ড. মো. আবদুল কাদির
দুর্নীতি একটি নেতিবাচক শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ নীতিবিরুদ্ধ আচরণ, অসদাচরণ, নীতিহীনতা ইত্যাদি। সাধারণভাবে যা নীতিসিদ্ধ নয়, তা-ই দুর্নীতি। অর্থাৎ যে কাজ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও ধর্মে স্বীকৃত নয়, তা-ই দুর্নীতি। রাজনৈতিক ও সরকারি প্রশাসনে দুর্নীতি বলতে সাধারণত ঘুষ, বলপ্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শন, প্রভাব বিস্তার বা ব্যক্তিবিশেষকে সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে অফিস-আদালতকে ব্যক্তিগত লাভের জন্য ব্যবহার করাকে বোঝায়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতে, ব্যক্তিগত লাভের জন্য জনপ্রশাসনের অপব্যবহারই দুর্নীতি।
দুর্নীতি মানবসভ্যতার জন্য অভিশাপ। সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য সর্বোচ্চ প্রতিবন্ধক। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়া বিষাক্ত দুর্নীতি রাষ্ট্রের আইনে যেমন সম্পূর্ণ অবৈধ এবং জঘন্য অপরাধ, তেমনি ইসলামের দৃষ্টিতেও তা মারাত্মক গুনাহের কাজ এবং পরকালীন শাস্তির কারণ। দুর্নীতির সর্বপ্লাবী আচরণ রুখতে ইসলাম কঠোর কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে। দুর্নীতির বীজ অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে নিয়েছে বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের বাস্তব শিক্ষা দিয়েছে এবং দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে।
এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান হওয়ার কারণে ধর্মীয় মূল্যবোধের ব্যাপক প্রচার দুর্নীতি রুখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দুর্নীতিবিরোধী যেসব নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন, তা বাস্তবায়ন করা গেলে হয়তো এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ইসলামের দৃষ্টিতে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে কয়েকটি করণীয় এখানে তুলে ধরা হলো—
হালাল-হারামের বাছবিচার
হালাল-হারামে বাছবিচার করার মূল্যবোধ দুর্নীতি বন্ধে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা মানুষকে হালাল উপার্জনের আদেশ এবং হারাম উপার্জনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হে মানবজাতি, পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে, তা থেকে খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা: ১৬৮)
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘হারাম দ্বারা বর্ধিত দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জাহান্নামই তার উপযুক্ত স্থান।’ (মুসনাদে আহমাদ)
উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রদান
প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প বেতন দুর্নীতির প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। তাই ইসলাম প্রত্যেককে এমন মজুরি দিতে বলে, যাতে সে তার ন্যায়ানুগ ও স্বাভাবিক প্রয়োজন মেটাতে পারে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। কারও ভাই তার অধীন থাকলে তার উচিত নিজে যা খাবে, তাকেও তা-ই খাওয়াবে। নিজে যা পরবে, তাকেও তা-ই পরতে দেবে এবং তাকে দিয়ে এমন কাজ করাবে না, যা তার সাধ্যাতীত। কোনোভাবে তার ওপর আরোপিত বোঝা বেশি হয়ে গেলে নিজেও সে কাজে তাকে সাহায্য করবে।’ (বুখারি)
নিয়োগদানে স্বচ্ছতা
দুর্নীতির অন্যতম কারণ হলো, ঘুষ নেওয়ার মাধ্যমে অদক্ষ, অনভিজ্ঞ ও অসৎ কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া। অথচ মহান আল্লাহ দক্ষ, অভিজ্ঞ, সৎ ও বিশ্বস্ত কর্মচারী নিয়োগের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তোমার জন্য সর্বোত্তম কর্মচারী হতে পারে সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত।’ (সুরা কাসাস: ২৬)
মহানবী (সা.) বলেন, ‘যখন অযোগ্য ও অদক্ষ ব্যক্তিদের কোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়া হবে, তখন তোমরা কেয়ামতের প্রতীক্ষায় থেকো।’ (বুখারি)
কঠোর শাস্তি প্রদান
বিচার বিভাগকে সরকারের যাবতীয় হস্তক্ষেপ, প্রভাব ও চাপ থেকে মুক্ত করতে হবে, যাতে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রকৃত আইন মোতাবেক নির্ভয়ে ও নিঃশঙ্ক চিত্তে রায় দেওয়া যায়। মহানবী (সা.)-এর যুগে মাখজুম গোত্রের এক মহিলা চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত হলে মহানবী (সা.) আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। শুধু তা-ই নয়, মহানবী (সা.) কসম করে বলেন, ‘আজ যদি আমার মেয়ে ফাতেমাও চুরি করত, আমি মুহাম্মদ (সা.) তারও হাত কাটার নির্দেশ দিতাম।’ (বুখারি)
মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর খোলাফায়ে রাশেদার সময়ও বিচার বিভাগ প্রশাসন থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিল। এখানে সাধারণ নাগরিকও সরকারের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার অধিকারী খলিফাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর অধিকার লাভ করত।
জবাবদিহি
দুর্নীতিমুক্ত সুষম-সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের জন্য জবাবদিহির কোনো বিকল্প নেই। মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক হজরত ওমর (রা.) মসজিদে জুমার খুতবা দিতে উঠলে একজন বেদুইন তাঁকে এ বলে থামিয়ে দেন যে, ‘গতকাল আপনার পক্ষ থেকে আমাদের মধ্যে যে কাপড় বিতরণ করা হয়েছিল, তা দিয়ে তো এত লম্বা জামা তৈরি করা সম্ভব নয়, আপনি এত বড় জামা পেলেন কোথায়?’ ওমর কোনো প্রতিবাদ না করে তাঁর ছেলে আবদুল্লাহর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি দাঁড়িয়ে বলেন, ‘মদিনার সবার মতো আমি ও আমার বাবা দুজনেই দুই খণ্ড কাপড় পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাবা লম্বা হওয়ায় তাঁর প্রাপ্ত কাপড় দিয়ে জামা তৈরি সম্ভব হচ্ছিল না। তাই আমি আমার কাপড়টি বাবাকে দিয়ে দিয়েছি।’ (ইবনে কাসির)
একজন সাধারণ প্রজার কাছে একজন রাষ্ট্রনায়কের জবাবদিহির এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি
দুর্নীতির পিচ্ছিল পথে প্রকৃত মুসলমান পা বাড়াতে পারে না। কারণ, পার্থিব জগতের ক্ষণস্থায়ী জীবনের পর রয়েছে এক অনন্ত জীবন। যে জীবনের শুরু আছে, শেষ নেই। সে জীবনের তুলনায় এ নশ্বর জীবন নিতান্তই তুচ্ছ ও নগণ্য। মহানবী (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে একটি মৃত কানকাটা বকরির বাচ্চা দেখিয়ে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে এটি এক দিরহামে ক্রয় করবে?’ সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ‘আমরা তো তা কোনো কিছুর বিনিময়েই ক্রয় করব না।’ মহানবী (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর কসম, এটা তোমাদের কাছে যতটুকু নিকৃষ্ট, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এর চেয়েও নিকৃষ্ট।’ (মুসলিম)
এসব কাজ তখনই ফলপ্রসূ হবে, যখন দেশের প্রত্যেক নাগরিকের অন্তরে দেশের প্রতি ভালোবাসা জাগরূক থাকবে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ থাকবে এবং গণমানুষের মনে সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। আর তা তখনই সম্ভব, যখন মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয় ও তাঁর কাছে জবাবদিহির মানসিকতা থাকবে।
লেখক: অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দুর্নীতি একটি নেতিবাচক শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ নীতিবিরুদ্ধ আচরণ, অসদাচরণ, নীতিহীনতা ইত্যাদি। সাধারণভাবে যা নীতিসিদ্ধ নয়, তা-ই দুর্নীতি। অর্থাৎ যে কাজ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও ধর্মে স্বীকৃত নয়, তা-ই দুর্নীতি। রাজনৈতিক ও সরকারি প্রশাসনে দুর্নীতি বলতে সাধারণত ঘুষ, বলপ্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শন, প্রভাব বিস্তার বা ব্যক্তিবিশেষকে সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে অফিস-আদালতকে ব্যক্তিগত লাভের জন্য ব্যবহার করাকে বোঝায়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতে, ব্যক্তিগত লাভের জন্য জনপ্রশাসনের অপব্যবহারই দুর্নীতি।
দুর্নীতি মানবসভ্যতার জন্য অভিশাপ। সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য সর্বোচ্চ প্রতিবন্ধক। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়া বিষাক্ত দুর্নীতি রাষ্ট্রের আইনে যেমন সম্পূর্ণ অবৈধ এবং জঘন্য অপরাধ, তেমনি ইসলামের দৃষ্টিতেও তা মারাত্মক গুনাহের কাজ এবং পরকালীন শাস্তির কারণ। দুর্নীতির সর্বপ্লাবী আচরণ রুখতে ইসলাম কঠোর কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে। দুর্নীতির বীজ অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে নিয়েছে বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের বাস্তব শিক্ষা দিয়েছে এবং দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে।
এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান হওয়ার কারণে ধর্মীয় মূল্যবোধের ব্যাপক প্রচার দুর্নীতি রুখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দুর্নীতিবিরোধী যেসব নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন, তা বাস্তবায়ন করা গেলে হয়তো এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ইসলামের দৃষ্টিতে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে কয়েকটি করণীয় এখানে তুলে ধরা হলো—
হালাল-হারামের বাছবিচার
হালাল-হারামে বাছবিচার করার মূল্যবোধ দুর্নীতি বন্ধে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা মানুষকে হালাল উপার্জনের আদেশ এবং হারাম উপার্জনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হে মানবজাতি, পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে, তা থেকে খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা: ১৬৮)
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘হারাম দ্বারা বর্ধিত দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জাহান্নামই তার উপযুক্ত স্থান।’ (মুসনাদে আহমাদ)
উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রদান
প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প বেতন দুর্নীতির প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। তাই ইসলাম প্রত্যেককে এমন মজুরি দিতে বলে, যাতে সে তার ন্যায়ানুগ ও স্বাভাবিক প্রয়োজন মেটাতে পারে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। কারও ভাই তার অধীন থাকলে তার উচিত নিজে যা খাবে, তাকেও তা-ই খাওয়াবে। নিজে যা পরবে, তাকেও তা-ই পরতে দেবে এবং তাকে দিয়ে এমন কাজ করাবে না, যা তার সাধ্যাতীত। কোনোভাবে তার ওপর আরোপিত বোঝা বেশি হয়ে গেলে নিজেও সে কাজে তাকে সাহায্য করবে।’ (বুখারি)
নিয়োগদানে স্বচ্ছতা
দুর্নীতির অন্যতম কারণ হলো, ঘুষ নেওয়ার মাধ্যমে অদক্ষ, অনভিজ্ঞ ও অসৎ কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া। অথচ মহান আল্লাহ দক্ষ, অভিজ্ঞ, সৎ ও বিশ্বস্ত কর্মচারী নিয়োগের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তোমার জন্য সর্বোত্তম কর্মচারী হতে পারে সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত।’ (সুরা কাসাস: ২৬)
মহানবী (সা.) বলেন, ‘যখন অযোগ্য ও অদক্ষ ব্যক্তিদের কোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়া হবে, তখন তোমরা কেয়ামতের প্রতীক্ষায় থেকো।’ (বুখারি)
কঠোর শাস্তি প্রদান
বিচার বিভাগকে সরকারের যাবতীয় হস্তক্ষেপ, প্রভাব ও চাপ থেকে মুক্ত করতে হবে, যাতে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রকৃত আইন মোতাবেক নির্ভয়ে ও নিঃশঙ্ক চিত্তে রায় দেওয়া যায়। মহানবী (সা.)-এর যুগে মাখজুম গোত্রের এক মহিলা চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত হলে মহানবী (সা.) আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। শুধু তা-ই নয়, মহানবী (সা.) কসম করে বলেন, ‘আজ যদি আমার মেয়ে ফাতেমাও চুরি করত, আমি মুহাম্মদ (সা.) তারও হাত কাটার নির্দেশ দিতাম।’ (বুখারি)
মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর খোলাফায়ে রাশেদার সময়ও বিচার বিভাগ প্রশাসন থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিল। এখানে সাধারণ নাগরিকও সরকারের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার অধিকারী খলিফাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর অধিকার লাভ করত।
জবাবদিহি
দুর্নীতিমুক্ত সুষম-সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের জন্য জবাবদিহির কোনো বিকল্প নেই। মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক হজরত ওমর (রা.) মসজিদে জুমার খুতবা দিতে উঠলে একজন বেদুইন তাঁকে এ বলে থামিয়ে দেন যে, ‘গতকাল আপনার পক্ষ থেকে আমাদের মধ্যে যে কাপড় বিতরণ করা হয়েছিল, তা দিয়ে তো এত লম্বা জামা তৈরি করা সম্ভব নয়, আপনি এত বড় জামা পেলেন কোথায়?’ ওমর কোনো প্রতিবাদ না করে তাঁর ছেলে আবদুল্লাহর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি দাঁড়িয়ে বলেন, ‘মদিনার সবার মতো আমি ও আমার বাবা দুজনেই দুই খণ্ড কাপড় পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাবা লম্বা হওয়ায় তাঁর প্রাপ্ত কাপড় দিয়ে জামা তৈরি সম্ভব হচ্ছিল না। তাই আমি আমার কাপড়টি বাবাকে দিয়ে দিয়েছি।’ (ইবনে কাসির)
একজন সাধারণ প্রজার কাছে একজন রাষ্ট্রনায়কের জবাবদিহির এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি
দুর্নীতির পিচ্ছিল পথে প্রকৃত মুসলমান পা বাড়াতে পারে না। কারণ, পার্থিব জগতের ক্ষণস্থায়ী জীবনের পর রয়েছে এক অনন্ত জীবন। যে জীবনের শুরু আছে, শেষ নেই। সে জীবনের তুলনায় এ নশ্বর জীবন নিতান্তই তুচ্ছ ও নগণ্য। মহানবী (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে একটি মৃত কানকাটা বকরির বাচ্চা দেখিয়ে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে এটি এক দিরহামে ক্রয় করবে?’ সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ‘আমরা তো তা কোনো কিছুর বিনিময়েই ক্রয় করব না।’ মহানবী (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর কসম, এটা তোমাদের কাছে যতটুকু নিকৃষ্ট, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এর চেয়েও নিকৃষ্ট।’ (মুসলিম)
এসব কাজ তখনই ফলপ্রসূ হবে, যখন দেশের প্রত্যেক নাগরিকের অন্তরে দেশের প্রতি ভালোবাসা জাগরূক থাকবে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ থাকবে এবং গণমানুষের মনে সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। আর তা তখনই সম্ভব, যখন মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয় ও তাঁর কাছে জবাবদিহির মানসিকতা থাকবে।
লেখক: অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
একজন মুমিনের জন্য তার জীবনকে ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক পরিচালিত করা এবং ইসলামে যা কিছু নিষিদ্ধ, তা ত্যাগ করা আবশ্যক। হাদিস শরিফে এটাকে উত্তম ধার্মিকতা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন...
৭ ঘণ্টা আগেআসর শব্দের অর্থ সময়। পবিত্র কোরআনে আসর নামে একটি সুরা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আসর বা সময়ের শপথ করেছেন। মুসলিমরা দৈনন্দিন যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তার তৃতীয় ওয়াক্তকে আসর নামে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনে এটিকে সালাত আল-ওসতা বা মধ্যবর্তী নামাজ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।
১ দিন আগেজ্ঞানগর্ভ ও উপদেশে ভরা কোরআন জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি গাইড বই। মানুষ কোথায় কখন কী করবে, কেন করবে, কীভাবে করবে—তা বলে দেওয়া হয়েছে কোরআনে। কোরআন তথা আল্লাহপ্রদত্ত আসমানি কিতাবের হিদায়াতের বাইরে কোনো সঠিক জীবনদর্শন নেই, কোনো ধর্মদর্শন নেই, কোনো মুক্তির পথ নেই। মানবজাতির সূচনালগ্নেই কথাটি জানিয়ে দেওয়া
২ দিন আগেএকজন মুমিনের কাছে রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। মহানবী (সা.) এ পবিত্র মাসকে বেশ গুরুত্ব দিতেন। অন্যান্য কাজকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে অধিক পরিমাণে ইবাদতে মশগুল হতেন। সাহাবিদের অভ্যাসও ছিল একই রকম। গুরুত্ব বিবেচনায় রমজানের প্রস্তুতিও শুরু হতো বেশ আগে থেকেই। রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকেই মহানবী (সা.) অধীর আগ
২ দিন আগে