ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
ব্যক্তি দিয়ে সমাজ হয় আর সমাজ দিয়ে রাষ্ট্র হয়। সে জন্য ব্যক্তির সংশোধন দরকার সবার আগে। নিজে ভালো না হলে সমাজ বা দেশ কোনোটিই ভালো হবে না। আল্লাহর ভয়, পরকালে জবাবদিহির বিশ্বাস এবং বিবেকের বোধ জাগ্রত না হলে শুধু আইন-আদালত দিয়ে অপরাধপ্রবণতা শতভাগ দমন করা সম্ভব নয়। মনের ভেতরের দুষ্ট চিন্তা এড়িয়ে চলতে পারে কেবলই পরকালে বিশ্বাসী খোদাভীরু মানুষ, যার বিবেক জাগ্রত এবং পরিশীলিত। ইসলাম প্রথমে ব্যক্তি সংশোধনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কাজীবনের ১৩টি বছর দাওয়াতের মাধ্যমে ব্যক্তি গঠনের কাজ করেছেন।
আগে নিজে ভালো হওয়া
সবাই খারাপ করছে বলে আপনাকেও খারাপ করতে হবে এমন যুক্তি অর্থহীন। সবার খারাপ করার কারণে খারাপ বৈধ হয়ে যায় না। নিজ থেকেই ভালো করতে হবে। সমাজ বা সবার বিপরীতে হলেও মন্দ পরিহার করতে হবে। অন্যরা ঘুষ খাচ্ছে, অন্তত নিজে ঘুষ থেকে বাঁচতে হবে। সবাই মিথ্যা বলছে, নিজে সত্য বলার চেষ্টা করতে হবে। অন্যরা হারাম খাচ্ছে, নিজে হারাম পরিহার করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের চিন্তা করো। তোমরা যখন সৎ পথে রয়েছ, তখন কেউ পথভ্রান্ত হলে তাতে তোমাদের ক্ষতি নেই। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তোমাদের বলে দেবেন—যা কিছু তোমরা করতে।’ (সুরা মায়েদা: ১০৫) আয়াতের মর্ম হলো—অন্যের খারাপ কাজ তোমার খারাপ কাজের প্রমাণ নয়। বরং তোমাদের কাজ হলো নিজে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং নিজের যাবতীয় সামর্থ্য নিজেকে সংশোধনের জন্য ব্যয় করা।
নিজের সংশোধন
যত দ্রুত পারা যায়, খারাপি থেকে বেঁচে থাকতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব না হলে যথাসাধ্য চেষ্টা ও সাধনা শুরু করতে হবে। অন্যের দোষত্রুটি নিয়ে মেতে থাকা কোনো ভালো কাজ নয়। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যখন তুমি দেখবে মানুষ প্রবৃত্তির পাগলা ঘোড়ার পেছনে দৌড়াচ্ছে, দুনিয়াকে সবকিছুতে প্রাধান্য দিচ্ছে, প্রত্যেকেই নিজ নিজ মতে বিভোর, তখন তুমি বিশেষভাবে নিজের সংশোধনের কথা ভাবো। সাধারণ লোকের ভাবনা ছেড়ে দাও।’ (তিরমিজি: ২৯৮৪; আবু দাউদ: ৩৭৭৮; ইবনে মাজাহ: ৪০০৪)
নিজের ভুল স্বীকার করা
ভুল হয়ে গেলে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার চমৎকার উদাহরণ রেখে গেছেন রাসুলের প্রিয় সাহাবি আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.)। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.)-এর মধ্যে বিতর্ক হয়। আবু বকর (রা.)-এর কোনো কথায় ওমর (রা.) রাগান্বিত হন। এবং রাগান্বিত অবস্থায় ওমর (রা.) সেখান থেকে চলে যান। আবু বকর (রা.) তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে করতে তাঁর পিছু নেন, কিন্তু ওমর (রা.) ক্ষমা না করে তাঁর সম্মুখের দরজা বন্ধ করে দেন। এরপর আবু বকর (রা.) রাসুল (সা.)-এর দরবারে আসেন। আবু দারদা (রা.) বলেন, আমরা তখন রাসুল (সা.)-এর কাছে ছিলাম। ঘটনা শোনার পর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের এই সঙ্গী আবু বকর আগে কল্যাণ লাভ করেছে।’ তিনি বলেন, এতে ওমর (রা) লজ্জিত হন এবং সালাম করে নবী (সা.)-এর পাশে বসে পড়েন। সব কথা রাসুল (সা.)-এর কাছে বর্ণনা করেন। আবু দারদা (রা.) বলেন, এতে রাসুল (সা.) অসন্তুষ্ট হন। আর আবু বকর (রা.) বারবার বলছিলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি বেশি দোষী ছিলাম।’ পুনরায় রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার খাতিরে আমার সাথির ত্রুটি উপেক্ষা করবে কি? তোমরা আমার খাতিরে আমার সাথির ত্রুটি উপেক্ষা করবে কি? একদিন ছিল, যখন আমি বলেছিলাম, হে লোক সকল, আমি তোমাদের সকলের জন্য রাসুল, তখন তোমরা বলেছিলে, তুমি মিথ্যা বলেছ আর আবু বকর (রা.) বলেছিল, আপনি সত্য বলেছেন।’ (বুখারি: ৪৬৪০)
অন্যের সমালোচনা না করা
অন্যের সমালোচনায় ব্যস্ত না থেকে নিজের দোষত্রুটি আগে সংশোধন করা দরকার। প্রতিমুহূর্তে যে অন্যের ত্রুটিবিচ্যুতি খুঁজে বেড়ায়, নিজের ত্রুটির কোনো পরোয়া করে না, সে ব্যক্তিই বেশি ধ্বংসশীল। নিজে ঠিক হয়ে অন্যকে বললে সেটি অধিক কার্যকর হয়। তা ছাড়া নিয়ম হলো, এক বাতি থেকে আরেক বাতি প্রজ্বলিত হয়। একজনকে দেখে আরেকজন সংশোধন হয়। নিজে আমল না করে বক্তব্য দিলে তা শ্রোতার মনে প্রভাব ফেলে না এবং ফলপ্রসূও হয় না। তা ছাড়া কথা ও কাজে অমিল হওয়া কপটতার লক্ষণ এবং আল্লাহর কাছে খুবই অপছন্দনীয় কাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা যা করো না, তা তোমরা কেন বলো? তোমরা যা করো না, তোমাদের তা বলা আল্লাহর দৃষ্টিতে অতিশয় অসন্তোষজনক।’ (সুরা সফ: ২-৩)
পরিশেষে বলা যায়, নিজের দিকে তাকালে দেখা যাবে, এখনই সংশোধন হওয়ার মতো অনেক ত্রুটি নিজের মধ্যেই রয়ে গেছে। নিজে সংশোধনের চেষ্টা চালালে কেউ তাতে বাধা দেবে না। সবার মধ্যে এই অনুভূতি জন্মালেই সংশোধনের পথে এগিয়ে যাবে দেশ, জাতি সমাজ।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ব্যক্তি দিয়ে সমাজ হয় আর সমাজ দিয়ে রাষ্ট্র হয়। সে জন্য ব্যক্তির সংশোধন দরকার সবার আগে। নিজে ভালো না হলে সমাজ বা দেশ কোনোটিই ভালো হবে না। আল্লাহর ভয়, পরকালে জবাবদিহির বিশ্বাস এবং বিবেকের বোধ জাগ্রত না হলে শুধু আইন-আদালত দিয়ে অপরাধপ্রবণতা শতভাগ দমন করা সম্ভব নয়। মনের ভেতরের দুষ্ট চিন্তা এড়িয়ে চলতে পারে কেবলই পরকালে বিশ্বাসী খোদাভীরু মানুষ, যার বিবেক জাগ্রত এবং পরিশীলিত। ইসলাম প্রথমে ব্যক্তি সংশোধনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কাজীবনের ১৩টি বছর দাওয়াতের মাধ্যমে ব্যক্তি গঠনের কাজ করেছেন।
আগে নিজে ভালো হওয়া
সবাই খারাপ করছে বলে আপনাকেও খারাপ করতে হবে এমন যুক্তি অর্থহীন। সবার খারাপ করার কারণে খারাপ বৈধ হয়ে যায় না। নিজ থেকেই ভালো করতে হবে। সমাজ বা সবার বিপরীতে হলেও মন্দ পরিহার করতে হবে। অন্যরা ঘুষ খাচ্ছে, অন্তত নিজে ঘুষ থেকে বাঁচতে হবে। সবাই মিথ্যা বলছে, নিজে সত্য বলার চেষ্টা করতে হবে। অন্যরা হারাম খাচ্ছে, নিজে হারাম পরিহার করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের চিন্তা করো। তোমরা যখন সৎ পথে রয়েছ, তখন কেউ পথভ্রান্ত হলে তাতে তোমাদের ক্ষতি নেই। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তোমাদের বলে দেবেন—যা কিছু তোমরা করতে।’ (সুরা মায়েদা: ১০৫) আয়াতের মর্ম হলো—অন্যের খারাপ কাজ তোমার খারাপ কাজের প্রমাণ নয়। বরং তোমাদের কাজ হলো নিজে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং নিজের যাবতীয় সামর্থ্য নিজেকে সংশোধনের জন্য ব্যয় করা।
নিজের সংশোধন
যত দ্রুত পারা যায়, খারাপি থেকে বেঁচে থাকতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব না হলে যথাসাধ্য চেষ্টা ও সাধনা শুরু করতে হবে। অন্যের দোষত্রুটি নিয়ে মেতে থাকা কোনো ভালো কাজ নয়। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যখন তুমি দেখবে মানুষ প্রবৃত্তির পাগলা ঘোড়ার পেছনে দৌড়াচ্ছে, দুনিয়াকে সবকিছুতে প্রাধান্য দিচ্ছে, প্রত্যেকেই নিজ নিজ মতে বিভোর, তখন তুমি বিশেষভাবে নিজের সংশোধনের কথা ভাবো। সাধারণ লোকের ভাবনা ছেড়ে দাও।’ (তিরমিজি: ২৯৮৪; আবু দাউদ: ৩৭৭৮; ইবনে মাজাহ: ৪০০৪)
নিজের ভুল স্বীকার করা
ভুল হয়ে গেলে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার চমৎকার উদাহরণ রেখে গেছেন রাসুলের প্রিয় সাহাবি আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.)। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.)-এর মধ্যে বিতর্ক হয়। আবু বকর (রা.)-এর কোনো কথায় ওমর (রা.) রাগান্বিত হন। এবং রাগান্বিত অবস্থায় ওমর (রা.) সেখান থেকে চলে যান। আবু বকর (রা.) তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে করতে তাঁর পিছু নেন, কিন্তু ওমর (রা.) ক্ষমা না করে তাঁর সম্মুখের দরজা বন্ধ করে দেন। এরপর আবু বকর (রা.) রাসুল (সা.)-এর দরবারে আসেন। আবু দারদা (রা.) বলেন, আমরা তখন রাসুল (সা.)-এর কাছে ছিলাম। ঘটনা শোনার পর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের এই সঙ্গী আবু বকর আগে কল্যাণ লাভ করেছে।’ তিনি বলেন, এতে ওমর (রা) লজ্জিত হন এবং সালাম করে নবী (সা.)-এর পাশে বসে পড়েন। সব কথা রাসুল (সা.)-এর কাছে বর্ণনা করেন। আবু দারদা (রা.) বলেন, এতে রাসুল (সা.) অসন্তুষ্ট হন। আর আবু বকর (রা.) বারবার বলছিলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি বেশি দোষী ছিলাম।’ পুনরায় রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার খাতিরে আমার সাথির ত্রুটি উপেক্ষা করবে কি? তোমরা আমার খাতিরে আমার সাথির ত্রুটি উপেক্ষা করবে কি? একদিন ছিল, যখন আমি বলেছিলাম, হে লোক সকল, আমি তোমাদের সকলের জন্য রাসুল, তখন তোমরা বলেছিলে, তুমি মিথ্যা বলেছ আর আবু বকর (রা.) বলেছিল, আপনি সত্য বলেছেন।’ (বুখারি: ৪৬৪০)
অন্যের সমালোচনা না করা
অন্যের সমালোচনায় ব্যস্ত না থেকে নিজের দোষত্রুটি আগে সংশোধন করা দরকার। প্রতিমুহূর্তে যে অন্যের ত্রুটিবিচ্যুতি খুঁজে বেড়ায়, নিজের ত্রুটির কোনো পরোয়া করে না, সে ব্যক্তিই বেশি ধ্বংসশীল। নিজে ঠিক হয়ে অন্যকে বললে সেটি অধিক কার্যকর হয়। তা ছাড়া নিয়ম হলো, এক বাতি থেকে আরেক বাতি প্রজ্বলিত হয়। একজনকে দেখে আরেকজন সংশোধন হয়। নিজে আমল না করে বক্তব্য দিলে তা শ্রোতার মনে প্রভাব ফেলে না এবং ফলপ্রসূও হয় না। তা ছাড়া কথা ও কাজে অমিল হওয়া কপটতার লক্ষণ এবং আল্লাহর কাছে খুবই অপছন্দনীয় কাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা যা করো না, তা তোমরা কেন বলো? তোমরা যা করো না, তোমাদের তা বলা আল্লাহর দৃষ্টিতে অতিশয় অসন্তোষজনক।’ (সুরা সফ: ২-৩)
পরিশেষে বলা যায়, নিজের দিকে তাকালে দেখা যাবে, এখনই সংশোধন হওয়ার মতো অনেক ত্রুটি নিজের মধ্যেই রয়ে গেছে। নিজে সংশোধনের চেষ্টা চালালে কেউ তাতে বাধা দেবে না। সবার মধ্যে এই অনুভূতি জন্মালেই সংশোধনের পথে এগিয়ে যাবে দেশ, জাতি সমাজ।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আসর শব্দের অর্থ সময়। পবিত্র কোরআনে আসর নামে একটি সুরা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আসর বা সময়ের শপথ করেছেন। মুসলিমরা দৈনন্দিন যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তার তৃতীয় ওয়াক্তকে আসর নামে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনে এটিকে সালাত আল-ওসতা বা মধ্যবর্তী নামাজ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।
১৬ ঘণ্টা আগেজ্ঞানগর্ভ ও উপদেশে ভরা কোরআন জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি গাইড বই। মানুষ কোথায় কখন কী করবে, কেন করবে, কীভাবে করবে—তা বলে দেওয়া হয়েছে কোরআনে। কোরআন তথা আল্লাহপ্রদত্ত আসমানি কিতাবের হিদায়াতের বাইরে কোনো সঠিক জীবনদর্শন নেই, কোনো ধর্মদর্শন নেই, কোনো মুক্তির পথ নেই। মানবজাতির সূচনালগ্নেই কথাটি জানিয়ে দেওয়া
২ দিন আগেএকজন মুমিনের কাছে রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। মহানবী (সা.) এ পবিত্র মাসকে বেশ গুরুত্ব দিতেন। অন্যান্য কাজকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে অধিক পরিমাণে ইবাদতে মশগুল হতেন। সাহাবিদের অভ্যাসও ছিল একই রকম। গুরুত্ব বিবেচনায় রমজানের প্রস্তুতিও শুরু হতো বেশ আগে থেকেই। রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকেই মহানবী (সা.) অধীর আগ
২ দিন আগেহাজার বছরের মুসলিম ঐতিহ্যের স্মারক টুপি। ইসলামের সূচনাকাল থেকেই টুপি পরিধানের চল রয়েছে। ফিকহের দৃষ্টিকোণে টুপি পরা সুন্নত। মহানবী (সা.) সর্বদা টুপি পরতেন, হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তার প্রমাণ মেলে। সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী যুগের সব অনুসরণীয় মুসলিম টুপি পরেছেন। শালীনতা ও সৌন্দর্যের আবরণ টুপি মুসলমানদের
২ দিন আগে