Ajker Patrika

জোটের বৈশ্বিক গুরুত্ব বাড়াতে ব্রিকসের সম্প্রসারণ চায় চীন 

আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১৩: ৩৪
জোটের বৈশ্বিক গুরুত্ব বাড়াতে ব্রিকসের সম্প্রসারণ চায় চীন 

বিশ্বের উদীয়মান শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর জোট ব্রিকসের সম্প্রসারণের বিষয়টি এগিয়ে নিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে চীন। গতকাল মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে শুরু হওয়া পাঁচ দেশের—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা—জোটের শীর্ষ বৈঠকেও বিষয়টি বেশির ভাগ সময় দখল করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। 

বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় এক-চতুর্থাংশ নিয়ন্ত্রণ করে এই জোটের পাঁচটি দেশ। জোটটিতে বাংলাদেশ, ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ প্রায় ১৮টি দেশ যোগ দিতে চায় বলে জানিয়েছে দ্য ইকোনমিস্ট। চীন দেশগুলোকে জোটে সম্প্রসারণের পক্ষে। এ বিষয়ে চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে চীন জোট সম্প্রসারণ করতে চায় না; বরং দেশটি সবার সাধারণ কল্যাণের লক্ষ্যেই জোটের সম্প্রসারণ চায়। 

গতকাল মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনের শুরুতে এক বিজনেস ফোরামে চীনের প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও। তিনি বলেন, ‘সি বলেছেন, চীনের ডিএনএতেই আধিপত্যবাদ নেই।’ তিনি সি চিন পিংকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘বড় ধরনের শক্তির প্রতিযোগিতায় নামা বা “গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব” সৃষ্টি করার কোনো ইচ্ছা চীনের নেই।’ বরং শান্তি এবং উন্নয়নের অবকাঠামো বিস্তৃত করার লক্ষ্যেই জোটের সম্প্রসারণ চায় চীন। 

চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী সেখানে বলেন, ‘যত বাধাই আসুক না কেন, ব্রিকস একটি ইতিবাচক ও স্থিতিশীল শক্তি হিসেবে কল্যাণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। আমরা ব্রিকসে নতুন সদস্য গ্রহণের মাধ্যমে একটি কৌশলগত অংশীদারত্বের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাব। যা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে আরও ন্যায্য ও সমতাভিত্তিক করে তুলবে। 
 

সব দিক বিবেচনায় চীন ব্রিকসের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী সদস্য। দেশটির প্রেসিডেন্ট চলতি বছর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিদেশ সফরে গেলেন, তাও আবার ব্রিকসের সম্মেলনে। ফলে চীনের কাছে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর সফর চীনের জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। 

ব্রিকসকে অনেকে পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে ভাবলেও চীন যেমন বিষয়টি স্বীকার করে না তেমনি প্রায় একই স্বরে কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রও। সম্প্রতি ব্রিকসের বিষয়ে মূল্যায়ন তুলে ধরতে গিয়ে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেন, ব্রিকস যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গড়ে উঠছে এমনটা দেখা যাচ্ছে না। 

জেক সুলিভান বলেন, ওয়াশিংটন ব্রাজিল, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে শক্তিশালী ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ার উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চীনের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাব এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরোধিতা করতে থাকব।’ 

তারপরও জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্বের বিভাজনটি বড় আকারেই ফুটে উঠেছে। কারণ, যখন পশ্চিমা বিশ্ব থেকে প্রায় একঘরে তখন ব্রিকসের সদস্য হিসেবে রাশিয়া জোটের সদস্যদের কাছ থেকে নজিরবিহীন ‘সঙ্গ’ উপভোগ করছে। কারণ, চীন, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা কোনো দেশই এখনো ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার সমালোচনা করেনি এবং ব্রাজিল নিন্দা করলেও পশ্চিমা বিশ্ব যখন ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছিল তখন তা থেকে দূরে ছিল দেশটি। 
 
তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় এবং দক্ষিণ আফ্রিকা আইসিসির সদস্য দেশ হওয়ায় পুতিন গ্রেপ্তার এড়াতে এবারের শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত হননি। তবে ভার্চ্যুয়ালি তিনি যোগ দিয়েছেন সম্মেলনে। তাঁর পরিবর্তে সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। আগেই রেকর্ড করা এক ভাষণে পুতিন বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ হিসেবে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকেই দায়ী করেন। তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমা বিশ্ব নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে মুক্তবাজার অর্থনীতির মৌলিক নিয়ম ভঙ্গ করছে। 

সম্মেলনে জোটের সদস্য দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভাও যোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া আরও প্রায় ৫০টি দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানকেও আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে। 

জোটের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে শাসনতান্ত্রিক ভিন্নতা রয়েছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সমান নয়। তারপরও জোটের সদস্য দেশগুলো এমন একটি বিশ্ব ব্যবস্থা চান যেখানে তাদের স্বার্থ আরও বেশি রক্ষিত হবে এবং তাদের আরও বেশি প্রতিফলিত হবে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে জোটটি নিজস্ব মিনি আইএমএফ (কন্টিনজেন্ট রিজার্ভ অ্যারেঞ্জমেন্ট-সিআরএ) এবং মিনি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গঠন করেছে। এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্দেশ্য হলো, বিশ্বজুড়ে ডলারের আধিপত্য হ্রাস করা। তবে এর মানে এই নয় যে, তা পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সংঘাত তৈরি করবে। 
 
গত মঙ্গলবারই ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন ব্রিকস বিশ্বে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যেতে চায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লুলা লিখেছেন, ‘আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যেতে আলোচনার টেবিলে বসতে চাই।’ 

জোহানেসবার্গে চলমান পঞ্চদশ ব্রিকস সম্মেলনের থিম হলো ‘ব্রিকস এবং আফ্রিকা’। মহাদেশটিকে ঘিরে চীন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতার মধ্যে ব্রিকসের নিজস্ব প্রভাব বিস্তারকে মাথায় রেখেই এই থিম নির্ধারণ করা হয়েছে। 

ব্রিকসের কাছে আফ্রিকার আলাদা গুরুত্ব তো আছেই এর বাইরেও এই মহাদেশের বিভিন্ন দেশসহ ৪০ টিরও বেশি দেশ জোটে যোগ দিতে চায় বলে জানিয়েছেন ব্রিকসের কর্মকর্তারা। এসব দেশের প্রায় সবাই পশ্চিমা বিশ্বের বাইরে এবং গ্লোবাল সাউথ বা পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ। এসব দেশের মধ্যে অনেকগুলোই আবার আগে জোট নিরপেক্ষ বলে পরিচিত ছিল আবার কিছু দেশ ঐতিহাসিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিরোধী মনোভাবসম্পন্ন। 
 
তবে দেশগুলো যে মনোভাবেরই হোক না কেন, ব্রিকস সম্প্রসারিত হলে যে এর গুরুত্ব বাড়বে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ কারণেই এই সম্মেলন ব্রিকসের অন্য যেকোনো সম্মেলনের চেয়ে অনেক বেশি নির্ধারক ভূমিকা পালন করবে। নতুন সদস্য গৃহীত হবে কি হবে না তা হয়তো চূড়ান্তভাবে বিবেচিত হতে পারে এই সম্মেলনে। নতুন সদস্যের কারণে জোটের গুরুত্ব যে বাড়বে সে কথাই যেন প্রতিধ্বনিত হলো সম্মেলনের আয়োজক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার মন্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘এটি দেখিয়ে দিতে যাচ্ছে যে, ব্রিকস পরিবার তার সদস্য দেশগুলো তো বটেই বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও এর গুরুত্ব বাড়াতে যাচ্ছে।’ 

এএফপি থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গ্রিস উপকূলে মাছধরা নৌকা থেকে বাংলাদেশিসহ ৫৪০ অভিবাসী উদ্ধার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

গ্রিসের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ গাভদোসের কাছে একটি মাছধরা নৌকা থেকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫৪০ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে দেশটির কোস্ট গার্ড। গ্রিক কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) গাভদোস দ্বীপ থেকে প্রায় ১৬ নটিক্যাল মাইল (২৯.৬ কিমি) দূরে লিবীয় সাগরে নৌকাটি শনাক্ত করা হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের টহল জাহাজ প্রথমে নৌকাটি দেখতে পায়। এরপর কোস্ট গার্ডের তিনটি জাহাজ, ফ্রন্টেক্সের তিনটি জাহাজ ও তিনটি বাণিজ্যিক জাহাজের সমন্বয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়।

জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া ৫৪০ জন অভিবাসীর সবাই বর্তমানে সুস্থ আছেন। তাঁদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী ক্রিট দ্বীপের আগিয়া গালিনি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

গ্রিক কোস্ট গার্ডের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। এ ছাড়া ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ফিলিস্তিনি নাগরিকেরাও এই দলে ছিলেন।

তাঁদের আপাতত ক্রিট দ্বীপের রেথিমনো শহরের একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাঁদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের (Asylum) আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর তোব্রুক থেকে পরিচালিত পাচারকারী চক্রগুলো এখন ইউরোপে প্রবেশের জন্য গাভদোস রুটটিকে বেশি ব্যবহার করছে। ২০২৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ক্রিট ও গাভদোসে ৭ হাজার ৩০০-এর বেশি অভিবাসী পৌঁছেছেন, যা ২০২৪ সালের পুরো বছরের মোট সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোটাকিস জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন অভিবাসন চুক্তি কার্যকর হবে। এর আওতায় যাঁদের আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হবে, তাঁদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

উদ্ধারকৃতদের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ, মিসর ও সুদানের নাগরিকেরা এই মরণযাত্রার জন্য পাচারকারী চক্রকে জনপ্রতি দুই থেকে পাঁচ হাজার ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২.৫ থেকে ৬ লাখ টাকা) পরিশোধ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পাঠদান শুরু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৬
২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত
২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। দীর্ঘ দুই বছর পর এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে সশরীরে পাঠদান শুরু হয়েছে। গত অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের অন্যতম প্রধান বিদ্যাপীঠটি পুনরায় চালু হলো। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রূপ আর দশটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো নয়। দেখলে মনে হবে যেন একটি বিশাল উদ্বাস্তু শিবির।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্ষগুলো শুধু পড়াশোনার জন্যই নয়, ইসরায়েলি হামলায় ঘরবাড়ি হারানো প্রায় ৫০০ বাস্তুচ্যুত পরিবারের আশ্রয়স্থল হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। একসময়ের বিশাল লেকচার হলের জায়গায় এখন সারি সারি তাঁবু টাঙানো।

২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত
২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে গাজার বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি। ছবি: সংগৃহীত

সেখানে আশ্রয় নেওয়া একজন বলেন, ‘আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই বলে এখানে এসেছি। কিন্তু এটি শিক্ষার জায়গা, আশ্রয়কেন্দ্র নয়। আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য এই বিদ্যাপীঠের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা জরুরি।’

ইউনেসকোর তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের ফলে গাজার ৯৫ শতাংশেরও বেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো ও জাতিসংঘ একে ‘স্কলাস্টিসাইড’ বা পদ্ধতিগতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেছে।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় গাজার ৪৯৪টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে গাজাভিত্তিক আল-মেজান সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ১৩৭টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী, ৭৬০ জন শিক্ষক এবং ১৫০ জন শিক্ষাবিদ ও গবেষক নিহত হয়েছেন।

গাজার সর্বশেষ সচল বিদ্যাপীঠ ইসরা ইউনিভার্সিটিকেও ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী।

ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে মাত্র চারটি সচল শ্রেণিকক্ষে বর্তমানে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আদেল আওয়াদুল্লাহ জানান, ভাঙা দেয়ালগুলো প্লাস্টিকের শিট দিয়ে ঢেকে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ নেই, তাই আমরা ধার করা জেনারেটর চালিয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সচল রাখার চেষ্টা করছি।’

মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ইউমনা আলবাবা বলেন, ‘আমি যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখেছিলাম, এটি তেমন নয়। মনোযোগ দেওয়ার মতো পরিবেশ বা পর্যাপ্ত সরঞ্জাম—কোনোটিই এখানে নেই। তবুও আমি খুশি যে সশরীরে ক্লাস করতে পারছি। আমরা শূন্য থেকে সবকিছু গড়ার স্বপ্ন দেখছি।’

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, গাজার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করা মূলত ফিলিস্তিনি সমাজের ভিত্তি উপড়ে ফেলার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা। বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের অভাবে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমও মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবুও গাজার শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসার মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধারের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নতুন মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির ১৭ বছরের কারাদণ্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। তোশাখানা বা রাষ্ট্রীয় উপহার ভান্ডারের মূল্যবান উপহার কম দামে কিনে নেওয়ার অভিযোগে আজ শনিবার এই রায় ঘোষণা করা হয়। তবে ইমরান খানের আইনজীবীরা এই রায়কে ‘একপক্ষীয়’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁরা বলছেন, বিবাদী পক্ষের কোনো বক্তব্য না শুনেই এই সাজা ঘোষণা করা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এআইএ) বিশেষ আদালত এই রায় দেন। সাজাটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথমে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড। এরপর দুর্নীতিবিরোধী আইনের আওতায় সাত বছর কারাদণ্ড। এ ছাড়া কারাদণ্ডের পাশাপাশি উভয়কে মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জানিয়েছেন, ইমরান খান বর্তমানে জমি-সংক্রান্ত একটি দুর্নীতি মামলায় ১৪ বছরের সাজা খাটছেন। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এই ১৭ বছরের কারাদণ্ড কার্যকর শুরু হবে।

এ মামলাটি মূলত সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের দেওয়া অত্যন্ত দামি কিছু উপহার (বিলাসবহুল ঘড়ি) নিয়ে। অভিযোগ রয়েছে—ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন উপহারগুলো তোশাখানায় জমা দেন। পরে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী রাষ্ট্রীয় নিয়ম লঙ্ঘন করে কম মূল্যে সেগুলো তোশাখানা থেকে নিজের নামে কিনে নেন। প্রসিকিউশনের দাবি, এর ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কয়েক মিলিয়ন রুপির ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এই রায়কে প্রত্যাখ্যান করেছে। দলের মুখপাত্র জুলফি বুখারি বলেছেন, এটি ন্যায়বিচারের নীতি লঙ্ঘন করে করা একটি ‘ফরমায়েশি রায়’।

এ রায়ের প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার পাঞ্জাব প্রদেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে পিটিআই।

ইমরান খানের আইনজীবী সালমান সফদর জানিয়েছেন, রায়ের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আপিল করার জন্য তাঁদের আইনি দলকে নির্দেশ দিয়েছেন কারাবন্দী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

২০২২ সালে সংসদীয় অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী আছেন। তাঁর দলের অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর পরিবার বা আইনজীবীদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলি সেটলারদের আগ্রাসন ঠেকাতে ফিলিস্তিনি গ্রামে মানবঢাল একদল স্বেচ্ছাসেবক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

প্রতিদিন সকালে কিশোর ইসরায়েলি সেটলাররা পাহাড়ের ওপর থেকে একপাল ছাগল তাড়িয়ে নিচের উপত্যকায় ফিলিস্তিনি গ্রাম রাস আইন আল-আউজার দিকে নিয়ে আসে।

এ সময় গ্রামের নারী, পুরুষ ও শিশুরা আশ্রয় নেয় তাদের কুঁড়েঘর ও তাঁবুর ভেতর। কোনো ফিলিস্তিনি যদি সামান্য প্রতিরোধের ইঙ্গিত দেয়, তাহলে প্রায় নিশ্চিতভাবেই সেখানে হাজির হয় ইসরায়েলি সেনা বা সীমান্ত পুলিশ। এরপর শুরু হয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত। বিনা বিচারে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর আটক তো আছেই।

বলা বাহুল্য, ইসরায়েলি সেটলারদের লক্ষ্য—তাদের গবাদিপশু দিয়ে গ্রামটি দখল করে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দেওয়া।

আশার কথা, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে এহেন ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রতিরোধের শক্তি হয়ে সম্প্রতি হাজির হয়েছেন একদল স্বেচ্ছাসেবক। তাঁরা পাহাড় থেকে নামতে থাকা ইসরায়েলি সেটলারদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাদের সরিয়ে দেন।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, আজ শনিবারে রাস আইন আল-আউজা গ্রামের বাসিন্দাদের রক্ষাকারীদের মধ্যে ছিলেন চারজন ইসরায়েলি ইহুদি, একজন হাঙ্গেরিয়ান ও একজন মার্কিন নাগরিক। তাঁরা ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ির চারপাশে মানবঢাল তৈরি করে এগিয়ে আসা পশুগুলো তাড়ানোর চেষ্টা করেন।

অবসরপ্রাপ্ত ইসরায়েলি মেজর ও স্বেচ্ছাসেবী আমির পানস্কি বলেন, ‘সেটলাররা এমন সব উসকানি দেয়, যার ফলে ফিলিস্তিনিরা প্রতিরোধ করতে বাধ্য হয়। আর সেটাকেই অজুহাত বানিয়ে তাদের ওপর চলে দমন-পীড়ন। আমরা এখানে সুরক্ষাকবচ হিসেবে আছি। আমরা আমাদের দেহকে ইহুদি সেটলার ও ফিলিস্তিনিদের মাঝে ঢাল হিসেবে দাঁড় করিয়েছি।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই স্বেচ্ছাসেবকেরা যতবার কোনো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেন, ততবারই সেটলার রাখালেরা পাল্টা কৌশলে তাঁদের পাশ কাটানোর চেষ্টা করে। তারা স্বেচ্ছাসেবকদের একেবারে কাছে চলে যায়। স্বেচ্ছাসেবকেরা তখন হাত নেড়ে ও চিৎকার করে নিজেদের অবস্থানে অটল থাকার চেষ্টা করেন।

এ সময় সেটলাররা মোবাইল ফোন উঁচু করে পুরো দৃশ্য ধারণ করে এবং সরাসরি মন্তব্য করতে থাকে। অন্যদিকে প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবকের দেহে লাগানো থাকে বডি ক্যামেরা, যাতে তাঁদের বিরুদ্ধে হামলা করার ভুয়া অভিযোগ না ওঠে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত