ডেঙ্গু দমনে করণীয়

ড. মো. জগলুল হায়দার ইকবাল
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২২, ১৪: ০০
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২২, ১৪: ১৮

ডেঙ্গু জ্বর ভাইরাসজনিত রোগ। এটি যন্ত্রণাদায়ক হলেও মরণব্যাধি নয়। তবে রক্তক্ষরণসহ ডেঙ্গু জ্বরে রোগী সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা যেতে পারে। ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষ থেকে মশা, আবার মশা থেকে মানুষের রক্তে স্থানান্তরিত হয়। এ ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়ায় এবং রোগ সৃষ্টি করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (২০১৩) মতে, ডেঙ্গু জ্বরে প্রতিবছর ২২ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে, যেখানে শিশুদের সংখ্যাই বেশি।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
·        উচ্চমাত্রায় (১০৪ থেকে ১০৫ ফারেনহাইট) জ্বর।
·        অস্থি ও চোখের পেছনে, মাংসপেশিতে ও মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা।
·        ত্বকে লালচে র‌্যাশ দেখা যায়। ডেঙ্গু জ্বরে দাঁতের মাড়ি, নাক, মুখ ও পায়ুপথে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

পৃথিবীতে পাওয়া ৩ হাজারের বেশি প্রজাতির মশার মধ্যে অন্যতম এডিস এজিপটাই। এরা প্রধানত দিনের শুরুতে ও দিনের শেষে অর্থাৎ সূর্যাস্তের পূর্বে মানুষসহ অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীকে কামড়ায়। এডিসের তিনটি প্রজাতিই ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাসের বাহক। তবে এডিস এজিপটাই প্রজাতিটি সারা পৃথিবীতে ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস বিস্তারে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

রোগের সংক্রমণ পদ্ধতি
মশা তার নিজের ডিমের পরিপক্বতার জন্য মানুষ বা মেরুদণ্ডী প্রাণীর রক্ত পান করে। মশা যখন ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো রোগীকে কামড়ায়, তখন সে নিজেই সেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ডেঙ্গু রোগের বাহক হয়ে  যায়। পরবর্তী সময়ে এই ভাইরাসে আক্রান্ত মশাই দংশনের মাধ্যমে অন্য ব্যক্তির দেহে ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়। এভাবে একজন থেকে আরেকজনে ভাইরাসের সংক্রমণ এবং রোগের বিস্তার ঘটে। তা ছাড়া এক দেশ থেকে অন্য দেশে যানবাহনের মাধ্যমে ভাইরাস আক্রান্ত মশা স্থানান্তরিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় আক্রান্ত রোগী এক দেশ থেকে অন্য দেশে গেলে এডিস মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। তাই সুস্থ মানুষকে এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগী দুটি থেকেই নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়
সর্বপ্রথম নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। এডিস মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে। প্রতি বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে যখনই বৃষ্টি হবে তখনই কিছু কাজ করতে হবে।
·        ঘরবাড়ি ও এর আশপাশে ৩ দিনের বেশি কোনো পাত্রে পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
·        যেকোনো ভাবেই হোক অব্যবহৃত পাত্রে পানি জমতে না দেওয়া।
·        পাত্রের পরিষ্কার পানিতে এডিস মশার লার্ভা বা পিউপা থাকলে ফেলে দেওয়া।
·        এডিস মশার সম্ভাব্য সকল বাসস্থান, যেমন পানিসহ প্লাস্টিকের বিভিন্ন বোতল, বাটি, এসির পেছনের ট্রে, ফ্রিজের পেছনের ট্রে, ফুলের টব ইত্যাদি ধ্বংস করা।
·        পরিচ্ছন্নতা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সহযোগিতা করা।

লেখক: কীটতত্ত্ববিদ, সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, সরকারি শহীদ আসাদ কলেজ, নরসিংদী 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত