আজারবাইজানের বিমানটি ‘ভুলবশত’ রুশ মিসাইলে বিধ্বস্ত হয়েছে!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮: ২৩
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮: ৫১
ছবি: সংগৃহীত

আজারবাইজান এয়ারলাইনসের একটি বিমান কাজাখস্তানের আক্তাউ শহরের কাছাকাছি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত হওয়ার আগে বিমানটি জরুরি অবতরণের জন্য অনুরোধ করেছিল বলে এক রিপোর্টে বলা হয়েছে।

বুধবার বড়দিনে আজারবাইজান এয়ারলাইনসের ওই বিমান বাকু থেকে রাশিয়ার গ্রোজনি যাচ্ছিল। তবে গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই এটি কাজাখস্তানের আক্তাউয়ের কাছাকাছি স্থানে বিধ্বস্ত হয়। বিমানের থাকা ৬৭ জন যাত্রী ও ক্রুদের মধ্যে অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৬ জন ছিলেন রুশ নাগরিক।

বিমানটির বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ অনুসন্ধান চলছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ইউরোনিউজ এবং এএফপির প্রতিবেদনে বিমানবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লেনের ফুসিলেজে এবং পাখায় ক্ষতচিহ্ন রয়েছে, যা মিসাইলের শেল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতির সঙ্গে মিল খাচ্ছে।’

এ ছাড়া আজারবাইজান এয়ারলাইনসের ওই প্লেনটি এমন একটি অঞ্চলের ওপর দিয়ে উড়ছিল যেখানে পূর্বে ইউক্রেনের ড্রোন–সম্পর্কিত ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছিল। এই পথ ধরেই যেতে হয় গ্রোজনি। চেচনিয়ার এই রাজধানী শহরটি ইউক্রেনের একটি অন্যতম লক্ষ্য। তাই সেখানে ভারী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে।

রুশ সামরিক ব্লগার ইউরি পডোল্যাকা এএফপিকে বলেছেন, প্লেনের ধ্বংসাবশেষের ছবিতে দেখা গেছে এমন ছিদ্র, যা ‘অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল সিস্টেম’ দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতির মতো।

তিনি জানান, সম্ভবত প্লেনটি দুর্ঘটনাক্রমে একটি আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইল দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আরও এক বিশেষজ্ঞ ম্যাট বোরি বলেন, ‘প্লেনের ধ্বংসাবশেষ এবং রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশসীমায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি এটাই নির্দেশ করছে যে, বিমানটি কোনো না কোনো আকাশ প্রতিরক্ষা অগ্নিসংযোগ দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল।’

রুশ মিডিয়া আউটলেট মেদুজা তাদের মূল্যায়নে একই মত পোষণ করেছে। কিয়েভ ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত প্লেনের অংশের ভিডিওতে সারফেস টু এয়ার মিসাইলের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে এবং একই ধরনের ক্ষতি অন্য বিমানগুলোর ক্ষেত্রেও দেখা গেছে যা এ ধরনের মিসাইল দ্বারা ভূপাতিত হয়েছিল।

এ ছাড়া এমন রিপোর্টও রয়েছে, কয়েক সপ্তাহ আগেই ইউক্রেনীয় ড্রোনের আক্রমণের শিকার হয়েছিল গ্রোজনি শহর। এর ফলে ধারণা করা হচ্ছে, আজারবাইজানের বিমানটিকে একটি ড্রোন মনে করে আঘাত করেছে রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

বেঁচে যাওয়া কিছু যাত্রী (যাদের সবাই বিমানটির লেজের অংশে বসেছিলেন) দাবি করেছেন, যখন গ্রোজনি বিমানবন্দরে বিমানটির অবতরণের জন্য অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়, তখন তারা প্লেনের বাইরে বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পান।

বিমানটি এরপর কাস্পিয়ান সাগরের ওপরে ফিরতে চেষ্টা করে। সম্ভবত কাজাখস্তানে ফিরে যেতে চেয়েছিল। কাজাখস্তানের আক্তাউয়ে অবতরণের জন্য অনুরোধও করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত প্লেনটি সেই পর্যন্তও পৌঁছাতে পারেনি। বিমানবন্দর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে একটি নির্জন মাঠে এটি বিধ্বস্ত হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া দুর্ঘটনার কিছু ভীতিকর দৃশ্যে দেখা গেছে, প্লেনটি উচ্চতা বজায় রাখতে সংগ্রাম করছে। পরে হঠাৎ এটি নিচে নেমে যায় এবং মাটিতে আছড়ে পড়ে। এতে এর টেইল এবং ফুসিলেজ ভেঙে পড়ে।

দুর্ঘটনার পরপরই আজারবাইজান এয়ারলাইনস বলেছিল, বিমানটির সঙ্গে পাখির ঝাঁকের সংঘর্ষের কারণেই এমনটি ঘটেছে। তবে পরে তারা এই বক্তব্যটি প্রত্যাহার করে নেয়।

এদিকে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘তদন্তের ফলাফলের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’

কাজাখস্তান সিনেটের স্পিকার মাউলেন আশিমবায়েভ রুশ সংবাদ সংস্থা তাসকে বলেছেন, ‘কী কারণে প্লেনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এখনই বলা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা দেখছেন। তারা নিজেদের সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন। কাজাখস্তান, রাশিয়া বা আজারবাইজান অবশ্যই তথ্য গোপন করার প্রতি আগ্রহী নয়। এটি জনগণের কাছে প্রকাশ করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত