রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া বিদ্রোহীরা, জান্তার সঙ্গে চলছে তীব্র লড়াই

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫: ৩৪
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫: ৪৫

বেশ কিছুদিন আগেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যভিত্তিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি (এএ) জানিয়েছিল, তারা রাখাইনের অধিকাংশ অংশেরই নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এবার আরাকান আর্মি ও অপর দুই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত বিদ্রোহী জোট থ্রি ব্রাদার্স অ্যালায়েন্স জানিয়েছে, এবার তারা পুরো রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। এ লক্ষ্যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই জান্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে আরও তীব্র লড়াইয়ে নামবে।

মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী শীর্ষ জেনারেলদের পদে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন এনেছে। নতুন উদ্যমে জান্তাবাহিনী রাখাইনে বিদ্রোহী জোটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই রাখাইনে আরও অতিরিক্ত সেনা ও অস্ত্র-গোলাবারুদ পাঠানো হবে।

মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং আরাকান আর্মি (এএ) সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে থ্রি ব্রাদার্স অ্যালায়েন্স। গত অক্টোবরে শান রাজ্যে এই জোট জান্তাবিরোধী ‘অপারেশন-১০২৭’ শুরু করে। এই অপারেশনে বেশ সাফল্যও লাভ করে জোট।

যাই হোক, সম্প্রতি থ্রি ব্রাদার্স অ্যালায়েন্স জানিয়েছে, মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে আরাকান আর্মি বেশ সাফল্য লাভ করেছে। জান্তাবাহিনীর তরফ থেকে ব্যাপক জল, স্থল ও আকাশপথে হামলা চালানো হলেও আরাকান আর্মিকে পিছু হটতে বাধ্য করতে পারেনি। আরাকান আর্মি জানিয়েছে, জান্তাবাহিনীর প্রায় ৪ শতাধিক সেনা ভারতে পালিয়ে গেছে। এই অবস্থায় নতুন করে সমুদ্রপথে রাখাইনে সেনা পাঠাচ্ছে জান্তা সরকার।

গত রোববার রাখাইনের ছয় টাউনশিপ—কায়ুকতাও, মিনবে, ম্রউক উ, পকতাও, রামরি এবং রথিডংয়ে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির ব্যাপক লড়াই চলছে। বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সেনারা এসব শহরের নিয়ন্ত্রণ জান্তাবাহিনীর কাছ কেড়ে নেওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

এর মধ্যে কায়ুকতাও হামলা চালিয়ে আরাকান আর্মি জান্তাবাহিনীর ৩৭৭ আর্টিলারি ব্যাটালিয়ন, ৫৩৯ লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নকে হারিয়ে দিয়েছে। ৫৩৯ ব্যাটালিয়নের প্রায় ৩০০ সেনা ও তাদের পরিবার আরাকান আর্মির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। আরাকান আর্মি জান্তাবাহিনীর এক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নোয়ি নোয়ি উইনকে আটক করেছে।

এর আগে, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাখাইন রাজ্যের পালেতওয়া শহরটির দখল নেয় আরাকান আর্মি। আরাকান আর্মির (এএ) মুখপাত্র খাইন থু খা গতকাল রোববার রাতে বলেছেন, তাঁরা কালাদান নদীর তীরে অবস্থিত বন্দর শহর পালেতওয়া জয় করেছে। এই শহর প্রতিবেশী দেশগুলোর (বাংলাদেশ ও ভারত) সঙ্গে বাণিজ্যের চাবিকাঠি।

ওই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘সীমান্তে স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের বিষয়ে আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।’ তিনি আরও বলেছেন, তারা শিগগিরই এলাকায় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগের দায়িত্ব নেবে।

এর আগে আরাকান আর্মি দাবি করেছিল, তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১৫টিতেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং এই সময়ে তারা জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে ১৪২টি সেনাঘাঁটি দখল করে নিয়েছে। এর বাইরে তারা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শহর পালেতওয়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্যও লড়াই করে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে। তার পর থেকেই দেশটিতে বিদ্রোহ-আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। জান্তা বাহিনী ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো শুরু করলে দেশটির বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে।

সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবর উত্তর মিয়ানমারের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী—মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং আরাকান আর্মি (এএ) জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াই শুরু করে। মাঝে চীনের মধ্যস্থতায় এই তিন গোষ্ঠীর সঙ্গে একবার সমঝোতার চেষ্টা হলেও তা ব্যর্থ হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত