১৩ শতকে বাগদাদের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ

আমজাদ ইউনুস 
Thumbnail image

সভ্যতার উৎসভূমি ইরাকের বাগদাদে অবস্থিত মুসতানসিরিয়া মাদ্রাসা ৮ শতকের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও প্রাচীন স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। আব্বাসি খলিফা আল-মুসতানসির বিল্লাহ আবু জাফর সিংহাসনে আরোহণের পর নানা জনহিতকর কাজ করেছিলেন। মসজিদ নির্মাণ এবং মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা এসব কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে যে প্রতিষ্ঠানটি আজও তাঁর নাম অম্লান রেখেছে, তা মুসতানসিরিয়া মাদ্রাসা।

আল-মুসতানসির ১২২৭ সালে ধর্মশিক্ষার জন্য এ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। নির্মাতার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছিল। এটি নির্মাণে ৭ লাখ স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করা হয়েছিল। আল-মুসতানসির নিজেই ১২২৬ সালে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে সময় লেগেছিল দীর্ঘ ছয় বছর।

মুসতানসিরিয়া মাদ্রাসার স্থাপত্যশৈলী বহু খিলানবিশিষ্ট। খিলানগুলোর মধ্যে ছিল ছোট ছোট কক্ষ। পরে মুসতানসিরিয়ার অনুকরণে অনেক মাদ্রাসা গড়ে উঠেছিল। সামারা ও বুখারার অনেক মাদ্রাসায়ও মুসতানসিরিয়ার নির্মাণকৌশল অনুসৃত হয়। বহিরঙ্গের মনোহারিত্বে, কারুকার্য সুষমায়, অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্যে মুসলিম জাহানের এক অনন্য স্থাপত্য এটি। খাওয়া-দাওয়া, চিকিৎসা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় সে যুগে মুসতানসিরিয়া ছিল অনন্য।

মাদ্রাসায় ফিকহি মাজহাবগুলোর জন্য ছিল স্বতন্ত্র অনুষদ। ছিল চার মাজহাবের জন্য চারটি পৃথক মসজিদ ও লেকচার হল। প্রতিটি অনুষদের পরিচালনার ভার ন্যস্ত ছিল একজন অধ্যাপকের ওপর। তাঁর তত্ত্বাবধানে থাকত ৭৫ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষকদের জন্য সম্মানজনক ভাতার ব্যবস্থা ছিল। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য মাসিক একটি করে স্বর্ণমুদ্রা বৃত্তি হিসেবে বরাদ্দ ছিল। চার অধ্যাপক ছাড়া আরও দুজন শিক্ষক থাকতেন। তাঁদের একজন কোরআন এবং অন্যজন হাদিস পাঠদান করতেন।

মুসতানসিরিয়ার গ্রন্থাগারে ছিল ধর্ম, সাহিত্য, চিকিৎসা, গণিত, ইসলামি আইন ও বিজ্ঞানের সব শাখার অমূল্য সংগ্রহ। উদ্বোধনের দিনেই খলিফা আল-মুসতানসির নিজের ব্যক্তিগত সংগ্রহ এখানে দান করেছিলেন। রাজপ্রাসাদের গ্রন্থাগার থেকে ১৩০ গাধাবোঝাই বই এই গ্রন্থাগারে স্থানান্তরিত হয়েছিল। এই গ্রন্থাগারে ৮০ হাজার বই ছিল। এর সুখ্যাতি পুরো মুসলিমবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।

মুসতানসিরিয়া বহুকাল বাগদাদ নগরীর সংস্কৃতির কেন্দ্ররূপে কাজ করেছিল। হালাকু খাঁর নেতৃত্বে মোগলরা ১২৫৮ সালে বাগদাদ আক্রমণ করলে পুরো নগরী ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। অন্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে মুসতানসিরিয়ার অধিকাংশ বই হালাকুর হাত থেকে রেহাই পায়নি।

বাগদাদ ধ্বংসের ৭ দশক পর বিশ্বখ্যাত মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতা ইরাক ভ্রমণ করেন। মুসতানসিরিয়ার একটি বিবরণ তিনি তাঁর বিখ্যাত ভ্রমণগ্রন্থ ‘আর-রিহলা’য় দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বাগদাদের পূর্ব পাশে কিছু চমৎকার বাজার আছে।

এসব বাজারের মধ্যে সুক আস-সালামাহ ছিল অন্যতম। এরই কেন্দ্র ছিল বিখ্যাত নিজামিয়া মাদ্রাসা এবং শেষ প্রান্তে ছিল মুসতানসিরিয়া মাদ্রাসা।’

১৯৬৩ সালে মুসতানসিরিয়া মাদ্রাসা আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। এটি বর্তমানে ইরাকের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি।

লেখক: শিক্ষক ও অনুবাদক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত