মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
মানবসভ্যতার ইতিহাসে ভ্রমণ বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ শুধু অজানা স্থান অন্বেষণ করে না; বরং জ্ঞানার্জন, সংস্কৃতির সংযোগ ও ঐতিহ্য বিস্তারে অবদান রাখে। ইসলামি সভ্যতার বিস্তারে ভ্রমণকারীদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইতিহাসের পাতায় কয়েকজন মুসলিম পরিব্রাজক রয়েছেন, যাঁরা তাঁদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞানের দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। এখানে ৫ কিংবদন্তি পরিব্রাজকের কথা তুলে ধরা হলো—
মুহাম্মদ আসাদ
মুহাম্মদ আসাদ ছিলেন একজন ইহুদি সাংবাদিক, যিনি ইসলাম গ্রহণের পর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। তাঁর জন্ম ১৯০০ সালে, অস্ট্রিয়ার লেমবার্গ শহরে। ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি লিওপোল্ড ওয়েইস নামে পরিচিত ছিলেন। ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তিনি মুসলিম জীবনধারা ও সমাজ সম্পর্কে গভীর আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি লিখেছেন বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্য রোড টু মক্কা’। বইটি শুধু তাঁর ভ্রমণকাহিনি নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ইসলামের গভীর তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দেয়। মুহাম্মদ আসাদ পাকিস্তানের সাংবিধানিক কাঠামো তৈরিতে সহায়তা করেন এবং পাকিস্তানের প্রথম পররাষ্ট্রনীতি তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, ভ্রমণ শুধু অভিজ্ঞতা নয়, এটি বৃহত্তর মানবিক সংযোগের মাধ্যম।
এভলিয়া চেলেবি
এভলিয়া চেলেবি ছিলেন ১৭ শতকের অটোমান সাম্রাজ্যের একজন বিখ্যাত পরিব্রাজক ও লেখক। জীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করে কাটিয়েছেন। তাঁর অসামান্য কাজ ‘সেয়াহাতনামা’ ভ্রমণসাহিত্যের অনন্য নিদর্শন। বইটিতে তিনি শুধু উসমানি সাম্রাজ্যের ভূগোল বর্ণনা করেননি; বরং স্থানীয় মানুষের জীবনধারা, উৎসব, ঐতিহ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। তাঁর রচনাগুলো শুধু ঐতিহাসিক তথ্যের উৎস নয়, বরং জীবন্ত বর্ণনামূলক সাহিত্যের উদাহরণ। এভলিয়া চেলেবির রচনায় হাস্যরস ও বাস্তব অভিজ্ঞতা পাঠকদের জন্য এই গ্রন্থকে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করেছে।
ইবনে ফাদলান
দশম শতকের আরব পরিব্রাজক ইবনে ফাদলান ছিলেন আব্বাসীয় খলিফার একজন প্রতিনিধি। ৯২২ সালে তিনি উত্তর ইউরোপে ভলগা বুলগারদের অঞ্চলে কূটনৈতিক মিশনে যান। তাঁর ভ্রমণকাহিনিতে ভাইকিং সভ্যতার বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। ইবনে ফাদলানের লেখা প্রাচীন স্ক্যান্ডিনেভীয় সংস্কৃতির ওপর আলোকপাত করে। তিনি বুলগার, তুর্কি ও ভাইকিংদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, সামাজিক নিয়মাবলি এবং অর্থনৈতিক জীবনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। এ বিবরণ শুধু ইসলামি বিশ্ব নয়, ইউরোপীয় ইতিহাস গবেষকদের জন্য অমূল্য উৎস।
ইবনে বতুতা
বিশ্বের অন্যতম মহান পরিব্রাজক ইবনে বতুতা ১৩০৪ সালে মরক্কোর তাঞ্জিয়ার শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হজ পালনের জন্য ১৩২৫ সালে ভ্রমণ শুরু করেন। কিন্তু তাঁর এই যাত্রা হজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এরপর প্রায় ৩০ বছরে তিনি আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং চীন ভ্রমণ করেন। ইবনে বতুতার ভ্রমণকাহিনি ‘রিহলা’ একটি জীবনী নয়, এটি মধ্যযুগীয় মুসলিম বিশ্বের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার দলিল। তিনি তাঁর ভ্রমণকালে বিভিন্ন রাজা, শাসক এবং ধর্মীয় পণ্ডিতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁর ভ্রমণকাহিনি থেকে আমরা মুসলিম সভ্যতার বিস্তৃতি ও বৈচিত্র্যের কথা জানতে পারি।
ইবনে খালদুন
ইবনে খালদুন ছিলেন একজন দার্শনিক, ঐতিহাসিক ও পরিব্রাজক। ১৩৩২ সালে উত্তর আফ্রিকার তিউনিসিয়ায় জন্মগ্রহণ করা এই মহান মনীষী ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন। তাঁর রচিত ‘মুকাদ্দিমা’ গ্রন্থে তিনি মানবসভ্যতার বিবর্তন, সংস্কৃতি ও সমাজকাঠামোর বিশ্লেষণ করেছেন। ইবনে খালদুন বিশ্বাস করতেন, প্রতিটি সভ্যতার একটি নির্দিষ্ট জীবনচক্র রয়েছে। তিনি বিভিন্ন অঞ্চল ও সভ্যতা ভ্রমণ করে তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করেন। তাঁর এই গবেষণা আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে।
মানবসভ্যতার ইতিহাসে ভ্রমণ বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ শুধু অজানা স্থান অন্বেষণ করে না; বরং জ্ঞানার্জন, সংস্কৃতির সংযোগ ও ঐতিহ্য বিস্তারে অবদান রাখে। ইসলামি সভ্যতার বিস্তারে ভ্রমণকারীদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইতিহাসের পাতায় কয়েকজন মুসলিম পরিব্রাজক রয়েছেন, যাঁরা তাঁদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞানের দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। এখানে ৫ কিংবদন্তি পরিব্রাজকের কথা তুলে ধরা হলো—
মুহাম্মদ আসাদ
মুহাম্মদ আসাদ ছিলেন একজন ইহুদি সাংবাদিক, যিনি ইসলাম গ্রহণের পর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। তাঁর জন্ম ১৯০০ সালে, অস্ট্রিয়ার লেমবার্গ শহরে। ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি লিওপোল্ড ওয়েইস নামে পরিচিত ছিলেন। ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তিনি মুসলিম জীবনধারা ও সমাজ সম্পর্কে গভীর আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি লিখেছেন বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্য রোড টু মক্কা’। বইটি শুধু তাঁর ভ্রমণকাহিনি নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ইসলামের গভীর তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দেয়। মুহাম্মদ আসাদ পাকিস্তানের সাংবিধানিক কাঠামো তৈরিতে সহায়তা করেন এবং পাকিস্তানের প্রথম পররাষ্ট্রনীতি তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, ভ্রমণ শুধু অভিজ্ঞতা নয়, এটি বৃহত্তর মানবিক সংযোগের মাধ্যম।
এভলিয়া চেলেবি
এভলিয়া চেলেবি ছিলেন ১৭ শতকের অটোমান সাম্রাজ্যের একজন বিখ্যাত পরিব্রাজক ও লেখক। জীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করে কাটিয়েছেন। তাঁর অসামান্য কাজ ‘সেয়াহাতনামা’ ভ্রমণসাহিত্যের অনন্য নিদর্শন। বইটিতে তিনি শুধু উসমানি সাম্রাজ্যের ভূগোল বর্ণনা করেননি; বরং স্থানীয় মানুষের জীবনধারা, উৎসব, ঐতিহ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। তাঁর রচনাগুলো শুধু ঐতিহাসিক তথ্যের উৎস নয়, বরং জীবন্ত বর্ণনামূলক সাহিত্যের উদাহরণ। এভলিয়া চেলেবির রচনায় হাস্যরস ও বাস্তব অভিজ্ঞতা পাঠকদের জন্য এই গ্রন্থকে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করেছে।
ইবনে ফাদলান
দশম শতকের আরব পরিব্রাজক ইবনে ফাদলান ছিলেন আব্বাসীয় খলিফার একজন প্রতিনিধি। ৯২২ সালে তিনি উত্তর ইউরোপে ভলগা বুলগারদের অঞ্চলে কূটনৈতিক মিশনে যান। তাঁর ভ্রমণকাহিনিতে ভাইকিং সভ্যতার বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। ইবনে ফাদলানের লেখা প্রাচীন স্ক্যান্ডিনেভীয় সংস্কৃতির ওপর আলোকপাত করে। তিনি বুলগার, তুর্কি ও ভাইকিংদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, সামাজিক নিয়মাবলি এবং অর্থনৈতিক জীবনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। এ বিবরণ শুধু ইসলামি বিশ্ব নয়, ইউরোপীয় ইতিহাস গবেষকদের জন্য অমূল্য উৎস।
ইবনে বতুতা
বিশ্বের অন্যতম মহান পরিব্রাজক ইবনে বতুতা ১৩০৪ সালে মরক্কোর তাঞ্জিয়ার শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হজ পালনের জন্য ১৩২৫ সালে ভ্রমণ শুরু করেন। কিন্তু তাঁর এই যাত্রা হজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এরপর প্রায় ৩০ বছরে তিনি আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং চীন ভ্রমণ করেন। ইবনে বতুতার ভ্রমণকাহিনি ‘রিহলা’ একটি জীবনী নয়, এটি মধ্যযুগীয় মুসলিম বিশ্বের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার দলিল। তিনি তাঁর ভ্রমণকালে বিভিন্ন রাজা, শাসক এবং ধর্মীয় পণ্ডিতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁর ভ্রমণকাহিনি থেকে আমরা মুসলিম সভ্যতার বিস্তৃতি ও বৈচিত্র্যের কথা জানতে পারি।
ইবনে খালদুন
ইবনে খালদুন ছিলেন একজন দার্শনিক, ঐতিহাসিক ও পরিব্রাজক। ১৩৩২ সালে উত্তর আফ্রিকার তিউনিসিয়ায় জন্মগ্রহণ করা এই মহান মনীষী ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন। তাঁর রচিত ‘মুকাদ্দিমা’ গ্রন্থে তিনি মানবসভ্যতার বিবর্তন, সংস্কৃতি ও সমাজকাঠামোর বিশ্লেষণ করেছেন। ইবনে খালদুন বিশ্বাস করতেন, প্রতিটি সভ্যতার একটি নির্দিষ্ট জীবনচক্র রয়েছে। তিনি বিভিন্ন অঞ্চল ও সভ্যতা ভ্রমণ করে তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করেন। তাঁর এই গবেষণা আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে।
আসর শব্দের অর্থ সময়। পবিত্র কোরআনে আসর নামে একটি সুরা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আসর বা সময়ের শপথ করেছেন। মুসলিমরা দৈনন্দিন যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তার তৃতীয় ওয়াক্তকে আসর নামে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনে এটিকে সালাত আল-ওসতা বা মধ্যবর্তী নামাজ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগেজ্ঞানগর্ভ ও উপদেশে ভরা কোরআন জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি গাইড বই। মানুষ কোথায় কখন কী করবে, কেন করবে, কীভাবে করবে—তা বলে দেওয়া হয়েছে কোরআনে। কোরআন তথা আল্লাহপ্রদত্ত আসমানি কিতাবের হিদায়াতের বাইরে কোনো সঠিক জীবনদর্শন নেই, কোনো ধর্মদর্শন নেই, কোনো মুক্তির পথ নেই। মানবজাতির সূচনালগ্নেই কথাটি জানিয়ে দেওয়া
১ দিন আগেএকজন মুমিনের কাছে রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। মহানবী (সা.) এ পবিত্র মাসকে বেশ গুরুত্ব দিতেন। অন্যান্য কাজকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে অধিক পরিমাণে ইবাদতে মশগুল হতেন। সাহাবিদের অভ্যাসও ছিল একই রকম। গুরুত্ব বিবেচনায় রমজানের প্রস্তুতিও শুরু হতো বেশ আগে থেকেই। রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকেই মহানবী (সা.) অধীর আগ
১ দিন আগেহাজার বছরের মুসলিম ঐতিহ্যের স্মারক টুপি। ইসলামের সূচনাকাল থেকেই টুপি পরিধানের চল রয়েছে। ফিকহের দৃষ্টিকোণে টুপি পরা সুন্নত। মহানবী (সা.) সর্বদা টুপি পরতেন, হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তার প্রমাণ মেলে। সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী যুগের সব অনুসরণীয় মুসলিম টুপি পরেছেন। শালীনতা ও সৌন্দর্যের আবরণ টুপি মুসলমানদের
১ দিন আগে