জুবাইদা বিনতে জাফর
মারজিয়া তাবাসসুম
জুবাইদা বিনতে জাফর ইবনে মানসুর পঞ্চম আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী ও জাফর ইবনুল মানসুরের কন্যা। তাঁর মা ছিলেন আল-খায়জুরানের বড় বোন সালসাল ইবনে আত্তা। জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। দাদা আল-মানসুর তাঁকে আদর করে জুবাইদা (ছোট মাখনের টুকরা) নামে ডাকতেন এবং এ নামেই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।
জুবাইদা যেমন সুন্দরী ও ধনী ছিলেন, তেমনি ধার্মিক ও অমায়িক ছিলেন। ১৬৫ হিজরিতে চাচাতো ভাই হারুনুর রশিদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর প্রাসাদকে মৌচাক বলা হতো। কারণ, প্রাসাদ থেকে সারা দিন মৌমাছির গুঞ্জনের মতো কোরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ ভেসে আসত। মূলত তিনি প্রাসাদে ১০০ নারী হাফেজকে কোরআন তিলাওয়াতের জন্য নিয়োগ দিয়েছিলেন।
জুবাইদা জনহিতৈষী ও মানবিক মননশীলতার অধিকারী ছিলেন। ‘নহরে জুবাইদা’ তাঁর অমর কীর্তি। এটি একটি দীর্ঘ খাল বিশেষ, যা ইরাকের মসুল নগরীর নুমান উপত্যকা থেকে উৎসারিত হয়ে তায়েফের পাশ দিয়ে আরাফাত ও উরনাহ উপত্যকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মক্কার দিকে চলে গেছে। হাজার বছর আগের এই নহরের কিছু ধ্বংসাবশেষ এখনো দেখা যায়।
মূলত জুবাইদার এক স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আব্বাসি খেলাফতের প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘জুবাইদার মাধ্যমে এমন এক মহৎ কাজ পরিচালিত হবে, যেটি থেকে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ উপকৃত হবে।’ তখন থেকে বড় একটি কাজ করার জন্য তিনি ভাবছিলেন। হিজরি ১৯৩ সালে, খলিফা হারুনুর রশিদের মৃত্যুর পর পবিত্র হজ পালনের জন্য মক্কায় গমনকালে জুবাইদা হাজিদের পানির তীব্র সংকটে ভুগতে দেখেন, যা তাঁকে বিচলিত করে এবং তাৎক্ষণিক একটি দীর্ঘ খাল খননের সিদ্ধান্ত নেন।
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন জুবাইদা। তাঁরা জানালেন, এটি অনেক বড় অঙ্কের বাজেটের বিষয়। জুবাইদা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। যত অর্থ ব্যয় হোক, তাঁর খাল খনন করতে হবে। মানুষের এ দুর্দশা কাটাতে হবে। সব বাধা কাটিয়ে অবশেষে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। নহরে জুবাইদা খননে ব্যয় হয়েছিল তৎকালীন সময়ের প্রায় ১৭ লাখ দিনার।
শুধু নহর নয়, ইরাক থেকে মক্কা পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের সংস্কারও একই সঙ্গে সম্পন্ন হয়। পর্যটক ইবনে বতুতা বলেন, ‘মক্কা থেকে বাগদাদের পথে প্রতিটি জলাশয়, পুল বা কূপ জুবাইদার অবদান। যদি এ সড়কের জন্য তাঁর উদ্বেগ না থাকত, তবে তা সম্ভব হতো না।’
জুবাইদা অত্যন্ত দানশীল ও ইবাদতগুজার ছিলেন। তাঁর বদান্যতার বর্ণনা দিয়ে ইতিহাসবেত্তা খতিব আল-বাগদাদি লিখেছেন, ‘কোনো এক হজের মৌসুমে মাত্র ৬০ দিনে তিনি হাজিদের প্রায় ৫ কোটি ৪০ লাখ দিনার দান করেছিলেন।’
জুবাইদা ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। নিজের ব্যবসার কাজে লোক নিয়োগ করে বেকারত্ব দূর করতেন। শিক্ষাগত যোগ্যতায় অনন্য ছিলেন। চারিত্রিক গুণাবলির পাশাপাশি কোরআন-হাদিস ও ফিকহ সম্পর্কে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। পাশাপাশি ইতিহাস, সাহিত্য ও চিকিৎসাবিদ্যায় তাঁর দক্ষতা ছিল।
২১৬ হিজরির ২৩ জমাদিউস সানি মহীয়সী জুবাইদা পরলোক গমন করেন। তাঁর কর্মমুখর জীবনে জনকল্যাণকামী, উদ্যোক্তা কিংবা জ্ঞান অর্জনে ব্রত নারীদের জন্য রয়েছে যথেষ্ট অনুপ্রেরণার উপাদান।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা
জুবাইদা বিনতে জাফর ইবনে মানসুর পঞ্চম আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী ও জাফর ইবনুল মানসুরের কন্যা। তাঁর মা ছিলেন আল-খায়জুরানের বড় বোন সালসাল ইবনে আত্তা। জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। দাদা আল-মানসুর তাঁকে আদর করে জুবাইদা (ছোট মাখনের টুকরা) নামে ডাকতেন এবং এ নামেই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।
জুবাইদা যেমন সুন্দরী ও ধনী ছিলেন, তেমনি ধার্মিক ও অমায়িক ছিলেন। ১৬৫ হিজরিতে চাচাতো ভাই হারুনুর রশিদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর প্রাসাদকে মৌচাক বলা হতো। কারণ, প্রাসাদ থেকে সারা দিন মৌমাছির গুঞ্জনের মতো কোরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ ভেসে আসত। মূলত তিনি প্রাসাদে ১০০ নারী হাফেজকে কোরআন তিলাওয়াতের জন্য নিয়োগ দিয়েছিলেন।
জুবাইদা জনহিতৈষী ও মানবিক মননশীলতার অধিকারী ছিলেন। ‘নহরে জুবাইদা’ তাঁর অমর কীর্তি। এটি একটি দীর্ঘ খাল বিশেষ, যা ইরাকের মসুল নগরীর নুমান উপত্যকা থেকে উৎসারিত হয়ে তায়েফের পাশ দিয়ে আরাফাত ও উরনাহ উপত্যকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মক্কার দিকে চলে গেছে। হাজার বছর আগের এই নহরের কিছু ধ্বংসাবশেষ এখনো দেখা যায়।
মূলত জুবাইদার এক স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আব্বাসি খেলাফতের প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘জুবাইদার মাধ্যমে এমন এক মহৎ কাজ পরিচালিত হবে, যেটি থেকে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ উপকৃত হবে।’ তখন থেকে বড় একটি কাজ করার জন্য তিনি ভাবছিলেন। হিজরি ১৯৩ সালে, খলিফা হারুনুর রশিদের মৃত্যুর পর পবিত্র হজ পালনের জন্য মক্কায় গমনকালে জুবাইদা হাজিদের পানির তীব্র সংকটে ভুগতে দেখেন, যা তাঁকে বিচলিত করে এবং তাৎক্ষণিক একটি দীর্ঘ খাল খননের সিদ্ধান্ত নেন।
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন জুবাইদা। তাঁরা জানালেন, এটি অনেক বড় অঙ্কের বাজেটের বিষয়। জুবাইদা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। যত অর্থ ব্যয় হোক, তাঁর খাল খনন করতে হবে। মানুষের এ দুর্দশা কাটাতে হবে। সব বাধা কাটিয়ে অবশেষে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। নহরে জুবাইদা খননে ব্যয় হয়েছিল তৎকালীন সময়ের প্রায় ১৭ লাখ দিনার।
শুধু নহর নয়, ইরাক থেকে মক্কা পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের সংস্কারও একই সঙ্গে সম্পন্ন হয়। পর্যটক ইবনে বতুতা বলেন, ‘মক্কা থেকে বাগদাদের পথে প্রতিটি জলাশয়, পুল বা কূপ জুবাইদার অবদান। যদি এ সড়কের জন্য তাঁর উদ্বেগ না থাকত, তবে তা সম্ভব হতো না।’
জুবাইদা অত্যন্ত দানশীল ও ইবাদতগুজার ছিলেন। তাঁর বদান্যতার বর্ণনা দিয়ে ইতিহাসবেত্তা খতিব আল-বাগদাদি লিখেছেন, ‘কোনো এক হজের মৌসুমে মাত্র ৬০ দিনে তিনি হাজিদের প্রায় ৫ কোটি ৪০ লাখ দিনার দান করেছিলেন।’
জুবাইদা ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। নিজের ব্যবসার কাজে লোক নিয়োগ করে বেকারত্ব দূর করতেন। শিক্ষাগত যোগ্যতায় অনন্য ছিলেন। চারিত্রিক গুণাবলির পাশাপাশি কোরআন-হাদিস ও ফিকহ সম্পর্কে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। পাশাপাশি ইতিহাস, সাহিত্য ও চিকিৎসাবিদ্যায় তাঁর দক্ষতা ছিল।
২১৬ হিজরির ২৩ জমাদিউস সানি মহীয়সী জুবাইদা পরলোক গমন করেন। তাঁর কর্মমুখর জীবনে জনকল্যাণকামী, উদ্যোক্তা কিংবা জ্ঞান অর্জনে ব্রত নারীদের জন্য রয়েছে যথেষ্ট অনুপ্রেরণার উপাদান।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা
আসর শব্দের অর্থ সময়। পবিত্র কোরআনে আসর নামে একটি সুরা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আসর বা সময়ের শপথ করেছেন। মুসলিমরা দৈনন্দিন যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তার তৃতীয় ওয়াক্তকে আসর নামে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনে এটিকে সালাত আল-ওসতা বা মধ্যবর্তী নামাজ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।
১৭ ঘণ্টা আগেজ্ঞানগর্ভ ও উপদেশে ভরা কোরআন জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি গাইড বই। মানুষ কোথায় কখন কী করবে, কেন করবে, কীভাবে করবে—তা বলে দেওয়া হয়েছে কোরআনে। কোরআন তথা আল্লাহপ্রদত্ত আসমানি কিতাবের হিদায়াতের বাইরে কোনো সঠিক জীবনদর্শন নেই, কোনো ধর্মদর্শন নেই, কোনো মুক্তির পথ নেই। মানবজাতির সূচনালগ্নেই কথাটি জানিয়ে দেওয়া
২ দিন আগেএকজন মুমিনের কাছে রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। মহানবী (সা.) এ পবিত্র মাসকে বেশ গুরুত্ব দিতেন। অন্যান্য কাজকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে অধিক পরিমাণে ইবাদতে মশগুল হতেন। সাহাবিদের অভ্যাসও ছিল একই রকম। গুরুত্ব বিবেচনায় রমজানের প্রস্তুতিও শুরু হতো বেশ আগে থেকেই। রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকেই মহানবী (সা.) অধীর আগ
২ দিন আগেহাজার বছরের মুসলিম ঐতিহ্যের স্মারক টুপি। ইসলামের সূচনাকাল থেকেই টুপি পরিধানের চল রয়েছে। ফিকহের দৃষ্টিকোণে টুপি পরা সুন্নত। মহানবী (সা.) সর্বদা টুপি পরতেন, হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তার প্রমাণ মেলে। সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী যুগের সব অনুসরণীয় মুসলিম টুপি পরেছেন। শালীনতা ও সৌন্দর্যের আবরণ টুপি মুসলমানদের
২ দিন আগে