ইজাজুল হক, ঢাকা
হাজার বছরের ইসলামি স্থাপত্যে স্থান-কাল-পাত্রভেদে নানা বৈচিত্র্য দেখা যায়। এর প্রধান কারণ, পৃথিবীর যে প্রান্তেই ইসলাম প্রচারিত হয়েছে, সেখানে ইসলামের মৌলিক শিক্ষাবিরোধী নয় এমন সব সংস্কৃতিকে কখনোই নিরুৎসাহিত করা হয়নি; বরং মুসলমানেরা সেগুলোকে নিজেদের করে নিয়েছে। তাই দেখা যায়, বিভিন্ন জাতির ইতিবাচক অনেক সংস্কৃতি মুসলমানেরা আত্মস্থ করেছে। ইসলামি
স্থাপনাও এর ব্যতিক্রম নয়।
ভারত উপমহাদেশে ইসলামের আগমনের পর প্রথম যে কয়টি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়, এর মধ্যে তামিলনাড়ুর কিলাকারাই জুমা মসজিদ একটি। এই মসজিদের বর্তমান যে অবকাঠামো ও স্থাপত্যশৈলী, তা সতেরো শতকের শেষের দিকে নির্মিত। মসজিদটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এর স্থাপত্যকৌশলে দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্যধারার অনুসরণ করা হয়েছে।
দক্ষিণ ভারতের প্রায় সব মন্দিরে সাধারণত এ ধারাটিই অনুসরণ করা হয়। অবশ্য মসজিদটির নকশায় মন্দিরের মতো সামনের সুউচ্চ গোপুরোম রাখা হয়নি। দেয়াল ও স্তম্ভগুলোতেও প্রতিমার চিত্রায়ণ করা হয়নি। এর পরিবর্তে ইসলামি বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণহীন বস্তুর ছবি অঙ্কন করা হয়েছে।
চেন্নাই থেকে প্রায় ৫৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভারতের পূর্ব উপকূল ঘেঁষে অবস্থিত ছোট্ট শহর কিলাকারাই। আরব, তামিল, মালয় ও সিংহল জাতির মিশ্রণে সৃষ্ট ভারতীয় মুর জাতিই প্রধানত এখানে বাস করে। এই অখ্যাত শহরের রয়েছে হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস। তবে বর্তমানে দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্যে নির্মিত কিলাকারাই মসজিদই এই শহরের আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে।
একসময় এই অঞ্চলের মানুষের প্রধান পেশা ছিল মুক্তা, শামুক ও অন্যান্য সামুদ্রিক পণ্যের ব্যবসা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ী, নাবিক ও ভ্রমণকারীদের প্রিয় গন্তব্য ছিল ছোট এই শহর। চৌদ্দ শতকের বিশ্বখ্যাত মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতাও এই শহরের ধুলা পায়ে মেখেছেন।
শহরের চমৎকার আবহাওয়ায় মুগ্ধ হয়ে আগন্তুকদের অনেকেই এখানে স্থায়ী হয়েছেন। তেমনই একজন ধনাঢ্য মুসলিম বণিক শেখ আবদুল কাদির। তিনিই এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তাঁর জীবন সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। স্থানীয় মানুষের কাছে তিনি সিদি কাদির নামে পরিচিত।
কিলাকারাইয়ের ইতিহাস গবেষক ড. কাদির বখশ মাখদুমির মতে, সতেরো শতকের শেষের দিকে সিদি কাদিরই মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। স্থানীয় কিংবদন্তি থেকে জানা যায়, এর আগে এখানে হাজার বছরের পুরোনো একটি মসজিদ ছিল। কেউ কেউ একে ভারতের প্রথম চারটি মসজিদের একটি বলে মত দিয়েছেন।
ড. মাখদুমি আরও জানান, সিদি কাদির মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে বাংলা অঞ্চলের একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। কিলাকারাইয়ে আসার পর তিনি এই মসজিদ ছাড়া বেশ কয়েকটি ধর্মীয় ও জনকল্যাণমূলক স্থাপনা গড়ে তোলেন। এই অঞ্চলের সেকালের রাজা সেতুপতির জন্য রামনাথপুরমে একটি সুরম্য প্রাসাদও নির্মাণ করেছিলেন তিনি। বিনিময়ে রাজা তাঁর দক্ষ কর্মী বাহিনী দিয়ে কিলাকারাই জুমা মসজিদ নির্মাণ করতে সহযোগিতা করেন।
ড. মাখদুমির মতে, সিদি কাদির কিলাকারাইয়েই মারা যান এবং মসজিদ প্রাঙ্গণে যে কবরটি রয়েছে, তা তাঁরই। সব ধর্মের মানুষই তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসে। একে তারা আশীর্বাদের মাধ্যম মনে করে।
স্থাপত্যকৌশল বিচারে কিলাকারাই জুমা মসজিদকে ভারতের সাংস্কৃতিক মিলনের চমৎকার উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। কারণ এটি রামেশ্বরমের কাছে অবস্থিত বিখ্যাত রামানাথস্বামী মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী থেকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত। স্থানীয় স্থাপত্যকৌশলের সঙ্গে বিশ্বাসের উপাদান যুক্ত হয়ে তা মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
হিংসা ও সাম্প্রদায়িকতা চর্চার এই সময়ে কালিকারাই জুমা মসজিদের ইতিহাস ও স্থাপত্যকৌশল থেকে শেখার বিকল্প নেই; যা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে শেখাচ্ছে, বিভাজন নয়, সম্প্রীতি ও একতাই গড়তে পারে সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত ভবিষ্যৎ।
সূত্র: গালফ নিউজ
হাজার বছরের ইসলামি স্থাপত্যে স্থান-কাল-পাত্রভেদে নানা বৈচিত্র্য দেখা যায়। এর প্রধান কারণ, পৃথিবীর যে প্রান্তেই ইসলাম প্রচারিত হয়েছে, সেখানে ইসলামের মৌলিক শিক্ষাবিরোধী নয় এমন সব সংস্কৃতিকে কখনোই নিরুৎসাহিত করা হয়নি; বরং মুসলমানেরা সেগুলোকে নিজেদের করে নিয়েছে। তাই দেখা যায়, বিভিন্ন জাতির ইতিবাচক অনেক সংস্কৃতি মুসলমানেরা আত্মস্থ করেছে। ইসলামি
স্থাপনাও এর ব্যতিক্রম নয়।
ভারত উপমহাদেশে ইসলামের আগমনের পর প্রথম যে কয়টি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়, এর মধ্যে তামিলনাড়ুর কিলাকারাই জুমা মসজিদ একটি। এই মসজিদের বর্তমান যে অবকাঠামো ও স্থাপত্যশৈলী, তা সতেরো শতকের শেষের দিকে নির্মিত। মসজিদটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এর স্থাপত্যকৌশলে দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্যধারার অনুসরণ করা হয়েছে।
দক্ষিণ ভারতের প্রায় সব মন্দিরে সাধারণত এ ধারাটিই অনুসরণ করা হয়। অবশ্য মসজিদটির নকশায় মন্দিরের মতো সামনের সুউচ্চ গোপুরোম রাখা হয়নি। দেয়াল ও স্তম্ভগুলোতেও প্রতিমার চিত্রায়ণ করা হয়নি। এর পরিবর্তে ইসলামি বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণহীন বস্তুর ছবি অঙ্কন করা হয়েছে।
চেন্নাই থেকে প্রায় ৫৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভারতের পূর্ব উপকূল ঘেঁষে অবস্থিত ছোট্ট শহর কিলাকারাই। আরব, তামিল, মালয় ও সিংহল জাতির মিশ্রণে সৃষ্ট ভারতীয় মুর জাতিই প্রধানত এখানে বাস করে। এই অখ্যাত শহরের রয়েছে হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস। তবে বর্তমানে দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্যে নির্মিত কিলাকারাই মসজিদই এই শহরের আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে।
একসময় এই অঞ্চলের মানুষের প্রধান পেশা ছিল মুক্তা, শামুক ও অন্যান্য সামুদ্রিক পণ্যের ব্যবসা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ী, নাবিক ও ভ্রমণকারীদের প্রিয় গন্তব্য ছিল ছোট এই শহর। চৌদ্দ শতকের বিশ্বখ্যাত মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতাও এই শহরের ধুলা পায়ে মেখেছেন।
শহরের চমৎকার আবহাওয়ায় মুগ্ধ হয়ে আগন্তুকদের অনেকেই এখানে স্থায়ী হয়েছেন। তেমনই একজন ধনাঢ্য মুসলিম বণিক শেখ আবদুল কাদির। তিনিই এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তাঁর জীবন সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। স্থানীয় মানুষের কাছে তিনি সিদি কাদির নামে পরিচিত।
কিলাকারাইয়ের ইতিহাস গবেষক ড. কাদির বখশ মাখদুমির মতে, সতেরো শতকের শেষের দিকে সিদি কাদিরই মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। স্থানীয় কিংবদন্তি থেকে জানা যায়, এর আগে এখানে হাজার বছরের পুরোনো একটি মসজিদ ছিল। কেউ কেউ একে ভারতের প্রথম চারটি মসজিদের একটি বলে মত দিয়েছেন।
ড. মাখদুমি আরও জানান, সিদি কাদির মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে বাংলা অঞ্চলের একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। কিলাকারাইয়ে আসার পর তিনি এই মসজিদ ছাড়া বেশ কয়েকটি ধর্মীয় ও জনকল্যাণমূলক স্থাপনা গড়ে তোলেন। এই অঞ্চলের সেকালের রাজা সেতুপতির জন্য রামনাথপুরমে একটি সুরম্য প্রাসাদও নির্মাণ করেছিলেন তিনি। বিনিময়ে রাজা তাঁর দক্ষ কর্মী বাহিনী দিয়ে কিলাকারাই জুমা মসজিদ নির্মাণ করতে সহযোগিতা করেন।
ড. মাখদুমির মতে, সিদি কাদির কিলাকারাইয়েই মারা যান এবং মসজিদ প্রাঙ্গণে যে কবরটি রয়েছে, তা তাঁরই। সব ধর্মের মানুষই তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসে। একে তারা আশীর্বাদের মাধ্যম মনে করে।
স্থাপত্যকৌশল বিচারে কিলাকারাই জুমা মসজিদকে ভারতের সাংস্কৃতিক মিলনের চমৎকার উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। কারণ এটি রামেশ্বরমের কাছে অবস্থিত বিখ্যাত রামানাথস্বামী মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী থেকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত। স্থানীয় স্থাপত্যকৌশলের সঙ্গে বিশ্বাসের উপাদান যুক্ত হয়ে তা মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
হিংসা ও সাম্প্রদায়িকতা চর্চার এই সময়ে কালিকারাই জুমা মসজিদের ইতিহাস ও স্থাপত্যকৌশল থেকে শেখার বিকল্প নেই; যা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে শেখাচ্ছে, বিভাজন নয়, সম্প্রীতি ও একতাই গড়তে পারে সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত ভবিষ্যৎ।
সূত্র: গালফ নিউজ
জুবাইদা বিনতে জাফর ইবনে মানসুর পঞ্চম আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী ও জাফর ইবনুল মানসুরের কন্যা। তাঁর মা ছিলেন আল-খায়জুরানের বড় বোন সালসাল ইবনে আত্তা। জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। দাদা আল-মানসুর তাঁকে আদর করে জুবাইদা (ছোট মাখনের টুকরা) নামে ডাকতেন এবং এ নামেই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।
১৭ ঘণ্টা আগেকুয়েতে অনুষ্ঠিত ১৩তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হাফেজ আনাস মাহফুজ। বিশ্বের ৭৪টি দেশের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে দেশের জন্য এ গৌরব বয়ে আনেন তিনি।
১৭ ঘণ্টা আগেবিয়ে ইসলামি জীবনব্যবস্থার একটি মৌলিক অংশ। এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও স্থিতি নিয়ে আসে। তবে বিয়ের আগে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বিয়ে-পরবর্তী জীবনে দায়িত্ব পালনের জন্য ব্যক্তিকে সক্ষম করে।
১৭ ঘণ্টা আগে