রিমন রহমান, রাজশাহী
ফাল্গুনেও হালকা কুয়াশা পড়ে এখানে। আমগাছের পাতার ফাঁকে পূর্ব আকাশে উঁকি দিচ্ছে ভোরের সূর্য। গাছপালায় ভরা পার্কের একটি জায়গা পরিষ্কার করলেন এক ব্যক্তি। এর মধ্যে একজন-দুজন করে জনাবিশেক মানুষ এসে হাজির। বেশির ভাগই বয়োজ্যেষ্ঠ। একটু পরেই শুরু হলো শরীরচর্চা। গত বুধবার ভোরে এমন দৃশ্য দেখা গেল রাজশাহীর শিমলা পার্কে। জানা গেল, রোজ ভোরে এখানে শরীরচর্চা করেন জ্যেষ্ঠ এই নাগরিকেরা।
এভাবে টানা ২৩ বছর রাজশাহীর একদল স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ শরীরচর্চা করে চলেছেন। একসঙ্গে চলতে চলতে তাঁরা একটি সংগঠনও দাঁড় করেছেন, নাম ‘উজ্জীবন পদ্মার পাড়, রাজশাহী’। সংগঠনে এখন সদস্য প্রায় ৬০ জন। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষ প্রতিদিনই ভোরে এক হন শরীরচর্চা করতে। তাঁরা এখন শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্ত। যান না চিকিৎসকের কাছে; বরং শরীরচর্চার জন্য কয়েকজন চিকিৎসকই আসেন তাঁদের কাছে, পদ্মার পাড়ে!
বাধা ডিঙিয়ে উজ্জীবিত উজ্জীবন
উজ্জীবন পদ্মার পাড়ের স্লোগান হলো ‘নিয়মিত হাঁটুন, সুস্থ থাকুন’। সংগঠনের সদস্যরা আগে রাজশাহী রিভারভিউ স্কুলের মাঠে শরীরচর্চা করতেন। সেখানে হাসিঠাট্টা হতো, জোরে শব্দ হতো। অভিযোগ এল পাশেই থাকা জেলা প্রশাসকের বাংলো থেকে। ফলে জায়গা ছাড়তে হলো তাঁদের। গেলেন শিশু একাডেমির মাঠে। আপত্তি এল সেখানেও। এরপর শিমলা পার্ক। এখানে কোনো আপত্তি নেই। প্রায় আট বছর ধরে রোজ ভোরে সেখানেই চলছে শরীরচর্চা। এখানে যাঁরা আসেন, তাঁদের বেশির ভাগই বার্ধক্যে পৌঁছেছেন। তবে উজ্জীবনের মাধ্যমে বার্ধক্য জয় করে জীবনকে একেবারে নতুনভাবে উজ্জীবিত করেছেন তাঁরা।
হেঁটে হেঁটে পার্কে
রোজ ভোরে সবাই বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে শিমলা পার্কে আসেন। কেউ কেউ মসজিদে ফজরের নামাজ আদায়ের পর বাড়ি না ফিরে হাঁটা দেন পার্কের উদ্দেশে। শিমলা পার্কে এসে সবাই গোল হয়ে দাঁড়ান। তারপর শরীর নিয়ে চলে নানা রকম কসরত। বুধবার ভোরে পার্কে গিয়ে দেখা গেল, একজন বাঁশি বাজিয়ে শরীরচর্চা শুরুর সংকেত দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সবাই বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর মুখে ‘হু-হা, হা-হু’ শব্দ করে, কখনো দুহাত দুই দিকে প্রসারিত করার সঙ্গে সঙ্গে কোমর ভাঁজ করে নিচু হচ্ছেন সবাই। আবার কখনো অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছেন। এটি তাঁদের কণ্ঠের ব্যায়াম। চোখ পিটপিট করে চোখের ব্যায়াম করার সময় একজন সুরে সুরে বলে উঠলেন, ‘চোখের ব্যায়াম করলে চোখের অবস্থা ভালো থাকবে। সুচের গোড়ায় সুতা পরাতে পারবে..।’ ফুসফুস আর হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা বাড়াতে যে যতক্ষণ পারলেন নিশ্বাস ধরে রাখলেন। তারপর দম ছাড়লেন মুখে শব্দ করে।
শরীরচর্চার শেষ পর্যায়ে শপথ করালেন দলনেতা। শপথে বলা হলো, ‘সুস্থ থাকতে ধূমপান না করি। পরিমিত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করি। শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করি। নৈতিকতাবিরোধী কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখি। নিত্যদিনের কাজে মানুষের মঙ্গল কামনা করি। দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখি।’ এরপর ১ বলে নিজের নাম বললেন। এভাবে গণনা ও নাম বলা শেষ হলে শরীরচর্চাও শেষ হলো। পরে পার্কের কোণে থাকা ছোট্ট চায়ের দোকানে কেউ কেউ চা পান করলেন। কেউ গল্পগুজব, হাসিঠাট্টা করে বাড়ি ফিরলেন।
নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা
উজ্জীবন পদ্মার পাড়ের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম জাহাঙ্গীর রতন। শহরের মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা তিনি। ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা। অবসর নিয়েছেন ২০১৬ সালে। ২০০০ সাল থেকে তিনি এই সংগঠন চালাচ্ছেন। দলনেতা হিসেবে শরীরচর্চা করাচ্ছেন বিনা পয়সায়। তিনি সংগঠনটির সভাপতি। জাহাঙ্গীর রতন একবার প্রশিক্ষণের জন্য গিয়েছিলেন ভারতে। সেখানে শরীরচর্চাও করতে হয়েছিল। দেশে ফেরার পর তার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য একা একা শরীরচর্চা শুরু করেছিলেন। পরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন অন্যরা। অনেকে অসুস্থ অবস্থায় এসে সুস্থ হয়েছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম জাহাঙ্গীর রতন বললেন, ‘শরীরচর্চা শারীরিক ও মানসিক উপকার করে। ছোটখাটো যেসব শারীরিক সমস্যা, সেগুলো এমনিই চলে যায়, চিকিৎসকের দরকার হয় না। তাই আমি নিজে শরীরচর্চা করি এবং অন্যদের উৎসাহিত করি।’
শরীরচর্চার সময় সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম। তিনি সরকারি চাকুরে। নজরুল ইসলাম বললেন, ‘বয়স আপনার যতই হোক না কেন, খেলাধুলা ও শরীরচর্চার বিকল্প নেই। উজ্জীবন পদ্মার পাড় তেমনই স্বাস্থ্যসচেতনমূলক একটি সংগঠন। যে কেউ এখানে শরীরচর্চার জন্য আসতে পারেন। আমি নিজে পাঁচ বছর ধরে আসি। এটা এখন আমার জীবনের অংশ।’
নেই অবসাদ ও অসুস্থতা
পরপর দুই ছেলের মৃত্যুতে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন হাসান আলী। প্রায় ১০ বছর আগে তাঁকে উজ্জীবনে আনেন জাহাঙ্গীর রতন। এখন হাসান আলী সব অবসাদ ভুলে গেছেন। হৃৎপিণ্ডে বাইপাস সার্জারি করাতে হয়েছে সিরাজুল ইসলাম (৬০) ও হারুন-অর-রশিদের (৫৮)। এখন নিয়মিত পদ্মাপাড়ের মুক্ত বাতাসে শরীরচর্চা করে তাঁরা ভালো আছেন।
উজ্জীবন পদ্মার পাড়ের নির্বাহী কমিটির পাশাপাশি একটি উপদেষ্টা কমিটিও আছে। সেই কমিটির সদস্য খাদ্য বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান বেল্টু। তিনি বললেন, ‘রোজ ভোরে আমরা হাঁটাহাঁটির পর এক ঘণ্টা শরীরচর্চা করি। এই রুটিন প্রায় ২৫ বছর ধরে চলছে। এখানে হাতের, হার্টের, চোখের, পায়েরসহ সব ধরনের ব্যায়াম করা হয়।’
আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. নুরুদ্দীন বললেন, ‘এটা বিজ্ঞানসম্মত। স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। কোনো দুর্যোগ ছাড়া প্রতিদিনই আমাদের শরীরচর্চা হয়। পিএইডি থেকে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ—সবাই এখানে আসেন। আমরা খুব আন্তরিকভাবে এটাকে ভালোবাসি। আমরা নিজ উদ্যোগেই মনের টানে চলে আসি। প্রায় এক ঘণ্টা অনুশীলনের পর চায়ের আড্ডা হয়। আমরা মন খুলে সবাই আলাপ করি। কার কী সমস্যা আছে বলি। মন খুলে হাসি। মনটা প্রফুল্ল হয়।’
ওষুধ ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন মামুন প্রথমে লজ্জা পেতেন। এখন বলছেন, ‘নিজে সুস্থ আর ভালো থাকার স্বার্থে এখানে আসি। এখানে শরীরচর্চার কারণে ছোটখাটো কোনো সমস্যা শরীরে হয় না। চিকিৎসকের কাছেও যেতে হয় না। আমি আগে শুধু এমনিই হাঁটতাম। পার্কে এসে প্রথমে লজ্জা পেতাম। একটু আড়ালে ব্যায়াম করে চলে যেতাম। পরে দেখলাম, সবাই একসঙ্গে শরীরচর্চা করছেন। বিষয়টা খুব ভালো লাগছে। তারপর আমিও যুক্ত হলাম।’
সামাজিক কর্মকাণ্ডে উজ্জীবন
উজ্জীবন পদ্মার পাড়ের একটি কার্যালয় আছে রাজশাহী শহরের মনিবাজারে। সেখানে মাসে একবার সভা হয়। কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সদস্যরা নিজেরাই টাকা তুলে প্রয়োজনে শীতবস্ত্র কিংবা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবারকে অর্থসহায়তা করেন। দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের বই কিনে দেন। বেতন পরিশোধ করেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। দুস্থদের দেন চিকিৎসাসহায়তা। পাশাপাশি নিজেদের বিনোদনের জন্য আয়োজন করেন বনভোজন। উজ্জীবনের সদস্যরা জানান, এসব কাজে তাঁরা মানসিক প্রশান্তি পান।
ফাল্গুনেও হালকা কুয়াশা পড়ে এখানে। আমগাছের পাতার ফাঁকে পূর্ব আকাশে উঁকি দিচ্ছে ভোরের সূর্য। গাছপালায় ভরা পার্কের একটি জায়গা পরিষ্কার করলেন এক ব্যক্তি। এর মধ্যে একজন-দুজন করে জনাবিশেক মানুষ এসে হাজির। বেশির ভাগই বয়োজ্যেষ্ঠ। একটু পরেই শুরু হলো শরীরচর্চা। গত বুধবার ভোরে এমন দৃশ্য দেখা গেল রাজশাহীর শিমলা পার্কে। জানা গেল, রোজ ভোরে এখানে শরীরচর্চা করেন জ্যেষ্ঠ এই নাগরিকেরা।
এভাবে টানা ২৩ বছর রাজশাহীর একদল স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ শরীরচর্চা করে চলেছেন। একসঙ্গে চলতে চলতে তাঁরা একটি সংগঠনও দাঁড় করেছেন, নাম ‘উজ্জীবন পদ্মার পাড়, রাজশাহী’। সংগঠনে এখন সদস্য প্রায় ৬০ জন। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষ প্রতিদিনই ভোরে এক হন শরীরচর্চা করতে। তাঁরা এখন শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্ত। যান না চিকিৎসকের কাছে; বরং শরীরচর্চার জন্য কয়েকজন চিকিৎসকই আসেন তাঁদের কাছে, পদ্মার পাড়ে!
বাধা ডিঙিয়ে উজ্জীবিত উজ্জীবন
উজ্জীবন পদ্মার পাড়ের স্লোগান হলো ‘নিয়মিত হাঁটুন, সুস্থ থাকুন’। সংগঠনের সদস্যরা আগে রাজশাহী রিভারভিউ স্কুলের মাঠে শরীরচর্চা করতেন। সেখানে হাসিঠাট্টা হতো, জোরে শব্দ হতো। অভিযোগ এল পাশেই থাকা জেলা প্রশাসকের বাংলো থেকে। ফলে জায়গা ছাড়তে হলো তাঁদের। গেলেন শিশু একাডেমির মাঠে। আপত্তি এল সেখানেও। এরপর শিমলা পার্ক। এখানে কোনো আপত্তি নেই। প্রায় আট বছর ধরে রোজ ভোরে সেখানেই চলছে শরীরচর্চা। এখানে যাঁরা আসেন, তাঁদের বেশির ভাগই বার্ধক্যে পৌঁছেছেন। তবে উজ্জীবনের মাধ্যমে বার্ধক্য জয় করে জীবনকে একেবারে নতুনভাবে উজ্জীবিত করেছেন তাঁরা।
হেঁটে হেঁটে পার্কে
রোজ ভোরে সবাই বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে শিমলা পার্কে আসেন। কেউ কেউ মসজিদে ফজরের নামাজ আদায়ের পর বাড়ি না ফিরে হাঁটা দেন পার্কের উদ্দেশে। শিমলা পার্কে এসে সবাই গোল হয়ে দাঁড়ান। তারপর শরীর নিয়ে চলে নানা রকম কসরত। বুধবার ভোরে পার্কে গিয়ে দেখা গেল, একজন বাঁশি বাজিয়ে শরীরচর্চা শুরুর সংকেত দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সবাই বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর মুখে ‘হু-হা, হা-হু’ শব্দ করে, কখনো দুহাত দুই দিকে প্রসারিত করার সঙ্গে সঙ্গে কোমর ভাঁজ করে নিচু হচ্ছেন সবাই। আবার কখনো অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছেন। এটি তাঁদের কণ্ঠের ব্যায়াম। চোখ পিটপিট করে চোখের ব্যায়াম করার সময় একজন সুরে সুরে বলে উঠলেন, ‘চোখের ব্যায়াম করলে চোখের অবস্থা ভালো থাকবে। সুচের গোড়ায় সুতা পরাতে পারবে..।’ ফুসফুস আর হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা বাড়াতে যে যতক্ষণ পারলেন নিশ্বাস ধরে রাখলেন। তারপর দম ছাড়লেন মুখে শব্দ করে।
শরীরচর্চার শেষ পর্যায়ে শপথ করালেন দলনেতা। শপথে বলা হলো, ‘সুস্থ থাকতে ধূমপান না করি। পরিমিত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করি। শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করি। নৈতিকতাবিরোধী কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখি। নিত্যদিনের কাজে মানুষের মঙ্গল কামনা করি। দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখি।’ এরপর ১ বলে নিজের নাম বললেন। এভাবে গণনা ও নাম বলা শেষ হলে শরীরচর্চাও শেষ হলো। পরে পার্কের কোণে থাকা ছোট্ট চায়ের দোকানে কেউ কেউ চা পান করলেন। কেউ গল্পগুজব, হাসিঠাট্টা করে বাড়ি ফিরলেন।
নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা
উজ্জীবন পদ্মার পাড়ের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম জাহাঙ্গীর রতন। শহরের মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা তিনি। ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা। অবসর নিয়েছেন ২০১৬ সালে। ২০০০ সাল থেকে তিনি এই সংগঠন চালাচ্ছেন। দলনেতা হিসেবে শরীরচর্চা করাচ্ছেন বিনা পয়সায়। তিনি সংগঠনটির সভাপতি। জাহাঙ্গীর রতন একবার প্রশিক্ষণের জন্য গিয়েছিলেন ভারতে। সেখানে শরীরচর্চাও করতে হয়েছিল। দেশে ফেরার পর তার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য একা একা শরীরচর্চা শুরু করেছিলেন। পরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন অন্যরা। অনেকে অসুস্থ অবস্থায় এসে সুস্থ হয়েছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম জাহাঙ্গীর রতন বললেন, ‘শরীরচর্চা শারীরিক ও মানসিক উপকার করে। ছোটখাটো যেসব শারীরিক সমস্যা, সেগুলো এমনিই চলে যায়, চিকিৎসকের দরকার হয় না। তাই আমি নিজে শরীরচর্চা করি এবং অন্যদের উৎসাহিত করি।’
শরীরচর্চার সময় সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম। তিনি সরকারি চাকুরে। নজরুল ইসলাম বললেন, ‘বয়স আপনার যতই হোক না কেন, খেলাধুলা ও শরীরচর্চার বিকল্প নেই। উজ্জীবন পদ্মার পাড় তেমনই স্বাস্থ্যসচেতনমূলক একটি সংগঠন। যে কেউ এখানে শরীরচর্চার জন্য আসতে পারেন। আমি নিজে পাঁচ বছর ধরে আসি। এটা এখন আমার জীবনের অংশ।’
নেই অবসাদ ও অসুস্থতা
পরপর দুই ছেলের মৃত্যুতে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন হাসান আলী। প্রায় ১০ বছর আগে তাঁকে উজ্জীবনে আনেন জাহাঙ্গীর রতন। এখন হাসান আলী সব অবসাদ ভুলে গেছেন। হৃৎপিণ্ডে বাইপাস সার্জারি করাতে হয়েছে সিরাজুল ইসলাম (৬০) ও হারুন-অর-রশিদের (৫৮)। এখন নিয়মিত পদ্মাপাড়ের মুক্ত বাতাসে শরীরচর্চা করে তাঁরা ভালো আছেন।
উজ্জীবন পদ্মার পাড়ের নির্বাহী কমিটির পাশাপাশি একটি উপদেষ্টা কমিটিও আছে। সেই কমিটির সদস্য খাদ্য বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান বেল্টু। তিনি বললেন, ‘রোজ ভোরে আমরা হাঁটাহাঁটির পর এক ঘণ্টা শরীরচর্চা করি। এই রুটিন প্রায় ২৫ বছর ধরে চলছে। এখানে হাতের, হার্টের, চোখের, পায়েরসহ সব ধরনের ব্যায়াম করা হয়।’
আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. নুরুদ্দীন বললেন, ‘এটা বিজ্ঞানসম্মত। স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। কোনো দুর্যোগ ছাড়া প্রতিদিনই আমাদের শরীরচর্চা হয়। পিএইডি থেকে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ম্যাজিস্ট্রেট, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ—সবাই এখানে আসেন। আমরা খুব আন্তরিকভাবে এটাকে ভালোবাসি। আমরা নিজ উদ্যোগেই মনের টানে চলে আসি। প্রায় এক ঘণ্টা অনুশীলনের পর চায়ের আড্ডা হয়। আমরা মন খুলে সবাই আলাপ করি। কার কী সমস্যা আছে বলি। মন খুলে হাসি। মনটা প্রফুল্ল হয়।’
ওষুধ ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন মামুন প্রথমে লজ্জা পেতেন। এখন বলছেন, ‘নিজে সুস্থ আর ভালো থাকার স্বার্থে এখানে আসি। এখানে শরীরচর্চার কারণে ছোটখাটো কোনো সমস্যা শরীরে হয় না। চিকিৎসকের কাছেও যেতে হয় না। আমি আগে শুধু এমনিই হাঁটতাম। পার্কে এসে প্রথমে লজ্জা পেতাম। একটু আড়ালে ব্যায়াম করে চলে যেতাম। পরে দেখলাম, সবাই একসঙ্গে শরীরচর্চা করছেন। বিষয়টা খুব ভালো লাগছে। তারপর আমিও যুক্ত হলাম।’
সামাজিক কর্মকাণ্ডে উজ্জীবন
উজ্জীবন পদ্মার পাড়ের একটি কার্যালয় আছে রাজশাহী শহরের মনিবাজারে। সেখানে মাসে একবার সভা হয়। কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সদস্যরা নিজেরাই টাকা তুলে প্রয়োজনে শীতবস্ত্র কিংবা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবারকে অর্থসহায়তা করেন। দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের বই কিনে দেন। বেতন পরিশোধ করেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। দুস্থদের দেন চিকিৎসাসহায়তা। পাশাপাশি নিজেদের বিনোদনের জন্য আয়োজন করেন বনভোজন। উজ্জীবনের সদস্যরা জানান, এসব কাজে তাঁরা মানসিক প্রশান্তি পান।
রোগে-শোকে মানুষকে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু ওষুধ খেতে হয়। নিত্যপণ্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে যেখানে সাধারণ মানুষের তিনবেলা আহারের জোগান দেওয়াই কষ্টকর, সেখানে জীবন রক্ষার জন্য দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে ওধুষ কিনতে গিয়ে জীবন আরও ওষ্ঠাগত। দেশে এখন নিম্নআয়ের ৪০ শতাংশ মানুষের মোট আয়ের ২০ শতাংশ খরচ হচ্ছে ওষুধ কিনতেই।
১ দিন আগেদেশে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা না থাকায় ও ডাক্তারের ওপর আস্থা না থাকায় বিদেশে চিকিৎসা নিতে প্রতিবছর দেশের মানুষ ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। স্বাস্থ্যেসেবার উন্নয়ন না হলে এর পরিমাণ দিন দিন আরও বাড়বে।
১ দিন আগেআমাদের দেশে শীত উপভোগ্য মৌসুম। কিন্তু অনেকের ঠান্ডা, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা, অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা যাদের আছে, তাদের এই মৌসুমে কষ্ট বেড়ে যায়।
১ দিন আগেত্বক অভ্যন্তরীণ অঙ্গের সংক্রমণ এবং যেকোনো ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়। তাই এর যত্নে বিশেষ মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। শীতকালে ত্বক শুষ্ক ও টানটান হলে দুশ্চিন্তা করবেন না। চুলকানি হলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের প্রতিরক্ষামূলক তেল কমিয়ে দেয়।
১ দিন আগে