মমতার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ, সংঘর্ষে রণক্ষেত্র ‘নবান্ন’, বাংলা বন্ধের ডাক বিজেপির

কলকাতা সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৪, ১৯: ৪৪

আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক মৌমিতাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।

আজ মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগের দাবিতে রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্ন’ ভবন অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে বিক্ষুব্ধরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গোটা এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়। প্রতিবাদে আগামীকাল বাংলা বন্ধের ডাক দিয়েছে বিজেপি।

আজ পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ-নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচির ডাক দেয়। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ-নামে অন্য আরও একটি সংগঠন এতে সমর্থন দেয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকেরাও এতে যোগ দেয়। সকলের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা ও নানান প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড।

এর আগে সকাল থেকেই কলকাতার প্রধান দুটি পয়েন্টে আন্দোলনকারীরা জমায়েত হতে থাকে, একটি কলেজ স্কয়ার অন্যটি সাঁতরাগাছি। সেখান থেকেই হাজার হাজার আন্দোলনকারী নবান্নের অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। ইন্টার্ন চিকিৎসক মৌমিতার ওপর নৃশংস নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় রাজ্যের শাসন ব্যবস্থাকে দায়ী করে দোষীদের শাস্তি ও ন্যায় বিচারেরও দাবি তোলেন তাঁরা।

আন্দোলনকে প্রতিহত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্ক অবস্থান নেওয়া হয়। আন্দোলনকারীদের মিছিল ঠেকাতে ২৫ জন ডেপুটি কমিশনারের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রায় ছয় হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে মোতায়েন করা হয়। হাওড়া ব্রিজের কলকাতা অংশের দিকে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে নবান্ন ভবনকে ঘিরে ফেলা হয়। নবান্ন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় জারি করা হয় ১৬৩ ধারা। সেই ধারা অনুযায়ী পাঁচজনের বেশি মানুষের জমায়েত আইনগত নিষিদ্ধ। কিন্তু সেই আইনকে উপেক্ষা করেই সামনের দিকে এগোতে থাকে বিক্ষোভ মিছিল।

সাঁতরাগাছি কোনা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নবান্নের অভিমুখে রওনা হওয়া আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে লাঠিপেটা করা হয় এবং কাঁদানে গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করা হয়। জলকামান থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর পানিও ছোড়া হয়। আন্দোলনকারীরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
 
হাওড়া ব্রিজ থেকেও যে মিছিলগুলো নবান্নের অভিমুখে রওনা হয়, তাঁদেরও প্রতিহত করা হয়। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা। আন্দোলনকারীরা ফের জড়ো হয়ে ফের সামনের দিকে এগিয়ে যায়। হাওড়া ময়দান এলাকায় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর, কাচের বোতল ছোড়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, এতে এক পুলিশ কর্মীর মাথা ফেটে গেছে। এক পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধরের ছবিও সামনে এসেছে। সব মিলিয়ে দু’পক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

নবান্ন এলাকা ছাড়াও আশপাশের এলাকাতেও এ সংঘর্ষ ছড়িয়েছে। কয়েকটি জায়গায় আন্দোলনকারীদের গাড়ি আটকে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ির সামনেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। হাজরা রোড পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আন্দোলনের সময় নবান্ন ভবনেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যেই কড়া পাহাড়ের মধ্যে নবান্ন ঢুকে যান তিনি। অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের দেখে হাতও নাড়েন। এরপর সোজা ১৪ তলায় নিজের অফিসে চলে যান। সেখান থেকেই গোটা পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখেন। কোনো রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, সেটি নিয়ে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় করেন।

এদিকে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপের ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল বুধবার গোটা রাজ্যজুড়ে আধাবেলা (সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা) বন্ধের ডাক দিয়েছে বিজেপি। ছাত্রদের ওপর পুলিশের অত্যাচারের প্রতিবাদে বাংলা বন্ধের ডাক দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

গতকাল সোমবার রাতে থেকেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করতে থাকে। চার আন্দোলনকারী নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী জানান, শুভজিৎ ঘোষ, পুলকেশ পণ্ডিত, গৌতম সেনাপতি ও প্রীতম সরকার নামে চারজন নিখোঁজ হয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ঘোলা পুলিশ থানার অন্তর্গত নাটাগড়ের অম্বিকা মুখার্জি রোডের বাসিন্দা ওই ইন্টার্ন চিকিৎসককে আরজিকর হাসপাতালের ক্যাম্পাসের মধ্যেই নৃশংসভাবে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এর পর থেকেই গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে টানা আন্দোলন চলছে। বিভিন্ন স্তরের মানুষ এ আন্দোলন করছেন। বিজেপিও আন্দোলনে সরব রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে গোটা ভারতেই আন্দোলন ছড়িয়েছে। এমনকি দেশের বাইরেও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত