ব্রিটেনে অপারেশন থিয়েটারে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারী সার্জনেরা: গবেষণা 

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১: ০৯
Thumbnail image

পুরুষ সহকর্মীরা অপারেশন থিয়েটারে যৌন হয়রানি করেন বলে অভিযোগ করেছেন ব্রিটেনের নারী সার্জনেরা। এমনকি সিনিয়র সহকর্মীরা কখনো কখনো শিক্ষানবিশ সার্জনদের ধর্ষণও করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) কর্মীদের ওপর করা এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। 

ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটার, ইউনিভার্সিটি অব সারে, ওয়ার্কিং পার্টি অব সেক্সুয়াল মিসকন্ডাক্ট ইন সার্জারি (ডব্লিউপিএসএমএস) যৌথভাবে এই গবেষণা করেছে। গবেষকেরা এই গবেষণা প্রতিবেদন বিবিসির সঙ্গে শেয়ার করেছেন। 

গবেষকদের সহযোগিতা করেছেন যেসব নারী সার্জন তাঁদের মধ্যে তিন ভাগের প্রায় দুই ভাগই বলেছেন, তাঁদের হয়রানি করা হয়। আর যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন এক–তৃতীয়াংশ। 

গবেষণার লেখকদের বরাতে বিবিসি জানায়, শিক্ষানবিশ নারী সার্জনদের ওপর সিনিয়র পুরুষ সার্জনদের যৌন হয়রানি দিন দিন বাড়ছে। এমন হতাশাজনক ঘটনা এনএইচএসভুক্ত সরকারি হাসপাতালগুলোতেও ঘটছে। 

ভুক্তভোগী কয়েকজন নারী সার্জন জানিয়েছেন, সার্জারির সময় যৌন হয়রানি এবং হেনস্তা এখন ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। অযাচিতভাবে শরীরে স্পর্শ তো অহরহ ঘটছে। এমনকি বাড়ি পৌঁছে দিতে লিফট দেওয়ার কথা বলেও ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। কোনো কোনো শিক্ষানবিশকে যৌনতার বিনিময়ে ক্যারিয়ার গড়ে দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। 

যেসব নারী সার্জন প্রকাশ্যে কথা বলেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম জুডিথ। তিনি এখন একজন অভিজ্ঞ এবং মেধাবী কনসালট্যান্ট সার্জন। জুডিথ তাঁর ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। ওই সময় তিনি সে অর্থে কোনো ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন না। 

জুডিথ বলেন, ‘অপারেশন থিয়েটারে একজন সিনিয়র পুরুষ সার্জন ঘামছিলেন। তিনি আকস্মিকভাবে ঘুরে দাঁড়ান। এরপর আমার বুকের ওপর মাথা রাখলেন। মুখ ঘষে ঘাম মুছলেন। তিনি দ্বিতীয়বারও একই কাজ করলেন।’ 

জুডিথ তখন তাঁকে একটি তোয়ালে ব্যবহারের পরামর্শ দিলে জবাবে ওই সার্জন বললেন, ‘না, এটা তারচে বেশি আনন্দের।’ জুডিথ বলেন, ‘এতে খুবই অপমানিত হয়েছি। তবে তার চেয়েও খারাপ যা ছিল, তা হলো সেখানে উপস্থিত আমার সহকর্মীরা নিশ্চুপ ছিলেন।’ 

নাম প্রকাশ না করে আরেকজন নারী সার্জন বলেন, তিনি যখন শিক্ষানবিশ ছিলেন তখন একজন সিনিয়র সার্জন তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে সবাই নীরব। কারণ, শিক্ষানবিশদের সিনিয়র সহকর্মীদের কাছ থেকে শিখতে হয়। সিনিয়রদের অনেক ক্ষমতা। তারা একজন নারী সার্জনের ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিতে পারেন। তাই নীরবে সয়ে যান অনেক নারী। 

সার্জন জুডিথ। ছবি: বিবিসির সৌজন্যেএ গবেষণায় মোট ১ হাজার ৪৩৪ জন অংশ নেন, এর মধ্যে অর্ধেকই নারী। শতকরা ৬৩ ভাগ নারী বলেছেন, তাঁরা সহকর্মীদের দ্বারা যৌন হয়রানির টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। শতকরা ৩০ ভাগ নারী বলেছেন, তাঁরা সহকর্মীর হাতে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। শতকরা ১১ ভাগ নারী বলেছেন, ক্যারিয়ার গড়তে তাঁরা বাধ্য হয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। 

এ ছাড়া কমপক্ষে ১১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। শতকরা ৯০ ভাগ নারী এবং ৮১ ভাগ পুরুষ যৌন অসদাচরণ স্বচক্ষে দেখেছেন। 

দেখা গেছে, পুরুষেরাও এই ধরনের নানা হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর সংখ্যা প্রায় ২৪ শতাংশ। 

ভুক্তভোগী নারীরা গবেষকদের বলেছেন, গত ৫ বছরে তাঁরা পুরুষ সহকর্মীদের হাতে এমন হয়রানির শিকার হয়েছেন। তবে ক্যারিয়ারের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় এ বিষয়ে অভিযোগ করার সাহস পাননি। এ ছাড়া এনএইচএস এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেবে, তাতেও তাঁদের খুব একটা আস্থা ছিল না। 

এক্সেটার ইউনিভার্সিটির ডা. ক্রিস্টোফার বেগেনি বলেন, ‘আমাদের ফলাফলগুলো সার্জারি পেশায় জনসাধারণের আস্থাকে নাড়া দিতে পারে।’ 

আর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত