ভারতে লোকসভা নির্বাচনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার কথা কয়েক দিনের মধ্যে। এর মধ্যেই হঠাৎ দেশটির নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল পদত্যাগ করেছেন। ‘ব্যক্তিগত কারণে’ পদত্যাগ করলেও তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক পরিসরে তোলপাড় চলছে। লোকসভার ভোট পেছাবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু পদত্যাগপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছেন। ফলে তাৎক্ষণিকভাবেই অরুণ গোয়লের পদত্যাগ কার্যকর হয়েছে বলে আইন মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক নোটিশে বলা হয়েছে।

ভারতের নির্বাচন কমিশনে সদস্যসংখ্যা তিন। সেখানে আগে থেকেই একটি পদ ফাঁকা ছিল। অরুণ গোয়েল পদত্যাগ করায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারই এখন একমাত্র প্যানেল সদস্য। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এনডিটিভি বলছে, পদত্যাগপত্রে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছেন অরুণ। তাঁকে পদত্যাগ করা থেকে বিরত রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা করা হয়েছিল বলে দাবি করেন ওই কর্মকর্তারা।

পদত্যাগের খবরের পর অরুণের স্বাস্থ্যের অবনতির গুঞ্জন তৈরি হলেও তা ভিত্তি পায়নি। শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, অরুণ সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। বরং প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের সঙ্গে অরুণের কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে বলে তাঁদের ভাষ্য।

অবসরপ্রাপ্ত আমলা অরুণ ১৯৮৫ ব্যাচে আইএএস কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। আগামী সপ্তাহে ভারতে লোকসভা নির্বাচনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। তবে অরুণ গোয়েলের এই আকস্মিক পদত্যাগের পর সেটা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এখন কী হবে

নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শুরুতে আইনমন্ত্রীর নেতৃত্ব একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। যে কমিটিতে দুজন সচিব থাকবেন। তাঁরা পাঁচজনের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে দেবেন।

তারপর প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি সিলেকশন কমিটি, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়ন দেওয়া একজন মন্ত্রী থাকবেন, লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা অথবা একক বৃহৎ বিরোধী দলের নেতাসহ ওই কমিটি চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাই করবে। তারপর প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে বেছে নেওয়া সিইসি বা ইসিকে নিয়োগ দেবেন।

এর আগে নির্বাচন কমিশনার বাছাই কমিটিতে ভারতের প্রধান বিচারপতিও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কিন্তু গত বছর নতুন একটি আইন প্রণয়ন করে কমিটি থেকে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়া হয়।

এখন সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে দুজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দিতে হবে। এভাবে তাড়াহুড়ো করে নিয়োগ প্রদান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা সাকিত গোখলে। 

ভারতে তোলপাড়, নির্বাচন কি পেছাবে
হঠাৎ নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েলের পদত্যাগে ভারতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গে অরুণ গোয়েলের আকস্মিক পদত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি বলেন, ‘ইলেকশন কমিশনার নাকি ইলেকশন ওমিশনার? ভারতে এখন মাত্র একজন নির্বাচন কমিশনার রয়েছেন, যেখানে কয়েক দিনের মধ্যে লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। কেন? যেমনটা আমি আগেই বলেছি, আমরা যদি আমাদের স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের নিয়মতান্ত্রিক পতন বন্ধ না করি, তাহলে আমাদের গণতন্ত্রের স্থান একনায়কতন্ত্র দখল করে নেবে!’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ের নতুন প্রক্রিয়ায় সব ক্ষমতা কার্যকরভাবে ক্ষমতাসীন দল এবং প্রধানমন্ত্রীর হাতে কুক্ষিগত, তাহলে পরবর্তী মেয়াদ শেষ হওয়ার ২৩ দিন পরেও কেন নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়নি? মোদি সরকারকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে এবং যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা দিতে হবে।’