ঘাড়ব্যথার কারণ ও করণীয়

ডা. এম ইয়াছিন আলী
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮: ০৪

বেশির ভাগ মানুষ জীবনের কোনো এক সময় ঘাড়ব্যথায় ভোগেন। মেরুদণ্ডের ঘাড়ের অংশকে চিকিৎসা পরিভাষায় সারভাইক্যাল স্পাইন বলে। এই অংশে থাকে মেরুদণ্ডের ওপরের ৭টি কশেরুকা এবং দুই কশেরুকার মাঝখানের ডিস্ক, পেশি ও লিগামেন্ট। মাথার হাড় বা স্কাল থেকে মেরুদণ্ডের সপ্তম কশেরুকা পর্যন্ত ঘাড় বিস্তৃত। আট জোড়া সারভাইক্যাল স্পাইন নার্ভ বা স্নায়ু ঘাড়, কাঁধ, বাহু, নিবাহু, হাত ও আঙুলের চামড়ার অনুভূতি এবং পেশির সঙ্গে যুক্ত। ঘাড়ের সমস্যা পুরুষের তুলনায় নারীদের বেশি হয়।
লোকাল বা স্থানীয় এবং রেফার্ড পেইন বা দূরে ছড়িয়ে যাওয়া ব্যথা—ঘাড়ে এ দুই ধরনের ব্যথা হয়।

ঘাড়ব্যথার কারণ
অনেক কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস।
  • রভাইক্যাল স্পনডাইলোলিসথেসিস। 
  • সারভাইক্যাল রিবস।
  •  স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া।   
  • হারনিয়াটেড ডিস্ক নার্ভের ওপর চাপ প্রয়োগ করলে। 
  •  মাংসপেশি, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, ডিস্ক ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি।
  •  অস্বাভাবিকভাবে ঘুমানো।
  •  উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগ। 
  •  হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ।
  • অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ও ভঙ্গুরতা রোগ।
  •  হাড় নরম ও বাঁকা হওয়া।
  •  রিউমাটয়েড-আর্থ্রাইটিস ও সেরো নেগেটিভ আর্থ্রাইটিস।
  •  সারভাইক্যাল অস্টিও-আর্থ্রাইটিস।
  •  ফাইব্রোমায়ালজিয়া।
  •  সামনে ঝুঁকে বা পাশে কাত হয়ে ভারী কিছু তুলতে চেষ্টা করা। 
  •  হাড়ের সংক্রমণ। 
  • ডিস্কের প্রদাহ।
  •  পেশাগত কারণে দীর্ঘক্ষণ ঘাড় নিচু বা উঁচু করে কাজ করা।
  •  পড়াশোনার সময় ঘাড় ও মাথার অবস্থান ঠিকমতো না হলে।
  •  উপুড় হয়ে বা শুয়ে বই পড়লে। 
  •  ড্রাইভিং করার সময় ঘাড় ও মাথা সঠিক অবস্থায় না থাকলে।
  •  বুক ও পেটের মধ্যকার বিভিন্ন অঙ্গের সমস্যার জন্য।
  • হাড় ও স্নায়ুর টিউমার। যেকোনো কারণে অতিরিক্ত চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়া ইত্যাদি।

 উপসর্গ

  • ঘাড়ব্যথা এবং সেই ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে ছড়িয়ে পড়া।
  • কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব। 
  •    বাহু, হাত ও আঙুল দুর্বল হতে পারে।
  • সব সময় ঘাড় ধরে বা জমে থাকা এবং ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা।
  •  ঘাড়ের নড়াচড়া ও দাঁড়ানো অবস্থায় কাজ করলে ব্যথা বেড়ে যাওয়া।
  •  ঘাড় নিচু করে ভারী কিছু তোলা বা অতিরিক্ত কাজের পর তীব্র ব্যথা।
  •  হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যাওয়া।
  •  ব্যথা মাথার পেছন থেকে শুরু হয়ে মাথার সামনে আসা।
  •  শরীর দুর্বল লাগা, ঘুমের বিঘ্ন ঘটা এবং কাজ করতে অনীহা, শারীরিক ভারসাম্যহীনতা।
  •  প্রস্রাব ও পায়খানার নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।
  •  পায়ে দুর্বলতা বা অবশ ভাব।
  •  রাতে ব্যথার জন্য ঘুম ভেঙে যাওয়া।
  •  ব্যথার সঙ্গে জ্বর, ঘাম, শীত শীত ভাব বা শরীর কাঁপানো ইত্যাদি থাকা।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা
ঘাড়ব্যথার চিকিৎসার জন্য যে পরীক্ষাগুলো প্রয়োজনীয়

  • রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা 
  •  এক্স-রে ও এমআরআই
  •  সিটি স্ক্যান ইত্যাদি।

চিকিৎসা
ঘাড়ব্যথার চিকিৎসা এর কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে। চিকিৎসার মূল 
লক্ষ্য হলো:

  • ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ নিরাময় করা
  • ঘাড়ের নড়াচড়া স্বাভাবিক করা।

কনজারভেটিভ চিকিৎসা

  • অ্যান্টিইনফ্লামেটরি ওষুধ সেবন
  • ফিজিওথেরাপি: এটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন চিকিৎসাপদ্ধতি। কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি, যেমন বিভিন্ন ম্যানুয়াল বাম্যানুপুলেশন থেরাপি ও বিশেষ ব্যায়াম দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। এ ছাড়া এই চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট, যেমন ইন্টারফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, অতি লোহিত রশ্মি, মাইক্রো-অয়েভ ডায়াথারমি, আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ, ডায়াথার্মি ও ইন্টারমিটেন্ট ট্র্যাকশন, ট্রানসকিউটেনিয়াস ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন ইত্যাদি। কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা
কনজারভেটিভ বা মেডিকেল চিকিৎসায় ভালো না হলে, ব্যথা ক্রমেই বাড়তে থাকলে, স্নায়ুর সমস্যা দেখা দিলে, বাহু, হাত ও আঙুলে দুর্বলতা দেখা দিলে এবং প্রস্রাব বা পায়খানা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে দ্রুত সার্জিক্যাল চিকিৎসা নিতে হবে। বিভিন্ন ধরনের সার্জিক্যাল চিকিৎসা দেওয়া হয় এর কারণের ওপর নির্ভর করে।

করণীয়

  • সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না। 
  •  মাথার ওপর কোনো ওজন নেবেন না। 
  • প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিন। 
  •  শক্ত বিছানায় ঘুমাবেন।
  •  শোয়ার সময় একটা মধ্যম আকারের বালিশ ব্যবহার করুন এবং এর অর্ধেক মাথা ও অর্ধেক ঘাড়ের নিচে দিন।
  •  তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ঘাড় নিচু বা উঁচু করা, মোচড়ানো বন্ধ করুন। 
  •  অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বন্ধ করুন। 
  •  সেলুনে কখনোই ঘাড় মটকাবেন না। 
  •  কাত হয়ে শুয়ে দীর্ঘক্ষণ পড়া ও টেলিভিশন দেখবেন না। 
  •  কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটর চোখের লেভেলে রাখুন। 
  •  গরম প্যাড বা গরম পানির বোতল দিয়ে গরম সেঁক দিন। 
  •  ঘাড়ের পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করুন। 
  •  ভ্রমণের সময় গলায় সার্ভাইক্যাল কলার ব্যবহার করুন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত