আসাদের অনুগতদের হামলায় সিরিয়ায় ১৪ নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪: ৩১
কুখ্যাত সেদনায়া কারাগার। ছবি: সংগৃহীত

ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগতদের ‘অতর্কিত’ হামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৪ জন কর্মকর্তা নিহত এবং ১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নেতৃত্বে গড়া নতুন প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর শহর তারতুসের কাছে এ হামলা হয়।

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছাকাছি কুখ্যাত সেদনায়া কারাগারের বন্দী নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক এক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানোর সময় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর এই হামলা চালানো হয়।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, ১৪ নিরাপত্তা কর্মকর্তার পাশাপাশি হামলাকারীদের তিনজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর ওই এলাকায় আরও নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, সংখ্যালঘু আলাউয়ি ও শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের বিক্ষোভের কারণে হোমস শহরে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরদিন সকাল আটটা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছিল সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ। হোমসে একজন বিক্ষোভকারী নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে এসওএইচআর।

স্থানীয়দের বরাতে রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আসাদ সরকারের অনুগত আলাউয়ি সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক নির্যাতন ও প্রশাসনিক চাপের প্রতিক্রিয়ায় এই বিক্ষোভ। বাশার আল-আসাদের পরিবার এ সম্প্রদায়ের ছিলেন।

মাজারে হামলা চালানো হয়েছে এমন একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি একটি পুরোনো ভিডিও। গত নভেম্বরের শেষের দিকে আলেপ্পোতে বিদ্রোহী আক্রমণের সময়কার ছিল। ওই হামলা কারা চালিয়েছিল জানা যায়নি।

এ ছাড়া, তারতুস ও লাতাকিয়াসহ আসাদের নিজ শহর কারদাহার বেশ কিছু এলাকায় বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।

মাত্র দুই সপ্তাহ আগে সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতন ঘটায় দেশটির ইসলামপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। উত্তর-পূর্ব সিরিয়া থেকে শুরু হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে বিদ্রোহীদের অভিযান। সমাপ্তি ঘটে আসাদ পরিবারের ৫০ বছর পুরোনো শাসনামলের। সপরিবারে দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যান বাশার আল—আসাদ।

এরপর নতুন এক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন এইচটিএস নেতা আহমেদ আল—শারা। বিদ্রোহীদের অধীনে দেশে কট্টর ইসলামপন্থী সরকার গঠিত হতে পারে বলে দেশের সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলো আশঙ্কা করছিল। তবে তাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই বলে বারবার আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে নতুন সরকার। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুর অধিকার এবং স্বাধীনতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নতুন প্রশাসন।

পশ্চিমা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালেও শারা জানান, তাঁর নেতৃত্বাধীন ইসলামি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) তাদের প্রাক্তন শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে না বা কোনো ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে দমন করবে না। তবে এখনো এইচটিএসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে রেখেছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশ।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সিরিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় সুকাইলাবিয়া শহরের প্রধান চত্বরে একটি ক্রিসমাস ট্রিতে আগুন জ্বলছে এবং আশপাশে মুখোশধারী ব্যক্তিরা ঘোরাফেরা করছেন। এই ঘটনার পর সিরিয়া জুড়ে, বিশেষ করে দামেস্ক এবং হামা প্রদেশের সুকাইলাবিয়ায় রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত