Ajker Patrika

অনিয়ন্ত্রিত রাগে ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা

ডা. মুনতাসীর মারুফ
অনিয়ন্ত্রিত রাগে ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা

রাগ মানুষের মানবিক বোধের অংশ। আনন্দ, দুঃখ, বিরক্তি, ভয়, বিস্ময়ের মতো মানুষের মৌলিক একটি আবেগ। জগতে এমন কোনো ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না, যাঁর কখনো রাগ হয়নি। অনাকাঙ্ক্ষিত, অসহনীয় বা অনভিপ্রেত ঘটনা-দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মাঝেমধ্যে রাগ হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। রাগের সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নিয়ন্ত্রিত বহিঃপ্রকাশও তেমন ক্ষতিকর বলা যাবে না; বরং কখনোসখনো তা প্রয়োজনীয়ও হয়ে দাঁড়ায় বৈকি। কিন্তু গোল বাধে তখনই, যখন রাগের প্রকাশটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, স্বাভাবিক বিবেচনা, নম্রতা, ভদ্রতাবোধ লোপ পায়, ব্যক্তি বা পারিপার্শ্বিকের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

রাগের নিয়ন্ত্রণহীন বহিঃপ্রকাশে অনেকে অন্যকে হেয় করার উদ্দেশ্যে অশ্রাব্য শব্দ যেমন অযৌক্তিক উচ্চারণ করেন, তেমনি অনেকে স্থান-কাল-পাত্র ভুলে শারীরিকভাবেও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। চূড়ান্ত বিচারে কিন্তু রাগান্বিত ব্যক্তি নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হন। এতে ব্যক্তির জীবনযাপনের স্বাভাবিক দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়, পারস্পরিক সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হয়, একদা আপন মানুষের সঙ্গে ঘটে বিচ্ছেদ। এতে ব্যক্তি ক্রমশ একাকী ও নিঃসঙ্গ হতে থাকেন।

রাগের বশে নেওয়া সিদ্ধান্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরে ভুল প্রমাণিত হয়, যার মূল্য চোকাতে হয় বড় ধরনের ক্ষতি স্বীকার করে। শারীরিক ক্ষতি থেকে প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটে যেতে পারে রাগের মাথায়।

এ ধরনের ক্ষতি এড়াতে হলে রাগের প্রকাশ নিয়ন্ত্রণে কৌশলী হতে হবে। নানা কারণে রাগ হতে পারে মানুষের। কোনো কারণে মানসিক চাপে থাকলে, দৈনন্দিন নানা চাপের মোকাবিলায় অসমর্থ হলে বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের মধ্যে দিন যাপন করলে উপেক্ষণীয় ঘটনাতেও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন বা রেগে যেতে পারেন।

ঠিক কোন কারণে, পরিস্থিতিতে বা ঘটনায় আপনার রাগ ওঠে, সেটা খুঁজে বের করতে হবে। রাগ ওঠার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বা রাগ উঠলে দ্রুত সেই পরিস্থিতি বা স্থান ত্যাগ করতে পারলে ভালো হয়। বাস্তব কারণে সেটা সম্ভব না হলে চুপ থাকুন। কেননা, রাগের মাথায় যা বলা হয় তা অপ্রীতিকর এবং অযৌক্তিক হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ সময়ে কথা না বলে বরং ইতিবাচক কোনো কিছু ভাবতে বা আনন্দদায়ক স্মৃতি রোমন্থন করতে পারেন। শ্বাসের ব্যায়াম বা অন্য কোনোভাবে রিল্যাক্সেশন বা শিথিলায়ন করতে পারেন। তাৎক্ষণিক মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়াটাই মূল লক্ষ্য। নেতিবাচকতার পরিবর্তে কোনো ঘটনার ইতিবাচক দিকে মনোযোগ দেওয়ার মানসিকতা গড়ে উঠলে হুটহাট রেগে যাওয়ার প্রবণতা কমে।

মানসিক রোগের কারণে হঠাৎ করে অনিয়ন্ত্রিত রাগের সমস্যা দেখা দিলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গলাধাক্কার পর ছোট্ট মেয়েটিকে লাঠি দিয়ে পেটালেন কফিশপের কর্মচারী

বিশ্বব্যাংকে সিরিয়ার ঋণ পরিশোধ করে দিচ্ছে সৌদি আরব

মাত্র তিনজনের জন্য লাখ লাখ মানুষ মরছে, কাদের কথা বললেন ট্রাম্প

‘চরিত্র হননের চেষ্টা’: গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পর দুদককে পাল্টা আক্রমণ টিউলিপের

জুয়ার বিজ্ঞাপনের প্রচার: আলোচিত টিকটকার জান্নাতের স্বামী তোহা কারাগারে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত