মণিপুরে সহিংসতার জন্য ক্ষমা চাইলেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮: ২০
Thumbnail image
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। ছবি: পিটিআই

মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা এন বীরেন সিং রাজ্যে চলমান জাতিগত সহিংসতার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি মণিপুরের সকল জাতির মানুষকে সহিংস অতীত ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার ইম্ফলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বীরেন সিং বলেন, ‘এই বছরটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ছিল। রাজ্যে চলমান সহিংসতার জন্য আমি জনগণের কাছে ক্ষমা চাই। এই সহিংসতার কারণে বহু মানুষ তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আমি দুঃখিত। তবে গত তিন-চার মাস থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। আশা করি, ২০২৫ সালের মধ্যে রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।’

উল্লেখ্য, মণিপুরে ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে কোটা এবং আর্থিক সুবিধা নিয়ে সংঘর্ষ চলছে। বীরেন সিং জানান এ সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজছে। পাহাড় ও উপত্যকার জেলাগুলির সীমানায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের ফলে সংঘর্ষের মাত্রা কমে এসেছে।’

তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৮টি বাস্তুচ্যুত পরিবারকে পূর্ব ইম্ফল, পশ্চিম ইম্ফল, কাংপোকপি ও চুরাচাঁদপুরে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পুনর্বাসন করা হয়েছে। জাতীয় সড়কগুলোতে সহিংসতা কমাতে আরও ১৭ থেকে ১৮ প্লাটুন নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া ইম্ফল-ডিমাপুর জাতীয় মহাসড়ক (এনএইচ-২) ও ইম্ফল-শিলচর জাতীয় মহাসড়কেও (এনএইচ-৩৭) অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাজ্যের অস্ত্রাগার থেকে লুট হওয়া ছয় হাজার অস্ত্রের মধ্যে ৩ হাজার অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬২৫ জন দুষ্কৃতকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ১২ হাজার ২৪৭টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, মণিপুরের সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৯ শতাংশ করা হবে। এ ছাড়া সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা খাতে প্রাথমিক, স্নাতক ও অধ্যাপক পর্যায়ের শিক্ষকদের পেশাদারির ভিত্তিতে পুরস্কৃত করা হবে এবং বছর শেষে সেরা শিক্ষকদের বেতন দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি করা হবে।’

এ ছাড়া, উচ্চ ভাড়ার সমস্যা সমাধানে মণিপুর সরকার সাশ্রয়ী মূল্যে অ্যালায়েন্স এয়ার সার্ভিস চালু করবে বলেও জানান বীরেন সিং। তিনি বলেন, ‘ইম্ফল-গুয়াহাটি, ইম্ফল-কলকাতা ও ইম্ফল-ডিমাপুর রুটে সপ্তাহে দুইবার এই সেবা দেওয়া হবে। ভাড়া ৫ হাজার টাকার বেশি হলে সরকার ভর্তুকি দেবে।’

মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আধার-সংযুক্ত জন্ম নিবন্ধন চালু করা হবে। প্রথম পর্যায়ে এটি তিন জেলায় প্রয়োগ করা হবে। পাঁচ বছর অন্তর জন্ম নিবন্ধনের তথ্য হালনাগাদ বাধ্যতামূলক করা হবে। একই সঙ্গে অনুমতি ব্যতীত রাজ্যে প্রবেশকারী অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করার কাজ জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি মণিপুরের কিছু জেলায় ৪২০ শতাংশ ভোটার বৃদ্ধির একটি বিষয় ধরা পড়েছে। এই সংখ্যাটি সঠিক নয়। তাই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত