বান্দার প্রতি কবরের ৪ আহ্বান

মাহমুদ হাসান ফাহিম
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০৮: ০২

দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। চিরস্থায়ী জীবন হবে আখিরাতের জীবন। মৃত্যুর পর কিয়ামত পর্যন্ত আমাদের স্থায়ী নিবাস হবে কবর। জীবনের ভালো-মন্দের কিছু ফলাফল প্রকাশ পাবে সেখানে। আমাদের মৃত্যু-পরবর্তী জীবন যেন সুখময় হয়, কবরের জীবনে আমরা যেন ভালো থাকি, সে জন্য প্রতিদিন কবর আমাদের চারটি বাক্য বলে ডাকতে থাকে। তিরমিজির এক হাদিসে এ বিষয়ে বিস্তারিত এসেছে। 

১. আমি অপরিচিত ঘর
আমি দুনিয়ার কোনো ঘর নই। আমার ভেতরে এসে তুমি পরিচিত কাউকে পাবে না। অপরিচিত কোনো স্থানে গেলে যেমন প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে যাও, অনির্দিষ্টকাল তোমাকে এখানে থাকতে হবে। তার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, প্রস্তুতি গ্রহণ করে তবেই আমার কাছে এসো। 

২. আমি একাকিত্বের ঘর
এখানে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন বা সাথি-সঙ্গী হিসেবে কেউ থাকবে না। অনির্দিষ্টকাল তোমাকে একাকীই থাকতে হবে। একাকিত্বের কষ্ট যেন তোমাকে অস্থির করে না তোলে, সে জন্য সঙ্গী হিসেবে কিছু নিয়ে আসার ব্যবস্থা করো। 

৩. আমি মাটির ঘর
অন্ধকার কুঠুরি, মাটির বিছানা। ডানে-বাঁয়ে, ওপরে-নিচে ও সামনে-পেছনে—সব দিকেই শুধু মাটি আর মাটি। দুনিয়ার মতো প্রাসাদ-অট্টালিকা বা আয়েশের বালাখানা নেই এখানে। এসব চিন্তাভাবনা করে তার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এসো। 

৪. আমি পোকামাকড়ের ঘর
এই ঘরে সাপ, বিচ্ছু পোকামাকড় ও বিষাক্ত বিভিন্ন কীটপতঙ্গের বসবাস। এদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করো। আত্মরক্ষার জন্য অবলম্বন হিসেবে কিছু নিয়ে আসার চেষ্টা করো।

এরপর হাদিসে এসেছে, ‘যখন কোনো মুমিন বান্দাকে দাফন করা হয়, তখন কবর তাকে স্বাগত জানায় এবং বলে, ‘তুমি আপনজনের কাছে এসেছ। শোনো, আমার পিঠে যারা চলাফেরা করত, তাদের মধ্যে তুমিই ছিলে আমার সবচেয়ে প্রিয়। আজ যখন আমার সান্নিধ্যে এসেছ এবং আমার হয়ে গেছ, আচিরেই দেখবে তোমার সঙ্গে আমি কী আচরণ করি।’ এরপর দৃষ্টি যত দূর যায়, তত দূর পর্যন্ত কবর তার জন্য বিস্তৃত হয়ে যাবে এবং জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। আর যখন কোনো কাফির বদকারকে দাফন করা হয়, কবর বলে, ‘তোমার জন্য কোনো অভিবাদন নেই, তুমি তোমার আপনজনের কাছে পৌঁছাওনি। আমার পিঠে যারা বিচরণ করত, তাদের মধ্যে তুমিই ছিলে আমার কাছে সবচেয়ে ঘৃণ্য। আজ যখন আমার কবজায় এসেছ, এবার দেখবে তোমার সঙ্গে আচরণ কেমন হয়।’ এরপর কবর তার ওপর চেপে যাবে, ফলে তার পাঁজরের হাড়িগুলো একটি আরেকটির ভেতরে ঢুকে পড়বে।

বর্ণনাকারী হজরত আবু সাঈদ (রা.) বলেন, এ সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর এক হাতের আঙুলগুলো আরেক হাতের আঙুলে ঢুকিয়ে ইশারা করে অবস্থাটা দেখালেন। তিনি আরও বললেন, ‘তার ওপর ৭০টি বিরাট সাপ নিযুক্ত করে দেওয়া হবে। এর একটিও যদি দুনিয়ায় শ্বাস ফেলে, তবে দুনিয়া যত দিন বাকি থাকবে, তত দিন তাতে কিছুই উৎপাদিত হবে না। হিসাবনিকাশের দিন পর্যন্ত সাপগুলো তাকে কামড়াতে থাকবে। খামচাতে থাকবে।’ বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কবর হলো জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান কিংবা জাহান্নামের গর্তসমূহের একটি গর্ত।’ (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব: ৫০৭৯; সুনানে তিরমিজি: ২৪৬০) 

লেখক: মাদ্রাসাশিক্ষক

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত