তালেবানের নিষেধাজ্ঞার পর যেভাবে চলছে আফগান নারীদের গোপন ব্যবসা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৩, ২১: ০৭
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৩, ২১: ২৮

তালেবান সমর্থকেরা রেস্তোরাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাঁচ মাস পর একটি গোপন উদ্যোগ শুরু করেছিলেন লাইলা হায়দারি। গোপনে তিনি একটি কারু ও হস্তশিল্প কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। তাঁর এই প্রতিষ্ঠানে পোশাক সেলাই আর বুলেটের খোসা গলিয়ে গয়না তৈরি করে আয়-উপার্জন করছেন বেশ কিছু নারী।

 ২০২১ সালে তালেবানরা দেশের ক্ষমতা দখল করার পর চাকরি এবং উপার্জনের পথ হারিয়ে যেসব নারী গোপনে ব্যবসা চালাচ্ছেন, লাইলার প্রতিষ্ঠানটি তার মধ্যে অন্যতম। এসব গোপন কেন্দ্রে নারীদের ব্যায়ামাগার থেকে শুরু করে বিউটি পারলার এমনকি মেয়েদের স্কুলও পরিচালিত হচ্ছে।

নিজের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আরব নিউজকে লাইলা বলেন, ‘আমি এই কেন্দ্রটি চালু করেছিলাম সেই সব নারীর জন্য, যাদের চাকরির খুব প্রয়োজন ছিল।’

তিনি আরও বলেন, এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। তবে এখানে কাজ করে কিছু নারী পরিবারের জন্য খাবার কিনতে পারেন।

আজ মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের দুই বছর পূর্তি পালন করছে। এই সময়ের মধ্যে বেশির ভাগ চাকরি থেকেই নারীদের বিতাড়িত করেছে তাদের প্রশাসন। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে মেয়েদের পড়াশোনাও নিষিদ্ধ করেছে তারা। এ ছাড়া নারীদের স্বাধীন চলাফেরায় নানা ধরনের সীমারেখাও টেনে দেওয়া হয়েছে।

এ অবস্থায় হাজার হাজার নারী বাড়ির ভেতরেই বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক উদ্যোগ নিতে শুরু করেছেন। এ ধরনের উদ্যোগের বিষয়ে আফগান প্রশাসন কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করছে না। তবে লাইলার মতো কিছুটা বড় পরিসরের ব্যবসাগুলো প্রশাসনের নজর এড়িয়ে গোপনেই পরিচালনা করতে হচ্ছে।

লাইলা জানান, রাজধানী কাবুলে তাঁর রেস্তোরাঁ ব্যবসাটি বেশ জমজমাট ছিল। প্রতি সন্ধ্যায়ই এখানে গান-কবিতার আসর বসত। লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক থেকে শুরু করে বিদেশিরাও এসে ভিড় করত।

রেস্তোরাঁ ব্যবসার আয় দিয়ে কাছাকাছি এলাকায় একটি মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্রও পরিচালনা করতেন লাইলা। কিন্তু তালেবানরা দেশের ক্ষমতা নেওয়ার পর কিছুদিনের মধ্যেই পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে সব রোগীকে বের করে দেন কিছু বন্ধুকধারী এবং স্থানীয়রা। তাঁরা রেস্তোরাঁটিও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন এবং মূলবান সব আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যান। 

বর্তমানে লাইলার প্রতিষ্ঠান থেকে যে আয় হয়, তার একটি বড় অংশ খরচ করা হচ্ছে মেয়েদের একটি গোপন স্কুল পরিচালনায়। এই স্কুলে প্রায় ২০০ মেয়ে গণিত, বিজ্ঞান এবং ইংরেজি বিষয়ে জ্ঞান নিচ্ছে। তাদের অনেকেই সশরীরে এসে ক্লাস করলেও কেউ কেউ অনলাইনেও যোগ দিচ্ছে। 

মার্কিন হস্তক্ষেপের আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের কথা স্মরণ করে লাইলা বলেন, ‘আমি চাই না আফগান মেয়েরা জ্ঞানচর্চা থেকে দূরে থাকুক। এমন হলে কয়েক বছরের মধ্যেই আমরা আরেকটি মূর্খ প্রজন্ম পাব।’ 

লাইলার প্রতিষ্ঠানে নারীরা পুরুষের ব্যবহৃত কাপড়-চোপড় ছাড়াও কার্পেট, মাদুর এবং গৃহসজ্জার নানা পণ্য উৎপাদন করছেন। এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় ৫০ নারী কাজ করেন, যারা গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ৫৮ ডলার আয় করছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই আয়ের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার টাকা। 

লাইলা বলেন, ‘আবার যদি তালেবানরা আমাকে থামিয়ে দিতে আসে তবে তাদের কাছে আমিসহ এই নারীদের ভরণ-পোষণ দাবি করব। তা না হলে, আমরা কী খাব?’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত