বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব এবং যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে ব্রিকস সম্মেলন নিয়ে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা
আজকের পত্রিকা: এবারের ব্রিকস সম্মেলন কতটুকু সফল বলে আপনি মনে করেন?
হুমায়ুন কবির: সফলতার বিষয়টি কয়েকটি মানদণ্ডে দেখা যেতে পারে। আমরা যদি ব্রিকসকে একটি ইউনিট হিসেবে দেখতে যাই, তাহলে তারা দুটি বিষয়কে লক্ষ্য ধরে এবারের সম্মেলন করেছে। এক. সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা। এটা ছিল তাদের বড় অ্যাজেন্ডা এবং দুই. ডলারের বিপরীতে একটি বিকল্প অর্থনৈতিক কাঠামো দাঁড় করানো। এখন ভবিষ্যতে এটা চালু করতে পারবে কি না, সেটা দেখার বিষয়।
সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে তারা মোটামুটি সফল হয়েছে, সেটা বলা যেতে পারে। নতুন করে তারা ছয়টি দেশকে সদস্যপদ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটা ১ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে কার্যকর হবে। সেদিক থেকে এ ক্ষেত্রে তাদের একটা সফলতা আছে। দ্বিতীয়ত, বিকল্প মুদ্রা নিয়ে খুব বেশি অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। তবে তারা চিন্তা করেছিল, নিজ নিজ দেশের মুদ্রা দিয়ে বাণিজ্য করা যায় কি না। এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কাজেই এ ক্ষেত্রে সীমিত অগ্রগতি দেখছি।
তবে দৃশ্যমানতার জায়গা থেকে বলা যায়, এটা বেশ ভালো মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা, মিডিয়া সম্মেলনের সংবাদ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছে। আমার ধারণা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীতে একটা পরিবর্তনের ব্যাপার লক্ষ করা যাচ্ছে, সেই প্রেক্ষাপট থেকে একটা বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর ব্রিকসের মূল অ্যাজেন্ডা কিন্তু এটা। অর্থনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি, সহযোগিতা বাড়ানো। এ কারণে তাদের উদ্যোগকে সারা বিশ্বের মানুষ মনোযোগ দিয়ে দেখেছে।
এখনকার যেটা অর্থনৈতিক কাঠামো, যেটা পশ্চিমা দেশগুলো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অদূর ভবিষ্যতে তার বিকল্প হিসেবে কোনো কাঠামো দাঁড়ানোর সম্ভাবনা আছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পরে সে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয়েছে। এ কারণে অনেক দেশে বিষয়টা আলোচিত হয়েছে। শেষে বলব, মোটামুটি সফল হয়েছে। তবে পুরোপুরি সফলতার কথা বলা যাবে না।
আজকের পত্রিকা: প্রাথমিকভাবে ব্রিকসের লক্ষ্য ছিল বিশ্ব অর্থনীতিতে জি-৭ দেশগুলোর একক নিয়ন্ত্রণ খর্ব করা। পশ্চিম-নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সত্যিকারের কোনো ধাক্কা দিতে পারবে কি এই জোট?
হুমায়ুন কবির: আমার কাছে মনে হয়, চেষ্টা হিসেবে সেটা আছে। যদিও তারা সেটা বলে না। কিন্তু মনে হয়, জি-৭ জোটে পশ্চিমা শক্তিশালী যে সাত দেশ আছে, এর বিকল্প হিসেবে এটাকে দাঁড় করানোর একটা চেষ্টা বা ইচ্ছে তাদের আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত জি-৭কে চ্যালেঞ্জ করার অবস্থায় ব্রিকস নেই বলে আমার কাছে মনে হয়। ব্রিকসে যেসব দেশ আছে, সেগুলো বিশ্ববাণিজ্যে শক্তিশালী নয় এখনো।
আপনি যদি গ্লোবাল জিডিপির কথা বলেন, তাহলে ব্রিকসের সব দেশ মিলিয়ে ২৫ শতাংশ। আর ৭৫ শতাংশ তো ওই দিকে। আবার অর্থনৈতিক শক্তির কথা বললে চীন বাদে ব্রিকসের অন্যান্য সদস্যের গ্লোবাল জিডিপিতে কনট্রিবিউশন ২ শতাংশ করে। ভারতের প্রায় ৩ শতাংশ, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার মাত্র ২ শতাংশ করে। অপরদিকে চীনের আছে ১৯ শতাংশ। ১০০ ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ এদের।
একইভাবে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের প্রাধান্য অনেক বেশি। এ অবস্থায় এখন পর্যন্ত ব্রিকস চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী বা বিকল্প হবে, এটা আমার কাছে মনে হয় না। হয়তো আগামীর লক্ষ্য হিসেবে সেটা তাদের আছে।
আজকের পত্রিকা: ব্রিকসে বাংলাদেশ সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু পায়নি। এটাকে কীভাবে দেখেন?
হুমায়ুন কবির: আমার কাছে সদস্যপদ না পাওয়ার কয়েকটা কারণ মনে হয়—প্রথমত, ব্রিকস কিন্তু একটা মাল্টি ন্যাচারাল সংগঠন। ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি, বিশ্বে একটি বিকল্প অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করা। সেটা কিন্তু একটা বড় খেলা, মানে বৈশ্বিক পর্যায়ের খেলা বা বৈশ্বিক পর্যায়ের কাজ। সে কারণে বাংলাদেশ সেই পর্যায়ের কাজের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নয়। অনেকে হয়তো বলবেন, আমরা জাতিসংঘের আওতায় বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করি। সেখানে বৈশ্বিকভাবে মতামতের ভিত্তিতে কাজ করি বলে তেমন অসুবিধা হয় না। কিন্তু বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ কাজের কোনো অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, এ ধরনের কাজে যাওয়ার জন্য যেসব অভ্যন্তরীণ শক্তি দরকার, কূটনৈতিক জোর দরকার, সেই জায়গায় আমরা পৌঁছাতে পারিনি। কাজেই মাল্টি ন্যাচারাল বা বহুপক্ষীয় যে ব্যবস্থাপনা, এখানে যারা সিদ্ধান্ত নেয়, তারা যদি এসব বিষয়ের দিকে লক্ষ করে, তাহলে এখানে যারা সদস্য আছে, তাদের প্রত্যেকের আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রভাব আছে।
এবারের ব্রিকস সম্মেলনের স্লোগান ছিল—‘ব্রিকস অ্যান্ড আফ্রিকান সলিডারিস’, মানে ব্রিকসের সঙ্গে আফ্রিকার বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনার ব্যাপার ছিল। যখন আফ্রিকান সলিডারির কথা বলা হয়েছে, আমার ধারণা, সেই ভিত্তিতেই তারা মিসর, ইথিওপিয়াকে সদস্য করেছে।
আবার তেলসমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ ইরান ও সৌদি আরবকে সদস্য করেছে। তারা কিন্তু সবাই বাংলাদেশের চেয়ে সমৃদ্ধিশালী। এবার লাতিন আমেরিকার দিকে তাকালে দেখা যাবে, এখানে আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে ব্রাজিলের পরে বিকল্প হিসেবে আর্জেন্টিনাকে সদস্য করেছে।
আমার কাছে মনে হয়, সদস্য করার ক্ষেত্রে অর্থনীতির দিক, আঞ্চলিকতার বিষয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভূমিকা রাখার বিষয়টা বিবেচনায় ছিল। এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখে তারা সদস্য করেছে। এই তিনটি বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করে দেখেছে বাংলাদেশ সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। সে কারণেই আমরা তাদের বিবেচনায় আসতে পারিনি। ভবিষ্যতে আমরা যদি সেসব বিবেচনায় রাখতে পারি, তবে নিশ্চয় আমরা সেখানে থাকতে পারব। তাই এখান থেকে একটা শিক্ষা নিতে পারলে ভালো হয়। বাংলাদেশ কিন্তু সার্কের প্রতিষ্ঠাকারী দেশ। আজ যদি সার্কটা কার্যকর থাকত, তাহলে এর প্রতিষ্ঠাকারী দেশ হিসেবে একটা শক্তিশালী অবস্থানে থাকত বাংলাদেশ।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম বিশ্ব চাপ দিচ্ছে, তখনই আমরা ব্রিকসের সদস্যপদ পেলাম না। এটা কি সরকারের কোনো কৌশল?
হুমায়ুন কবির: আমি সেটা বলতে পারব না। কিন্তু বলতে পারি, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কিন্তু আমাদের প্রাণের চাহিদা। সেটা কে করল না করল, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, কেন আমরা নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখি না যে ১৯৭০ সালের সেই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার পথটা স্পষ্ট করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
বাংলাদেশে গত ৫২ বছরে যে কয়েকটা আন্দোলন হয়েছে তা ছিল গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য। এখন আমরা যদি একটা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনকে আমাদের চাহিদা হিসেবে দেখতে চাই আর যদি আমাদের চাহিদার কাজটা আমরা নিজেদের মতো করতে পারি, তাহলে বাইরের মানুষ কী বলল, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে না। আজ বিদেশিরা আমাদের ওপর চাপ দিচ্ছে, ভবিষ্যতে সেটা করার সুযোগ পাবে না; বরং আমাদের সঙ্গে ইতিবাচক হিসেবে সংযুক্ত থাকবে। তাই নিজেদের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: চীন ও ভারতের চির বৈরী সম্পর্কের পরেও তারা কীভাবে একসঙ্গে ব্রিকস করতে পারল?
হুমায়ুন কবির: উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো নিয়ে ২০০৯ সালে ব্রিকস গঠিত হয়। তখন কমন চাহিদা, কাঠামোগত সাযুজ্য, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা থেকে সংগঠনটি গড়ে উঠেছিল। এখন চীন ও ভারতের সম্পর্ক যে পর্যায়ে আছে, তখন কিন্তু সেই পর্যায়ে ছিল না। তখন উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে ‘চীন-ইন্ডিয়া’ বলে পশ্চিমা পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। একটা নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
এখন ভূ-রাজনৈতিক কারণে কয়েক বছর ধরে, বিশেষ করে ভারতের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে এবং চীনের নেতৃত্বের কারণে এখন আস্তে আস্তে বিভাজনটা বাড়ছে। সাম্প্রতিক চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সেখানে ভারত যুক্ত হওয়ার কারণে দুই দেশের বিভাজনটা বেশি চোখে পড়ছে। তবু আমি মনে করি, চীন ও ভারত তাদের স্বকীয় অবস্থান বজায় রেখে অনেক কমন জায়গায় কাজ করার সুযোগ আছে।
কয়েক দশক ধরে দুই দেশের সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু খবর হলো, গত বছর দুই দেশের বাণিজ্যিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে। একপর্যায়ে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, অপরপক্ষে তাদের সম্পর্কটা অব্যাহত আছে। তার কারণ হলো, এখন পর্যন্ত দুই দেশের অর্থনীতি সম্পূরক। তারা পরস্পরের সহায়ক হতে পারে। আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে তাদের সম্পর্ক অটুট থাকবে।
আজকের পত্রিকা: এবারের ব্রিকস সম্মেলন কতটুকু সফল বলে আপনি মনে করেন?
হুমায়ুন কবির: সফলতার বিষয়টি কয়েকটি মানদণ্ডে দেখা যেতে পারে। আমরা যদি ব্রিকসকে একটি ইউনিট হিসেবে দেখতে যাই, তাহলে তারা দুটি বিষয়কে লক্ষ্য ধরে এবারের সম্মেলন করেছে। এক. সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা। এটা ছিল তাদের বড় অ্যাজেন্ডা এবং দুই. ডলারের বিপরীতে একটি বিকল্প অর্থনৈতিক কাঠামো দাঁড় করানো। এখন ভবিষ্যতে এটা চালু করতে পারবে কি না, সেটা দেখার বিষয়।
সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে তারা মোটামুটি সফল হয়েছে, সেটা বলা যেতে পারে। নতুন করে তারা ছয়টি দেশকে সদস্যপদ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটা ১ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে কার্যকর হবে। সেদিক থেকে এ ক্ষেত্রে তাদের একটা সফলতা আছে। দ্বিতীয়ত, বিকল্প মুদ্রা নিয়ে খুব বেশি অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। তবে তারা চিন্তা করেছিল, নিজ নিজ দেশের মুদ্রা দিয়ে বাণিজ্য করা যায় কি না। এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কাজেই এ ক্ষেত্রে সীমিত অগ্রগতি দেখছি।
তবে দৃশ্যমানতার জায়গা থেকে বলা যায়, এটা বেশ ভালো মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা, মিডিয়া সম্মেলনের সংবাদ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছে। আমার ধারণা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীতে একটা পরিবর্তনের ব্যাপার লক্ষ করা যাচ্ছে, সেই প্রেক্ষাপট থেকে একটা বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর ব্রিকসের মূল অ্যাজেন্ডা কিন্তু এটা। অর্থনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি, সহযোগিতা বাড়ানো। এ কারণে তাদের উদ্যোগকে সারা বিশ্বের মানুষ মনোযোগ দিয়ে দেখেছে।
এখনকার যেটা অর্থনৈতিক কাঠামো, যেটা পশ্চিমা দেশগুলো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অদূর ভবিষ্যতে তার বিকল্প হিসেবে কোনো কাঠামো দাঁড়ানোর সম্ভাবনা আছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পরে সে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয়েছে। এ কারণে অনেক দেশে বিষয়টা আলোচিত হয়েছে। শেষে বলব, মোটামুটি সফল হয়েছে। তবে পুরোপুরি সফলতার কথা বলা যাবে না।
আজকের পত্রিকা: প্রাথমিকভাবে ব্রিকসের লক্ষ্য ছিল বিশ্ব অর্থনীতিতে জি-৭ দেশগুলোর একক নিয়ন্ত্রণ খর্ব করা। পশ্চিম-নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সত্যিকারের কোনো ধাক্কা দিতে পারবে কি এই জোট?
হুমায়ুন কবির: আমার কাছে মনে হয়, চেষ্টা হিসেবে সেটা আছে। যদিও তারা সেটা বলে না। কিন্তু মনে হয়, জি-৭ জোটে পশ্চিমা শক্তিশালী যে সাত দেশ আছে, এর বিকল্প হিসেবে এটাকে দাঁড় করানোর একটা চেষ্টা বা ইচ্ছে তাদের আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত জি-৭কে চ্যালেঞ্জ করার অবস্থায় ব্রিকস নেই বলে আমার কাছে মনে হয়। ব্রিকসে যেসব দেশ আছে, সেগুলো বিশ্ববাণিজ্যে শক্তিশালী নয় এখনো।
আপনি যদি গ্লোবাল জিডিপির কথা বলেন, তাহলে ব্রিকসের সব দেশ মিলিয়ে ২৫ শতাংশ। আর ৭৫ শতাংশ তো ওই দিকে। আবার অর্থনৈতিক শক্তির কথা বললে চীন বাদে ব্রিকসের অন্যান্য সদস্যের গ্লোবাল জিডিপিতে কনট্রিবিউশন ২ শতাংশ করে। ভারতের প্রায় ৩ শতাংশ, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার মাত্র ২ শতাংশ করে। অপরদিকে চীনের আছে ১৯ শতাংশ। ১০০ ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ এদের।
একইভাবে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের প্রাধান্য অনেক বেশি। এ অবস্থায় এখন পর্যন্ত ব্রিকস চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী বা বিকল্প হবে, এটা আমার কাছে মনে হয় না। হয়তো আগামীর লক্ষ্য হিসেবে সেটা তাদের আছে।
আজকের পত্রিকা: ব্রিকসে বাংলাদেশ সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু পায়নি। এটাকে কীভাবে দেখেন?
হুমায়ুন কবির: আমার কাছে সদস্যপদ না পাওয়ার কয়েকটা কারণ মনে হয়—প্রথমত, ব্রিকস কিন্তু একটা মাল্টি ন্যাচারাল সংগঠন। ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি, বিশ্বে একটি বিকল্প অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করা। সেটা কিন্তু একটা বড় খেলা, মানে বৈশ্বিক পর্যায়ের খেলা বা বৈশ্বিক পর্যায়ের কাজ। সে কারণে বাংলাদেশ সেই পর্যায়ের কাজের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নয়। অনেকে হয়তো বলবেন, আমরা জাতিসংঘের আওতায় বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করি। সেখানে বৈশ্বিকভাবে মতামতের ভিত্তিতে কাজ করি বলে তেমন অসুবিধা হয় না। কিন্তু বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ কাজের কোনো অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, এ ধরনের কাজে যাওয়ার জন্য যেসব অভ্যন্তরীণ শক্তি দরকার, কূটনৈতিক জোর দরকার, সেই জায়গায় আমরা পৌঁছাতে পারিনি। কাজেই মাল্টি ন্যাচারাল বা বহুপক্ষীয় যে ব্যবস্থাপনা, এখানে যারা সিদ্ধান্ত নেয়, তারা যদি এসব বিষয়ের দিকে লক্ষ করে, তাহলে এখানে যারা সদস্য আছে, তাদের প্রত্যেকের আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রভাব আছে।
এবারের ব্রিকস সম্মেলনের স্লোগান ছিল—‘ব্রিকস অ্যান্ড আফ্রিকান সলিডারিস’, মানে ব্রিকসের সঙ্গে আফ্রিকার বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনার ব্যাপার ছিল। যখন আফ্রিকান সলিডারির কথা বলা হয়েছে, আমার ধারণা, সেই ভিত্তিতেই তারা মিসর, ইথিওপিয়াকে সদস্য করেছে।
আবার তেলসমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ ইরান ও সৌদি আরবকে সদস্য করেছে। তারা কিন্তু সবাই বাংলাদেশের চেয়ে সমৃদ্ধিশালী। এবার লাতিন আমেরিকার দিকে তাকালে দেখা যাবে, এখানে আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে ব্রাজিলের পরে বিকল্প হিসেবে আর্জেন্টিনাকে সদস্য করেছে।
আমার কাছে মনে হয়, সদস্য করার ক্ষেত্রে অর্থনীতির দিক, আঞ্চলিকতার বিষয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভূমিকা রাখার বিষয়টা বিবেচনায় ছিল। এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখে তারা সদস্য করেছে। এই তিনটি বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করে দেখেছে বাংলাদেশ সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। সে কারণেই আমরা তাদের বিবেচনায় আসতে পারিনি। ভবিষ্যতে আমরা যদি সেসব বিবেচনায় রাখতে পারি, তবে নিশ্চয় আমরা সেখানে থাকতে পারব। তাই এখান থেকে একটা শিক্ষা নিতে পারলে ভালো হয়। বাংলাদেশ কিন্তু সার্কের প্রতিষ্ঠাকারী দেশ। আজ যদি সার্কটা কার্যকর থাকত, তাহলে এর প্রতিষ্ঠাকারী দেশ হিসেবে একটা শক্তিশালী অবস্থানে থাকত বাংলাদেশ।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম বিশ্ব চাপ দিচ্ছে, তখনই আমরা ব্রিকসের সদস্যপদ পেলাম না। এটা কি সরকারের কোনো কৌশল?
হুমায়ুন কবির: আমি সেটা বলতে পারব না। কিন্তু বলতে পারি, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কিন্তু আমাদের প্রাণের চাহিদা। সেটা কে করল না করল, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, কেন আমরা নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখি না যে ১৯৭০ সালের সেই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার পথটা স্পষ্ট করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
বাংলাদেশে গত ৫২ বছরে যে কয়েকটা আন্দোলন হয়েছে তা ছিল গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য। এখন আমরা যদি একটা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনকে আমাদের চাহিদা হিসেবে দেখতে চাই আর যদি আমাদের চাহিদার কাজটা আমরা নিজেদের মতো করতে পারি, তাহলে বাইরের মানুষ কী বলল, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে না। আজ বিদেশিরা আমাদের ওপর চাপ দিচ্ছে, ভবিষ্যতে সেটা করার সুযোগ পাবে না; বরং আমাদের সঙ্গে ইতিবাচক হিসেবে সংযুক্ত থাকবে। তাই নিজেদের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: চীন ও ভারতের চির বৈরী সম্পর্কের পরেও তারা কীভাবে একসঙ্গে ব্রিকস করতে পারল?
হুমায়ুন কবির: উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো নিয়ে ২০০৯ সালে ব্রিকস গঠিত হয়। তখন কমন চাহিদা, কাঠামোগত সাযুজ্য, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা থেকে সংগঠনটি গড়ে উঠেছিল। এখন চীন ও ভারতের সম্পর্ক যে পর্যায়ে আছে, তখন কিন্তু সেই পর্যায়ে ছিল না। তখন উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে ‘চীন-ইন্ডিয়া’ বলে পশ্চিমা পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। একটা নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
এখন ভূ-রাজনৈতিক কারণে কয়েক বছর ধরে, বিশেষ করে ভারতের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে এবং চীনের নেতৃত্বের কারণে এখন আস্তে আস্তে বিভাজনটা বাড়ছে। সাম্প্রতিক চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সেখানে ভারত যুক্ত হওয়ার কারণে দুই দেশের বিভাজনটা বেশি চোখে পড়ছে। তবু আমি মনে করি, চীন ও ভারত তাদের স্বকীয় অবস্থান বজায় রেখে অনেক কমন জায়গায় কাজ করার সুযোগ আছে।
কয়েক দশক ধরে দুই দেশের সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু খবর হলো, গত বছর দুই দেশের বাণিজ্যিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে। একপর্যায়ে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, অপরপক্ষে তাদের সম্পর্কটা অব্যাহত আছে। তার কারণ হলো, এখন পর্যন্ত দুই দেশের অর্থনীতি সম্পূরক। তারা পরস্পরের সহায়ক হতে পারে। আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে তাদের সম্পর্ক অটুট থাকবে।
ইউনিক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন। পর্যটনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মনজুরুল ইসলাম।
০৩ অক্টোবর ২০২৪বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, সুফি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কোনো বিভাজনমূলক এজেন্ডায় রাজনীতির দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহৃত না হওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা দৃঢ়ভাবে কোনো সাম্প্রদায়িক ফাঁদে আটকা পড়তে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করি। কোনোভাবেই তা হতে দেওয়া যাবে না।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪‘আমি এটাকে ঠিক রাজনৈতিক ভাবাদর্শ বলব না। আমি এটাকে বলব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, সেটা আমার পারিবারিক শিক্ষা। আমাদের ঘরের ডাইনিং টেবিল থেকে শুরু করে যেকোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পরিবারের বড়দের সাথে আমরা দ্বিমত পোষণ করতে পেরেছি। ছোট থেকে বড়, কারও কোনো কথা বা কাজ ভুল মনে হলে সেটাকে আমরা তার প্রতি স
৩১ আগস্ট ২০২৪একেক মানুষ বেছে নেন একেক পেশা। তাঁদের মধ্যে কারও কারও পেশা একটু ভিন্ন ধরনের। যেমন—মো. মুনসুর আলী ওরফে মন্টু খলিফা। বাপ-দাদার পেশাকে ভালোবেসে শিশুদের খতনা করানো বা হাজামের কাজ বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। জীবনে পার করেছেন প্রায় ৮৫ বছর। জানিয়েছেন গত ৬০ বছরে ২ লাখের বেশি শিশুর মুসলমানি বা সুন্নতে খতনা দিয়
৩০ মার্চ ২০২৪