Ajker Patrika

করোনামুক্ত হওয়ার পর

ডা. শাফেয়ী আলম তুলতুল
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ০২
করোনামুক্ত হওয়ার পর

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বেড়েছে। এতে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে রোগীরা, এমনকি তাঁদের উপসর্গ মৃদু হলেও, প্রাথমিকভাবে করোনামুক্ত হওয়ার পরও দীর্ঘদিন নানা জটিলতায় ভুগে থাকেন। আবার অনেক সময় রোগের উপসর্গগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়। মোদ্দাকথা, একজন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত বা কোভিড হলে, ভাইরাসমুক্ত হওয়ার পরও দীর্ঘদিন নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে যান, যাকে ‘লং কোভিড’ বলেও ডাকা হয়।

করোনাভাইরাস মূলত ফুসফুসের ক্ষতি করলেও হার্ট, কিডনি, লিভারসহ অন্যান্য অঙ্গকেও এটি আক্রান্ত করে। ফলে দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বয়স্ক ব্যক্তিরা, যাঁদের আগে থেকেই নানা রকম শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জটিলতা হয় সবচেয়ে বেশি এবং গুরুতর। কিন্তু তরুণেরাও কোভিড-পরবর্তী বিভিন্ন রকম জটিলতার সম্মুখীন হন। যেমন:

  • ক্লান্তি ও দুর্বলতা
  • খাবারে অরুচি
  • কাশি
  • শ্বাসকষ্ট
  • বুকে ব্যথা
  • জয়েন্ট পেইন বা গিঁটে গিঁটে ব্যথা
  • স্মরণশক্তি  ও মনোযোগের অভাব
  • বিষণ্নতা ও অবসাদ

কোভিডের পর রোগীদের কাছ থেকে বেশি যে অভিযোগটি পাওয়া যায় তা হলো, তাঁরা ক্লান্তবোধ করেন, শরীর দুর্বল লাগে, কাজ করতে হাঁপিয়ে ওঠেন, আগে যতটা পরিশ্রম করতে পারতেন, ততটা কর্মক্ষম থাকেন না। ক্ষুধা থাকলেও খাবারে রুচি থাকে না, অনেকে আবার খাবারে স্বাদ-গন্ধ পান না দীর্ঘদিন। খেতে না পারলে স্বাভাবিকভাবেই শরীর আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।

কোভিডের উপসর্গ হিসেবেই কাশি হয় রোগীদের। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে এই কাশি ভালো হতে কয়েক মাস পর্যন্ত লেগে যায়। এ ছাড়া শ্বাস নিতেও অনেকের সমস্যা হয়। এমনকি বুকে ব্যথার কথাও বলেন কোনো কোনো রোগী।

কোভিড মূলত ফুসফুসকে বেশি আক্রান্ত করলেও এটি কমবেশি শরীরের সব অঙ্গেরই ক্ষতি করে। অন্য অনেক ভাইরাসের মতো হাড়ের সংযোগস্থল বা গিঁটও আক্রান্ত করে আর্থরাইটিস তৈরি করতে পারে; যার ফলে গিঁটে গিঁটে ব্যথা অনুভূত হয়।

অনেকে আবার অভিযোগ করেন, কোভিড হওয়ার পর তাঁরা লক্ষ করেছেন, তাঁদের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেয়েছে। দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি অনেক বিষয় তাঁরা মনে রাখতে পারছেন না, সহজেই ভুলে যাচ্ছেন অনেক কিছু। এ ছাড়া কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতেও তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। অনেকে আবার ভুগছেন কোভিড-পরবর্তী অবসাদ ও বিষণ্নতায়।

কোভিড একটি মহামারি, নতুন একটি অসুখ, যাতে মৃত্যুঝুঁকিও আছে, আরও আছে পরিবার-পরিজনের মাঝে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা। ফলে শারীরিক কষ্ট যেমন আছে, তার সঙ্গে আছে প্রচণ্ড মানসিক চাপও। সময় নিয়ে, মনোবল ধরে রেখে, আমাদের কোভিড মোকাবিলা করতে হবে।

জটিলতা কমাতে যা করতে হবে
অনেককে দেখা যায়, তেমন উপসর্গ না থাকায় করোনাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেন না। কিন্তু পরে কোভিড-পরবর্তী জটিলতার শিকার হন। অনেকের হয়তো হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু অবহেলা করে যাননি, বাড়িতে চিকিৎসা যথাযথ হয়নি, কমতি থেকে গেছে, যাকে আন্ডারট্রিটমেন্ট বলে, এটি দীর্ঘ মেয়াদে ভোগান্তির অন্যতম কারণ।

সুস্থ হলেও এতে রোগীর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, তাঁর ফুসফুস স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কাশি, শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি, দুর্বলতাসহ সব রকম জটিলতায় তিনি দীর্ঘদিন ভুগবেন। কোভিডে রক্ত জমাট বাঁধার একটি প্রবণতা থাকে, এই জমাট রক্ত হার্টে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক, ব্রেনে গিয়ে স্ট্রোক করতে পারে। এগুলোও করোনা-পরবর্তী জটিলতা তৈরি করে। এসব জটিলতা এড়াতে হলে:

  • উপসর্গ যত মৃদুই থাক অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শে করোনার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে এবং প্রয়োজনে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

যা করতে হবে

  • কোভিড ও কোভিড-পরবর্তী সময়ে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং পরিমিত বিশ্রাম অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। আস্তে-ধীরে কাজের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
  • ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, খাবারে বিধিনিষেধ আছে এমন কোনো অসুখ থাকলে, সেসব কোমরবিডিটি বিবেচনায় রেখে ফলমূল, দুধ, ডিম ও প্রচুর তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। এতে শরীরে পানিশূন্যতা ও পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে।
  • ধূমপান, ভাজাপোড়া, তেল-চর্বি খাবার পরিহার করতে হবে।
  • ঘরে তৈরি সহজপাচ্য খাবার অল্প করে বারবার খেতে খেতে হবে। আস্তে আস্তে খাবারের রুচি 
    ফিরে আসবে।
  • করোনায় জিঙ্ক, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। ভিটামিনগুলো পরিপূরক খাবারের মাধ্যমেও সাপ্লিমেন্ট করা সম্ভব।
  • সময় ধরে অল্প অল্প করে ব্যায়াম শুরু করলে সবলতা ও কর্মক্ষমতা বাড়বে। ব্রিদিং এক্সারসাইজ বা ফুসফুসের ব্যায়াম করোনায় ভীষণ জরুরি। আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই ব্রিদিং এক্সারসাইজের চর্চা করা সবচেয়ে ভালো।

করোনা-পরবর্তী জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে

  • সচেতন থাকতে হবে
  • সংক্রমণমুক্ত থাকতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে
  • ভ্যাকসিন নিতে হবে, যাতে আক্রান্ত হলেও সেটি গুরুতর পর্যায়ে না পৌঁছায়
  • এরপরও আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে হবে।

লেখক: মেডিকেল অফিসার, 
কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, ঢাকা 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত