলো খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায় বা এগুলো খেলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে।

ডাঁটাশাকের পাতা মাটি থেকে বেশ ওপরে থাকে বলে কিছুটা নিরাপদ। তবে এর কাণ্ড পচা রোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।
তাহলে কি বর্ষায় শাক খাওয়া যাবে না? অবশ্যই খাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। 

যা করতে হবে

  • কেনার সময় দাগহীন পাতাযুক্ত শাক কিনতে হবে।
  • প্রয়োজনে নিজেদের ছাদবাগান বা বাড়ির উঠানে শাকের চাষ করে ভালোমতো পরিচর্যা করতে হবে।
  • কিছু আক্রান্ত পাতা থাকতেই পারে। সেগুলো বেছে ফেলে দিতে হবে।
  • বৃষ্টির পানি জমে না—এমন উঁচু ও ঢালু জমিতে শাক চাষ করতে হবে।
  • রান্নার আগে লবণ বা ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে শাক ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
  • কাঁচা বা আধা সেদ্ধ শাক খাওয়া যাবে না।

অনেকে আছেন, যাঁরা বর্ষায় একেবারেই শাক খেতে চান না। তাঁরা শাকের বদলে সবজি ও ফলমূল খাবেন। শাক শরীরের ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা মেটায়। সবজিতেও পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। তাই শাকের পরিবর্তে বেশি 
বেশি সবজি খান। শাকে আঁশের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, যেটা সব সবজিতে পাওয়া যায় না। ঝিঙে, চালকুমড়া, লাউ, পেঁপে, পটোল, চিচিঙ্গার মতো সবজি খেয়ে খুব সহজে ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণ করা যায়। যাঁদের আইবিএস সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য শাকের বদলে সবজি খাওয়া উত্তম।

পরামর্শ দিয়েছেন: জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত