মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মামুন মিয়ার ডান হাত কুপিয়ে জখম করা হয়। এতে হাতের কেটে যাওয়া ধমনি ও শিরা জোড়া লাগাতে তাৎক্ষণিক রক্তনালির অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন থাকলেও স্থানীয় কোনো হাসপাতালে ওই সুবিধা ছিল না। রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) যখন তাঁকে আনা হয়, ততক্ষণে পেরিয়ে গেছে ১০ ঘণ্টার বেশি। এর আগেই হাতে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়, মরে যায় পেশির কোষ। চিকিৎসকের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। মাংসপেশিতে পচন ধরায় ট্রাক্টরচালক মামুনের ডান হাত কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়।
শুধু মামুন নয়, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ অন্তত ৩০ জন হাত অথবা পা হারিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহতদের অনেকের ধমনি বা শিরা কেটে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁদের অনেকের জীবন বাঁচাতেও হাত বা পা কেটে ফেলতে হচ্ছে। অথচ সময়মতো অস্ত্রোপচার করে রক্তনালি জোড়া লাগানো গেলে তাঁদের অঙ্গহানি হতো না। তবে ১৮ কোটি মানুষের দেশে রক্তনালির শল্যচিকিৎসক বা ভাসকুলার সার্জন মাত্র ৫৩ জন। তাঁদের মধ্যে ৫১ জনই রাজধানী ও সাভারে। রক্তনালির জরুরি অস্ত্রোপচারের সুবিধা আছে মাত্র একটি হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশে চাহিদার তুলনায় ভাসকুলার সার্জনের সংখ্যা খুবই কম। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসক বাড়ানোর যে পরিকল্পনা রয়েছে, তাতে ভাসকুলার সার্জনদের পদ সৃষ্টির বিষয়টিও রাখা হয়েছে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে বেশিসংখ্যক চিকিৎসক ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।
দেশে প্রতিবছর দুর্ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়। তাদের অনেকের ধমনি ও শিরা কেটে যায়। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, কিডনি ও হৃদ্রোগীদেরও কখনো কখনো রক্তনালির চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়। তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে দুই কোটির বেশি ডায়াবেটিস রোগী, প্রায় আড়াই কোটি বিভিন্ন পর্যায়ের কিডনি রোগী এবং হৃদ্রোগী রয়েছে। হার্টে ব্লকের মতো রক্তনালিও ব্লক হয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়েল স্কুল অব মেডিসিন বলছে, শরীরে ধমনি (আটারি), রক্তনালি, শিরা (ভেইন) ও রক্ত বহনকারী ক্ষুদ্র কৈশিকনালির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে ভাসকুলার রোগ বলে। ধমনি ও শিরার মাধ্যমে পা বা হাতে রক্ত সঞ্চালন হয়। কোনো কারণে ধমনি বা শিরা ছিঁড়ে বা কেটে গেলে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। ছয় ঘণ্টার বেশি রক্ত সঞ্চালন না হলে সেখানের কোষগুলো মরে গিয়ে মাংসে পচন ধরে।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী এলসেভিয়ারে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মৃত্যুর ৩২ শতাংশই হচ্ছে কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদ্রোগ ও রক্তনালির রোগে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (সিভিডি)। এসব রোগে বিশ্বে বছরে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
ভাসকুলার সার্জনরা বলছেন, দুর্ঘটনা বা গুলিতে রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ছয় ঘণ্টার মধ্যেই অস্ত্রোপচার করে রক্তনালিগুলোর সংযোগ করতে হবে। এতে দেরি হলে বা রক্তনালি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর জখম হাত বা পা কেটে ফেলতে হয়। বয়স, জীবনাচার, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কিডনি রোগীসহ যেকোনো মানুষের রক্তনালিতে রোগ বা ব্লক হতে পারে।
রক্তনালির শল্যচিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভাসকুলার সোসাইটি (বিভিএস) বলছে, দেশে কত সংখ্যক মানুষের ভাসকুলার চিকিৎসা প্রয়োজন, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে মোট রোগীর ৫ শতাংশের কম এই সেবা পাচ্ছে। সারা দেশে যে ৫৩ জন ভাসকুলার সার্জন আছেন, তাঁদের সিংহভাগই সম্মিলিতভাবে কার্ডিয়াক, থোরাসিক ও ভাসকুলার সার্জারিতে ডিগ্রিধারী। স্বতন্ত্রভাবে ভাসকুলার সার্জারিতে ডিগ্রিধারীর সংখ্যা খুব কম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. মো. সাইফ উল্লাহ খান বলেন, ভাসকুলার সার্জারির চিকিৎসার প্রসার বাড়াতে বিশেষজ্ঞ সার্জন তৈরি করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সারা দেশে সরকারিভাবে পদ সৃষ্টি করতে হবে। দেশে অন্তত হাজারের বেশি ভাসকুলার সার্জন প্রয়োজন। কিন্তু আছেন মাত্র ৫৩ জন।
দেশে ভাসকুলার সার্জারিতে বিশেষজ্ঞ তৈরির প্রতিষ্ঠানও তেমন নেই। ভাসকুলার সার্জারিতে মাস্টার্স অব সার্জারি (এমএস) ডিগ্রি চালুই হয়েছে সাত বছর আগে। বছরে এ ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন আটজন। এ ছাড়া বছরে কার্ডিওভাসকুলার (হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালি) সার্জারিতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) থেকে এফসিপিএস নিচ্ছেন অন্তত ১৫ চিকিৎসক। তাঁরা প্রশিক্ষণ নেন বিএসএমএমইউ, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রির্সাচ ইনস্টিটিউট, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট (এনআইসিভিডি), বাংলাদেশ হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
বিএসএমএমইউর তথ্য অনুযায়ী, একবিংশ শতাব্দীর আগে দেশে আলাদাভাবে ভাসকুলার সার্জারি চিকিৎসা তেমন ছিল না। তখন পর্যন্ত দুজন কার্ডিওভাসকুলার সার্জন ছিলেন। ২০০০ সালে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভাসকুলার সার্জারি শাখা ও ২০১০ সালে পূর্ণাঙ্গ বিভাগ খোলা হয়। বিএসএমএমইউতে পূর্ণাঙ্গ বিভাগ খোলা হয় ২০০৪ সালে। বিএসএমএমইউতে ২০১৭ সালে এবং হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ২০২৩ সালে ভাসকুলার সার্জারিতে মাস্টার্স অব সার্জারির একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়।
বিভিন্ন সূত্র বলেছে, দেশে ভাসকুলার সার্জারির জরুরি বিভাগ রয়েছে শুধু জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। দেশে থাকা ৫৩ জন ভাসকুলার সার্জনের মধ্যে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ২৭ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুটি পদের বিপরীতে একজন, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে দুজনের বিপরীতে একজন, ঢাকার সিএমএইচে একজন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনটি পদের বিপরীতে একজন, খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতালে একজন এবং বিএসএমএমইউতে ৯টি পদের বিপরীতে চারজন রয়েছেন। নিটোরে দুটি পদ থাকলেও বর্তমানে শূন্য। বেসরকারি ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয়জন সার্জন রয়েছেন। রাজধানীর প্রথম সারির কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে ভাসকুলার সার্জারির চিকিৎসা দেওয়া হলেও এগুলোর নিজস্ব সার্জন নেই। ফলে ভাসকুলার সার্জারির মূল ভরসা এখনো জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট।
বাংলাদেশ ভাসকুলার সোসাইটির মহাসচিব, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাকলায়েন রাসেল বলেন, ভাসকুলার চিকিৎসার পুরোটাই বর্তমানে রাজধানীকেন্দ্রিক। তাই জরুরি মুহূর্তে অস্ত্রোপচারের সুবিধার জন্য সারা দেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোয় ভাসকুলার চিকিৎসার পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। কারণ, শুধু সময়ের অভাবে অনেক রোগীর জীবন বাঁচাতে হাত বা পা কেটে ফেলতে হয়।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থোপেডিক সার্জারির সুবিধার সঙ্গে সঙ্গে সমন্বিতভাবে ভাসকুলার সার্জারির সুবিধাও থাকতে হবে। কারণ, দুর্ঘটনায় হাত-পা ভাঙলে ও জখম হলে রক্তনালি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন ক্ষেত্রে সমন্বিত অস্ত্রোপচার না করা গেলে রোগীর জীবন বাঁচাতে হাত বা পা কেটে ফেলতে হয়। কারণ, ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ কেটে না ফেললে পরবর্তী সময়ে রোগীর শারীরিক বিভিন্ন ক্ষতি হয়। এতে মৃত্যুঝুঁকিও থাকে।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান ও বাংলাদেশ ভাসকুলার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবুল হাসান মুহম্মদ বাশার বলেন, ‘কার্ডিওভাসকুলারে যাঁরা ডিগ্রি নিচ্ছেন, তাঁরা কার্ডিয়াক সার্জারিতেই বেশি গুরুত্ব দেন। দেশে অনেক ভাসকুলার সার্জন প্রয়োজন। আমরা হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি। একই সঙ্গে দেশের বিভাগীয় সরকারি মেডিকেল কলেজে ভাসকুলার সার্জারির পূর্ণাঙ্গ সেটআপ করার প্রস্তাব করেছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মামুন মিয়ার ডান হাত কুপিয়ে জখম করা হয়। এতে হাতের কেটে যাওয়া ধমনি ও শিরা জোড়া লাগাতে তাৎক্ষণিক রক্তনালির অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন থাকলেও স্থানীয় কোনো হাসপাতালে ওই সুবিধা ছিল না। রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) যখন তাঁকে আনা হয়, ততক্ষণে পেরিয়ে গেছে ১০ ঘণ্টার বেশি। এর আগেই হাতে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়, মরে যায় পেশির কোষ। চিকিৎসকের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। মাংসপেশিতে পচন ধরায় ট্রাক্টরচালক মামুনের ডান হাত কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়।
শুধু মামুন নয়, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ অন্তত ৩০ জন হাত অথবা পা হারিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহতদের অনেকের ধমনি বা শিরা কেটে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁদের অনেকের জীবন বাঁচাতেও হাত বা পা কেটে ফেলতে হচ্ছে। অথচ সময়মতো অস্ত্রোপচার করে রক্তনালি জোড়া লাগানো গেলে তাঁদের অঙ্গহানি হতো না। তবে ১৮ কোটি মানুষের দেশে রক্তনালির শল্যচিকিৎসক বা ভাসকুলার সার্জন মাত্র ৫৩ জন। তাঁদের মধ্যে ৫১ জনই রাজধানী ও সাভারে। রক্তনালির জরুরি অস্ত্রোপচারের সুবিধা আছে মাত্র একটি হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশে চাহিদার তুলনায় ভাসকুলার সার্জনের সংখ্যা খুবই কম। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসক বাড়ানোর যে পরিকল্পনা রয়েছে, তাতে ভাসকুলার সার্জনদের পদ সৃষ্টির বিষয়টিও রাখা হয়েছে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে বেশিসংখ্যক চিকিৎসক ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।
দেশে প্রতিবছর দুর্ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়। তাদের অনেকের ধমনি ও শিরা কেটে যায়। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, কিডনি ও হৃদ্রোগীদেরও কখনো কখনো রক্তনালির চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়। তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে দুই কোটির বেশি ডায়াবেটিস রোগী, প্রায় আড়াই কোটি বিভিন্ন পর্যায়ের কিডনি রোগী এবং হৃদ্রোগী রয়েছে। হার্টে ব্লকের মতো রক্তনালিও ব্লক হয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়েল স্কুল অব মেডিসিন বলছে, শরীরে ধমনি (আটারি), রক্তনালি, শিরা (ভেইন) ও রক্ত বহনকারী ক্ষুদ্র কৈশিকনালির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে ভাসকুলার রোগ বলে। ধমনি ও শিরার মাধ্যমে পা বা হাতে রক্ত সঞ্চালন হয়। কোনো কারণে ধমনি বা শিরা ছিঁড়ে বা কেটে গেলে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। ছয় ঘণ্টার বেশি রক্ত সঞ্চালন না হলে সেখানের কোষগুলো মরে গিয়ে মাংসে পচন ধরে।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী এলসেভিয়ারে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মৃত্যুর ৩২ শতাংশই হচ্ছে কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদ্রোগ ও রক্তনালির রোগে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (সিভিডি)। এসব রোগে বিশ্বে বছরে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
ভাসকুলার সার্জনরা বলছেন, দুর্ঘটনা বা গুলিতে রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ছয় ঘণ্টার মধ্যেই অস্ত্রোপচার করে রক্তনালিগুলোর সংযোগ করতে হবে। এতে দেরি হলে বা রক্তনালি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর জখম হাত বা পা কেটে ফেলতে হয়। বয়স, জীবনাচার, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কিডনি রোগীসহ যেকোনো মানুষের রক্তনালিতে রোগ বা ব্লক হতে পারে।
রক্তনালির শল্যচিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভাসকুলার সোসাইটি (বিভিএস) বলছে, দেশে কত সংখ্যক মানুষের ভাসকুলার চিকিৎসা প্রয়োজন, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে মোট রোগীর ৫ শতাংশের কম এই সেবা পাচ্ছে। সারা দেশে যে ৫৩ জন ভাসকুলার সার্জন আছেন, তাঁদের সিংহভাগই সম্মিলিতভাবে কার্ডিয়াক, থোরাসিক ও ভাসকুলার সার্জারিতে ডিগ্রিধারী। স্বতন্ত্রভাবে ভাসকুলার সার্জারিতে ডিগ্রিধারীর সংখ্যা খুব কম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. মো. সাইফ উল্লাহ খান বলেন, ভাসকুলার সার্জারির চিকিৎসার প্রসার বাড়াতে বিশেষজ্ঞ সার্জন তৈরি করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সারা দেশে সরকারিভাবে পদ সৃষ্টি করতে হবে। দেশে অন্তত হাজারের বেশি ভাসকুলার সার্জন প্রয়োজন। কিন্তু আছেন মাত্র ৫৩ জন।
দেশে ভাসকুলার সার্জারিতে বিশেষজ্ঞ তৈরির প্রতিষ্ঠানও তেমন নেই। ভাসকুলার সার্জারিতে মাস্টার্স অব সার্জারি (এমএস) ডিগ্রি চালুই হয়েছে সাত বছর আগে। বছরে এ ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন আটজন। এ ছাড়া বছরে কার্ডিওভাসকুলার (হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালি) সার্জারিতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) থেকে এফসিপিএস নিচ্ছেন অন্তত ১৫ চিকিৎসক। তাঁরা প্রশিক্ষণ নেন বিএসএমএমইউ, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রির্সাচ ইনস্টিটিউট, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট (এনআইসিভিডি), বাংলাদেশ হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
বিএসএমএমইউর তথ্য অনুযায়ী, একবিংশ শতাব্দীর আগে দেশে আলাদাভাবে ভাসকুলার সার্জারি চিকিৎসা তেমন ছিল না। তখন পর্যন্ত দুজন কার্ডিওভাসকুলার সার্জন ছিলেন। ২০০০ সালে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভাসকুলার সার্জারি শাখা ও ২০১০ সালে পূর্ণাঙ্গ বিভাগ খোলা হয়। বিএসএমএমইউতে পূর্ণাঙ্গ বিভাগ খোলা হয় ২০০৪ সালে। বিএসএমএমইউতে ২০১৭ সালে এবং হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ২০২৩ সালে ভাসকুলার সার্জারিতে মাস্টার্স অব সার্জারির একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়।
বিভিন্ন সূত্র বলেছে, দেশে ভাসকুলার সার্জারির জরুরি বিভাগ রয়েছে শুধু জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। দেশে থাকা ৫৩ জন ভাসকুলার সার্জনের মধ্যে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ২৭ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুটি পদের বিপরীতে একজন, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে দুজনের বিপরীতে একজন, ঢাকার সিএমএইচে একজন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনটি পদের বিপরীতে একজন, খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতালে একজন এবং বিএসএমএমইউতে ৯টি পদের বিপরীতে চারজন রয়েছেন। নিটোরে দুটি পদ থাকলেও বর্তমানে শূন্য। বেসরকারি ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয়জন সার্জন রয়েছেন। রাজধানীর প্রথম সারির কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে ভাসকুলার সার্জারির চিকিৎসা দেওয়া হলেও এগুলোর নিজস্ব সার্জন নেই। ফলে ভাসকুলার সার্জারির মূল ভরসা এখনো জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট।
বাংলাদেশ ভাসকুলার সোসাইটির মহাসচিব, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাকলায়েন রাসেল বলেন, ভাসকুলার চিকিৎসার পুরোটাই বর্তমানে রাজধানীকেন্দ্রিক। তাই জরুরি মুহূর্তে অস্ত্রোপচারের সুবিধার জন্য সারা দেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোয় ভাসকুলার চিকিৎসার পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। কারণ, শুধু সময়ের অভাবে অনেক রোগীর জীবন বাঁচাতে হাত বা পা কেটে ফেলতে হয়।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থোপেডিক সার্জারির সুবিধার সঙ্গে সঙ্গে সমন্বিতভাবে ভাসকুলার সার্জারির সুবিধাও থাকতে হবে। কারণ, দুর্ঘটনায় হাত-পা ভাঙলে ও জখম হলে রক্তনালি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন ক্ষেত্রে সমন্বিত অস্ত্রোপচার না করা গেলে রোগীর জীবন বাঁচাতে হাত বা পা কেটে ফেলতে হয়। কারণ, ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ কেটে না ফেললে পরবর্তী সময়ে রোগীর শারীরিক বিভিন্ন ক্ষতি হয়। এতে মৃত্যুঝুঁকিও থাকে।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান ও বাংলাদেশ ভাসকুলার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবুল হাসান মুহম্মদ বাশার বলেন, ‘কার্ডিওভাসকুলারে যাঁরা ডিগ্রি নিচ্ছেন, তাঁরা কার্ডিয়াক সার্জারিতেই বেশি গুরুত্ব দেন। দেশে অনেক ভাসকুলার সার্জন প্রয়োজন। আমরা হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি। একই সঙ্গে দেশের বিভাগীয় সরকারি মেডিকেল কলেজে ভাসকুলার সার্জারির পূর্ণাঙ্গ সেটআপ করার প্রস্তাব করেছি।’
দিনে কতবার মলত্যাগ করা হলো সেটাকে আমরা বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। একেবারে না হওয়া কিংবা অতিরিক্ত হওয়া বিভিন্ন রোগের উপসর্গ হিসেবে ধরে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি নির্ভর করে কিছু ব্যক্তিগত ও শারীরিক বিষয়ের ওপর। কিন্তু প্রস্রাবের হার কি একই রকম কোনো নির্ধারিত নিয়মের মধ্যে পড়ে?
৪ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) প্রথমবারের মতো ওষুধ জেপবাউন্ডকে ঘুমের অসুখের (স্লিপ অ্যাপনিয়া-ওএসএ) চিকিৎসার জন্য অনুমোদন দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার এফডিএ ঘোষণা দিয়েছে, ইলাই লিলি অ্যান্ড কোং নির্মিত এই ওষুধটি প্রাপ্তবয়স্কদের স্থূলতা এবং মাঝারি থেকে তীব্র পর্যায়ের ওএসএ চিকিৎসা
৬ ঘণ্টা আগেএখনকার মানুষ অনেক স্বাস্থ্যসচেতন। ফলে খাবারে বৈচিত্র্য এসেছে। ভাত-রুটি খাওয়ার প্রবণতা কমেছে। এবার এমন একটি খাবারের কথা জেনে রাখুন, যা শরীরে পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখবে। তাতে শরীর থাকবে রোগমুক্ত। খাবারটি হলো স্প্রাউট বা অঙ্কুরিত বীজ। এই বীজ খাওয়া শুরু করা উচিত শীতেই।
১ দিন আগেশারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে খাবার গ্রহণের গুরুত্বের বিষয়টি সবার জানা। তবে এটা জানতে হবে, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও খাবারের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন থেকে এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়।
১ দিন আগে