Ajker Patrika

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যেভাবে হয় ভোট গ্রহণ ও গণনা

আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৪: ৫৯
যুক্তরাষ্ট্র একাধিক পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করে। প্রতীকী ছবি। সিএনএনের সৌজন্যে
যুক্তরাষ্ট্র একাধিক পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করে। প্রতীকী ছবি। সিএনএনের সৌজন্যে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আগাম ভোট দিয়েছেন অনেকে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ ও গণনার প্রক্রিয়া আমাদের দেশের তুলনায় একটু আলাদাই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্দিষ্ট দিনে সরাসরি ভোটের পাশাপাশি ভোটাররা ই-মেইল ও ডাকযোগেও ভোট দিতে পারেন। এমনকি নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত দিনের আগেও সরাসরি ভোট দেওয়া যায় নির্দিষ্ট পোলিং বুথে।

যেভাবে কাজ করে মার্কিন নির্বাচনে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল নির্বাচন কমিশন থাকলেও কোনো কেন্দ্রীয় নির্বাচনব্যবস্থা নেই। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় নির্বাচনী তহবিল আইন প্রয়োগ করে। এটি নির্বাচনী তহবিল, অনুদান ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সরকারি তহবিল ব্যবস্থাপনা করে। তবে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব থাকে স্থানীয় আরও স্পষ্ট করে বললে সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যের কর্তৃপক্ষের হাতে।

এই কর্তৃপক্ষগুলো স্থানীয়, রাজ্য এবং ফেডারেল আইন মেনে চলে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানও তাদের নির্দেশনা দেয়। ফলে নির্বাচনী নিয়মাবলি রাজ্যভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। ব্যালটপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজারেরও বেশি স্থানীয় সংস্থা নির্বাচন পরিচালনা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক টাইম জোন থাকায় কোনো একটি ভোটকেন্দ্র কখন খুলবে আর কখন বন্ধ হবে তা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্য ও শহরের ওপর। যেমন—ভারমন্টে কিছু কেন্দ্রে স্থানীয় সময় ভোর ৫টা (পূর্বাঞ্চলীয় সময়) থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। অনেক রাজ্য, যেমন—জর্জিয়া, পেনসিলভানিয়া, আইওয়া ও ফ্লোরিডায় স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে ভোটকেন্দ্র খোলে।

হাওয়াইতে ভোটকেন্দ্র খোলে স্থানীয় সময় সকাল ৭টায়। তবে বেশির ভাগ জায়গায় সকাল ৭টায় ভোটকেন্দ্র খুললেও এই সময় একরকম নয়। যার কারণ, পৃথক টাইম জোন। তবে সাধারণত ভোটকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয় সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১টার মধ্যে। বিষয়টি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যের আইনের ওপর।

ভোটারেরা ভোট দেন যেভাবে

যুক্তরাষ্ট্রে ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। মেইল বা ডাকযোগে ভোট দেওয়া গেলেও দেশটিতে অনলাইনে ভোট দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের দেশের মতোই দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের প্রত্যেক ভোটারের জন্য নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্র বরাদ্দ করা হয়। এসব কেন্দ্র সাধারণত সরকারি ভবন, যেমন কনভেনশন সেন্টার, লাইব্রেরি, স্কুল বা কমিউনিটি সেন্টারে স্থাপন করা হয়ে থাকে। ভোটাররা এসব কেন্দ্রে গোপন বুথে গিয়ে ব্যালট পূরণ করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ ভোটারই ‘হাতে পূরণ করা যায়’ এমন কাগজের ব্যালট ব্যবহার করেন। সাধারণত, ভোটাররা প্রার্থীর নামের পাশে থাকা গোল বা বর্গ চিহ্ন পূরণ করেন। ফিলাডেলফিয়ার বেসরকারি সংস্থা ‘ভেরিফায়েড ভোটিং’—এর তথ্য অনুসারে, প্রায় ৭০ শতাংশ নিবন্ধিত ভোটার এমন অঞ্চলে বসবাস করেন যেখানে হাতে চিহ্নিত কাগজের ব্যালট ব্যবহার করা হয়।

কাগজের ব্যালটের পাশাপাশি কিছু ভোটার ডিজিটাল ডিভাইস দিয়েও ভোট দেন। কিছু এলাকায় ভোটারদের জন্য ডিজিটাল ডিভাইসে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এই ডিভাইসকে বলা হয় ব্যালট মার্কিং ডিভাইস বা বিএমডি। ভোটাররা এতে ভোট দেওয়ার পর সেটি থেকে একটি কাগজে প্রিন্টর বের হয়। যা পরে ব্যালট বাক্সে ফেলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ শতাংশ ভোটার এ ধরনের ব্যবস্থায় ভোট দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল অব স্টেট গভর্নমেন্টস ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আরেকটি ব্যবস্থা হলো রেকর্ডিং ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা, কানসাস, কেনটাকি, লুইসিয়ানা, মিসিসিপি, টেনেসি এবং টেক্সাসে ভোটাররা সরাসরি রেকর্ডিং ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম ব্যবহার করে ভোট দিয়েছেন। এই সিস্টেমে ভোটাররা বোতাম চাপেন বা টাচস্ক্রিন ব্যবহার করেন। তাদের ভোট সরাসরি কম্পিউটার সিস্টেমে রেকর্ড হয়।

কিছু রেকর্ডিং ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম একটি প্রিন্টারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। যেখানে ভোটার ভোট দেওয়ার পর তাঁর ভোট ঠিক আছে কি না তা যাচাই করতে পারেন। এটি প্রতিটি ভোটের একটি কাগুজে রেকর্ড তৈরি করে। রেকর্ড একবার তৈরি হয়ে যাওয়ার পর তা আর বদলানোর সুযোগ থাকে না। যুক্তরাষ্ট্রের ৫ শতাংশ ভোটার রেকর্ডিং ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম ব্যবহার করে ভোট দেন।

এদিকে, ভোট দেওয়ার সময় পরিচয়পত্র দেখানোর বিষয়টিও যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যভেদে ভিন্ন। যেমন, ৩৫টি রাজ্যে ভোটারদের বৈধ আইডি দেখাতে হয়। এর মধ্যে ২৫টি রাজ্যে ছবিযুক্ত আইডি দেখানো বাধ্যতামূলক। তবে, সাধারণত ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্টও গ্রহণযোগ্য।

আবার, ১৫টি রাজ্যে ভোট দেওয়ার সময় কোনো আইডি দেখানোর প্রয়োজন নেই। উদাহরণস্বরূপ, নেভাদায় ভোটারদের আইডি আনতে হয় না। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে শুধু নাম সই করতে হয়। তারপর সেই সই ভোটার রেজিস্ট্রেশনের সময় দেওয়া সই ও আইডির সঙ্গে মেলানো হয়। তবে কিছু রাজ্যে, যেখানে সাধারণত আইডি লাগে না। প্রথমবার ভোট দেওয়ার সময় বা রেজিস্ট্রেশনের সময় আইডি না দিলে, ভোটারদের আইডি দেখাতে হতে পারে।

ভোট গণনা হয় যেভাবে

আগেই বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন ব্যবস্থা কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা হয় না। ভোটগ্রহণের সঙ্গে যেমন ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, তেমনি ভোট গণনার সঙ্গেও নেই।

হাতে পূরণ করা যায় এমন কাগজের ব্যালট এবং ব্যালট মার্কিং ডিভাইস দিয়ে দেওয়া ব্যালট সাধারণত অপটিক্যাল স্ক্যানার দিয়ে গণনা করা হয়। এরপর ডিজিটালভাবে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করা হয়। ভোট পুনর্গণনা এবং ফলাফল যাচাইয়ের পদ্ধতি রাজ্যভেদে ভিন্ন হয়। রাজ্যগুলোকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের নির্বাচনের ফলাফল নিশ্চিত করতে হয়। তবে, সাধারণত ভোটগ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফলাফল প্রকাশিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পকে তরুণদের ‘রোল মডেল’ বললেন এক সময়ের ঘোর বিরোধী নিকি মিনাজ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনের মঞ্চে নিকি মিনাজ। ছবি: সংগৃহীত
‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনের মঞ্চে নিকি মিনাজ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় রক্ষণশীল সংগঠন টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ আয়োজিত ‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনে হঠাৎ উপস্থিত হয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের প্রশংসা করেছেন মার্কিন র‍্যাপ তারকা নিকি মিনাজ। রোববার (২১ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে তিনি তরুণ পুরুষদের জন্য ট্রাম্প ও ভ্যান্সকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করেন। মিনাজের এই মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ চমক সৃষ্টি করেছে।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ‘ফরচুন’ জানিয়েছে, এই সম্মেলনটি প্রয়াত রক্ষণশীল কর্মী চার্লি কার্কের স্মরণে আয়োজন করা হয়। মঞ্চে নিকি মিনাজের সাক্ষাৎকার নেন চার্লি কার্কের স্ত্রী ও বর্তমানে টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ-এর নেতৃত্বে থাকা অ্যারিকা কার্ক। আলোচনায় ট্রাম্পের প্রতি নতুন সমর্থনের কথা জানান মিনাজ—যদিও অতীতে তিনি ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতারও নিন্দা জানান।

মিনাজ ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট গভর্নর গ্যাভিন নিউসমকে কটাক্ষ করে ট্রাম্পের দেওয়া ‘নিউ-স্কাম’ নামটি ব্যবহার করেন। বর্তমান প্রশাসনের প্রশংসা করে তিনি বলেন—বর্তমান প্রশাসনে হৃদয় ও আত্মা আছে এবং ট্রাম্প ও ভ্যান্স দুজনই এমন নেতা, যাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ সহজে নিজেদের মিল খুঁজে পায়।

এদিকে মঞ্চে এক অস্বস্তিকর মুহূর্ত তৈরি হয়, যখন ভ্যান্সের রাজনৈতিক দক্ষতার প্রশংসা করতে গিয়ে মিনাজ তাঁকে ‘অ্যাসাসিন’ বলে ফেলেন। কথাটি বলার পরই তিনি থেমে যান এবং পরিস্থিতি কিছুটা বিব্রতকর হয়ে ওঠে। চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ায় শব্দটি উপস্থিত অনেকের মনে আঘাত দেয়।

সম্প্রতি মিনাজ ট্রাম্পের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টান নির্যাতন সংক্রান্ত একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন, যেখানে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়। এ নিয়ে তিনি জাতিসংঘে মার্কিন মিশনে আয়োজিত এক প্যানেল আলোচনাতেও অংশ নেন।

নিজের পরিবর্তিত অবস্থান নিয়ে মিনাজ বলেন, ‘মত বদলানো দোষের নয়—মনের কথা বলাই এখন সবচেয়ে বড় অপরাধ হয়ে গেছে।’ বিনোদন জগৎ থেকে সমালোচনার প্রসঙ্গে জানান, তিনি এসব নিয়ে ভাবেন না। একসময় ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির তীব্র বিরোধিতা করা এই শিল্পী এখন প্রকাশ্যেই বলছেন, তাঁর মত বদলানো ঠিকই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুদ্ধের মধ্যেই গাজায় দুবার সন্তান প্রসবের ভয়াবহ স্মৃতি হাদিলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হাদিল আল ঘেরবাওয়ির কোলে ছেলে জাওয়াদ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
হাদিল আল ঘেরবাওয়ির কোলে ছেলে জাওয়াদ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

‘এই বিভীষিকা আমি কখনো ভুলতে পারব না’—বলছিলেন হাদিল আল ঘেরবাওয়ি। ২৬ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি নারী গাজা যুদ্ধে চরম ক্ষুধা, ভয় আর অনিশ্চয়তার মধ্যেই দুটি গর্ভধারণ ও দুবার সন্তান জন্ম দিয়েছেন।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর সময় হাদিল সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ হওয়ায় তিনি নিয়মিত ডাক্তার দেখাতেন, আলট্রাসাউন্ড করাতেন এবং ভিটামিন নিতেন। গাজা সিটির পূর্বাংশে ইসরায়েল সীমান্তের কাছে বসবাস করায় যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিনই তিনি গাজার পশ্চিম অংশে বসবাস করা বাবা-মায়ের বাড়িতে চলে যান। হাদিল ভেবেছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি আবার স্বামীর বাড়িতে ফিরে যাবেন। কিন্তু এরপর পরিবারটি অন্তত ১৩ বার বাস্তুচ্যুত হয় এবং স্বামীর বাড়িটিও একদিন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসেই গাজা সিটিতে একটি আবাসিক ভবনে বড় ধরনের হামলার কাছাকাছি অবস্থানে ছিলেন হাদিল। তাঁর কাছে এটিকে একটি ভূমিকম্প মনে হয়েছিল। পরে আশ্রয় নেন আল-শিফা হাসপাতালে। সেখানে অন্যান্য আশ্রয়প্রার্থীর ভিড় এত বেশি ছিল যে, বাথরুম ব্যবহার করাও প্রায় অসম্ভব ছিল। সেদিনের দৃশ্য আজও তাড়া করে ফেরে হাদিলকে। স্তূপ করে রাখা লাশ, ড্রামে রাখা খণ্ড-বিখণ্ড অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আর তীব্র গন্ধ। তিনি বলেন, ‘আমি গর্ভবতী ছিলাম, সহ্য করতে পারিনি।’

অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে—নিরাপত্তার আশায় এবার তিনি ও তাঁর স্বামী খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে যান এবং চিকিৎসকদের কাছে আগেভাগেই সন্তান প্রসবের অনুরোধ করেন। হাদিল যখন সন্তান প্রসব করছিলেন, তখন হাসপাতালটির পাশের ভবনেই হামলা হয় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশৃঙ্খল এই পরিস্থিতিতে সন্তান বদলে যাওয়ার আতঙ্কও গ্রাস করেছিল হাদিলকে। তবে আতঙ্কের মধ্যেই শেষ পর্যন্ত তিনি ছেলে জাওয়াদের জন্ম দেন।

নবজাতক নিয়ে হাদিলকে ৩০ জনের সঙ্গে একটি কক্ষে গাদাগাদি করে থাকতে হয়েছিল। সেই সময়টিতে সেলাইয়ের তীব্র ব্যথার মধ্যেও তিনি কোনো ওষুধ পাননি; রাতের পর রাত চুপচাপ এই ব্যথা সহ্য করেছেন। তাঁর ধারণা, প্রসবের পর তিনি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

কয়েক মাস পর তাঁরা একটি তাঁবুতে ওঠেন। বালু, পোকামাকড় আর প্রচণ্ড ঠান্ডায় একের পর এক নবজাতকের মৃত্যুর খবরে সারাক্ষণ আচ্ছন্ন হয়ে থাকতেন হাদিল। রাতে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বারবার জেগে উঠতেন। জাওয়াদের বয়স ৯ মাস হলে আবারও গর্ভবতী হন তিনি। হাদিল বলেন, ‘তাঁবুতে থেকে আরেকটি সন্তান—ভীষণ ধাক্কা খেয়েছিলাম।’

চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতির খবর কিছুটা আশা জাগিয়েছিল তাঁদের। সেই আশা থেকেই ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা নিজেদের বাড়িতে ফিরে যান। কিন্তু ছয় সপ্তাহ পরই ভেঙে যায় যুদ্ধবিরতি। পেটে সন্তান নিয়ে আবারও পালাতে হয় হাদিলকে। পালানোর পর তাঁদের বাড়িটিও ধ্বংস হয়ে যায়। যুদ্ধের মধ্যে দ্বিতীয় গর্ভধারণ হাদিলের জন্য ছিল সবচেয়ে কঠিন। এই সন্তান পেটে রাখার ৯ মাসই তাঁর যুদ্ধের মধ্যে কেটেছে। এমনও দিন গেছে, সারা দিন শুধু একটি শসা খেয়ে কাটিয়েছেন। আর কোথাও এক মুঠো খাবার পেলে নিজের ভাগটুকু তিনি ছেলে জাওয়াদকে দিতেন।

দ্বিতীয়বার প্রসবের সময়ও তিনি বাবা-মায়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। কারণ ওই বাড়ি থেকে কাছাকাছি একটি হাসপাতালে নবজাতক সুরক্ষার জন্য ইনকিউবেটর ছিল। এক রাতে প্রসবব্যথা শুরু হলে, লিফট না থাকায় পাঁচ তলা থেকে হেঁটেই নামতে হয় হাদিলকে। পরে তিনি অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন এবং ওই হাসপাতালে দ্বিতীয় ছেলে ফারেসের জন্ম দেন। জন্মের সময় ফারেসের ওজন ছিল মাত্র ২ কেজি।

এবারে অ্যানেসথেসিয়া ছাড়াই সেলাই দেওয়া হয় হাদিলকে। আর অন্যকে সুযোগ করে দিতে কিছুক্ষণের মধ্যেই বিছানা খালি করে তাঁকে চেয়ারে বসে থাকতে হয়। ফারেসের জন্মের পাঁচ ঘণ্টা পর, চরম ক্লান্তি ও ব্যথা নিয়ে তিনি আবার পাঁচ তলা সিঁড়ি বেয়ে বাবা-মায়ের ঘরে ফেরেন। এই যুদ্ধ, তাঁর শরীর ও মনে রেখে গেছে এমন ক্ষত—যা ভুলবার নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আসাদের খালি হয়ে যাওয়া কুখ্যাত কারাগারগুলো ভরে উঠছে আবার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাশার আল-আসাদের পতনের পর খালি হয়ে গিয়েছিল হোমসের এই কারাগারটি। ছবি: রয়টার্স
বাশার আল-আসাদের পতনের পর খালি হয়ে গিয়েছিল হোমসের এই কারাগারটি। ছবি: রয়টার্স

বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার মানুষ ভেবেছিল—দেশটির কুখ্যাত কারাগার অধ্যায়ের অবসান ঘটেছে। বিদ্রোহীরা জেলখানার দরজা ভেঙে বন্দীদের মুক্ত করেছিল, পরিবারের লোকেরা ছুটে গিয়েছিল নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে। কিন্তু এক বছর না পেরোতেই সেই কারাগারগুলো আবার ভরে উঠছে। এবার নতুন সরকারের অধীনেই সিরিয়ায় আবারও ফিরে এসেছে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও চাঁদাবাজির অভিযোগ।

রয়টার্সের এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গত এক বছরে অন্তত ৮২৯ জন নিরাপত্তাজনিত কারণে আটক হয়েছেন। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের বড় অংশই কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা আদালতের আদেশ ছাড়াই বন্দী রয়েছেন।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) প্রকাশিত রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসাদ-পরবর্তী সিরিয়ায় প্রথম দফার গ্রেপ্তার শুরু হয়েছিল বিদ্রোহীদের বিজয়ের পরপরই। সে সময় মূলত আসাদের আমলের সেনা সদস্য ও কর্মকর্তাদের আটক করা হয়েছিল। পরে শীতের শেষ দিকে উপকূলীয় অঞ্চলে সহিংসতার জের ধরে আলাউইত সম্প্রদায়ের শত শত মানুষ গ্রেপ্তার হন। বসন্ত ও গ্রীষ্মে দ্রুজ অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলেও ব্যাপক ধরপাকড় চলে। একই সঙ্গে সুন্নি, খ্রিষ্টান ও শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনও ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ বা আসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অস্পষ্ট অভিযোগে আটক হন।

রয়টার্স জানিয়েছে, আসাদ আমলের অন্তত ২৮টি কারাগার ও আটক কেন্দ্র আবার সক্রিয় হয়েছে। এগুলোর অনেকগুলোই অতীতে নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত ছিল। যদিও বর্তমান সরকার বলছে, অপরাধীদের বিচারের প্রয়োজনে এসব কেন্দ্র ব্যবহার করা হচ্ছে এবং অনেক বন্দীকে ইতিমধ্যে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তবে কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান তারা প্রকাশ করেনি।

সাক্ষাৎকারে সাবেক বন্দী ও স্বজনেরা জানিয়েছেন, আটক কেন্দ্রগুলোতে ভয়াবহ মানবেতর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গাদাগাদি করে বন্দী রাখা, খাবার ও চিকিৎসার অভাব, ত্বকের রোগ এবং নিয়মিত মারধরের অভিযোগ রয়েছে। অন্তত ১১ জন বন্দী কারা হেফাজতে মারা গেছেন বলে নথিভুক্ত করেছে রয়টার্স। এদের মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পরিবার জানতই না—দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর তারা বিষয়টি জানতে পারে।

চাঁদাবাজিও নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ১৪টি পরিবার জানিয়েছে, স্বজনকে মুক্তির বিনিময়ে ৫০০ থেকে ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত দাবি করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এই অঙ্ক ৯০ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। অর্থ পরিশোধের পরও অনেকেই মুক্তি পাননি।

এদিকে সরকার স্বীকার করেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনের সময় কিছু ‘ফাঁকফোকর’ তৈরি হয়েছে এবং কিছু নিরাপত্তা সদস্য নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। তাদের দাবি, চাঁদাবাজি ও সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ১৫৯ জন নিরাপত্তা সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ব্যাপক আটক ও গুমের অভিযোগ নতুন সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরও আসাদের পতনের পর ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্বিচার আটক’-এর তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে।

আসাদের শাসনামলের মতো নির্মম নির্যাতন না হলেও, পুরোনো কারাগার ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন সিরিয়ার নতুন ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে। মানবাধিকারকর্মীদের ভাষায়, ‘শাসক বদলেছে, কিন্তু কারাগারের ছায়া এখনো কাটেনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মস্কোতে গাড়িবোমা হামলায় রুশ জেনারেল সারভারভ নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এক ভয়াবহ গাড়িবোমা হামলায় দেশটির শীর্ষস্থানীয় এক জেনারেল নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে রুশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রাশিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির বরাতে জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তির নাম লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফানিল সারভারভ (৫৬)। তিনি রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল ট্রেনিং বিভাগের প্রধান ছিলেন।

তদন্ত কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ স্থানীয় সময় সকালে মস্কোর দক্ষিণাঞ্চলের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের পার্কিং লটে এই বিস্ফোরণ ঘটে। জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। গাড়িটি চালু করার পরপরই সেটির বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে গুরুতর আহত অবস্থায় সারভারভকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, একটি সাদা রঙের গাড়ি বিস্ফোরণে দুমড়েমুচড়ে গেছে এবং সেটির যন্ত্রাংশ উড়ে গিয়ে পাশে থাকা অন্য যানবাহনের ওপর পড়েছে।

রুশ ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে রুশ কর্মকর্তাদের ধারণা, এই হামলার নেপথ্যে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাত থাকতে পারে। তবে ইউক্রেন এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, জেনারেল সারভারভের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তা জানানো হয়েছে।

৫৬ বছর বয়সী ফানিল সারভারভ রুশ সামরিক বাহিনীর অত্যন্ত অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ছিলেন। রুশ গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ফানিল সারভারভ নব্বইয়ের দশক এবং ২০০০ সালের শুরুতে তিনি ওসেটিয়ান-ইঙ্গুশ সংঘাত ও চেচেন যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৫-১৬ সালে সিরিয়ায় রুশ সামরিক অভিযানেও তিনি নেতৃত্ব দেন।

২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে মস্কোতে হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিদের ওপর বেশ কয়েকটি বড় হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র আলেকজান্ডার দুগিনের কন্যা দারিয়া দুগিনা গাড়িবোমা হামলায় নিহত হন।

চলতি বছরের এপ্রিলে জেনারেল ইয়ারোস্লাভ মোসকালিক ও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জেনারেল ইগর কিরিলভও একই ধরনের হামলায় প্রাণ হারান।

নীতিগত কারণে ইউক্রেন সাধারণত এ ধরনের হামলার দায় স্বীকার করে না। তবে গত বছর জেনারেল কিরিলভ নিহতের ঘটনায় ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা সংস্থার জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিল বিবিসির একটি সূত্র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত