কলকাতায় রাত দখলে রাজপথে নারীরা 

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০৯: ৩৫
Thumbnail image

ভারতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আরজি কর হাসপাতালে এক শিক্ষানবীশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে নারীরা রাত দখলের কর্মসূচি পালন করেছে। ভারতের স্বাধীনতা দিবসের আগেরদিন ১৪ আগস্ট মাঝরাতে নারীরা স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার দাবিতে কলকাতাসহ রাজ্যর বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ মিছিলে নেমেছে। রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে রাস্তায় নামেন। 

গতকাল বুধবার রাতে সবার মুখে মুখে ছিল ‘রাত দখল’ (রিক্লেম দ্য নাইট) এর ডাক। এর সূচনা হয় স্যোশাল মিডিয়াতে। চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়াতে সরব হওয়া অনেকের মধ্যে ছিলেন রিমঝিম সিনহা নামের এক নারী। তিনিই প্রথম রাতে এক কর্মসূচির ডাক দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেন রিমঝিম। বর্তমানে তিনি গবেষণায় নিয়োজিত। 

এই কর্মসূচি চলাকালে আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বহিরাগতরা সেখানে হামলা চালিয়েছে বলে ওই মেডিকেল কলেজের এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন। তবে এখন তাঁরা নিরাপদে আছেন বলে জানান ওই শিক্ষার্থী। 

রাত ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে কর্মসূচি শুরুর ঘোষণা ছিল। মোদ্দা কথা, মধ্যরাতের স্বাধীনতার সেই সন্ধিক্ষণের খানিক আগে মেয়েরা ‘রাতের দখল’ নেবেন এমনটাই ঠিক ছিল। কিন্তু ‘অভিধানহীন’ আবেগ সন্ধ্যার পর থেকেই একটু একটু করে জমতে শুরু করেছিল ইতিউতি। যাদবপুর থেকে চন্দননগর। কলেজ স্ট্রিট থেকে সোনাগাছি। মশাট থেকে উত্তরপাড়া। কিছু জায়গায় ইতিমধ্যেই জমায়েত নজর কাড়ার মতো। 

গতকাল বুধবার রাতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে রাত দখল কর্মসূচিতে নামেন নারীরা। এ সময় তাঁরা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও স্লোগান দেনরাত ৯টার আগে থেকেই যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডে ভিড় বাড়তে শুরু করে মেয়েদের। গত ১০ আগস্ট রাতে ফেসবুকে পোস্ট করে মেয়েদের রাত দখলের আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্সির সাবেক শিক্ষার্থী রিমঝিম সিংহ। ক্রমে ক্রমে তা আন্দোলনের রূপ নেয়। সেই রিমঝিমও রাত ৯টার খানিক আগে ৮বি বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে যান। হাতে সাতরঙা পতাকা। কপালে বেগনি ফেট্টি। রিমঝিম বলেন, ‘এই বিপুল সাড়া প্রমাণ করে যে, আমাদের সকলের মধ্যেই ক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভ থেকেই আমরা জড়ো হয়েছি। বিচার তো আমরা অবশ্যই চাইব। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার। মূলে গিয়ে শোষণের প্রত্যেকটা কারণকে তুলে ধরা দরকার।’ 

যাদবপুরের মতো কলেজ স্কোয়্যার ও অ্যাকাডেমি চত্বরেও ভিড় বাড়তে থাকে তত ক্ষণে। শুধু এই শহরের তিন কেন্দ্রই নয়, সল্টলেক, বেহালা, গড়িয়া, শ্যামবাজারেও মিছিল বেরিয়েছিল। কর্মসূচি ছিল আরজি কর হাসপাতালের সামনে থেকেও। নির্ধারিত সময়ে সেখানেও মিছিল শুরু হয়। ঠিক তার পরেই ওই হাসপাতালে হামলার ঘটনা ঘটে। 

গতকাল বুধবার রাতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে রাত দখল কর্মসূচিতে নামেন নারীরা। এ সময় তাঁরা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও স্লোগান দেনগতকাল প্রতিবাদ মিছিল করেছে কলকাতার নাগরিক সমাজও। কলেজ স্কয়ার থেকে শুরু হওয়া এই মিছিল শেষ হয় আরজি কর হাসপাতালে। মিছিলে পা মেলান শিক্ষাবিদ ও রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার, সাবেক মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য, মন্দাক্রান্ত সেন, চন্দন সেন, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, রমলা চক্রবর্তী প্রমুখ ব্যক্তিত্বরা। 

কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি প্রতিবাদ মিছিল বের করে কলেজ স্কয়ার থেকে। মিছিলটি আর জি কর হাসপাতালে এলে পুলিশ আটকে দেয় মিছিল। এরপরে মিছিলকারীরা হাসপাতালের সামনের সড়কে বসে পড়েন। মিছিলে ছিলেন বিজেপি নেতা দিলিপ ঘোষ, রাহুল সিনহা, সাবেক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। মিছিলকারীরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

কংগ্রেসও অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে মিছিল বের করেছে। সিপিএমের অঙ্গ সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনও আলাদা প্রতিবাদ মিছিল করে। প্রতিবাদ মিছিল বের করেছেন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও। 

গতকাল বুধবার রাতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে রাত দখল কর্মসূচিতে নামেন নারীরা। এ সময় তাঁরা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও স্লোগান দেনউল্লেখ্য, গত শুক্রবার ভোরে আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চারতলায় ডিউটি শেষ করে বিশ্রাম নেওয়া এক ছাত্রীর মরদেহ পাওয়া নিয়ে। অভিযোগ, ওই নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

এ নিয়ে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে আরজি কর হাসপাতালসহ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। গতকাল বুধবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিবাদী মিছিলে প্রকম্পিত ছিল কলকাতা। সবার একটাই দাবি, দোষীদের শাস্তি দাও, আসল ষড়যন্ত্রকারীদেরও প্রকাশ্যে আনো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত