হারেৎজের সম্পাদকীয়: বর্বরতার চূড়ান্ত পর্যায়ে জায়োনিজম, ইসরায়েলের পতন সময়ের ব্যাপার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪, ১৫: ২৯
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৪, ১৬: ৩১

১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধের জয়কে স্মরণীয় করে রাখতে গত বুধবার ইসরায়েলের দখল করা পূর্ব জেরুজালেমে পতাকা মিছিল করে কট্টর ইহুদি জাতীয়তাবাদীরা। সেদিন তাঁরা যে বর্বরতা দেখিয়েছে, তার ফটোগ্রাফিক প্রমাণাদির দিকে তাকানোও অসম্ভব। এর মধ্য দিয়ে মূলত ইহুদি জাতীয়তাবাদ তথা জায়োনিজমের সর্বশেষ ধাপ ‘ব্রুটালাইজেশন’ বা বর্বরকরণ সম্পন্ন হয়েছে। 

প্রখ্যাত ইহুদি দার্শনিক অধ্যাপক ড. ইয়েশায়াহু লেবোউইৎস কট্টর ইহুদি জাতীয়তাবাদের পরিণতি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘ছয় দিনের যুদ্ধের পরে যে জাতীয় গৌরব এবং উচ্ছ্বাস, তা অস্থায়ী এবং এটি আমাদের গর্বিত, উদীয়মান জাতীয়তাবাদ থেকে চরম, মেসিয়ানিক বা ত্রাতা মনোভাবসম্পন্ন অতিজাতিবাদের দিকে নিয়ে যাবে। তৃতীয় পর্যায় হবে বর্বরতা এবং চূড়ান্ত পর্যায় হবে ইহুদিবাদের অবসান।’ 

ইহুদি জাতীয়তাবাদের ব্রুটালাইজেশন বর্তমানে এর চরম পর্যায়ে আছে। মিছিলের দিনে কট্টর ইহুদিবাদীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন হারেৎজের সাংবাদিক নির হাসন। তাঁকে একদল কিশোর আক্রমণ করেছিল। তারা তাঁকে মাটিতে ফেলে নির্মমভাবে লাথি মেরে মেরে আহত করেছে। তিনি বলেছেন, বুধবারের মিছিলের ‘সাধারণ মনোভাব ছিল প্রতিশোধের।’

নির হাসন লিখেছেন, সেদিন যারা মিছিলে গিয়েছিল তাদের অধিকাংশই ইসরায়েলি কট্টরপন্থী কাহানিস্ট মতবাদের রাজনৈতিক প্রতীক ‘মুষ্টি’ আঁকা টি-শার্ট পরিধান করেছিল। এ সময় তাঁরা ‘আরবদের প্রতি মৃত্যু বর্ষিত হোক’, ‘তাদের গ্রামগুলো পুড়ে যাক’ ইত্যাদি আরববিদ্বেষী স্লোগান-গান গাইছিল। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন কট্টরপন্থীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ইতামার বেন গভির। সব মিলিয়ে মিছিলের চরিত্র ছিল খুবই ভীতিজনক। 

সেদিন কেবল নির হাসন একাই আক্রমণের শিকার হননি। মিছিলে অংশ নেওয়া দাঙ্গাকারীরা ফিলিস্তিনি পথচারীদের হুমকি দিয়েছে, অভিশাপ দিয়েছে, ধাক্কা দিয়েছে এবং আক্রমণ করেছে। এবং যারা সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়েছে বা যারা ছবি তোলার চেষ্টা করে, তাদেরও আক্রমণ করেছে। সাংবাদিকদের ওপর তাদের আক্রমণের কারণ হলো—তাঁরা পর্যাপ্ত ফিলিস্তিনিকে ‘শিকার’ হিসেবে খুঁজে পায়নি। কারণ, মিছিল উপলক্ষে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে বাড়িতে থেকেই বের হতে দেওয়া হয়নি, একপ্রকার বন্দী করে রাখা হয়েছিল তাদের। ফিলিস্তিনিরা এরই মধ্যে বুঝে গেছে যে, ইহুদিরা যখন জেরুজালেম দিবস উদ্‌যাপন করে তখন এলাকা খালি করাই ভালো, যাতে উদ্‌যাপনকারীরা তাদের ওপর নির্যাতন চালাতে প্রলুব্ধ হওয়ার কোনো কারণ খুঁজে না পায়। 

আমরা এখন আর কেবল মুষ্টিমেয় কিছু উগ্র বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি বা কাহানিস্ট গোষ্ঠীর মতো নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর কথা বলছি না। বর্বরতা এখন আর প্রান্তিক ইহুদি সেটেলমেন্ট বা ও সেটেলমেন্টের নিরাপত্তাচৌকিতে সীমাবদ্ধ নয়; এটি সব দিকে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়ংকরভাবে। এমনকি এই বর্বরতা সামরিক বাহিনী, পার্লামেন্ট নেসেট এবং মন্ত্রিসভায়ও প্রবেশ করেছে। 

ইসরায়েলি মন্ত্রীরা এবং অনেক নেসেট সদস্য হাজার হাজার মানুষের সেই মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন এবং কেউ কেউ আরবদের রক্ত কামনা করে গাওয়া প্রতিশোধের গানে নেচেছেন। মন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচ এবং মিরি রেগেভও মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। আইনপ্রণেতা জভি সুকোত, সিমচা রথম্যান এবং আলমোগ কোহেন এবং অবশ্যই কাহানিস্টদের মধ্যমণি বেন গভিরও যোগ দিয়েছিলেন। মিছিলে টেম্পল মাউন্ট তথা আল-আকসা মসজিদ নিয়ে যে স্ট্যাটাস ক্যু আছে, তা ভেঙে ফেলার হুমকিও দিয়ে মূলত একটি ধর্মযুদ্ধকেই উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। 

ইসরায়েলের রাজনীতির ভারকেন্দ্র যদি সমাজের কোণে কোণে চরমপন্থীদের বিকাশ ঠেকাতে কাজ না করে, কাহানিস্টদের নির্মূল না করে এবং ইসরায়েলি সমাজের দেহ থেকে দখলদারি মনোভাবের বিষফোড়া সরিয়ে না ফেলে, তাহলে ইসরায়েলের চূড়ান্ত পতন কেবল সময়ের ব্যাপার। এরই মধ্যে ক্ষণগণনা বা কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত