Ajker Patrika

ঈদযাত্রায় সতর্ক থাকুন

অধ্যাপক ডা. ইমনুল ইসলাম ইমন 
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৫, ০৭: ৪৮
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঈদুল ফিতর সমাগত। প্রিয়জনের সঙ্গে উৎসব করতে মানুষ যাবে গ্রামে। এযাত্রায় সঙ্গী দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, লঞ্চ। যতই উৎসবের জন্য যাত্রা হোক না কেন, এর ধকলে পড়তে হয় সব বয়সী মানুষকে। শিশু, বয়স্ক মানুষ ও রোগীদের পক্ষে লম্বা যাত্রাপথের ধকল সহ্য করা বেশ কঠিন। যাত্রাপথের কঠিন পরিস্থিতিকে অনেকটা নিরাপদ এবং নির্বিঘ্ন করা সম্ভব প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ নিলে।

পরিধেয় পোশাক

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ শিশু বা বয়স্কদের জন্য যা যা প্রয়োজন, সেগুলো সঙ্গে রাখুন। সময়টা গরমের, তাই হালকা আরামদায়ক, সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে, এমন পোশাক পরতে হবে। যাত্রার সময় নরম জুতা, স্যান্ডেল অথবা কেডস পরার অভ্যাস করতে হবে। একেবারে নতুন জুতা ও হাই হিল পরে কোথাও রওনা হওয়া ঠিক হবে না।

খাবার নিয়ে সতর্কতা

ঘরে তৈরি খাবার ও পানির বোতল সঙ্গে রাখুন। কিছুক্ষণ পরপর শিশুদের পানি পানে উৎসাহিত করুন। এই সময়ে খাবার ও পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে সচেষ্ট থাকা চাই। বাইরের খাবার, ফলের জুস, চিপস, চকলেট ইত্যাদি শিশুদের খেতে দেওয়া যাবে না।

প্রয়োজনীয় ওষুধ

শরীরে ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, ডায়রিয়ার খাওয়ার স্যালাইন, সাধারণ সর্দি ও কাশির অ্যান্টিহিস্টামিন, পেটব্যথা এবং ফোলা কিংবা গ্যাসের জন্য ওমিপ্রাজল ইত্যাদি সঙ্গে রাখতে হবে। এ ছাড়া তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক মলমও রাখতে হবে। মোবাইল ফোনে চিকিৎসকের নম্বর, ঠিকানা রাখতে হবে। শিশুদের প্রয়োজনীয় ওষুধ নিতে ভোলা যাবে না।

মোশন সিকনেস

বাসে বা যানবাহনে উঠলে অনেকের বমি বমি ভাব এমনকি বমি হতেও দেখা যায়। সঙ্গে মাথা ঘোরাও থাকতে পারে। একে বলে ভ্রমণজনিত মোশন সিকনেস। যেকোনো বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে এটি হতে পারে। এটি প্রতিরোধে ট্যাবলেট বা সিরাপ অটোসিল অথবা স্টিমিটিল জাতীয় ওষুধ ভ্রমণের আধ ঘণ্টা আগে খেয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া বাস ও ট্রেনে চলাচলের সময় শিশুদের চোখ বন্ধ করে রাখলে অথবা ঘুমিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও এই অসুবিধা ততটা টের পাওয়া যায় না।

গর্ভবতী ও বয়স্কদের জন্য সতর্কতা

গর্ভবতী নারীরা অতিরিক্ত ঝাঁকি হয় এমন পথে ভ্রমণ যতটা সম্ভব বাদ দিতে হবে। তাঁদের প্রথম তিন মাস এবং প্রসবের দুই অথবা তিন মাস আগে ভ্রমণ এড়িয়ে চলাই ভালো। গর্ভাবস্থায় একা ভ্রমণ করা উচিত নয়। দীর্ঘ যাত্রাপথে বয়স্কদের একই অবস্থায় বেশিক্ষণ বসে থাকা যাবে না। সুযোগ পেলে যানবাহনে হাত-পা ছড়িয়ে নিতে হবে কিংবা নড়াচড়া করতে হবে। বয়স্কদের প্রয়োজনীয় ওষুধ; যেমন ইনহেলার, ইনসুলিন ইত্যাদি সঙ্গে নিতে ভুলে যাওয়া চলবে না।

জরুরি প্রয়োজনে

পরিচিত চিকিৎসক এবং পুলিশের মোবাইল ফোন নম্বর সঙ্গে রাখা জরুরি। এতে অসুস্থ অথবা কোনো বিপদে পড়লে যেকোনো সময় চিকিৎসকের পরামর্শ এবং বিপদের সময় পুলিশের সাহায্য নিতে পারবেন। পুলিশের সাহায্য নিতে যেকোনো জায়গা থেকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা যাবে।

যানবাহনে সতর্কতা

জানালা দিয়ে মাথা বা হাত বের করে রাখা যাবে না। অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাস, ট্রেন, লঞ্চে ওঠার চেষ্টা করা ঠিক হবে না। ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। শিশুরা সব সময় জানালার পাশে বসতে চায়। তাই অতিরিক্ত বাতাসের কারণে ভ্রমণের ঠিক পরেই আক্রান্ত হয় সর্দি-জ্বর অথবা সাধারণ কাশিতে। তাই শিশুদের জানালার পাশে বসা থেকে বিরত রাখাই ভালো।

সতর্ক থাকুন

যাত্রাপথে অপরিচিত কেউ কোনে খাবার কিংবা পানি দিলে সেগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ঈদের আনন্দ যেন দুঃখ বয়ে না এনে আমাদের জীবন আনন্দময় করে তোলে, সেই বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে।

পরামর্শ দিয়েছেন: অধ্যাপক, শিশু বিভাগ; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা; চেম্বার: আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত