মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ভারত সফরে আলোচনা হবে চীনা বাঁধ নিয়েও

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ৫০
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ৩৫
Thumbnail image
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভানের আগামী ৫-৬ জানুয়ারি নয়াদিল্লি সফর করবেন। তাঁর এই সফরে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর চীনের তৈরি বাঁধগুলোর প্রভাব নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা আছে। গতকাল শুক্রবার রাতে এক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

চীন দীর্ঘদিন ধরে এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের চলেছে। তিব্বতের মতো কৌশলগত অঞ্চলগুলোতে বাঁধ নির্মাণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় চীনের একতরফা উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। তিব্বতের ইয়ারলুন সাংপো নদীর ওপর চীনের পরিকল্পিত জলবিদ্যুৎ বাঁধ এই উত্তেজনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। এই নদী ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও আসামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নামে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এ ধরনের প্রকল্পের ভাটির অঞ্চলে পানির প্রবাহ, পরিবেশ ও অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভারত এরই মধ্যে চীনকে এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে চীনা কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব প্রকল্প পরিবেশ বা ভাটির অঞ্চলের পানির সরবরাহে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না। চীনের বক্তব্যের পরও পরিবেশবিজ্ঞানী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এই বাঁধটি কৌশলগতভাবে ভারতে চাপে ফেলার প্রচেষ্টার অংশ।

ওয়াশিংটনও চীনের এই বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পগুলোকে গভীর উদ্বেগের চোখে দেখছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক (ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয়) অঞ্চলে চীনের উজানের বাঁধগুলো অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশ ও জলবায়ুতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। মেকং অঞ্চলে চীনের বাঁধগুলোর প্রভাবের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘ভাটির দেশগুলোর ওপর এই ধরনের প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।’

সুলিভানের সফরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র চীনের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে। তবে এই সফরের আলোচনা কেবল চীনকেন্দ্রিক নয়। মার্কিন কর্মকর্তারা আশা করছেন, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মহাকাশ গবেষণা, সামরিক প্রযুক্তির লাইসেন্সিং এবং চীনের অর্থনৈতিক অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতার বিষয়গুলো আলোচনায় আসবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যকার এই বৈঠক ভবিষ্যতে উভয় দেশের কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সফরের সময় মার্কিন কর্মকর্তারা দালাই লামার সঙ্গে কোনো বৈঠক করবেন না বলে জানানো হয়েছে। এটি চীনের সঙ্গে উত্তেজনা না বাড়ানোর কৌশল হিসেবে দেখা যেতে পারে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের সম্পর্ক গভীর করেছে, তবে মানবাধিকার, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে দ্বিপক্ষীয় মতবিরোধ রয়ে গেছে।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘনিষ্ঠ হলেও কিছু ইস্যুতে উত্তেজনা রয়েছে। যেমন—ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সময় মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক, কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে কথিত হত্যার পরিকল্পনা এবং ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন নিয়ে ওয়াশিংটন মাঝেমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করে। তবে, এই পার্থক্যগুলো সত্ত্বেও উভয় দেশ একে অপরকে কৌশলগত সহযোগী হিসেবে দেখছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য একযোগে কাজ করার চেষ্টা করছে।

সুলিভানের এই সফর ভারত-মার্কিন সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পাশাপাশি চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় যৌথ কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

উল্লেখ্য, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এই বাঁধ নির্মাণের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় চীন সরকার। বাঁধটি ইয়ারলুন সাংপো নদীর ভাটিতে নির্মাণ করা হবে। এটি থেকে বছরে ৩০০ বিলিয়ন (৩০ হাজার কোটি) কিলোওয়াট–ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে, ২০২০ সালে পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না এমন ধারণাই দিয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধটিও চীনে। মধ্য চীনের থ্রি গর্জেস ড্যাম নামের ওই বাঁধের উৎপাদন সক্ষমতা ৮ হাজার ৮২০ কোটি কিলোওয়াট–ঘণ্টা। নতুন জলবিদ্যুৎ বাঁধটির উৎপাদন সক্ষমতা হবে এর তিন গুণ।

এই প্রকল্পটি কার্বন ব্যবহার সীমিতকরণ এবং কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে চীন সরকার। পাশাপাশি প্রকৌশলসহ অন্যান্য সম্পর্কিত শিল্পগুলোর সম্প্রসারণ এবং তিব্বতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে বলে গত বুধবার চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইয়ারলুন সাংপো নদীর একটি অংশ মাত্র ৫০ কিলোমিটারের (৩১ মাইল) মধ্যে নাটকীয়ভাবে ২ হাজার মিটার (৬ হাজার ৫৬১ ফুট) নিচে নেমে গেছে। ফলে এখানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে এটি একটি অনন্য প্রকৌশল চ্যালেঞ্জও হবে।

বাঁধ নির্মাণের জন্য বাজেট, প্রকৌশল ব্যয়সহ সব মিলিয়ে এই বাঁধ নির্মাণের ব্যয় থ্রি গর্জেস ড্যামের বাজেটকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেখানে থ্রি গর্জেস ড্যাম নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ২৫৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউয়ান (৩৪ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার)। এই ব্যয়ের মধ্যে ১৪ লাখ মানুষের পুনর্বাসনও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই বাঁধ নির্মাণ ব্যয় শেষ পর্যন্ত প্রাক্কলিত ব্যয়ের চারগুণ হয়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত