হামাস-হিজবুল্লাহ-হুতির হামলা, ইসরায়েলি পাল্টায় ক্ষতি বেশি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
Thumbnail image

ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। গতকাল সোমবার এসব হামলায় তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি ইসরায়েল থেকে। গাজার যুদ্ধের এক বছর পূর্তিতে গতকাল ৭ অক্টোবর এমন হামলা দেখা গেল। তবে ইসরায়েলের হামলায় লেবানন ও গাজায় নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, এদিকে লেবানন ও ফিলিস্তিনে গাজার আরও কিছু এলাকা ফাঁকা করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। বিশ্বনেতারা এই দুই দেশের পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জাতিসংঘ বলছে, পুরো গাজা কবরস্থানে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলছে, পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে গতকাল মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস আবারও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও বারবার এই আহ্বানের পরও কোনো সাড়া মিলছে না ইসরায়েলের পক্ষ থেকে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১ হাজারের বেশি ইসরায়েলি নিহত হন। এর জেরে যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধ এখনো চলছে। উল্টো হামাসকে সাহায্য করতে গিয়ে হিজবুল্লাহর হামলার কারণে লেবাননে এই যুদ্ধ ছড়িয়েছে। গতকাল পাল্টা প্রতিরোধের অংশ হিসেবে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালায় হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গতকাল লেবানন থেকে ১২৭টি হামলা করা হয়েছে। এ সময় ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে সতর্কসংকেত বাজানো হয়। এ ছাড়া গতকাল তেল আবিবে হামলা চালিয়েছে হামাস। এতে দুজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

যুদ্ধের এক বছর পূর্তিতে হামাস বলেছে, তারা প্রতিরোধ চালিয়ে যাবে; এই হামলা, হতাহতের প্রতিশোধ নেবে তারা। আর হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে গতকাল বলা হয়েছে, তারা লেবাননের সীমান্তবর্তী এলাকায় ইসরায়েলের সেনাদের প্রতিরোধ করছে। আইডিএফের ওপর হামলা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছে তারা।

এদিন হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে এ ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। 
এদিকে আইডিএফ গতকালও ব্যাপক হামলা চালিয়েছে গাজা ও লেবাননে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় হামলায় ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে ৪১ হাজার ৯০৯ জন ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে প্রাণ হারালেন। আর আহত হয়েছেন ৯৭ হাজারের বেশি মানুষ।

সিএনএন বলছে, রোববার ও গতকাল রাতে লেবাননে হামলা চালায় ইসরায়েল। লেবাননের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এর মধ্যে একটি হামলায় ১০ জন অগ্নিনির্বাপক কর্মী নিহত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের একটি স্টেশনে হামলার ফলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

লেবাননের পরিস্থিতি নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান এইচআরডব্লিউ। তারা জানিয়েছে, সিরিয়া ও লেবানন সীমান্তে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। সেখানে বেসামরিক মানুষের ওপর হামলা করা হচ্ছে। এতে সংকট বাড়ছে। সেখানে এমন সব মানুষের ওপর করা হামলা হচ্ছে, যাঁরা কি না লেবানন ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। 

বলছেন নেতারা

এ পরিস্থিতিতে ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, পুরো মধ্যপ্রাচ্য একটি অগ্নিগর্ভের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এ পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম বলে মনে হচ্ছে।

গাজার পরিস্থিতি তুলে ধরে জোসেপ বোরেল বলেন, ইসরায়েলে এক বছর আগে যে ভয়ংকর হামলা করা হয়েছিল, এরপর থেকে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপই হচ্ছে।

গাজার পরিস্থিতি তুলে ধরে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য নিযুক্ত জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রম সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, হামাসের হাতে যাঁরা বন্দী রয়েছেন, তাঁরা অবর্ণনীয় এক কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তবে যুদ্ধের কারণে ফিলিস্তিনের এলাকাগুলো কবরস্থানে পরিণত হতে যাচ্ছে।

গাজা যুদ্ধের এক বছরের মাথায় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, ‘হামাস যা করেছে তা খুবই মন্দ কাজ। এটি ছিল নৃশংস এবং বিকৃত। তবে তিনি এ-ও বলেন, গত এক বছরে গাজায় যে আকারে হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে, তাতে আমার হৃদয় ভেঙে গেছে।’

আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের নাগরিকদের জন্য একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। কারণ এখন যে সহিংসতা চলছে, সেদিন তা শুরু করেছিল হামাস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত