শ্রবণ সমস্যা ও সমাধানে করণীয়

ডা. ম. মঈনুল হাফিজ
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২: ০৯
Thumbnail image

বধিরতা ও শ্রবণ সমস্যা একটি সামাজিক ব্যাধি। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে শ্রবণ সমস্যায় ভুগছে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করার কারণে সমস্যা জটিল হচ্ছে। তাই কানের শ্রবণ সমস্যায় শুরুতেই যত্ন নেওয়া জরুরি।

শ্রবণ সমস্যার কারণ

  • জন্মগত ত্রুটির কারণে শ্রবণ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • বংশ ও জিনগত কারণ।
  • প্রসবকালীন জটিলতা।
  • মায়ের গর্ভকালীন কিছু সংক্রমণ।
  • শিশুর মেনিনজাইটিস বা মস্তিষ্কে কনফেশন এবং ভাইরাসজনিত রোগ, যেমন মাম্পস, মিসেলস ইত্যাদি।
  • উচ্চশব্দ। হেডসেট বা হেডফোনের বেশি ভলিউম, উচ্চশব্দের কনসার্ট, আতশবাজির শব্দ, রাস্তায় গাড়ির হর্ন, কলকারখানার শব্দ ও বজ্রপাতের শব্দ।
  • কানের ক্ষতিকর ওষুধের ব্যবহার বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ড্রপ ব্যবহার।
  • কানে আঘাত ও দুর্ঘটনা।
  • দীর্ঘদিনের কানের প্রদাহ বা সংক্রমণ।
  • শিশু-কিশোরদের দীর্ঘদিনের টনসিলে সংক্রমণ।
  • দীর্ঘদিন কানে ময়লা জমে থাকা।
  • বয়সজনিত কারণ।
  • ধূমপান, রক্তে চর্বি জমা, পুষ্টিহীনতা ও হঠাৎ খারাপ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ।

প্রতিরোধ

  • বংশ ও জিনগত বধিরতা দূর করতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। জেনেটিক রোগ সম্পর্কে ধারণা থাকলে, বিশেষ করে কনসেনগুয়াল ম্যারেজ তথা রক্ত সম্পর্কিত বিয়ে বাদ দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
  • জন্মগত ত্রুটি দূর করতে নিরাপদ গর্ভধারণ ও প্রসব নিশ্চিত করা।
  • জন্ম-পরবর্তী নবজাতকের সঠিক যত্ন ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা।
  • জন্মের পরপরই কানের শ্রবণশক্তি পরীক্ষা করা এবং সেটি স্বাভাবিক স্ক্রিনিং প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা। দ্রুত রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া।

চিকিৎসা

  • সুস্থ-স্বাভাবিক শ্রবণক্ষমতাসম্পন্ন শিশু পেতে মা ও শিশুর টিকা নিশ্চিত করতে হবে।
  • শিশু বয়সে কোনো ভাইরাসজনিত রোগ, বিশেষ করে জ্বর হলে দ্রুত সঠিক চিকিৎসা নেওয়া এবং কানে শোনার সমস্যা আছে কি না, খেয়াল রাখা।
  • বাচ্চাদের টনসিলে সংক্রমণ ও এডিনয়েড বা নাকের পেছনের টনসিলের সঠিক চিকিৎসা নেওয়া এবং প্রয়োজনে সার্জারি করান।
  • কান থেকে পানি, পুঁজ, রক্ত পড়লে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এবং সঠিক চিকিৎসা নেওয়া।
  •  দীর্ঘদিন ধরে কানের প্রদাহ বা পর্দায় ছিদ্র থাকলে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া।
  • বয়সজনিত কারণে বা অন্য যেকোনো কারণে শোনার সমস্যা হলে কানের শ্রবণ পরীক্ষা-পরবর্তী রোগ নির্ণয় করে অনেক ক্ষেত্রে শ্রবণযন্ত্রের সাহায্যে কানে শোনার ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা যায়।
  • শব্দদূষণ এড়িয়ে চলা।
  • বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কানে কোনো ওষুধ, তেল বা ড্রপ ব্যবহার না করা। কানে ময়লা বা খৈল জমে কান বন্ধ হলে বা কানে কোনো কিছু ঢুকলে তা বের করতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
  • এ ছাড়া স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের শ্রবণ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে প্রশিক্ষিত করা প্রয়োজন।

 

লেখক: ডা. ম. মঈনুল হাফিজ, নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ও হেড-নেক সার্জন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত