ধর্ম ও জীবন ডেস্ক
৬১৬ খ্রিষ্টাব্দ। মহানবী (সা.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির ষষ্ঠ বছর। মক্কায় তিনি দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে হামজা (রা.), ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)–সহ মক্কার প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ফলে মহানবী (সা.) প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে মক্কার মুশরিকদের ক্রোধ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছিল। ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবিদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি মহানবী (সা.)-কে থামানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছিল। অর্থবিত্ত, পদমর্যাদা, সুন্দরী নারী—কিসের লোভ দেখানো হয়নি তাঁকে! তবে তিনি টলেননি। অন্যদিকে গোত্র বনি হাশেম ও বনি মুত্তালিবকেও মহানবী (সা.)-এর সাহায্য থেকে বিরত রাখতে পারছিল না মক্কার মুশরিকেরা। ফলে তারা এ দুই গোত্রসহ মুহাম্মদ (সা.)-কে বয়কট করার ফন্দি আঁটে। ইসলামের ইতিহাসে যা ‘শিআবে আবি তালিবের বয়কট’ নামে পরিচিত।
বয়কটের চুক্তিনামা
মক্কার মুশরিকেরা মুহাসসাব উপত্যকায় বনি কিনানার এক তাঁবুতে বৈঠক করে এবং সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় যে, বনি হাশিম ও বনি মুত্তালিবের সঙ্গে বেচাকেনা, সামাজিক কার্যকলাপ, সব ধরনের আর্থিক লেনদেন এমনকি কুশল বিনিময়ও বন্ধ রাখা হবে। কেউ তাদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না। ওঠাবসা, কথোপকথন, মেলামেশা, বাড়িতে যাতায়াত সবকিছুই বন্ধ রাখা হবে। হত্যার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে যতদিন তাদের হাতে সমর্পণ করা হবে না, ততদিন এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। বৈঠকে সবার কাছ থেকে অঙ্গীকার নেওয়া হয় যে, তারা কখনো বনু হাশিমের পক্ষ থেকে কোনো সন্ধিচুক্তির প্রস্তাব গ্রহণ করবে না এবং তাদের প্রতি কোনো প্রকার ভদ্রতা বা শিষ্টাচার দেখাবে না।
মহানবী (সা.)-এর চাচা আবু তালিব এ চুক্তির প্রস্তাব নাকচ করেন এবং জবাবে ঘোষণা করেন, ‘এ মসজিদের (কাবা শরিফ) মালিকের শপথ, আহমদকে আমরা কখনোই তাদের হাতে অর্পণ করব না। সকল ভয়াবহতা নিয়ে কালনাগিনী দংশন করলেও নয়।’
চুক্তিপত্রটি কাবা শরিফের দেয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আবু লাহাব ছাড়া বনি হাশিম ও বনি মুত্তালিবের কাফির-মুসলিম সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং কাবার পাশে শিআবে আবি তালিব নামের এক গিরিখাদে আশ্রয় নেয়। নবুয়তের সপ্তম বর্ষের মহররম মাসে এই চুক্তি কার্যকর হয়। ফলে মহানবী (সা.) নিজের গোত্রসহ এক কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েন। বিপদের পাহাড় নেমে আসে মহানবী (সা.)-এর অনুসারী ও হিতাকাঙ্ক্ষীদের ওপর। এই বয়কটের ডাকে মহানবী (সা.) বেশ কষ্ট পেয়েছিলেন। বয়কটের চুক্তিনামার লেখক বোগায়েজ ইবনে আমির ইবনে হাশিমকে তিনি বদদোয়াও দিয়েছিলেন। পরে তাঁর হাত অবশ হয়ে যায় বলেও ইতিহাস থেকে জানা যায়।
তিন বছরের অবরুদ্ধ সময়
বয়কটের কারণে বনি হাশিম ও বনি মুত্তালিবের লোকজনের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গিন হয়ে পড়ে। খাবার, নিত্যপণ্য এমনকি পানি সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়। মক্কার বাইরে থেকে যেসব পণ্যসামগ্রী আসত, তা মুশরিকেরা দ্রুতই কিনে নিত। ফলে অবরুদ্ধদের অবস্থা ক্রমেই করুণ হতে শুরু করে। খাদ্যাভাবে তাঁরা গাছের পাতা, ছাল-বাকল ও শুকনো চামড়া খেতে বাধ্য হন। সাহাবিদের বর্ণনায় এসেছে, ‘এ সময় আমরা গাছের পাতা সিদ্ধ করে ক্ষুধার জ্বালা নিবারণ করতাম। পানির অভাবে এবং গাছের পাতা খাওয়ার কারণে আমাদের পায়খানা ছাগলের পায়খানার মতো হয়ে গিয়েছিল।’
ক্ষুধার তাড়নায় অস্থির শিশু ও নারীদের আর্তচিৎকার শিআবে আবি তালিবের বাইরে থেকেও শোনা যেত। তবে মক্কাবাসীর পাথর হৃদয় একটুও বিচলিত হতো না। বিভিন্ন রোগও ছড়িয়ে পড়েছিল। বেশির ভাগ মানুষই মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেলেও তাঁরা ধৈর্য ও অবিচলতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেন। তাঁদের মধ্যে একজনও আত্মসমর্পণ করেননি। এভাবেই দীর্ঘ তিন বছর চলে যায়।
এ সময় মহানবী (সা.)-এর হিতাকাঙ্ক্ষী সচ্ছল ও সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা নিজেদের সব সম্পদ ব্যয় করে ফেলেন। খাদিজা (রা.) তাঁর সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয় করেন। অতি গোপনে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আসত, তা সবাই মিলে খেতেন। রজব, জিলকদ, জিলহজ ও মহররম মাস ছাড়া অন্য সময়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তাঁরা গিরির বাইরে যেতে পারতেন না। খাদিজা (রা.)-এর ভাতিজা হাকিম ইবনে হিজাম কখনো কখনো তাঁর ফুফুর জন্য গম পাঠিয়ে দিতেন।
চাচা আবু তালিব রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিরাপত্তা নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলেন। নিরাপত্তার জন্য প্রতি রাতেই মহানবী (সা.)-এর শয্যা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে রাখা হতো। মহানবী (সা.)-এর বিছানায় থাকত অন্য কেউ। তবে বয়কট-অবরোধ সত্ত্বেও হজের সময় মহানবী (সা.)–সহ অন্য মুসলমানেরা বাইরে আসতেন এবং হজে আসা লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। এ সময় মহানবী (সা.)-এর চাচা আবু লাহাব ও আবু জাহেল মুসলমানদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালায়।
চুক্তিনামা যেভাবে নষ্ট হয়
নবুয়তের দশম বছর মহররম মাসে মহানবী (সা.)-এর জীবনের এই সংকটময় সময়ের অবসান ঘটে। হিশাম ইবনে আমর নামের এক ব্যক্তি শিআবে আবি তালিবে গোপনে খাদ্য পাঠাতেন। তিনিই বয়কট অবসানের উদ্যোগ নেন। কুরাইশের গণ্যমান্য ব্যক্তি যুহাইর, জামআ ইবনে আসওয়াদ, মুতইম ইবনে আদির সঙ্গে মিলে হিশাম কাবার দেয়ালে ঝুলানো চুক্তিনামা ছিঁড়ে ফেলে অবরোধ অবসানের পরিকল্পনা করেন।
পরদিন কাবাপ্রাঙ্গণে এসে যুহাইর অবরুদ্ধদের নির্যাতিত হওয়ার কথা তুলে ধরেন এবং অবরোধের অবসান ঘটনোর আহ্বান জানান। তাঁর সঙ্গে অনেকেই যোগ দেয়। আবু জাহেল বিরোধিতা করে। তখন মহানবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে সংবাদ নিয়ে চাচা আবু তালিবও কাবাচত্বরে উপস্থিত হন। ওহির মাধ্যমে মহানবী (সা.) জানতে পারেন যে, চুক্তিনামাটি আল্লাহর আদেশে পোকায় খেয়ে ফেলেছে এবং শুধু আল্লাহর নামের অংশ অবশিষ্ট আছে। আবু তালিব বলেন, ‘যদি তাঁর কথা মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে তাঁর ও আপনাদের মধ্য থেকে আমি সরে দাঁড়াব। তখন আপনাদের যা ইচ্ছে করবেন। কিন্তু যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে বয়কট তুলে নিতে হবে।’ এ কথায় কুরাইশেরা বললেন, ‘আপনি ইনসাফের কথাই বলছেন।’
পরে চুক্তিপত্র নামিয়ে দেখা গেল, সত্যি সত্যিই এক প্রকার কীট চুক্তিনামার লেখা সম্পূর্ণ নষ্ট করে দিয়েছে। শুধু ‘বিসমিকা আল্লাহুম্মা’ কথাটি অবশিষ্ট রয়েছে এবং যেখানে যেখানে আল্লাহর নাম লেখা ছিল শুধু সেই লেখাই বাকি রয়েছে। কীট সেগুলো খায়নি। ফলে চুক্তিনামাটি ছিঁড়ে বয়কটের অবসানের ঘোষণা দেওয়া হয়।
মহানবী (সা.)-এর এই মোজেজা দেখে প্রতিবারের মতো এবারও মুশরিকেরা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং হেদায়ত থেকে বঞ্চিত হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা তাদের বৈশিষ্ট্য বয়ান করে বলেন, ‘কিন্তু তারা যখন কোনো নিদর্শন দেখে, তখন মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এ তো সেই আগে থেকে চলে আসা জাদু।’ (সুরা কামার: ২)
সূত্র
১. বুখারি: ১ / ৫৫৮।
২. জাদুল মাআদ: ২ / ৪৬।
৩. ইবনে হিশাম: ১ / ৩৫০-৩৫১ ও ৩৭৪-৩৭৭।
৪. রাহমাতুল্লিল আলামীন: ১ / ৬৯-৭০।
৫. মুখতাসারুস সিরাহ: ১০৬-১১০।
৬১৬ খ্রিষ্টাব্দ। মহানবী (সা.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির ষষ্ঠ বছর। মক্কায় তিনি দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে হামজা (রা.), ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)–সহ মক্কার প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ফলে মহানবী (সা.) প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে মক্কার মুশরিকদের ক্রোধ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছিল। ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবিদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি মহানবী (সা.)-কে থামানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছিল। অর্থবিত্ত, পদমর্যাদা, সুন্দরী নারী—কিসের লোভ দেখানো হয়নি তাঁকে! তবে তিনি টলেননি। অন্যদিকে গোত্র বনি হাশেম ও বনি মুত্তালিবকেও মহানবী (সা.)-এর সাহায্য থেকে বিরত রাখতে পারছিল না মক্কার মুশরিকেরা। ফলে তারা এ দুই গোত্রসহ মুহাম্মদ (সা.)-কে বয়কট করার ফন্দি আঁটে। ইসলামের ইতিহাসে যা ‘শিআবে আবি তালিবের বয়কট’ নামে পরিচিত।
বয়কটের চুক্তিনামা
মক্কার মুশরিকেরা মুহাসসাব উপত্যকায় বনি কিনানার এক তাঁবুতে বৈঠক করে এবং সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় যে, বনি হাশিম ও বনি মুত্তালিবের সঙ্গে বেচাকেনা, সামাজিক কার্যকলাপ, সব ধরনের আর্থিক লেনদেন এমনকি কুশল বিনিময়ও বন্ধ রাখা হবে। কেউ তাদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না। ওঠাবসা, কথোপকথন, মেলামেশা, বাড়িতে যাতায়াত সবকিছুই বন্ধ রাখা হবে। হত্যার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে যতদিন তাদের হাতে সমর্পণ করা হবে না, ততদিন এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। বৈঠকে সবার কাছ থেকে অঙ্গীকার নেওয়া হয় যে, তারা কখনো বনু হাশিমের পক্ষ থেকে কোনো সন্ধিচুক্তির প্রস্তাব গ্রহণ করবে না এবং তাদের প্রতি কোনো প্রকার ভদ্রতা বা শিষ্টাচার দেখাবে না।
মহানবী (সা.)-এর চাচা আবু তালিব এ চুক্তির প্রস্তাব নাকচ করেন এবং জবাবে ঘোষণা করেন, ‘এ মসজিদের (কাবা শরিফ) মালিকের শপথ, আহমদকে আমরা কখনোই তাদের হাতে অর্পণ করব না। সকল ভয়াবহতা নিয়ে কালনাগিনী দংশন করলেও নয়।’
চুক্তিপত্রটি কাবা শরিফের দেয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আবু লাহাব ছাড়া বনি হাশিম ও বনি মুত্তালিবের কাফির-মুসলিম সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং কাবার পাশে শিআবে আবি তালিব নামের এক গিরিখাদে আশ্রয় নেয়। নবুয়তের সপ্তম বর্ষের মহররম মাসে এই চুক্তি কার্যকর হয়। ফলে মহানবী (সা.) নিজের গোত্রসহ এক কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েন। বিপদের পাহাড় নেমে আসে মহানবী (সা.)-এর অনুসারী ও হিতাকাঙ্ক্ষীদের ওপর। এই বয়কটের ডাকে মহানবী (সা.) বেশ কষ্ট পেয়েছিলেন। বয়কটের চুক্তিনামার লেখক বোগায়েজ ইবনে আমির ইবনে হাশিমকে তিনি বদদোয়াও দিয়েছিলেন। পরে তাঁর হাত অবশ হয়ে যায় বলেও ইতিহাস থেকে জানা যায়।
তিন বছরের অবরুদ্ধ সময়
বয়কটের কারণে বনি হাশিম ও বনি মুত্তালিবের লোকজনের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গিন হয়ে পড়ে। খাবার, নিত্যপণ্য এমনকি পানি সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়। মক্কার বাইরে থেকে যেসব পণ্যসামগ্রী আসত, তা মুশরিকেরা দ্রুতই কিনে নিত। ফলে অবরুদ্ধদের অবস্থা ক্রমেই করুণ হতে শুরু করে। খাদ্যাভাবে তাঁরা গাছের পাতা, ছাল-বাকল ও শুকনো চামড়া খেতে বাধ্য হন। সাহাবিদের বর্ণনায় এসেছে, ‘এ সময় আমরা গাছের পাতা সিদ্ধ করে ক্ষুধার জ্বালা নিবারণ করতাম। পানির অভাবে এবং গাছের পাতা খাওয়ার কারণে আমাদের পায়খানা ছাগলের পায়খানার মতো হয়ে গিয়েছিল।’
ক্ষুধার তাড়নায় অস্থির শিশু ও নারীদের আর্তচিৎকার শিআবে আবি তালিবের বাইরে থেকেও শোনা যেত। তবে মক্কাবাসীর পাথর হৃদয় একটুও বিচলিত হতো না। বিভিন্ন রোগও ছড়িয়ে পড়েছিল। বেশির ভাগ মানুষই মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেলেও তাঁরা ধৈর্য ও অবিচলতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেন। তাঁদের মধ্যে একজনও আত্মসমর্পণ করেননি। এভাবেই দীর্ঘ তিন বছর চলে যায়।
এ সময় মহানবী (সা.)-এর হিতাকাঙ্ক্ষী সচ্ছল ও সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা নিজেদের সব সম্পদ ব্যয় করে ফেলেন। খাদিজা (রা.) তাঁর সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয় করেন। অতি গোপনে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আসত, তা সবাই মিলে খেতেন। রজব, জিলকদ, জিলহজ ও মহররম মাস ছাড়া অন্য সময়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তাঁরা গিরির বাইরে যেতে পারতেন না। খাদিজা (রা.)-এর ভাতিজা হাকিম ইবনে হিজাম কখনো কখনো তাঁর ফুফুর জন্য গম পাঠিয়ে দিতেন।
চাচা আবু তালিব রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিরাপত্তা নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলেন। নিরাপত্তার জন্য প্রতি রাতেই মহানবী (সা.)-এর শয্যা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে রাখা হতো। মহানবী (সা.)-এর বিছানায় থাকত অন্য কেউ। তবে বয়কট-অবরোধ সত্ত্বেও হজের সময় মহানবী (সা.)–সহ অন্য মুসলমানেরা বাইরে আসতেন এবং হজে আসা লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। এ সময় মহানবী (সা.)-এর চাচা আবু লাহাব ও আবু জাহেল মুসলমানদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালায়।
চুক্তিনামা যেভাবে নষ্ট হয়
নবুয়তের দশম বছর মহররম মাসে মহানবী (সা.)-এর জীবনের এই সংকটময় সময়ের অবসান ঘটে। হিশাম ইবনে আমর নামের এক ব্যক্তি শিআবে আবি তালিবে গোপনে খাদ্য পাঠাতেন। তিনিই বয়কট অবসানের উদ্যোগ নেন। কুরাইশের গণ্যমান্য ব্যক্তি যুহাইর, জামআ ইবনে আসওয়াদ, মুতইম ইবনে আদির সঙ্গে মিলে হিশাম কাবার দেয়ালে ঝুলানো চুক্তিনামা ছিঁড়ে ফেলে অবরোধ অবসানের পরিকল্পনা করেন।
পরদিন কাবাপ্রাঙ্গণে এসে যুহাইর অবরুদ্ধদের নির্যাতিত হওয়ার কথা তুলে ধরেন এবং অবরোধের অবসান ঘটনোর আহ্বান জানান। তাঁর সঙ্গে অনেকেই যোগ দেয়। আবু জাহেল বিরোধিতা করে। তখন মহানবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে সংবাদ নিয়ে চাচা আবু তালিবও কাবাচত্বরে উপস্থিত হন। ওহির মাধ্যমে মহানবী (সা.) জানতে পারেন যে, চুক্তিনামাটি আল্লাহর আদেশে পোকায় খেয়ে ফেলেছে এবং শুধু আল্লাহর নামের অংশ অবশিষ্ট আছে। আবু তালিব বলেন, ‘যদি তাঁর কথা মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে তাঁর ও আপনাদের মধ্য থেকে আমি সরে দাঁড়াব। তখন আপনাদের যা ইচ্ছে করবেন। কিন্তু যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে বয়কট তুলে নিতে হবে।’ এ কথায় কুরাইশেরা বললেন, ‘আপনি ইনসাফের কথাই বলছেন।’
পরে চুক্তিপত্র নামিয়ে দেখা গেল, সত্যি সত্যিই এক প্রকার কীট চুক্তিনামার লেখা সম্পূর্ণ নষ্ট করে দিয়েছে। শুধু ‘বিসমিকা আল্লাহুম্মা’ কথাটি অবশিষ্ট রয়েছে এবং যেখানে যেখানে আল্লাহর নাম লেখা ছিল শুধু সেই লেখাই বাকি রয়েছে। কীট সেগুলো খায়নি। ফলে চুক্তিনামাটি ছিঁড়ে বয়কটের অবসানের ঘোষণা দেওয়া হয়।
মহানবী (সা.)-এর এই মোজেজা দেখে প্রতিবারের মতো এবারও মুশরিকেরা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং হেদায়ত থেকে বঞ্চিত হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা তাদের বৈশিষ্ট্য বয়ান করে বলেন, ‘কিন্তু তারা যখন কোনো নিদর্শন দেখে, তখন মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এ তো সেই আগে থেকে চলে আসা জাদু।’ (সুরা কামার: ২)
সূত্র
১. বুখারি: ১ / ৫৫৮।
২. জাদুল মাআদ: ২ / ৪৬।
৩. ইবনে হিশাম: ১ / ৩৫০-৩৫১ ও ৩৭৪-৩৭৭।
৪. রাহমাতুল্লিল আলামীন: ১ / ৬৯-৭০।
৫. মুখতাসারুস সিরাহ: ১০৬-১১০।
আসর শব্দের অর্থ সময়। পবিত্র কোরআনে আসর নামে একটি সুরা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আসর বা সময়ের শপথ করেছেন। মুসলিমরা দৈনন্দিন যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তার তৃতীয় ওয়াক্তকে আসর নামে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনে এটিকে সালাত আল-ওসতা বা মধ্যবর্তী নামাজ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।
১ দিন আগেজ্ঞানগর্ভ ও উপদেশে ভরা কোরআন জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি গাইড বই। মানুষ কোথায় কখন কী করবে, কেন করবে, কীভাবে করবে—তা বলে দেওয়া হয়েছে কোরআনে। কোরআন তথা আল্লাহপ্রদত্ত আসমানি কিতাবের হিদায়াতের বাইরে কোনো সঠিক জীবনদর্শন নেই, কোনো ধর্মদর্শন নেই, কোনো মুক্তির পথ নেই। মানবজাতির সূচনালগ্নেই কথাটি জানিয়ে দেওয়া
২ দিন আগেএকজন মুমিনের কাছে রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। মহানবী (সা.) এ পবিত্র মাসকে বেশ গুরুত্ব দিতেন। অন্যান্য কাজকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে অধিক পরিমাণে ইবাদতে মশগুল হতেন। সাহাবিদের অভ্যাসও ছিল একই রকম। গুরুত্ব বিবেচনায় রমজানের প্রস্তুতিও শুরু হতো বেশ আগে থেকেই। রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকেই মহানবী (সা.) অধীর আগ
২ দিন আগেহাজার বছরের মুসলিম ঐতিহ্যের স্মারক টুপি। ইসলামের সূচনাকাল থেকেই টুপি পরিধানের চল রয়েছে। ফিকহের দৃষ্টিকোণে টুপি পরা সুন্নত। মহানবী (সা.) সর্বদা টুপি পরতেন, হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তার প্রমাণ মেলে। সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী যুগের সব অনুসরণীয় মুসলিম টুপি পরেছেন। শালীনতা ও সৌন্দর্যের আবরণ টুপি মুসলমানদের
২ দিন আগে