সোনার খনিতে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু, আটকা আরও ৫০০

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image
দক্ষিণ উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের স্টিলফন্টেইন এলাকার বাফেলসফন্টেইন সোনার খনি। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ আফ্রিকার একটি পরিত্যক্ত সোনার খনিতে অবৈধভাবে খনন করতে গিয়ে খাদ্য ও পানির অভাবে শতাধিক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মাসের পর মাস ভূগর্ভে আটকা পড়ে থাকার ফলে তাঁদের এই পরিণতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল সোমবার খনিশ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠন এ তথ্য জানিয়েছে। সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, এখনো ৫০০ জনের বেশি শ্রমিক খনির গভীরে আটকা রয়েছেন।

মাইনিং অ্যাফেক্টেড কমিউনিটিজ ইউনাইটেড ইন অ্যাকশন গ্রুপের (এমএসিইউএ) মুখপাত্র সাবেলো মুঙ্গুনি বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, শুক্রবার উদ্ধার হওয়া কিছু শ্রমিকের পাঠানো মোবাইলে দুটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, প্লাস্টিকে মোড়ানো অসংখ্য মৃতদেহ মাটিতে পড়ে রয়েছে।

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, অন্ধকার টানেলের মধ্যে প্লাস্টিকে মোড়ানো মৃতদেহের পাশে কঙ্কালসার অবস্থায় শ্রমিকেরা বসে রয়েছেন। একজন শ্রমিক ভিডিওতে বলেন, ‘আমরা ক্ষুধায় মারা যাচ্ছি। দয়া করে আমাদের খাবার দিন, না হলে এখান থেকে বের করার ব্যবস্থা নিন।’

মুঙ্গুনি জানান, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের স্টিলফন্টেইন এলাকার বাফেলসফন্টেইন সোনার খনিতে অন্তত ১০০ জন মারা গেছেন। পুলিশ গত নভেম্বরে শ্রমিকদের খনি থেকে বের করার অভিযান শুরু করার পর তাঁরা খাদ্য ও পানির অভাবে মারা যান। তিনি আরও জানান, শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত ১৮টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

সরকারি ও স্থানীয় উভয় উদ্যোগে উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। শুক্রবার স্থানীয় একটি কমিউনিটির নেতৃত্বে চালানো অভিযানে ৯টি এবং সোমবার সরকারি উদ্যোগে চালানো অভিযানে আরও ৯টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২৬ জন জীবিত শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশের মুখপাত্র সেবাটা মোকগওবোনে জানিয়েছেন, সোমবার নতুন একটি উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত কতজন উদ্ধার হয়েছেন, তা যাচাই করা হচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার সোনাসমৃদ্ধ এলাকায় বেআইনিভাবে খনন একটি সাধারণ সমস্যা। খনিগুলো লাভজনক না হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হলেও আগের খনিশ্রমিকেরা জীবিকার তাগিদে অবৈধভাবে এসব খনিতে কাজ করেন।

স্টিলফন্টেইন শহরের কাছে এই খনিতে শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে দুই মাস ধরে উত্তেজনা চলছে। পুলিশ দাবি করেছে, শ্রমিকেরা গ্রেপ্তারের ভয়ে খনি থেকে বের হতে চাইছেন না। মুঙ্গুনি বলেন, ‘পুলিশ তাঁদের ওঠানামার জন্য ব্যবহৃত দড়ি সরিয়ে নেওয়ায় তাঁরা ভেতরে আটকা পড়েছেন।’

গত শুক্রবার খনিতে আটকা পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারে আন্দোলন করেন স্বজনেরা। ছবি: সংগৃহীত
গত শুক্রবার খনিতে আটকা পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারে আন্দোলন করেন স্বজনেরা। ছবি: সংগৃহীত

এমএসিইউএ অভিযোগ করে, পুলিশ খনিতে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিলে শ্রমিকদের পরিস্থিতি আরও করুণ হয়ে ওঠে। তখন এই সংগঠনের পক্ষ থেকে আদালতে একটি মামলা করে। এই মামলায় গত ডিসেম্বরে আদালত পুলিশ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে খনিতে খাদ্য, পানি ও ওষুধ সরবরাহের নির্দেশ দেয়।

একই সময়ে শ্রমিকদের সাহায্য করতে অস্বীকার করায় দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারও সমালোচিত হয়েছিল।

মুঙ্গুনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এই শ্রমিকেরা কোনো অপরাধী নন। তাঁরা আগের খনিশ্রমিক, যাঁরা খনি বন্ধ হওয়ার পর দারিদ্র্যের কারণে পুনরায় খনিতে প্রবেশ করেছেন। কারণ, জীবিকা নির্বাহের কোনো উপায় না থাকায় বারবার খনির কাজে ফিরে আসতে হয়।’

মুঙ্গুনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে শ্রমিকেরা ভূগর্ভে আটকা পড়েছেন এবং তাঁদের সবার দলেই মৃত শ্রমিক রয়েছেন। তাই ধারণা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি।’

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাফেলসফন্টেইন খনিতে বেআইনি প্রবেশ বন্ধে একটি বড় অভিযান চালানো হয়। যেখানে ১ হাজার ৫০০ জনের বেশি বেআইনি শ্রমিককে আটক করা হয়েছিল।

দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম গভীর এই খনিতে (প্রায় ২.৫ কিলোমিটার গভীর) এখনো জীবিতদের উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা দ্রুত বাকি শ্রমিকদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত