Ajker Patrika

স্তন্যপায়ীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে বার্ড ফ্লু, বাড়ছে নতুন মহামারির আশঙ্কা

অনলাইন ডেস্ক
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বার্ড ফ্লু নামে পরিচিত উচ্চমাত্রার সংক্রামক ভাইরাস এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ক্রমশ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে এবং শত শত মানুষকে সংক্রমিত করেছে। এর ফলে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ এবং এর ধারাবাহিকতায় নতুন মহামারি সৃষ্টির আশঙ্কা বাড়ছে। আমেরিকা ও ইউরোপে মূলত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ বেশি দেখা গেছে।

গতকাল সোমবার ভেড়া এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে। যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, উত্তর ইংল্যান্ডের একটি ভেড়ার খামারে ভেড়ার মধ্যে প্রথম এই রোগ শনাক্ত করা গেছে।

কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেমন—গাভি ও ভেড়া খামারে প্রতিপালিত হয় এবং মানুষের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থাকে। এর ফলে এই ভাইরাস প্রাণী থেকে মানুষেও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। অন্যদিকে, কিছু প্রাণীর সঙ্গে মানুষের তেমন সংস্পর্শ থাকে না।

বার্ড ফ্লু ছড়ানোর ক্ষেত্রে শূকর একটি বিশেষ উদ্বেগের কারণ। কারণ শূকর একই সঙ্গে পাখি ও মানুষের ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে। এর ফলে ভাইরাস দুটির জিনগত উপাদান মিশ্রিত হয়ে নতুন, আরও বিপজ্জনক ভাইরাস তৈরি হতে পারে যা সহজে মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে।

এখানে ২০১৬ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ইউরোপীয় খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ এবং ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী মানুষ ব্যতীত অন্যান্য যেসব স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে এই ভাইরাস শনাক্ত করা গেছে, তার একটি তালিকা দেওয়া হলো। এই ভাইরাস শত শত বন্য ও বন্দী পাখির প্রজাতিকেও সংক্রমিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে আলপাকা, ভালুক, ববক্যাট, কানাডিয়ান লিঙস, বিড়াল, চিতা, গরু, কয়োটে, ডলফিন, এরমিন, ফিশার, শেয়াল, ছাগল, লোপার্ড, পাহাড়ি সিংহ, ইঁদুর, অপোসাম, অটার, শুয়োর, মেরু ভালুক, প্রেইরি ভোল, খরগোশ, রেকুন, ধাড়ি ইঁদুর, সারভাল, স্কাঙ্ক, স্টুয়াট ও বাঘের মধ্যে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গেছে।

কানাডা ও ফ্রান্সে ভালুক; নেদারল্যান্ডসে ব্যাজার, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানিতে বীচ অ্যান্ড পাইন মার্টেন; পোল্যান্ডের কারাকাল; কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বিড়াল; জার্মানি-উরুগুয়ের কোয়াটি, অ্যান্টার্কটিকার ক্র্যাবিয়েটার সিল; কানাডা, চীন ও ইতালির কুকুর; কানাডা, চিলি, পেরু ও যুক্তরাজ্যের ডলফিন; ফ্রান্স-ইতালির গৃহপালিত শূকর; বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, লাটভিয়া, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্যের শেয়ালেও এই ভাইরাস পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া, অ্যান্টার্কটিকা, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কানাডা, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পেরু ও উরুগুয়ের সিল ও ফার সিলের মধ্যেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গেছে।

এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে দক্ষিণ ভিয়েতনামের দুটি চিড়িয়াখানায় এইচ৫এন১ বার্ড ফ্লুতে ৪৭টি বাঘ ও তিনটি সিংহ এবং একটি চিতা বাঘ মারা যায়। তার আগে, সেই বছরের ফেব্রুয়ারিতে গবেষকেরা জানান, অ্যান্টার্কটিকার মূল ভূখণ্ডে পাখিদের মধ্যে প্রথমবারের মতো বার্ড ফ্লুর একটি বিধ্বংসী ধরন (এইচ৫এন১ সাব টাইপ) হানা দিয়েছে। ভাইরাসটির জের ধরে রীতিমতো উজাড় হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে মহাদেশটির দক্ষিণাঞ্চলের পেঙ্গুইনের বিশাল বসতি।

তারও আগে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে মানবদেহে বিরল এক ধরনের বার্ড ফ্লুতে বিশ্বে প্রথমবারের মতো চীনা এক নারীর মৃত্যু হয় বলে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তবে এটা মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়ার আলামত মেলেনি। ডব্লিউএইচও বলছে, ২০২২ সাল থেকে, এইচ৫এন১-সহ ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাসের মারাত্মক প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে। এটি ক্রমেই বাড়ছে।

তবে এখন পর্যন্ত জানা ইতিহাসে, বিশ্বে প্রথমবারের মতো বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হন চীনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ জিয়াংসুর ৪১ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তিনি বার্ড ফ্লু ভাইরাসের এইচ১০এন৩ প্রজাতিতে সংক্রমিত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর অবস্থা দ্রুতই স্থিতিশীল হয়ে ওঠে এবং তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।

ডব্লিউএইচও আরও জানায়, এইচ৫এন১ সংক্রমণ মানুষের মধ্যে হালকা থেকে গুরুতর হতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে এমনকি মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। ভিয়েতনাম ২০২৩ সালের মার্চে এই ভাইরাসের আক্রমণে একজন মানুষের মৃত্যু সম্পর্কে ডব্লিউএইচওকে জানিয়েছিল।

অপরদিকে, যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের মধ্যে এইচ৫এন১ ভাইরাসের সংক্রমণের সরকারি সংখ্যা নিঃসন্দেহে অনেক কম, তবুও এখনও পর্যন্ত কোনো প্রমাণ নেই যে এই ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে। তবে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, যদি এই ভাইরাস নির্দিষ্ট কিছু মিউটেশন (পরিবর্তন) অর্জন করে, তাহলে এটি আরেকটি মহামারি সৃষ্টি করতে পারে।

এই অবস্থায়, বার্ড ফ্লু থেকে মহামারি সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে বার্ড ফ্লুর বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ তৈরি গবেষণা জোর কদমে এগিয়ে চলছে। বিজ্ঞানীরা এটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন যে, অতীতে কোনো ফ্লু-তে আক্রান্ত হওয়ার পর আমাদের শরীরে যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, তা এইচ ৫ এন ১ বার্ড ফ্লুর বিরুদ্ধে কোনো সুরক্ষা দিতে পারে কি না।

এখন পর্যন্ত, প্রাপ্ত ফলাফল কিছুটা স্বস্তি এনেছে। অ্যান্টিবডি এবং ইমিউন সিস্টেমের অন্যান্য উপাদান বার্ড ফ্লুর সবচেয়ে খারাপ পরিণতিগুলো কিছুটা হলেও কমাতে পারে। এই বিষয়ে মাউন্ট সিনাইয়ের আইকান স্কুল অব মেডিসিনের ভাইরোলজিস্ট ফ্লোরিয়ান ক্র্যামার বলেন, ‘অবশ্যই (আমাদের শরীরে) আগে থেকেই বিদ্যমান কিছু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে। তবে নতুন কোনো মহামারি শুরু হলে এটি হয়তো খুব এক কার্যকর হবে না, তবে এটি গুরুতর রোগের বিরুদ্ধে কিছু সুরক্ষা দিতে পারে।’

গবেষণা চলতে থাকলেও এর সীমাবদ্ধতা নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যামোরি ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের ভাইরোলজিস্ট সীমা লাকদাওয়ালা বলেন, ‘যদিও এটি কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে, তবে এর মানে এই নয় যে—আমরা সবাই নিরাপদ।

সীমার মতে, এখন পর্যন্ত বার্ড ফ্লু নিয়ে গবেষণাগুলো মানুষের উপর করা হয়নি। সিদ্ধান্তগুলো বিভিন্ন প্রাণির ওপর পরিচালিত গবেষণা ও সেগুলোর রক্ত পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে তৈরি। এই সুরক্ষা একজন ব্যক্তির জন্য কতটা কার্যকর হবে, তা ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ইতিহাস, অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং অন্যান্য কারণের উপর নির্ভর করে।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স, স্কাই নিউজ ও এনপিআর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিয়াবাড়ীতে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জিএমের রক্তাক্ত মরদেহ

ইসিতে ‘আওয়ামী লিগ’ নামে নিবন্ধন চেয়ে নতুন দলের আবেদন

ফেসবুকের রাজনীতি আর মাঠের রাজনীতি এক নয়: জারাকে সারজিসের জবাব

কিছুদিন আগে মানিব্যাগও ছিল না, এখন বিশাল শোডাউন কীভাবে—সারজিসকে ডা. তাসনিম

‘সারজিস নাগরিক পার্টি করতে পারলে আমরা কেন ছাত্রদল করতে পারব না’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত