মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যেভাবে হয় ভোট গ্রহণ ও গণনা

অনলাইন ডেস্ক    
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৪: ৪৮
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৪: ৫৯
যুক্তরাষ্ট্র একাধিক পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করে। প্রতীকী ছবি। সিএনএনের সৌজন্যে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আগাম ভোট দিয়েছেন অনেকে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ ও গণনার প্রক্রিয়া আমাদের দেশের তুলনায় একটু আলাদাই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্দিষ্ট দিনে সরাসরি ভোটের পাশাপাশি ভোটাররা ই-মেইল ও ডাকযোগেও ভোট দিতে পারেন। এমনকি নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত দিনের আগেও সরাসরি ভোট দেওয়া যায় নির্দিষ্ট পোলিং বুথে।

যেভাবে কাজ করে মার্কিন নির্বাচনে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল নির্বাচন কমিশন থাকলেও কোনো কেন্দ্রীয় নির্বাচনব্যবস্থা নেই। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় নির্বাচনী তহবিল আইন প্রয়োগ করে। এটি নির্বাচনী তহবিল, অনুদান ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সরকারি তহবিল ব্যবস্থাপনা করে। তবে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব থাকে স্থানীয় আরও স্পষ্ট করে বললে সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যের কর্তৃপক্ষের হাতে।

এই কর্তৃপক্ষগুলো স্থানীয়, রাজ্য এবং ফেডারেল আইন মেনে চলে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানও তাদের নির্দেশনা দেয়। ফলে নির্বাচনী নিয়মাবলি রাজ্যভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। ব্যালটপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজারেরও বেশি স্থানীয় সংস্থা নির্বাচন পরিচালনা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক টাইম জোন থাকায় কোনো একটি ভোটকেন্দ্র কখন খুলবে আর কখন বন্ধ হবে তা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্য ও শহরের ওপর। যেমন—ভারমন্টে কিছু কেন্দ্রে স্থানীয় সময় ভোর ৫টা (পূর্বাঞ্চলীয় সময়) থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। অনেক রাজ্য, যেমন—জর্জিয়া, পেনসিলভানিয়া, আইওয়া ও ফ্লোরিডায় স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে ভোটকেন্দ্র খোলে।

হাওয়াইতে ভোটকেন্দ্র খোলে স্থানীয় সময় সকাল ৭টায়। তবে বেশির ভাগ জায়গায় সকাল ৭টায় ভোটকেন্দ্র খুললেও এই সময় একরকম নয়। যার কারণ, পৃথক টাইম জোন। তবে সাধারণত ভোটকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয় সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১টার মধ্যে। বিষয়টি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যের আইনের ওপর।

ভোটারেরা ভোট দেন যেভাবে

যুক্তরাষ্ট্রে ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। মেইল বা ডাকযোগে ভোট দেওয়া গেলেও দেশটিতে অনলাইনে ভোট দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের দেশের মতোই দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের প্রত্যেক ভোটারের জন্য নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্র বরাদ্দ করা হয়। এসব কেন্দ্র সাধারণত সরকারি ভবন, যেমন কনভেনশন সেন্টার, লাইব্রেরি, স্কুল বা কমিউনিটি সেন্টারে স্থাপন করা হয়ে থাকে। ভোটাররা এসব কেন্দ্রে গোপন বুথে গিয়ে ব্যালট পূরণ করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ ভোটারই ‘হাতে পূরণ করা যায়’ এমন কাগজের ব্যালট ব্যবহার করেন। সাধারণত, ভোটাররা প্রার্থীর নামের পাশে থাকা গোল বা বর্গ চিহ্ন পূরণ করেন। ফিলাডেলফিয়ার বেসরকারি সংস্থা ‘ভেরিফায়েড ভোটিং’—এর তথ্য অনুসারে, প্রায় ৭০ শতাংশ নিবন্ধিত ভোটার এমন অঞ্চলে বসবাস করেন যেখানে হাতে চিহ্নিত কাগজের ব্যালট ব্যবহার করা হয়।

কাগজের ব্যালটের পাশাপাশি কিছু ভোটার ডিজিটাল ডিভাইস দিয়েও ভোট দেন। কিছু এলাকায় ভোটারদের জন্য ডিজিটাল ডিভাইসে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এই ডিভাইসকে বলা হয় ব্যালট মার্কিং ডিভাইস বা বিএমডি। ভোটাররা এতে ভোট দেওয়ার পর সেটি থেকে একটি কাগজে প্রিন্টর বের হয়। যা পরে ব্যালট বাক্সে ফেলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ শতাংশ ভোটার এ ধরনের ব্যবস্থায় ভোট দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল অব স্টেট গভর্নমেন্টস ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আরেকটি ব্যবস্থা হলো রেকর্ডিং ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা, কানসাস, কেনটাকি, লুইসিয়ানা, মিসিসিপি, টেনেসি এবং টেক্সাসে ভোটাররা সরাসরি রেকর্ডিং ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম ব্যবহার করে ভোট দিয়েছেন। এই সিস্টেমে ভোটাররা বোতাম চাপেন বা টাচস্ক্রিন ব্যবহার করেন। তাদের ভোট সরাসরি কম্পিউটার সিস্টেমে রেকর্ড হয়।

কিছু রেকর্ডিং ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম একটি প্রিন্টারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। যেখানে ভোটার ভোট দেওয়ার পর তাঁর ভোট ঠিক আছে কি না তা যাচাই করতে পারেন। এটি প্রতিটি ভোটের একটি কাগুজে রেকর্ড তৈরি করে। রেকর্ড একবার তৈরি হয়ে যাওয়ার পর তা আর বদলানোর সুযোগ থাকে না। যুক্তরাষ্ট্রের ৫ শতাংশ ভোটার রেকর্ডিং ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম ব্যবহার করে ভোট দেন।

এদিকে, ভোট দেওয়ার সময় পরিচয়পত্র দেখানোর বিষয়টিও যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যভেদে ভিন্ন। যেমন, ৩৫টি রাজ্যে ভোটারদের বৈধ আইডি দেখাতে হয়। এর মধ্যে ২৫টি রাজ্যে ছবিযুক্ত আইডি দেখানো বাধ্যতামূলক। তবে, সাধারণত ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্টও গ্রহণযোগ্য।

আবার, ১৫টি রাজ্যে ভোট দেওয়ার সময় কোনো আইডি দেখানোর প্রয়োজন নেই। উদাহরণস্বরূপ, নেভাদায় ভোটারদের আইডি আনতে হয় না। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে শুধু নাম সই করতে হয়। তারপর সেই সই ভোটার রেজিস্ট্রেশনের সময় দেওয়া সই ও আইডির সঙ্গে মেলানো হয়। তবে কিছু রাজ্যে, যেখানে সাধারণত আইডি লাগে না। প্রথমবার ভোট দেওয়ার সময় বা রেজিস্ট্রেশনের সময় আইডি না দিলে, ভোটারদের আইডি দেখাতে হতে পারে।

ভোট গণনা হয় যেভাবে

আগেই বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন ব্যবস্থা কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা হয় না। ভোটগ্রহণের সঙ্গে যেমন ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, তেমনি ভোট গণনার সঙ্গেও নেই।

হাতে পূরণ করা যায় এমন কাগজের ব্যালট এবং ব্যালট মার্কিং ডিভাইস দিয়ে দেওয়া ব্যালট সাধারণত অপটিক্যাল স্ক্যানার দিয়ে গণনা করা হয়। এরপর ডিজিটালভাবে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করা হয়। ভোট পুনর্গণনা এবং ফলাফল যাচাইয়ের পদ্ধতি রাজ্যভেদে ভিন্ন হয়। রাজ্যগুলোকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের নির্বাচনের ফলাফল নিশ্চিত করতে হয়। তবে, সাধারণত ভোটগ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফলাফল প্রকাশিত হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত