Ajker Patrika

ভারতের বাম রাজনীতি এখন অস্তমিত সূর্য

তরুণ চক্রবর্তী, কলকাতা
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২১, ১৪: ১১
ভারতের বাম রাজনীতি এখন অস্তমিত সূর্য

ভারতে বাম বা অতিবাম রাজনীতি এখন অস্তীত্ব সঙ্কটে ভুগছে । এক সময়ে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও কেরালায় বামেদের নিজেদের  সরকার ছিল। অন্যান্য রাজ্যেও উড়তো লাল পতাকা। কেরালায় এখনও সরকার টিকে থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় গভীর সঙ্কটে বাম রাজনীতি। এক সময়ে অতি-বাম রাজনীতির সমর্থকরা তো অনেকেই এখন রাম-রাজনীতি (সাম্প্দায়িক বিজেপি)-র সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। নিজেদের অস্তীত্ব টিকিয়ে রাখতে বামেরাও এবার পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়ান সেকুল ফ্রন্ট নামে একটি মুসলিম সংগঠনের সঙ্গে মোর্চা গড়েছে। এক সময়ে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস এখন ঘোষিত মিত্র।  বামেদের সাবেক শক্ত ঘাঁটি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার ধারে-কাছে যাওয়ারও সম্ভাবনা আপাতত আর নেই।

ভারতের বামপন্থী দলগুলোর বেশিরভাগই কতটা 'বামপন্থী' তা নিয়ে তর্ক হতেই পারে। সংসদীয়  রাজনীতিতে টিকে থাকতে মধ্যপন্থাতেই তাদের ভরসা। সাতের দশকে ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী বামপন্থী দল সিপিএম তৈরিই হয় উগ্র কংগ্রেস বিরোধিতার হাত ধরে। ১৯৭৭ সালের ২১ জুন জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো পশ্চিমবঙ্গে গঠিত হয় বামপন্থী সরকার। টানা ৩৪ বছর দাপটের সঙ্গে ক্ষমতায় থাকার পর ২০১১ সালে তৃমমূলের কাছে হেরে যায় বামেরা। রাজ্যের ২৯৪টি আসনের মধ্যে প্রথমবার তারা পেয়েছিল ২৩১টি আসন। আর শেষবার ক্ষমতায় আসার সময় ২০০৬ সালে  সেই রেকর্ড ভেঙে বামেরা জেতে ২৩৫ আসনে। ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বামপন্থীদের ভোট দিয়েছিলেন।  পশ্চিমবঙ্গের মতো ত্রিপুরাতেও বামদের শাসন দীর্ঘস্থায়ী ছিল। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিপিএমের  নেতৃত্বে বামেরা ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলেও ত্রিপুরায় ২০১৮ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল বামফ্রন্ট সরকার। টানা ২০ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মানিক সরকার। এখন সেখানেও জায়গা হারাচ্ছে বামেরা। 

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ৪২টির মধ্যে বামেরা মাত্র একটি আসনে নিজেদের জামানত রক্ষা করতে পেরেছিল, জেতা তো দুরের কথা। মোট ভোট পেয়েছেন মাত্র ৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ।  পশ্চিমবঙ্গে বামভোট ও আসন মারাত্মক ভাবে কমছে। একটা কথা প্রচলিত আছে, ভারতীয় রাজনীতিতে  কংগ্রেস হেরে গেলেও ফিনিক্স পাখির মতো ঘুরে দাঁড়াতে জানে। কিন্তু বামেরা হারলে আর ফিরতে পারেনা। কেরালা অবশ্যই ব্যতিক্রম। ত্রিপুরাতেও অবশ্য ১৯৮৮ সালে হারের পর ১৯৯৩ সালে ফিরে এসেছিল বামেরা। কিন্তু তার পিছনে ছিল কংগ্রেসের প্রচ্ছন্ন মদদ। নিজেদের সরকার ফেলে দিয়ে  বামেদের আসার রাস্তা পরিস্কার করে দিয়েছিল দিল্লির কংগ্রেস নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গে গতবার, ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বামেরা ভোট পেয়েছিল ২৬ শতাংশ। জিতেছিল ২৯৪টির মধ্যে মাত্র ৩২টিতে। তাও আবার ৩ বিধায়ক দলবদল করে অন্য দলে চলে যান। ২০১১ সালে ক্ষমতা হারালেও সেবার বামেরা পশ্চিবঙ্গে ভোট পেয়েছিল ৪১ শতাংশ। আসন পায় ৬২টি।  আর ২০০৬ সালে ৫০.২ শতাংশ ভোট পেয়ে ২৩৫টি আসন জয়ের সর্বকালের সেরা রেকর্ড গড়েছিল তারা। তারপর থেকেই গ্রাফ নিম্নমুখী। 

তাদের এই অধঃপতন নিয়ে নানা মুনির নানা মত। সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত মতটি হলো সঠিক সময়ে সঠিক  সিদ্ধান্ত নিতে না পারাই এর জন্য দায়ি। এক সময়ে অন্ধ কংগ্রেস বিরোধিতা করতে গিয়ে সাম্প্রদায়িক  শক্তির সঙ্গেও আপোষ করেছে বাম নেতারা। এখন বিজেপি বিরোধিতা করলেও অটলবিহারী বাজপেয়ীকে নিয়ে এসে কলকাতার ঐতিহাসিক ব্রিগেডের মাঠে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এক সময়ে সভাও করেছে তারা। আমেরিকার বিরুদ্ধে নিজেদের  ক্ষোভ ব্যক্ত করতে গিয়ে কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকারকে ফেলে দিতেও কার্পণ্য করেনি তারা। আবার সেই কংগ্রেসের সঙ্গেই হাত মিলিয়েছেন নিজেদের অস্তীত্ব টিকিয়ে  রাখতে। দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকার ফলে ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গে বুর্জোয়া দলগুলির মত বাম নেতাদের মধ্যেও ঔদ্ধত্য ও অন্যান্য বুর্জোয়া উপসর্গ প্রকট হয়। তরুণ প্রজন্মকে সামনের সারিতে আসতে দেওয়া হয়নি। এমনকী, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়তেও দেখা গিয়েছে সন্দেহজনক আচরণ। ২০১৯-এর  লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে হারাতে বহু জায়গায় বামেরা নিজেদের ভোট উপহার দিয়েছে বিজেপিকে। এবারের নির্বাচনেও একই ধারা বজায় থাকতে পারে বিভিন্ন কেন্দ্রে। ফলে বামেদের সহজে ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা বেশ কঠিন। মানুষের তাদের প্রতি আস্থায় ফাটল ধরেছে। কেরালায় প্রতি ৫ বছর অন্তর সরকার পরিবর্তনের ধারা চালু থাকায় সেখানে বামপন্থীরা কিছুটা উদার। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় দীর্ঘদিনের ক্ষমতাভোগ তাদের আন্দোলন বিমুখ, আমলাতান্ত্রিক ভোগ বিলাসি করে তুলছে। ফলে অতি-বামদের মত বামেরাও আজ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তিন রাজ্যের বাইরে এক সময়ে কিছু প্রভাব বিস্তৃত হলেও আজ সর্বত্রই সিপিমের নেতৃত্বে বাম আন্দোলন অস্তমিত সূর্য। এবারের বিধানসভা ভোটের পর সেটা আরও প্রকট হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মস্কোতে গাড়িবোমা হামলায় রুশ জেনারেল সারভারভ নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এক ভয়াবহ গাড়িবোমা হামলায় দেশটির শীর্ষস্থানীয় এক জেনারেল নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে রুশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রাশিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির বরাতে জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তির নাম লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফানিল সারভারভ (৫৬)। তিনি রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল ট্রেনিং বিভাগের প্রধান ছিলেন।

তদন্ত কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ স্থানীয় সময় সকালে মস্কোর দক্ষিণাঞ্চলের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের পার্কিং লটে এই বিস্ফোরণ ঘটে। জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। গাড়িটি চালু করার পরপরই সেটির বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে গুরুতর আহত অবস্থায় সারভারভকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, একটি সাদা রঙের গাড়ি বিস্ফোরণে দুমড়েমুচড়ে গেছে এবং সেটির যন্ত্রাংশ উড়ে গিয়ে পাশে থাকা অন্য যানবাহনের ওপর পড়েছে।

রুশ ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে রুশ কর্মকর্তাদের ধারণা, এই হামলার নেপথ্যে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাত থাকতে পারে। তবে ইউক্রেন এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, জেনারেল সারভারভের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তা জানানো হয়েছে।

৫৬ বছর বয়সী ফানিল সারভারভ রুশ সামরিক বাহিনীর অত্যন্ত অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ছিলেন। রুশ গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ফানিল সারভারভ নব্বইয়ের দশক এবং ২০০০ সালের শুরুতে তিনি ওসেটিয়ান-ইঙ্গুশ সংঘাত ও চেচেন যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৫-১৬ সালে সিরিয়ায় রুশ সামরিক অভিযানেও তিনি নেতৃত্ব দেন।

২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে মস্কোতে হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিদের ওপর বেশ কয়েকটি বড় হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র আলেকজান্ডার দুগিনের কন্যা দারিয়া দুগিনা গাড়িবোমা হামলায় নিহত হন।

চলতি বছরের এপ্রিলে জেনারেল ইয়ারোস্লাভ মোসকালিক ও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জেনারেল ইগর কিরিলভও একই ধরনের হামলায় প্রাণ হারান।

নীতিগত কারণে ইউক্রেন সাধারণত এ ধরনের হামলার দায় স্বীকার করে না। তবে গত বছর জেনারেল কিরিলভ নিহতের ঘটনায় ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা সংস্থার জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিল বিবিসির একটি সূত্র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘হিন্দু রাষ্ট্র’ সংবিধানে থাকতে হবে না, এটি সূর্যোদয়ের মতোই সত্য: আরএসএস প্রধান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কলকাতায় আরএসএসের শতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘১০০ ব্যাখ্যান মালা’ অনুষ্ঠানে মোহন ভাগবত। ছবি: সংগৃহীত
কলকাতায় আরএসএসের শতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘১০০ ব্যাখ্যান মালা’ অনুষ্ঠানে মোহন ভাগবত। ছবি: সংগৃহীত

ভারত একটি ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ এবং এর জন্য কোনো সাংবিধানিক অনুমোদনের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত। তাঁর মতে, এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য এবং সূর্য পূর্বদিকে ওঠার মতোই ধ্রুব।

গতকাল রোববার (২১ ডিসেম্বর) কলকাতায় আরএসএসের শতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘১০০ ব্যাখ্যান মালা’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবিধানে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ শব্দ জোড়ানোর কোনো পরিকল্পনা বা দাবি সংঘের আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মোহন ভাগবত বলেন, ‘সূর্য পূর্বদিকে ওঠে; আমরা জানি না কত দিন ধরে এটি ঘটছে। এর জন্য কি আমাদের সাংবিধানিক অনুমোদনের প্রয়োজন আছে? হিন্দুস্তান একটি হিন্দু রাষ্ট্র। যারা এই দেশকে মাতৃভূমি মনে করে এবং ভারতীয় সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করে, তারা সবাই এই দর্শনের অংশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংসদ যদি কখনো সংবিধান সংশোধন করে এই শব্দটি যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তা ভালো। কিন্তু তারা তা করুক বা না করুক—তাতে আমাদের কিছু যায়-আসে না। কারণ, সত্য এটাই যে আমাদের দেশ একটি হিন্দু রাষ্ট্র।’

জাতপাত নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে আরএসএস প্রধান স্পষ্ট করে বলেন, ‘জন্মভিত্তিক বর্ণপ্রথা বা জাতপাত হিন্দুত্বের বৈশিষ্ট্য নয়।’

আরএসএসকে প্রায়ই মুসলিমবিরোধী হিসেবে গণ্য করা হয়। এই প্রসঙ্গে মোহন ভাগবত মানুষকে সরাসরি সংঘের শাখা বা অফিসগুলো ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ অত্যন্ত স্বচ্ছ। আপনারা যেকোনো সময় এসে দেখে যান। যদি আমাদের কার্যক্রমে মুসলিমবিরোধী কিছু খুঁজে পান, তবে আপনাদের ধারণা বজায় রাখুন। কিন্তু যদি তা না দেখেন, তবে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করুন।’

তিনি দাবি করেন, মানুষ এখন বুঝতে পারছে যে আরএসএস হিন্দুদের সুরক্ষার কথা বলে এবং তারা কট্টর জাতীয়তাবাদী, কিন্তু তারা ‘মুসলিমবিরোধী’ নয়।

উল্লেখ্য, ভারতের সংবিধানের মূল প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ (Secular) শব্দটি ছিল না। ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরা গান্ধী সরকারের আনা ৪২তম সংশোধনীর মাধ্যমে এটি যুক্ত করা হয়। অন্যদিকে, আরএসএস দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে, ভারতের সংস্কৃতি এবং জনতাত্ত্বিক কাঠামোর কারণেই এটি প্রাকৃতিকভাবে একটি হিন্দু রাষ্ট্র।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় ক্যাথলিক স্কুলের অপহৃত আরও ১৩০ শিক্ষার্থী মুক্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নাইজার রাজ্যের একটি ক্যাথলিক বোর্ডিং স্কুল ৩শর বেশি শিক্ষার্থী অপহরণ হয়। ছবি: এএফপি
নাইজার রাজ্যের একটি ক্যাথলিক বোর্ডিং স্কুল ৩শর বেশি শিক্ষার্থী অপহরণ হয়। ছবি: এএফপি

নাইজেরিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্য নাইজারে একটি ক্যাথলিক বোর্ডিং স্কুল থেকে অপহৃত ১৩০ জন শিক্ষার্থীকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

এই ঘটনাকে দেশের অন্যতম ভয়াবহ এক গণ-অপহরণের ঘটনা হিসেবে অভিহিত করে সবার মুক্তির পর একে ‘বিজয় এবং স্বস্তির মুহূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে নাইজেরিয়ার সরকার।

গত ২১ নভেম্বর পাপিরির সেন্ট মেরি’স ক্যাথলিক স্কুল থেকে ২৫০ জনেরও বেশি শিশু এবং কর্মী অপহৃত হয়। তাদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন শিশুকে চলতি মাসের শুরুর দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

অবশিষ্ট ১৩০ জন শিশু ও কর্মীকে উদ্ধারের’ বিষয়টি নিশ্চিত করে এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘একজন শিক্ষার্থীও আর বন্দিদশায় নেই।’

গতকাল রোববার রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র বায়ো ওনানুগা জানান, মুক্ত শিক্ষার্থীর মোট সংখ্যা এখন ২৩০ জন। অপহরণের পর থেকে ঠিক কতজনকে তুলে নেওয়া হয়েছিল এবং কতজন বন্দিদশায় ছিল, সে বিষয়টি অস্পষ্ট ছিল। সরকার কীভাবে সর্বশেষ এই মুক্তি নিশ্চিত করেছে বা কোনো মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে কি না তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।

ওনানুগা আরও জানান, আশা করা হচ্ছে, মুক্ত শিক্ষার্থীরা আজ সোমবার নাইজারের রাজধানী মিন্নায় পৌঁছাবে।

গত নভেম্বরে ঘটে যাওয়া এ অপহরণের ঘটনাটি উত্তর ও মধ্য নাইজেরিয়ার স্কুল এবং উপাসনালয়গুলোতে ক্রমবর্ধমান লক্ষ্যবস্তু হামলার সর্বশেষ ঘটনা। এ অপহরণের সময় ৫০ জন শিক্ষার্থী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল বলে জানায় ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব নাইজেরিয়া।

এর আগে ১৮ নভেম্বর সেন্ট মেরি’স-এ হামলার ঠিক কয়েক দিন আগে আরও কিছু গণ-অপহরণের ঘটনা ঘটেছিল। কোয়ারা রাজ্যের ক্রাইস্ট অ্যাপোস্টোলিক চার্চে এক হামলায় দুজন নিহত এবং ৩৮ জন অপহৃত হন। এর আগের দিন কেব্বি রাজ্যের গভর্নমেন্ট গার্লস সেকেন্ডারি স্কুল থেকে দুজন নিহত এবং ২৫ জন মুসলিম শিক্ষার্থী অপহৃত হয়েছিল। কোয়ারা এবং কেব্বি হামলার ঘটনায় যাদের তুলে নেওয়া হয়েছিল, তারা সবাই ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে।

এই অপহরণগুলোর পেছনে কারা রয়েছে তা স্পষ্ট নয়, তবে অধিকাংশ বিশ্লেষকের ধারণা, মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে অপরাধী চক্রগুলো এই কাজ করছে।

গত ৯ ডিসেম্বর নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেছিলেন, তাঁর সরকার আমাদের স্কুলগুলোকে নিরাপদ করতে এবং ছোটদের জন্য শিক্ষার পরিবেশকে আরও নিরাপদ ও অনুকূল করতে নাইজার এবং অন্যান্য রাজ্যগুলোর সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে আরেকটি তেলবাহী ট্যাংকারকে যুক্তরাষ্ট্রের ধাওয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জাহাজটিকে “সক্রিয়ভাবে ধাওয়া” করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। ছবি: এএফপি
জাহাজটিকে “সক্রিয়ভাবে ধাওয়া” করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। ছবি: এএফপি

ভেনেজুয়েলার কাছাকাছি আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাঙ্কার ধাওয়া করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একজন মার্কিন কর্মকর্তা আল জাজিরাকে এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে এই অভিযান ওয়াশিংটনের।

গতকাল রোববার এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। এর মাত্র একদিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশিত এক ‘ব্লকেডের’ অংশ হিসেবে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় জাহাজ জব্দ করে মার্কিন কোস্ট গার্ড।

আল জাজিরাকে ওই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ‘জাহাজটিকে “সক্রিয়ভাবে ধাওয়া” করছে আমাদের কোস্ট গার্ড। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী, জাহাজটি ভেনেজুয়েলার সেই “ডার্ক ফ্লিট”-এর অংশ, যা লাতিন আমেরিকার দেশটির গুরুত্বপূর্ণ তেল খাতের ওপর ওয়াশিংটনের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর চেষ্টা করছে।’

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, জাহাজটি ‘ভুয়া পতাকা’ ব্যবহার করছিল। একই সঙ্গে এটি একটি ‘বিচারিক জব্দাদেশ’-এর আওতাভুক্ত।

এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ওই ট্যাঙ্কারটি নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। তবে এখন পর্যন্ত জাহাজটিতে কেউ আরোহণ করেনি। জাহাজটির গতিরোধের প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যার মধ্যে সন্দেহভাজন জাহাজের খুব কাছ দিয়ে নৌযান চালানো বা ওপর দিয়ে বিমান ওড়ানোও অন্তর্ভুক্ত।

অভিযানটি কোথায় চলছে বা কোন জাহাজের পিছু নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি ওই কর্মকর্তা।

ব্রিটিশ সামুদ্রিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সংস্থা ভ্যানগার্ড ওই জাহাজটিকে ‘বেলা ১’ হিসেবে শনাক্ত করেছে। এটি একটি বিশাল আকারের অপরিশোধিত তেলবাহী জাহাজ, যা গত বছর মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নিষেধাজ্ঞা তালিকায় যুক্ত করা হয়। জাহাজটির সঙ্গে ইরানের যোগসূত্র রয়েছে বলে মার্কিন কর্তৃপক্ষের দাবি।

ট্যাংকারট্র্যাকার্স ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার ভেনেজুয়েলার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় বেলা ১ খালি ছিল।

ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পিডিভিএসএ (PDVSA)-র অভ্যন্তরীণ নথির বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, ২০২১ সালে ভেনেজুয়েলার তেল চীনে পরিবহনে ব্যবহৃত হয়েছিল এই জাহাজটি। একই সঙ্গে, একটি জাহাজ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থাটি আরও জানায় যে, জাহাজটি এর আগে ইরানের অপরিশোধিত তেলও বহন করেছিল।

ভেনেজুয়েলার তেল খাতকে লক্ষ্য করে এই অভিযানটি এমন এক সময়ে পরিচালিত হচ্ছে যখন এই অঞ্চলে বৃহৎ আকারে মার্কিন সামরিক শক্তি বাড়ানো হয়েছে। এর ঘোষিত লক্ষ্য হলো মাদক পাচার মোকাবিলা করা। এছাড়াও, দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির নিকটবর্তী প্রশান্ত মহাসাগর এবং ক্যারিবীয় সাগরে কথিত মাদক পাচারকারী জাহাজগুলোর ওপর দুই ডজনেরও বেশি হামলা চালানো হয়েছে।

সমালোচকেরা এসব হামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অন্যদিকে ভেনেজুয়েলা মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দেশটির দাবি, বিশ্বের বৃহত্তম তেল মজুত দখলের উদ্দেশ্যেই ওয়াশিংটন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ জব্দের ঘটনাকে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে ভেনেজুয়েলা।

এ প্রসঙ্গে গতকাল হোয়াইট হাউস বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জব্দ করা প্রথম দুটি তেলের ট্যাঙ্কার কালোবাজারে পরিচালিত হচ্ছিল এবং নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত দেশগুলোতে তেল সরবরাহ করছিল।

শনিবার জব্দ করা দ্বিতীয় জাহাজটি পানামার পতাকাবাহী ‘সেঞ্চুরিজ’ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। জাহাজটিতে প্রায় ১৮ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল ছিল। ভেনেজুয়েলার এই তেলগুলো চীনে নেওয়ার কথা ছিল।

প্রথম জব্দ জাহাজ ‘স্কিপার’ বর্তমানে টেক্সাস উপকূলে নোঙর করা আছে। জাহাজটিতে থাকা ১৯ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল সেখানে খালাস করে যুক্তরাষ্ট্রে পরিশোধনের প্রস্তুতি চলছে।

এই জাহাজ জব্দের ঘটনায় ভেনেজুয়েলা সরকার অভিযোগ করছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের তেল চুরি করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত