বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ, মিয়ানমারের ৬ জান্তা জেনারেলের মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২: ৩৯
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬: ১৭

বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করায় তিন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত থ্রি ব্রাদার্স অ্যালায়েন্সের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন ওই তিন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। একই অভিযোগে আরও তিন ব্রিগেডিয়ারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। জান্তাবাহিনীর একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

গত ৪ জানুয়ারি চীন সীমান্তবর্তী শান রাজ্যের কোকাংয়ে প্রায় ২ হাজার ৪০০ সেনা ও দুই শতাধিক কর্মকর্তা আত্মসমর্পণ করেন বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি বা এমএনডিএএর কাছে। পরে এমএনডিএএ সেই সব সেনা ও কর্মকর্তা এবং তাঁদের ১ হাজার ৬০০ আত্মীয়স্বজনসহ জান্তাবাহিনীর কাছে ফেরত পাঠায়। 

তাঁদের মধ্যে লাউক্কাই সেনাঘাঁটির প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোয়ে কায়াও থু, কোকাং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনিক প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তুন তুন মিন্ত এবং কোকাংয়ের ৫৫তম ডিভিশনের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জও মায়ো উইনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই তিন জেনারেল বর্তমানে ইয়াঙ্গুনের ইনসেইন কারাগারে বন্দী। 

এ ছাড়া, অপর তিন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আয়ে মিন ও, দও জিন ও এবং অং জও লিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁরা তিনজন মিয়ানমারে জান্তাবাহিনীর ১৪, ১৬ ও ১২তম ব্রিগেডের চিফস অব অপারেশনস ছিলেন। এই ছয় জেনারেলের বিরুদ্ধে ‘লজ্জাজনকভাবে’ নিজেদের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। 
 

এদিকে, বেশ কিছুদিন আগেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যভিত্তিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি (এএ) জানিয়েছিল, তারা রাখাইনের অধিকাংশ অংশেরই নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এবার আরাকান আর্মি ও অপর দুই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত বিদ্রোহী জোট থ্রি ব্রাদার্স অ্যালায়েন্স জানিয়েছে, এবার তারা পুরো রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। এই লক্ষ্যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই জান্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে আরও তীব্র লড়াইয়ে নামবে। 

এই অবস্থায় মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী শীর্ষ জেনারেলদের পদে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন এনেছে। নতুন উদ্যমে জান্তাবাহিনী রাখাইনে বিদ্রোহী জোটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই রাখাইনে আরও অতিরিক্ত সেনা ও অস্ত্র-গোলাবারুদ পাঠানো হবে। 

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে। তার পর থেকেই দেশটিতে বিদ্রোহ-আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। জান্তাবাহিনী ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো শুরু করলে দেশটির বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে। 

সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবর উত্তর মিয়ানমারের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী—মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) ও আরাকান আর্মি (এএ) জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াই শুরু করে। মাঝে চীনের মধ্যস্থতায় এই তিন গোষ্ঠীর সঙ্গে একবার সমঝোতার চেষ্টা হলেও তা ব্যর্থ হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত