চীনের পর এবার ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ দিতে চায় ভারতও, সংকটে পড়বে ভাটির বাস্তুতন্ত্র

অনলাইন ডেস্ক    
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ১৬
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫: ৩৫
Thumbnail image
ভারতের অরুণাচল রাজ্যের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত সিয়াং তথা ব্রহ্মপুত্র নদীর একটি খাত। ছবি: উইকিমিডিয়া কমনসের সৌজন্যে

তিন দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আন্তর্জাতিক নদী ব্রহ্মপুত্রের ওপর বাঁধ তৈরির প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে চীন। বেইজিংয়ের এই ঘোষণার পর এবার একই নদীতে বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা প্রকাশ করল ভারত। দেশটির অরুণাচল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু সিয়াং আপার মাল্টিপারপাস প্রজেক্ট (এসইউএমপি) বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছেন। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে আনুমানিক ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি রুপি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

চীন কয়েক দিন আগেই ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর ভারত সীমান্তের কাছাকাছি তিব্বতে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণের জন্য ১৩৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এই বাঁধ হিমালয়ের এমন এক গভীর গিরিখাতে নির্মাণ করা হবে যেখানে ব্রহ্মপুত্র নদ বিশাল বাঁক নিয়ে ভারতের অরুণাচল রাজ্যে প্রবেশ করে এবং তারপর বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়।

পেমা খান্ডু ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, এসইউএমপি বাঁধটি কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নয়, বরং সারা বছর নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ বজায় রাখা এবং চীন অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিলে বন্যার ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে নির্মিত হবে এবং এ কারণেই কেন্দ্রীয় সরকার পরিকল্পনা করছে।

খান্ডু বলেন, ‘এসইউএমপি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের আনুমানিক উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার মেগাওয়াট। কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নয়, বরং সিয়াং (অরুণাচলে ব্রহ্মপুত্র সিয়াং নামে পরিচিত) নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ বজায় রাখা এবং চীনের পানি ছাড়ার কারণে সম্ভাব্য বন্যার ঝুঁকি কমানোর জন্য।’

এই প্রকল্পকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে বর্ণনা করে খান্ডু বলেন, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এর গৌণ লক্ষ্য মাত্র। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো সিয়াং নদী এবং এর ওপর নির্ভরশীল সম্প্রদায়কে প্রজন্মের পর প্রজন্মের রক্ষা করা।’

এই প্রকল্পের প্রাক-সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন তৈরির জরিপ এখনো শুরু হয়নি। স্থানীয়দের কঠোর বিরোধিতার কারণে—যারা উচ্ছেদ, জীবন-জীবিকার ক্ষতি এবং এই মেগা ড্যামের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন—এটি এখনো করা সম্ভব হয়নি। চীনা প্রকল্প ‘যথাযথ সুরক্ষা প্রস্তুতি ছাড়াই’ এগিয়ে গেলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে উল্লেখ করে খান্ডু বলেন, ব্রহ্মপুত্রের পানি তিব্বতের শুষ্ক অঞ্চলে সরিয়ে নেওয়ার চীনা পরিকল্পনা শীতকালে নদীর প্রবাহ ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিতে পারে।

খান্ডু বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে, পানির পরিমাণ এতটাই কমে যেতে পারে যে—বিশাল এই নদী হেঁটে পার হওয়া সম্ভব হতে পারে। প্রস্তাবিত সিয়াং প্রকল্প একটি জলাধার তৈরি করবে, যা ৯ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি সংরক্ষণ করতে সক্ষম। এটি নিশ্চিত করবে যে, শুষ্ক মৌসুমেও নদীর প্রবাহ বজায় থাকবে। এ ছাড়া, জলাধারটি চীনা বাঁধ থেকে হঠাৎ পানি ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি বাফার হিসেবে কাজ করবে, যা অরুণাচল প্রদেশ, আসাম এবং বাংলাদেশের ভয়াবহ বন্যা এড়াতে সাহায্য করতে পারে।’

ভারত এবং চীনের চলমান দ্বিপক্ষীয় আলোচনার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী আত্মতুষ্টির বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন, ‘চীন অনিশ্চিত এবং যেকোনো কিছু করতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা এবং আমাদের জনগণের কল্যাণের বিষয়ে আমরা ঝুঁকি নিতে পারি না।’

চীনা সরকার তিব্বতের ইয়ারলুন সাংপো (ব্রহ্মপুত্র তিব্বত বা চীনে এই নামে পরিচিত) নদীর নিম্নাঞ্চলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। এটি প্রতি বছর ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। যা ৩০ কোটিরও বেশি মানুষের বার্ষিক চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। এই প্রকল্পের ব্যয় ১৩৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে। যা পৃথিবীর অন্য যেকোনো একক অবকাঠামো প্রকল্পের চেয়ে বেশি। এমনকি এর ব্যয় চীনে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম ড্যাম থ্রি গর্জেসের বেশি হবে।

স্থানীয়দের উদ্বেগের বিষয়ে খান্ডু বলেন, সরকার প্রকল্পের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার আগে বিস্তৃত জরিপ চালাবে। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে বিস্তারিত স্টাডি শেষ হওয়ার পরই আমরা বাঁধের সঠিক অবস্থান, এর উচ্চতা এবং কোন কোন এলাকা ডুবে যাবে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারব। এ বিষয়ে একটি গণশুনানিও হবে। যেখানে মানুষের উদ্বেগ শোনা হবে।’

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ এবং এটি মানুষের ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়ায় বিশ্বাস করে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি মানুষকে এগিয়ে এসে আলোচনার মাধ্যমে তাদের বিভ্রান্তি দূর করার জন্য আহ্বান জানাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত