ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন প্রত্যাহার, চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ৩৮
Thumbnail image
৫০ বছর পর সামরিক আইন জারি হলো দক্ষিণ কোরিয়ায়। ছবি: এএফপি

সামরিক আইন জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা প্রত্যাহার করলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট উন সুক ইওল। স্থানীয় সময় আজ বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন তিনি।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বিরোধী দল প্রেসিডেন্ট উনের পদত্যাগ দাবি করেছে এবং তাঁকে ‘বিদ্রোহের’ জন্য অভিযুক্ত করেছে। এমনকি উনের নিজ দল পিপল পাওয়ার পার্টিও তাঁর পাশে নেই। তাঁর সামরিক আইন জারির প্রচেষ্টাকে দুঃখজনক অভিহিত করে এতে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে তাঁর দল।

বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রেসিডেন্ট উন বলেন, জাতীয় পরিষদ থেকে সামরিক আইন জারি প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। জাতীয় পরিষদের দাবি মেনে মন্ত্রিসভার বৈঠকের মাধ্যমে মোতায়েন করা সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টায় জাতীয় টেলিভিশনে ঘোষণা দিয়ে সামরিক আইন জারি করেন প্রেসিডেন্ট। ভাষণে তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি ও রাষ্ট্রবিরোধী উপাদানগুলোর কার্যক্রম দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের সাংবিধানিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সামরিক আইন জারি করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না।

দেশটির ১৯০ জন মন্ত্রীসহ সাধারণ জনগণ রাজধানী সিউলে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবনের সামনে হাজির হয়ে সামরিক আইন জারির ঘোষণার প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। জাতীয় পরিষদে মন্ত্রীরা এর বিরুদ্ধে ভোট দিলে সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট।

সামরিক আইন জারির ঘোষণায় অনেকেই ভেবেছিলেন, উত্তর কোরিয়া, সন্ত্রাসবাদ কিংবা সামরিক অভ্যুত্থানের মতো জাতীয় নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি উত্তর কোরিয়ার সামরিক আগ্রাসন এবং গুপ্তচর নেটওয়ার্কের কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগের কারণ।

প্রেসিডেন্ট উন সামরিক আইন জারির কারণ স্পষ্টভাবে না জানালেও রাজনীতি বিশ্লেষকেরা বলছেন, উন উত্তর কোরিয়ার হুমকির কথা বলেন, কিন্তু এর কারণ স্পষ্ট না হওয়ায় উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। যদিও উত্তর কোরিয়া এ সামরিক আইন জারির বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় চার দশকেরও বেশি সময় পর প্রথমবার সামরিক আইন জারির এই অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র এবং দেশটির অন্য মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অল্প সময়ের মধ্যেই সামরিক আইন প্রত্যাহারের বিষয়ে তাৎক্ষণিক স্বস্তি প্রকাশ করলেও এটি নিশ্চিত যে, নিকট ভবিষ্যতে দক্ষিণ কোরিয়ার গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে থাকবে।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটন জানায়, প্রেসিডেন্ট উনের সামরিক আইন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তে স্বস্তি প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। ব্রিটেন ও জার্মানি জানিয়েছে, তাঁরা দক্ষিণ কোরিয়ার পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় সর্বশেষ সামরিক আইন জারি হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। ২০ বছর ধরে দেশটিতে শাসন করা প্রেসিডেন্ট পাক চুং হি সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হলে সামরিক আইন জারি করা হয়। ১৯৮৭ সালে দেশটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ফিরে আসার পর এ ধরনের পদক্ষেপ আর নেওয়া হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত