ধর্ম ও জীবন ডেস্ক
বিপদ-আপদ, ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ ও অভাব-অনটন মানুষের জন্য মহান আল্লাহর পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে ধৈর্য ধরার পাশাপাশি বিপদ কাটিয়ে ওঠার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫) মহানবী (সা.)-এর যুগে অভাব-অনটন ও খাদ্যসংকটের সময়ে তিনি সাহাবিদের অনেক নির্দেশনা দিয়েছেন। এখানে কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো—
১. অপচয়-অপব্যয় রোধ
ইসলাম অপচয়-অপব্যয় নিষিদ্ধ করেছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বনের কথা বলেছে। আর অভাব-অনটনের সময় সংযত ব্যয়ের নির্দেশ দিয়েছেন মহানবী (সা.)। যেমন জাবালা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা মদিনায় কিছুসংখ্যক ইরাকি লোকের সঙ্গে ছিলাম। একবার আমরা দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হই, তখন ইবনে জুবাইর (রা.) আমাদের খেজুর খেতে দিতেন। ইবনে ওমর (রা.) আমাদের কাছ দিয়ে যেতেন এবং বলতেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কাউকে তার ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া একসঙ্গে দুটো করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন।’ (বুখারি: ২৪৫৫)
২. গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ
হাদিসের ভাষ্যমতে, বিভিন্ন কারণে খাদ্যসংকট ও দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়। সুদ, ব্যভিচার, ব্যবসায় প্রতারণা ইত্যাদি সেসব কারণের মধ্যে উল্লেখেযাগ্য। মোট কথা, পাপাচারের শাস্তি হিসেবে মহান আল্লাহ মানুষের ওপর বিপদ দেন। তাই অভাবের সময় মুসলমানদের অধিক সতর্ক হতে হবে এবং পাপাচার থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। কারণ মহানবী (সা.) বলেন, ‘সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে ভাগ্য পরিবর্তন হয় না। মানুষ তার পাপের কারণে প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ: ৪০২২)
৩. অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো
অভাবের সময় সামর্থ্যবানদের উচিত অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো এবং সবাই মিলেমিশে উত্তমভাবে বেঁচে থাকা। কোনো অভাবী মানুষ যেন ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট না পায়, তাই ভাগাভাগি করে খাবার খাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন মহানবী (সা.)। যেমন হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে ওয়াকিদ (রা.) বলেন, তিন দিনের বেশি কোরবানির গোশত খেতে রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রহ.) বলেন, আমি বিষয়টি আমরাহ (রা.)-এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘ইবনে ওয়াকিদ সত্যই বলেছেন। আমি আয়েশা (রা.)কে বলতে শুনেছি যে রাসুল (সা.)-এর যুগে ঈদুল আজহার সময় বেদুইনদের কিছু পরিবার শহরে আসে, তখন তিনি বলেন, তোমরা তিন দিনের পরিমাণ জমা রেখে বাকি গোশতগুলো সদকা করে দাও। পরবর্তী সময়ে লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), মানুষ তো কোরবানির পশুর চামড়া দিয়ে পাত্র প্রস্তুত করছে এবং তার মধ্যে চর্বি গলাচ্ছে। রাসুল (সা.) বলেন, তাতে কী হয়েছে? তারা বলল, আপনিই তো তিন দিনের বেশি কোরবানির গোশত খাওয়া থেকে বারণ করেছেন। তিনি বলেন, আমি তো বেদুইনদের কারণে এ কথা বলেছিলাম। এরপর এখন তোমরা খেতে পারো, জমা করে রাখতে পারো এবং সদকা করতে পারো। (মুসলিম, হাদিস: ৪৯৯৭)
৪. আল্লাহর ওপর ভরসা করা
আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস, তাঁর শাস্তির ভয় এবং বিপদে ধৈর্য ধরাই ইসলামের শিক্ষা। এসব মানুষের রিজিক প্রশস্ত করে দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ অবশ্যই তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেন। নিশ্চয়ই তিনি প্রত্যেক জিনিসের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’ (সুরা তালাক: ২-৩)
হাদিসে এসেছে, মহান আল্লাহ এই উম্মতকে দুর্ভিক্ষ দিয়ে সমূলে ধ্বংস করবেন না। কারণ রাসুল (সা.) মহান আল্লাহর কাছে তাঁর উম্মতের জন্য দোয়া করেছেন। (মুসলিম: ৭১৫০) তাই তাঁর প্রতি ভরসা করে, হতাশ না হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
৫. দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচার আকুতি
অভাব-অনটন ও দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম আমল হলো দোয়া। মহানবী (সা.) দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছিলেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, নবীজি (সা.)-এর যুগে (অতিবৃষ্টির কারণে) মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার হলে একদিন জুমার দিন তিনি মিম্বারে দাঁড়িয়ে লোকদের সামনে জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন। এক বেদুইন দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, ধন-সম্পদ বরবাদ হয়ে গেল, সন্তানসন্ততি ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ছে।...’ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের চারপাশে, আমাদের ওপর নয়।’ বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রাসুল (সা.) হাত দিয়ে যেদিকেই ইশারা করেছেন, সঙ্গে সঙ্গে সেদিকেই ফরসা হয়ে গেছে। এমনকি আমি মদিনাকে আয়নার মতো পরিষ্কার দেখতে পেলাম। এদিকে ‘কানাত’ নামক প্রান্তরে এক মাস ধরে পানির ধারা বয়ে গেল। যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউই এসেছে, সে-ই অতিবৃষ্টির সংবাদ দিয়েছে। (মুসলিম: ১৯৬৪)
৬. ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে বাঁচার দোয়া
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, অভাব ও দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) এভাবে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধা থেকে আশ্রয় চাই, কারণ তা নিকৃষ্ট শয্যাসঙ্গী। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই খিয়ানত করা থেকে। কেননা, তা খুবই নিকৃষ্ট বন্ধু।’ (আবু দাউদ: ১৫৪৭)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি দারিদ্র্য থেকে, আপনার কম দয়া থেকে ও অসম্মান থেকে। আমি আপনার কাছে আরও আশ্রয় চাইছি জুলুম করা থেকে অথবা অত্যাচারিত হওয়া থেকে।’ আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় এই দোয়া করতেন। (বুখারি: ১৫৪৪)
অন্য হাদিসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়াকে অভাব দূর হওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে যাবতীয় বিপদাপদ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন এবং তাকে অকল্পনীয় স্থান থেকে রিজিক দান করবেন।’ (আবু দাউদ: ১৫১৮)
৭. কৃষিকাজে মনোনিবেশ করা
পাশাপাশি অভাব রোধে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করাও মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা। তিনি সাহাবিদের নিজের হাতে কামাই করে খেতে উৎসাহ দিয়েছেন। রোজগার করাকে তিনি মুমিনের জীবনের অন্যতম ফরজ কাজ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। জুমার নামাজের পর আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধানে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ার শিক্ষা দিয়েছেন। এ কারণেই দেখা যায়, মহানবী (সা.)-এর যুগে তিনি সাহাবিদের কৃষিকাজে উৎসাহ জুগিয়েছেন। ফলে খলিফা ওমরের আমলে কঠিন দুর্ভিক্ষের সময়ও মুসলমানগণ তেমন ক্ষতির মুখে পড়েননি। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সেই দুর্ভিক্ষের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘বছরটি ছিল ভীষণ দুর্বিপাক ও কষ্টের। ওমর (রা.) গ্রামাঞ্চল থেকে উট, খাদ্যশস্য, তেল ইত্যাদি সাহায্যসামগ্রী নিয়ে আসেন। গ্রামাঞ্চলের একখণ্ড জমিও অনাবাদি পড়ে থাকতে দেননি এবং তাঁর চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়। …’ (আদাবুল মুফরাদ: ৫৬৪)
বিপদ-আপদ, ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ ও অভাব-অনটন মানুষের জন্য মহান আল্লাহর পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে ধৈর্য ধরার পাশাপাশি বিপদ কাটিয়ে ওঠার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫) মহানবী (সা.)-এর যুগে অভাব-অনটন ও খাদ্যসংকটের সময়ে তিনি সাহাবিদের অনেক নির্দেশনা দিয়েছেন। এখানে কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো—
১. অপচয়-অপব্যয় রোধ
ইসলাম অপচয়-অপব্যয় নিষিদ্ধ করেছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বনের কথা বলেছে। আর অভাব-অনটনের সময় সংযত ব্যয়ের নির্দেশ দিয়েছেন মহানবী (সা.)। যেমন জাবালা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা মদিনায় কিছুসংখ্যক ইরাকি লোকের সঙ্গে ছিলাম। একবার আমরা দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হই, তখন ইবনে জুবাইর (রা.) আমাদের খেজুর খেতে দিতেন। ইবনে ওমর (রা.) আমাদের কাছ দিয়ে যেতেন এবং বলতেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কাউকে তার ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া একসঙ্গে দুটো করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন।’ (বুখারি: ২৪৫৫)
২. গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ
হাদিসের ভাষ্যমতে, বিভিন্ন কারণে খাদ্যসংকট ও দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়। সুদ, ব্যভিচার, ব্যবসায় প্রতারণা ইত্যাদি সেসব কারণের মধ্যে উল্লেখেযাগ্য। মোট কথা, পাপাচারের শাস্তি হিসেবে মহান আল্লাহ মানুষের ওপর বিপদ দেন। তাই অভাবের সময় মুসলমানদের অধিক সতর্ক হতে হবে এবং পাপাচার থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। কারণ মহানবী (সা.) বলেন, ‘সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে ভাগ্য পরিবর্তন হয় না। মানুষ তার পাপের কারণে প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ: ৪০২২)
৩. অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো
অভাবের সময় সামর্থ্যবানদের উচিত অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো এবং সবাই মিলেমিশে উত্তমভাবে বেঁচে থাকা। কোনো অভাবী মানুষ যেন ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট না পায়, তাই ভাগাভাগি করে খাবার খাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন মহানবী (সা.)। যেমন হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে ওয়াকিদ (রা.) বলেন, তিন দিনের বেশি কোরবানির গোশত খেতে রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রহ.) বলেন, আমি বিষয়টি আমরাহ (রা.)-এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘ইবনে ওয়াকিদ সত্যই বলেছেন। আমি আয়েশা (রা.)কে বলতে শুনেছি যে রাসুল (সা.)-এর যুগে ঈদুল আজহার সময় বেদুইনদের কিছু পরিবার শহরে আসে, তখন তিনি বলেন, তোমরা তিন দিনের পরিমাণ জমা রেখে বাকি গোশতগুলো সদকা করে দাও। পরবর্তী সময়ে লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), মানুষ তো কোরবানির পশুর চামড়া দিয়ে পাত্র প্রস্তুত করছে এবং তার মধ্যে চর্বি গলাচ্ছে। রাসুল (সা.) বলেন, তাতে কী হয়েছে? তারা বলল, আপনিই তো তিন দিনের বেশি কোরবানির গোশত খাওয়া থেকে বারণ করেছেন। তিনি বলেন, আমি তো বেদুইনদের কারণে এ কথা বলেছিলাম। এরপর এখন তোমরা খেতে পারো, জমা করে রাখতে পারো এবং সদকা করতে পারো। (মুসলিম, হাদিস: ৪৯৯৭)
৪. আল্লাহর ওপর ভরসা করা
আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস, তাঁর শাস্তির ভয় এবং বিপদে ধৈর্য ধরাই ইসলামের শিক্ষা। এসব মানুষের রিজিক প্রশস্ত করে দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ অবশ্যই তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেন। নিশ্চয়ই তিনি প্রত্যেক জিনিসের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’ (সুরা তালাক: ২-৩)
হাদিসে এসেছে, মহান আল্লাহ এই উম্মতকে দুর্ভিক্ষ দিয়ে সমূলে ধ্বংস করবেন না। কারণ রাসুল (সা.) মহান আল্লাহর কাছে তাঁর উম্মতের জন্য দোয়া করেছেন। (মুসলিম: ৭১৫০) তাই তাঁর প্রতি ভরসা করে, হতাশ না হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
৫. দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচার আকুতি
অভাব-অনটন ও দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম আমল হলো দোয়া। মহানবী (সা.) দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছিলেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, নবীজি (সা.)-এর যুগে (অতিবৃষ্টির কারণে) মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার হলে একদিন জুমার দিন তিনি মিম্বারে দাঁড়িয়ে লোকদের সামনে জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন। এক বেদুইন দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, ধন-সম্পদ বরবাদ হয়ে গেল, সন্তানসন্ততি ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ছে।...’ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের চারপাশে, আমাদের ওপর নয়।’ বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রাসুল (সা.) হাত দিয়ে যেদিকেই ইশারা করেছেন, সঙ্গে সঙ্গে সেদিকেই ফরসা হয়ে গেছে। এমনকি আমি মদিনাকে আয়নার মতো পরিষ্কার দেখতে পেলাম। এদিকে ‘কানাত’ নামক প্রান্তরে এক মাস ধরে পানির ধারা বয়ে গেল। যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউই এসেছে, সে-ই অতিবৃষ্টির সংবাদ দিয়েছে। (মুসলিম: ১৯৬৪)
৬. ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে বাঁচার দোয়া
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, অভাব ও দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) এভাবে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধা থেকে আশ্রয় চাই, কারণ তা নিকৃষ্ট শয্যাসঙ্গী। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই খিয়ানত করা থেকে। কেননা, তা খুবই নিকৃষ্ট বন্ধু।’ (আবু দাউদ: ১৫৪৭)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি দারিদ্র্য থেকে, আপনার কম দয়া থেকে ও অসম্মান থেকে। আমি আপনার কাছে আরও আশ্রয় চাইছি জুলুম করা থেকে অথবা অত্যাচারিত হওয়া থেকে।’ আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় এই দোয়া করতেন। (বুখারি: ১৫৪৪)
অন্য হাদিসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়াকে অভাব দূর হওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে যাবতীয় বিপদাপদ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন এবং তাকে অকল্পনীয় স্থান থেকে রিজিক দান করবেন।’ (আবু দাউদ: ১৫১৮)
৭. কৃষিকাজে মনোনিবেশ করা
পাশাপাশি অভাব রোধে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করাও মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা। তিনি সাহাবিদের নিজের হাতে কামাই করে খেতে উৎসাহ দিয়েছেন। রোজগার করাকে তিনি মুমিনের জীবনের অন্যতম ফরজ কাজ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। জুমার নামাজের পর আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধানে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ার শিক্ষা দিয়েছেন। এ কারণেই দেখা যায়, মহানবী (সা.)-এর যুগে তিনি সাহাবিদের কৃষিকাজে উৎসাহ জুগিয়েছেন। ফলে খলিফা ওমরের আমলে কঠিন দুর্ভিক্ষের সময়ও মুসলমানগণ তেমন ক্ষতির মুখে পড়েননি। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সেই দুর্ভিক্ষের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘বছরটি ছিল ভীষণ দুর্বিপাক ও কষ্টের। ওমর (রা.) গ্রামাঞ্চল থেকে উট, খাদ্যশস্য, তেল ইত্যাদি সাহায্যসামগ্রী নিয়ে আসেন। গ্রামাঞ্চলের একখণ্ড জমিও অনাবাদি পড়ে থাকতে দেননি এবং তাঁর চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়। …’ (আদাবুল মুফরাদ: ৫৬৪)
আসর শব্দের অর্থ সময়। পবিত্র কোরআনে আসর নামে একটি সুরা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আসর বা সময়ের শপথ করেছেন। মুসলিমরা দৈনন্দিন যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তার তৃতীয় ওয়াক্তকে আসর নামে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনে এটিকে সালাত আল-ওসতা বা মধ্যবর্তী নামাজ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।
১ দিন আগেজ্ঞানগর্ভ ও উপদেশে ভরা কোরআন জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি গাইড বই। মানুষ কোথায় কখন কী করবে, কেন করবে, কীভাবে করবে—তা বলে দেওয়া হয়েছে কোরআনে। কোরআন তথা আল্লাহপ্রদত্ত আসমানি কিতাবের হিদায়াতের বাইরে কোনো সঠিক জীবনদর্শন নেই, কোনো ধর্মদর্শন নেই, কোনো মুক্তির পথ নেই। মানবজাতির সূচনালগ্নেই কথাটি জানিয়ে দেওয়া
২ দিন আগেএকজন মুমিনের কাছে রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। মহানবী (সা.) এ পবিত্র মাসকে বেশ গুরুত্ব দিতেন। অন্যান্য কাজকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে অধিক পরিমাণে ইবাদতে মশগুল হতেন। সাহাবিদের অভ্যাসও ছিল একই রকম। গুরুত্ব বিবেচনায় রমজানের প্রস্তুতিও শুরু হতো বেশ আগে থেকেই। রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকেই মহানবী (সা.) অধীর আগ
২ দিন আগেহাজার বছরের মুসলিম ঐতিহ্যের স্মারক টুপি। ইসলামের সূচনাকাল থেকেই টুপি পরিধানের চল রয়েছে। ফিকহের দৃষ্টিকোণে টুপি পরা সুন্নত। মহানবী (সা.) সর্বদা টুপি পরতেন, হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তার প্রমাণ মেলে। সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী যুগের সব অনুসরণীয় মুসলিম টুপি পরেছেন। শালীনতা ও সৌন্দর্যের আবরণ টুপি মুসলমানদের
২ দিন আগে