যেভাবে তৈরি হয় কাবার গিলাফ, কী লেখা থাকে তাতে

ইসলাম ডেস্ক
Thumbnail image

সৌদি আরবে নতুন হিজরি বর্ষ ১৪৪৫ শুরু হতে যাচ্ছে মঙ্গলবার বা বুধবার। নতুন বছরের চাঁদ দেখা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন করা হবে পবিত্র কাবাঘরের কিসওয়া বা গিলাফ। এটি একটি ঐতিহাসিক পরম্পরা। এই কাজটি আগে হজের দিন করার রীতি থাকলেও গত বছর থেকে ১ মহররম হিজরি নববর্ষের প্রথম প্রহরে করা হচ্ছে। 

‘দ্য কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর ম্যানুফ্যাকচারিং দ্য কাবা কিসওয়া’ ও দুই পবিত্র মসজিদের প্রেসিডেন্সি বিভাগ যৌথ বিবৃতিতে জানায়, এরই মধ্যে গিলাফ পরিবর্তনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। 

কাবা কিসওয়া কিং আব্দুল আজিজ কমপ্লেক্স। ছবি: সংগৃহীত‘দ্য কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর ম্যানুফ্যাকচারিং দ্য কাবা কিসওয়া’ মূলত কাবার গিলাফ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ১ লাখ বর্গমিটারের এই কমপ্লেক্স এক সময় ‘কিসওয়া ফ্যাক্টরি’ নামে পরিচিত ছিল। ২০১৭ সালে রাজকীয় ডিক্রির মাধ্যমে নামটি পরিবর্তন করা হয় এবং কমপ্লেক্সের প্রযুক্তিগত ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়।

দ্য কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর ম্যানুফ্যাকচারিং দ্য কাবা কিসওয়া-এর আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমজাদ ইবনে আয়িদ আল-হাজমি বলেন, ‘সব কাজ শেষ। যথাযোগ্য মর্যাদায় এই পবিত্র দায়িত্ব পালন করা হবে। জাতীয় পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের একটি দল হাতে এটি সেলাই করে টাঙিয়ে দেবেন।’ 

কাবা শরিফের গিলাফ পরিবর্তন করার প্রক্রিয়া। ছবি: সৌদি গ্যাজেটএই কাজের জন্য ১৫ জন ব্যক্তিকে বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। মসজিদুল হারামের কিসওয়া রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের পরিচালক ফাহদ আল-জাবিরি বলেন, ‘তাঁদের নিখুঁত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁরা দারুণ নৈপুণ্যে তা সম্পাদন করতে পারেন। তাঁরা খুবই কম সময়ে কাজটি সম্পন্ন করবেন।’ 

যেভাবে তৈরি হয় কাবার গিলাফ
কাবার গিলাফ তৈরির জটিল প্রক্রিয়াটি দশটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথমে রেশম ও সুতার পিণ্ডি সংগ্রহ করে ল্যাবে সেগুলোর গুণগত মান পরীক্ষা করা হয়। এরপর সুতায় রং লাগানো হয় এবং স্বয়ংক্রিয় মেশিনে কাপড় বোনা হয়। এরপর কাপড় পুরো বছর টিকে থাকার উপযোগী হলো কি না, তা দেখা হয়। 

গিলাফের গায়ে অ্যাম্ব্রয়ডারির কাজ। ছবি: খালিজ টাইমস৬৫৮ বর্গমিটারের গিলাফটি তৈরিতে ৬৭০ কিলোগ্রাম কালো রেশম ব্যবহার করা হয়। ৪৭টি কাপড়ের টুকরোকে বিশেষ মেশিনে সেলাই করা হয়। এরপর কালো গিলাফের গায়ে মেশিনের ছাপ দিয়ে লেখা হয় আল্লাহর নাম ও গুণাবলি—‘ইয়া আল্লাহ, ইয়া মান্নান, ইয়া দাইয়ান, সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।’ 

এরপর গিলাফটি চলে যায় গিল্ডিং অ্যান্ড এমব্রয়ডারি বিভাগে। সেখানে ক্যালিগ্রাফার ও হস্তশিল্পীদের হাতে পরম যত্নে চারপাশের সোনালি বেল্ট এবং কাবার দরজার পর্দা তৈরি হয়। ২৩ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৫০ জনের বেশি দক্ষ শিল্পী তাতে কোরআনের আয়াত ও অন্যান্য দোয়া এমব্রয়ডারি করেন। এ কাজে ১০০ কেজি খাঁটি রুপা এবং ১২০ কেজি সোনার প্রলেপযুক্ত রৌপ্য সুতা ব্যবহৃত হয়। 

গিলাফের গায়ে অ্যাম্ব্রয়ডারির কাজ। ছবি: টুইটারকাবার সাবেক ক্যালিগ্রাফার আবদুর রহিম আমিন বুখারির তৈরি আরবি সুলুস-শৈলীর ক্যালিগ্রাফি অনুসরণ করে লেখাগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়। কাবার দরজাটি পাঁচটি পর্দায় তৈরি, যাতে কয়েকটি আয়াত এবং চারটি সম্পূর্ণ সুরা রয়েছে—সুরা ফাতিহা, সুরা ফালাক, আন নাস ও কুরাইশ। সোনার বেল্ট ছাড়াও তাতে আল্লাহর বিভিন্ন নাম অঙ্কিত ১৭টি ছোট ছোট বাতি সদৃশ এমব্রয়ডারি রয়েছে। 

প্রথমে সাদা রঙের কাপড় টানা হয়। এরপর কালো রেশম রাখা হয়। এরপর এমব্রয়ডারি করার জন্য তা টেনে শক্ত করা হয় এবং সোনা-রুপা দিয়ে আবৃত করার আগে নিচে সাদা সুতা দিয়ে ভরাট করা হয়। গিলাফে আরবিতে ‘মক্কা আল-মুকাররমা’, চলতি সন এবং সৌদি বাদশাহর নাম যুক্ত করা হয়। 

কাবার শরিফের গিলাফ। ছবি: টুইটারএমব্রয়ডারি শেষ করতে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ মাস। এরপর টুকরোগুলো একসঙ্গে সেলাই করা হয় এবং কাবাঘরে ঝোলানোর আগ পর্যন্ত বিশেষ স্থানে সংরক্ষণ করা হয়। 

কমপ্লেক্সে রোবটের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষাভাষী দর্শনার্থীদের সেবা দেওয়া হয়। এ কাজে নারীদের সম্পৃক্ত করার কথাও ভাবছে কর্তৃপক্ষ। 

সূত্র: আরব নিউজ, গালফ নিউজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত