Ajker Patrika

তীব্র তাপপ্রবাহে এখনই বেহাল ভারত ও পাকিস্তান—এবার কী যে হবে

অনলাইন ডেস্ক
গত ৫ এপ্রিল পাকিস্তানের করাচিতে গরমে কাবু এক ব্যক্তির মাথায় পানি ঢালছেন এক স্বেচ্ছাসেবী। ছবি: এএফপি
গত ৫ এপ্রিল পাকিস্তানের করাচিতে গরমে কাবু এক ব্যক্তির মাথায় পানি ঢালছেন এক স্বেচ্ছাসেবী। ছবি: এএফপি

এবার গ্রীষ্মের শুরুতেই ভারত ও পাকিস্তানে ভয়াবহ তাপপ্রবাহ দেখা দিয়েছে। এতে দেশ দুটির কোটি কোটি মানুষ এক ভয়ংকর বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ, খাদ্য উৎপাদন এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাপন।

মঙ্গলবার সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছরই মে-জুনে এই অঞ্চলে তাপপ্রবাহ দেখা দেয়। তবে এ বছর তা আগেভাগেই শুরু হয়েছে এবং দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাকিস্তানের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ১৪ থেকে ১৮ এপ্রিলের মধ্যে দেশটির কিছু অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হতে পারে। বেলুচিস্তানে তাপমাত্রা ৪৯ ডিগ্রিতে পৌঁছানোরও আশঙ্কা রয়েছে। গরমের জন্য কুখ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের ডেথ ভ্যালিতে এমনটি দেখা যায়।

বেলুচিস্তানের ডেরা মুরাদ জামালি শহরের বাসিন্দা আয়ুব খোসা বলেছেন, ‘তাপপ্রবাহ এমনভাবে এসেছে যে অনেকে প্রস্তুতই ছিলেন না। দিনে ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না, ফলে গরম সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ছে।’

পাশের দেশ ভারতেও তাপপ্রবাহ আগেভাগেই শুরু হয়েছে। দিল্লিতে ইতিমধ্যে তিনবার ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অতিক্রম করেছে—যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রি বেশি। রাজস্থানেও শ্রমিক ও কৃষকেরা কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রাজস্থানের নারী নেত্রী অনিতা সোনি বলেন, ‘এই গরম অন্য বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি ভয়ংকর। নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।’

কৃষক বালু লাল বলেন, ‘এত গরমে মাঠে দাঁড়িয়ে কাজ করাও অসম্ভব। শরীর জ্বলে যাচ্ছে মনে হয়।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, তাপমাত্রা এখন মানুষের সহ্যক্ষমতার সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক দশকে এই অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ গরমে মারা গেছেন। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও নবজাতকেরা ঝুঁকিতে আছে। গ্রীষ্মে অকালে জন্ম, শ্বাসকষ্ট, এমনকি মাতৃমৃত্যুর হারও বাড়ছে।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তান উন্নয়ন বৈষম্যের কারণে জলবায়ু সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ অঞ্চলের এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

পাকিস্তানের জলবায়ু গবেষক মেহরুনিসা মালিক বলেন, ‘তাপমাত্রা বাড়ছে এমন সময় যখন ফসল এখনো পাকেনি। এতে ফলন কমে যাচ্ছে, পানির চাহিদা বাড়ছে। অনেক গাছই তীব্র গরমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

কৃষক ও পরিবেশকর্মী তৌফিক পাশা বলেন, ‘বসন্তে বৃষ্টিপাত কম, ফলে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত গরমে গাছে ফুল ধরে না, ফল পড়ে যায়, কীটপতঙ্গের আক্রমণ বেড়ে যায়—সব মিলিয়ে খাদ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

তাপপ্রবাহে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিং, কয়লার ঘাটতি, ট্রেন বাতিল, এমনকি স্কুল বন্ধ করার মতো ঘটনাও ঘটছে, যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষা ও জীবিকায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত