অনলাইন গেম পাবজি খেলার সূত্র ধরে ভারতীয় যুবক শচীন মিনার সঙ্গে পরিচয় হয় পাকিস্তানি নারী সীমা হায়দারের। সেই সূত্র ধরে চার সন্তান নিয়ে উত্তর প্রদেশে শচীনের কাছে চলে আসেন সীমা। তবে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে সোমবার তাকে গ্রেপ্তার করেছে উত্তর প্রদেশের অ্যান্টি টেরর স্কোয়াড (এটিএস)। সঙ্গে শচীন এবং তার বাবা নেত্রপাল সিংকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সীমা কেবলই প্রেমের টানেই ভারতে এসেছেন, নাকি তিনি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের চর সে নিয়েও চলছে কানাঘুষা। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটিএস এরই মধ্যে সীমার পরিচয়পত্র এবং অন্যান্য নথিপত্র যাচাই করে দেখেছে। এমনকি তার চার সন্তানের কাগজপত্রও যাচাই করা হয়েছে। এ বিষয়ে উত্তর প্রদেশ পুলিশের স্পেশাল ডিরেক্টর জেনারেল প্রশান্ত কুমার বলেন, রুটিন মেনেই সব যাচাই করা হয়েছে। কারণ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া কোনো পাকিস্তানি নাগরিক এ দেশে থাকতে পারেন না। 

এর আগে, চলতি মাসের শুরুর দিকে ২৭ বছর বয়সী সীমা হায়দার ভারতে আসেন তার বয়ফ্রেন্ড শচীনের সঙ্গে দেখা করতে। সীমা ভারত প্রবেশ করেন দুবাই থেকে নেপাল হয়ে এবং এরপর নয়ডায় এসে শচীনের বাড়ির কাছেই থাকতে শুরু করেন। 

তবে সীমা হায়দারের এভাবে ভারত প্রবেশের বিষয়টি আরও একটি দিক সামনে এনেছে। আর তা হলো, সীমা কী সত্যই প্রেমের টানে ভারতে এসেছেন নাকি আসলে তিনি পাকিস্তানি কোনো সংস্থার গুপ্তচর। তার কারণে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমনটাও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এটিএস-এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার মতে, সীমার অতীত ভালোভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তিনি কেন এবং কীভাবে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারলেন তাও যাচাই করে দেখা হচ্ছে। 

স্থানীয় গৌতম বুদ্ধনগর পুলিশ উত্তর প্রদেশের পুলিশ হেডকোয়ার্টারের কাছে এক লিখিত চিঠিতে আবেদন জানায়, যেন সীমা-শচীন মামলায় পুলিশের বিশেষায়িত দলকে কাজে লাগানো হয়। সেই সূত্র ধরেই এটিএস এই মামলায় পুলিশকে সহায়তা করবে। এ বিষয়ে এটিএস-এর অতিরিক্ত পরিচালক নবীন অরোরা বলেন, আমাদের একটি দল পুলিশকে এই মামলায় সহায়তা করবে। 

এটিএস-এর কর্মকর্তা বলেন, ‘সীমা ও শচীনকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদের দুজনকে পৃথকভাবে এবং আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদের আন্তসীমান্ত প্রেমের গল্পের পেছনের সত্যটি বের করে আনতে তাদের মুখোমুখি জিজ্ঞেস করা হবে। তবে সীমার বাচ্চাদের সাত বছরের কম হওয়ায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না।’ 

এটিএস-এর সেই কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে যে, সীমাকে হয়তো পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) বিশেষ কোনো মিশন দিয়ে পাঠিয়েছে। কারণ, গোয়েন্দা জগতে সেনা, পুলিশ এমনকি আধাসামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের ফাঁদে ফেলতে সুন্দরী নারীদের ব্যবহার করে ‘হানিট্র্যাপ’ করার বিষয়টি অতি পুরোনো কৌশল। 

এর আগে, গত ২৬ জুন উত্তর প্রদেশ পুলিশ রাজ্যের পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারী, ভারতীয় সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দেয়। পুলিশ জানায়, পাকিস্তানি ১৪টি ভুয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ‘হানিট্র্যাপে’ ফেলার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই সতর্কতা জারি করা হয়। 

এটিএস-এর সেই কর্মকর্তা যোগ করেন, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর একটি শাখা পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স অপারেটিভ (পিআইও) এসব ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করেছে। তাদের লক্ষ্য হলো ভারতের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত কেন্দ্রীয় এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মীদের শিকারে পরিণত করা যায়। 

উল্লেখ্য, চার সন্তান নিয়ে নেপাল হয়ে ভিসা ছাড়াই অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের জন্য ৪ জুলাই গ্রেপ্তার সীমাকে করা হয়েছিল। সেদিন শচীনকেও অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয় দেওয়ার দায়ে আটক করা হয়েছিল। পাঁচ দিন কারাগারে থাকার পর সীমা এবং শচীন ১০ জুলাই গৌতম বুদ্ধ নগরের লুকসার জেল থেকে বেরিয়ে আসেন। পরে তাদের আবারও গ্রেপ্তার করা হলো।