Ajker Patrika

তালেবান ও ট্রাম্পের মধ্যস্থতাকারী—কে এই খলিলজাদ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৫, ২২: ৫৩
জালমায় খলিলজাদ। ছবি: সংগৃহীত
জালমায় খলিলজাদ। ছবি: সংগৃহীত

ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্র জালমায় খলিলজাদকে আফগানিস্তানে তালেবানের সঙ্গে মধ্যস্থতার দায়িত্ব দেবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে অনেকের ধারণা, এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত হবে।

আফগানিস্তানে জন্ম নেওয়া জালমায় খলিলজাদ একজন প্রভাবশালী মার্কিন কূটনীতিক ও পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ। দোহা চুক্তির প্রধান স্থপতি ছিলেন তিনি। ওই চুক্তির মাধ্যমেই আফগানিস্তান ছেড়ে এসেছিল মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী। সম্প্রতি তিনি তালেবানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এক মার্কিন বন্দীকে মুক্ত করে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে এসেছেন।

গত সপ্তাহে খলিলজাদকে তালেবান কারাগার থেকে সদ্য মুক্ত জর্জ গ্লেজম্যানের সঙ্গে দেখা যায়। মার্কিন নাগরিক গ্লেজম্যানকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে আফগানিস্তান ভ্রমণের সময় বন্দী করেছিল তালেবান। এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছিল, কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের একটি চুক্তির আওতায় গ্লেজম্যান মুক্তি পেয়েছেন।

তবে খলিলজাদ নিজেই কাবুলে গিয়ে তালেবানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং গ্লেজম্যানকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনেন। পরে তিনি টুইটারে এই মুক্তির খবর নিশ্চিত করে বলেন, আজকের দিনটি ভালো।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন আবারও খলিলজাদকে তালেবানের সঙ্গে আলোচনার জন্য ব্যবহার করতে পারে; বিশেষ করে, কাবুলে মার্কিন দূতাবাস পুনরায় চালুর সম্ভাব্য আলোচনায় যোগ দিতে পারেন তিনি। যদি এটি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তালেবান সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।

তবে অনেক বিশেষজ্ঞই সতর্ক করেছেন, খলিলজাদের অতীত ভূমিকা ছিল ভুল। ‘দ্য লং ওয়ার’ গ্রন্থের লেখক ডেভিড লয়নের মতে, খলিলজাদ ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি ভুলভাবে ধারণা করেছিলেন, তালেবান অতীতের তুলনায় বদলে গেছে।

লয়ন বলেন, ‘আলোচনা চলছে, ট্রাম্প তাঁকে (খলিলজাদ) কাবুলে পূর্ণকালীন দূত হিসেবে পাঠাতে পারেন।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদের সময় পশতু ও দারি ভাষায় দক্ষ খলিলজাদকে আফগান পুনর্মিলনের জন্য মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি তালেবান ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত আফগান নেতাদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির কোনো সমাধান করতে পারেননি। তবে তিনি মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের জন্য তালেবানের সঙ্গে কাতারের দোহায় একটি চুক্তি করেন। এই দোহা চুক্তির মাধ্যমেই তালেবানের সঙ্গে মার্কিন বাহিনীর দীর্ঘ ২০ বছরের দীর্ঘ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

তবে বাইডেন প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, খলিলজাদের চুক্তি তাঁদের দ্রুত সেনা প্রত্যাহারের বাধ্যবাধকতা তৈরি করেছিল এবং এতে তালেবান সহজে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়।

খলিলজাদকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্ব পালন করেন। তখনকার সময়ে তিনি ছিলেন মার্কিন প্রশাসনে সর্বোচ্চ পদধারী মুসলিম-আমেরিকান।

এর আগে, আফগানিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ২০০৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এবং ইরাকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বেড়ে ওঠা খলিলজাদ হাইস্কুল এক্সচেঞ্জ ছাত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন এবং পরে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। রিগ্যান প্রশাসনের সময় তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে কাজ করেন এবং সে সময় সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। দীর্ঘ চার দশক ধরে তিনি আফগানিস্তানের শাসকদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করেছেন। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সেনাদের আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহারের সময়ও তিনি যুক্ত ছিলেন।

২০১৪ সালে আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি প্রার্থী হননি। ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে খলিলজাদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদেও বিবেচনা করেছিলেন। তবে তা না হওয়ায় ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প তাঁকে আফগান পুনর্মিলনের জন্য বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেন। এই পদে তিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

বর্তমানে খলিলজাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় এবং প্রায়ই সাধারণ আফগানদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত