আদানির সঙ্গে ‘গোপন’ চুক্তির পাঁয়তারা, কেনিয়াতে ছাত্র–শ্রমিক–জনতার বিক্ষোভ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮: ৫১
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯: ১২

জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (জেকেআইএ) আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার অন্যতম বৃহৎ বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে ভারতীয় বহুজাতিক কোম্পানি আদানি এন্টারপ্রাইজের একটি সহায়ক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রায়ত্ত বিমানবন্দরটি ভারতীয় এই কোম্পানি অধিগ্রহণ করার খবরে কঠোর আন্দোলনে নেমেছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। যেখানে গত জুনেও তরুণদের নেতৃত্বে একটি আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করেছে কেনিয়া সরকার। সেই আন্দোলনেও আদানির সঙ্গে সরকারের ‘গোপন’ চুক্তির অভিযোগ তুলে বিমানবন্দর অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশ তাঁদের প্রতিহত করে।

মুম্বাইয়ের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ অব ইন্ডিয়ায় জমা দেওয়া নথি অনুসারে, গৌতম আদানির করপোরেট জায়ান্ট আদানি এন্টারপ্রাইজের ফ্ল্যাগশিপ কোম্পানি গত ৩০ আগস্ট কেনিয়ার ‘এয়ারপোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার পিএলসি (এআইপি)’ অধিগ্রহণ করেছে। 

নথিতে লেখা হয়েছে, এআইপি বিমানবন্দর অধিগ্রহণ, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ, উন্নয়ন, নকশা, নির্মাণ, হালনাগাদ এবং আধুনিকায়ন করে। 

কেনিয়ার গ্লোবাল এয়ারপোর্টস অপারেটর নামের প্রতিষ্ঠানটি আবুধাবি গ্রুপের সাবসিডিয়ারি। এই গ্রুপ আদানি এন্টারপ্রাইজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটিই এখন এআইপিয়ের শেয়ার মূলধনের ১০০ শতাংশের মালিক হবে। কেনিয়ার কোম্পানি অধিগ্রহণের অংশ হিসেবে, আদানি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার কেনিয়ান শিলিং (বাংলাদেশি টাকার প্রায় সমান) শেয়ার মূলধন ইস্যু করেছে। প্রতিটি ১ হাজার শিলিং দাম ধরে মোট ৬ হাজার ৭৫০টি শেয়ার রয়েছে। 

তবে আদানি বলছে, এআইপি এখনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বা তাদের রাজস্বও আসছে না। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই কেনিয়ার ওই বিমানবন্দরের (জেকেআইএ) নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ব্যাপারে আদানি আর কোনো সন্দেহ রাখেনি। যদিও সরকার বলার চেষ্টা করছে, চুক্তির শর্তে কোনো অসংগতি থাকলে তারা আগেই পর্যালোচনা করে দেখবে। 

কিন্তু চুক্তির স্বচ্ছতা নিয়ে কেনিয়ার সাধারণ মানুষ এবং জেকেআইএয়ের কর্মীদের মধ্যে নানা সন্দেহ ও সংশয় তৈরি হয়েছে। শ্রমিকেরা চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন। তাঁরা আদানির সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে গত সোমবার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। 

৩০ বছরের জন্য জেকেআইএ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চলতি বছরের শুরুতে কেনিয়া বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের (কেএএ) কাছে একটি প্রস্তাব জমা দেয় আদানি। স্বপ্রণোদিত হয়েই নিজেদের মতো করে এই প্রস্তাব তৈরি করে আদানি। তাদের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, ৮৫ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে একটি নতুন টার্মিনাল নির্মাণ, নিজেদের অ্যাপ্রোন ও ট্যাক্সিওয়ে সিস্টেম এবং দুটি দ্রুত বহির্গমন ট্যাক্সিওয়ের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। এসব কাজ ২০২৯ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করছে তারা। 

এ ছাড়া ৯ কোটি ২০ লাখ ডলার ট্যাক্সিওয়ে ব্যবস্থার উন্নতি, আরও দুটি দ্রুত বহির্গমন ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা, যেমন—অতিরিক্ত দূরবর্তী বিমান পার্কিং স্ট্যান্ড নির্মাণে ব্যয় করা হবে। এই পর্যায়টি ২০৩৫ সালে সম্পন্ন হবে বলে আশা করছে আদানি। 

সেই সঙ্গে নতুন অবকাঠামো উন্নয়নে ৬২ কোটি ডলার খরচ করারও প্রস্তাব করেছে ভারতীয় কোম্পানিটি। 

কেনিয়ার জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (জেকেআইএ)। ছবি: সংগৃহীতআদানি হোটেল–মোটেল, ব্যবসাকেন্দ্র এবং ভ্রমণকারী ও শহরের বাসিন্দাদের জন্য অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা সংবলিত অবকাঠামো নির্মাণ করে শহরের উপকণ্ঠ এলাকা উন্নয়নের প্রস্তাবও করেছে। 

৩০ বছরের জন্য এই চুক্তির আওতায় আদানি বিভিন্ন পরিষেবার জন্য নিজেই ফি নির্ধারণ করবে। মেয়াদ শেষে উভয় পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ করে জেকেআইএর নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করবে আদানি। 

আদানি অনুমান করছে, জেকেআইএ বিমানবন্দর উন্নয়নের ফলে রাজস্ব ২০২৫ সাল নাগাদ ১৬ কোটি ৩০ লাখ ডলারের উন্নীত হবে। এর মধ্যে কেনিয়ার সরকার পাবে ৪ কোটি ৭০ লাখ। আর ২০৩০ সাল নাগাদ আয় বেড়ে দাঁড়াবে ২৯ কোটি ডলার, এর মধ্যে সরকার পাবে ৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। এভাবে ২০৫৪ সালে আয় ১২০ ডলারে উন্নীত হলে সরকার রাজস্বের ভাগ পাবে ৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। 

জেকেআইএর বিদ্যমান টার্মিনাল ১–এ পাঁচটি অংশ রয়েছে, যার মোট বিল্ট-আপ এলাকা প্রায় ৭০ হাজার বর্গমিটার। বিমানবন্দরটিতে সস্তায় যাতায়াতের সুবিধা দেওয়া এয়ারলাইনসগুলোর জন্য ১০ হাজার বর্গমিটারের আরেকটি টার্মিনাল (টি২) রয়েছে। 

আদানির প্রস্তাবে দেখা যায়, জেকেআইএ বিমানবন্দরটি ২০৫৫ সালের মধ্যে ৩ কোটি ৩০ লাখ যাত্রী এবং ১০ লাখ টন কার্গো পরিচালনা করতে পারবে। যেখানে ২০২৩ সালের শেষে প্রায় ৪০ লাখ যাত্রী এবং ৫ লাখ টন কার্গো পরিচালনা করতে পেরেছে। 

কেনিয়া সরকার গত মাসে আদানির প্রস্তাবের বিষয়ে একটি বিবৃতিতে বলে, জেকেআইএ বিমানবন্দরকে বছরে ৭৫ লাখ যাত্রীর ধারণক্ষমতার বাইরে প্রসারিত করা জরুরি। এর উন্নয়নও জরুরি হয়ে পড়েছে। ছাদ ফুটো হয়ে গেছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জেকেআইএর আধুনিকায়নে ২০০ কোটি ডলার খরচ হতে পারে। অর্থনীতির এই কঠিন পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষে এই ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। 

সরকার বলছে, আদানির প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যদি চুক্তি হয়, তাহলে অবশ্যই কেনিয়ার জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত রেখেই করা হবে। 

কিন্তু কেনিয়ার অ্যাভিয়েশন শ্রমিক ইউনিয়ন আশঙ্কা করছে, ভারতের আদানি এয়ারপোর্ট হোল্ডিংসের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেলে দেশের শ্রমিকেরা চাকরি হারাবেন। বিমানবন্দরে কেনিয়ার বাইরে থেকে শ্রমিক আনা হবে। বেআইনিভাবে বিমানবন্দর বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করেন তাঁরা। 

কেনিয়ার অ্যাভিয়েশন শ্রমিক ইউনিয়নের মহাসচিব মস দিয়েমা ধর্মঘটের নোটিশে উল্লেখ করেছেন, ‘একমাত্র আদানি এয়ারপোর্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে সব ধরনের চুক্তি বাতিল করলে, তবেই আমরা কাজে ফেরার কথা বিবেচনা করতে পারি।’ 

কেনিয়ার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সম্পূর্ণ পরিচালনা পর্ষদের পদত্যাগও দাবি করেছেন তিনি। 

এদিকে প্রস্তাবিত কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত জুন মাসে তরুণদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী বিক্ষোভ হয়। ওই সময়ও আদানির সঙ্গে প্রস্তাবিত চুক্তিতে স্বচ্ছতার অভাব আছে বলে অভিযোগ ওঠে। আন্দোলনের স্লোগানে এ প্রসঙ্গও উঠে এসেছিল। 

গত মাসে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের জেকেআইএ–তে প্রবেশে বাধা দেয়। বিক্ষোভকারীরা বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করার কর্মসূচি নিয়ে সেখানে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিল।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত