ইজাজুল হক, ঢাকা
দ্বিতীয় হিজরির রজব অথবা শাবান মাসে মুসলমানদের ইবাদতের কেবলা পরিবর্তন হয়। ফিলিস্তিনের বায়তুল মোকাদ্দাসের বদলে মক্কার পবিত্র কাবাঘরের দিকে মুখ করে নামাজ পড়ার নির্দেশ আসে। এ ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা দেখিয়েছেন, মুসলমানেরা কোনো দিক, স্থাপনা বা নির্দিষ্ট জায়গার ইবাদত করে না। বরং তারা আল্লাহর নির্দেশিত পথে তাঁরই ইবাদত করে। এখানে কেবলা পরিবর্তনের ঘটনাটি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—
হজরত আদম (আ.)-কে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেওয়ার আগেই ফেরেশতাদের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কাবাঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। আদম (আ.) ও তাঁর সন্তানদের জন্য কাবাঘরকেই প্রথম কেবলা সাব্যস্ত করা হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর বানানো হয়, তা মক্কায় অবস্থিত এবং এ ঘর বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়ত ও বরকতের উৎস।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৬)
আদম (আ.) থেকে নুহ (আ.) পর্যন্ত সব নবীর কেবলাও ছিল পবিত্র কাবাঘর। নুহ (আ.)-এর আমলে সংঘটিত মহাপ্লাবনের সময় পবিত্র কাবাঘরের দেয়াল ধসে পড়ে। এরপর হজরত ইবরাহিম ও ইসমাইল (আ.) আল্লাহর নির্দেশে কাবাঘর ফের নির্মাণ করেন। কাবাঘরই ছিল তাঁদের ও তাঁদের উম্মতের কেবলা। এরপর বনি ইসরাইলের নবী-রাসুলদের জন্য বায়তুল মোকাদ্দাসকে কেবলা নির্ধারণ করা হয়। মুফাসসির ইমাম কুরতুবি হাদিস বর্ণনাকারী (রাভি) আবুল আলিয়ার সূত্রে বলেন, আগের নবীগণ বায়তুল মোকাদ্দাসে নামাজ পড়ার সময় এমনভাবে দাঁড়াতেন, যাতে বায়তুল মোকাদ্দাসের সখরা (হলুদ গম্বুজ) ও কাবাঘর দুটোই সামনে থাকে। (কুরতুবি)
নামাজ ফরজ হওয়ার সময় কেবলা
মহানবী (সা.) মক্কায় অবস্থানকালে মিরাজের রাতে আল্লাহ তাআলা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দেন। তখন মুসলমানদের কেবলা কাবাঘরই ছিল। অধিকাংশ সাহাবি ও তাবিয়িগণ এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তাঁদের মত অনুযায়ী, মক্কার কিছু মানুষ ইবরাহিম (আ.)-এর ধর্মের অনুসারী ছিলেন। আর হজরত ইবরাহিম ও ইসমাইল (আ.)-এর কেবলা কাবাঘরই ছিল। সুতরাং ইসলামে নামাজ ফরজ হওয়ার সময় কাবাঘরই কেবলা ছিল। মহানবী (সা.) মক্কায় অবস্থানকালে কাবাঘরের দিকে মুখ করেই নামাজ পড়তেন। হিজরতের আগ পর্যন্ত কাবাঘরের দিকেই মুখ করে নামাজ আদায় করেছেন। (কুরতুবি, ইবনে কাসির ও মাআরিফুল কোরআন)
তবে ইবনে আব্বাস (রা.)–এর বর্ণনা অনুযায়ী, শুরু থেকেই কেবলা ছিল বায়তুল মোকাদ্দাস। হিজরতের পরও ষোলো-সতেরো মাস পর্যন্ত বায়তুল মোকাদ্দাসই কেবলা ছিল। এরপর পবিত্র কাবাঘরকে কেবলা করার নির্দেশ আসে। তবে মহানবী (সা.) মক্কায় অবস্থানকালে হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামানির মাঝখানে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তেন, যাতে কাবাঘর ও বায়তুল মোকাদ্দাস দুটোই সামনে থাকে। মদিনায় পৌঁছার পর এমনটি করা সম্ভব ছিল না। তাই তাঁর মনে কেবলা পরিবর্তনের বাসনা দানা বাঁধতে থাকে। (ইবনে কাসির)
তবে ইমাম কুরতুবি (রহ.) প্রথম মতটিকেই অধিক শুদ্ধ বলেছেন। কারণ মহানবী (সা.)-এর মদিনায় আগমনের পর যখন ইহুদিদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু হয়, তখন তাদের আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে আল্লাহর নির্দেশে তিনি তাদের কেবলাকেই কেবলা হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু যখন পরে অভিজ্ঞতায় দেখা গেল, ইহুদিরা হঠকারী মনোভাব ত্যাগ করবে না, তখন মহানবী (সা.)-কে আগের কেবলার দিকে মুখ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পবিত্র কাবাঘর তাঁর পূর্বপুরুষ হজরত ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর কেবলা হওয়ার কারণে তিনি স্বভাবতই সেদিকে নামাজ পড়তে পছন্দ করতেন। (মাআরিফুল কোরআন)
কেবলা পরিবর্তনের ঘটনা
ওপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, হিজরতের পর ষোলো-সতেরো মাস মহানবী (সা.) বায়তুল মোকাদ্দাসকে কেবলা মেনে নামাজ আদায় করেছেন। এরপর আল্লাহ তাআলা তাঁকে কাবাঘরের দিকে ফিরে নামাজ পড়ার আদেশ দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি যেখান থেকেই বের হও না কেন, মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফেরাও এবং যেখানেই থাক না কেন, সেদিকেই মুখ ফেরাও, যাতে তাদের মধ্যে সীমালঙ্ঘনকারীরা ছাড়া অন্য কোনো লোক তোমাদের সঙ্গে বিতর্ক করতে না পারে। সুতরাং তাদের ভয় পেয়ো না; বরং একমাত্র আমাকেই ভয় করো, যাতে আমি আমার অনুগ্রহ তোমাদের পুরোপুরি দিতে পারি এবং যাতে তোমরা সৎ পথ পেতে পার।’ (সুরা বাকারা: ১৫০)
কেবলা পরিবর্তনের এ নির্দেশ দ্বিতীয় হিজরির রজব অথবা শাবান মাসে নাজিল হয়। হাদিস বর্ণনাকারী ইবনে সাআদ বলেন, রাসুল (সা.) উম্মে বিশর ইবনে বারা ইবনে মারুর ঘরে দাওয়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে জোহরের সময় হলে লোকজন নিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে যান। দুই রাকাত নামাজ শেষে তৃতীয় রাকাত আদায়কালে অহির মাধ্যমে এই আয়াত নাজিল হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অন্যদের নিয়ে বায়তুল মোকাদ্দাসের দিক থেকে কাবাঘরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেন। (তাবাকাতে ইবনে সাআদ: ১ / ২৪২)
মহানবী (সা.)-এর আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন
মহানবী (সা.) মদিনায় যাওয়ার পর থেকেই কাবাঘরের দিকে ফিরে নামাজ আদায়ের ইচ্ছা পোষণ করতেন। তিনি অনুভব করছিলেন, বনি ইসরাইলের নবীদের যুগ শেষ হয়ে গেছে এবং বায়তুল মোকাদ্দাসের কেন্দ্রীয় মর্যাদার অবসান ঘটেছে। এখন ইবরাহিম (আ.)-এর কেবলার দিকে মুখ ফেরানোর সময় হয়ে গেছে। কাবা মুসলিমদের কেবলা সাব্যস্ত হোক—এটাই ছিল তাঁর আন্তরিক বাসনা। এ জন্য তিনি আল্লাহর কাছে দোয়াও করছিলেন। বারবার আকাশের দিকে চাইতেন—কখন ফেরেশতা কেবলা পরিবর্তনের নির্দেশ নিয়ে আসবেন। (তাফসিরে যাকারিয়া)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আকাশের দিকে তোমার বারবার মুখ ফেরানোকে আমি প্রায় লক্ষ্য করি। সুতরাং আমি তোমাকে সেই কেবলার দিকে অবশ্যই ফিরিয়ে দেব, যা তুমি পছন্দ করো। অতএব তুমি মসজিদে হারামের দিকে মুখ ফেরাও। তোমরা যেখানেই থাক না কেন, সেই দিকে মুখ ফেরাও। আর যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে, তারা (আগের আসমানি কিতাবের মাধ্যমে) নিশ্চিতভাবে জানে যে, এ তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে আসা সত্য। তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ উদাসীন নন।’ (সুরা বাকারা: ১৪৪)
ইহুদি, মুশরিক ও মুনাফিকদের প্রতিক্রিয়া
কেবলা পরিবর্তনের ঘটনা জানার পর মক্কার মুশরিকেরা বলতে শুরু করল, মুহাম্মদ যেভাবে আমাদের কেবলার দিকে ফেরত এসেছেন, তেমনি অচিরেই আমাদের ধর্মেও ফেরত আসবেন। আমাদের কেবলা সত্য মনে করেই তিনি ফিরে এসেছেন। ইহুদিরা বলতে লাগল, মুহাম্মদ তাঁর আগের নবীদের কেবলার বিরোধিতা করেছেন। মুনাফিকেরা বলতে লাগল, জানি না, তিনি কোন দিকে যাচ্ছেন? প্রথম কেবলা সঠিক হয়ে থাকলে তিনি সত্য বর্জন করেছেন। আর দ্বিতীয়টি সঠিক হয়ে থাকলে প্রথমটির ব্যাপারে তিনি ভ্রষ্ট ছিলেন। (তাফসিরে জাকারিয়া)
এসবের জবাব দিতেই আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘বোকারা অচিরেই বলবে, তারা এত দিন যে কেবলার অনুসরণ করে আসছিল, তা থেকে কীসে তাদের ফিরিয়ে দিল? বলো—পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন। তুমি এত দিন যে কেবলার অনুসরণ করছিলে, তা এই উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম, যাতে আমি জানতে পারি—কে রাসুলের অনুসরণ করে এবং কে ফিরে যায়? আল্লাহ যাদের সৎ পথে পরিচালিত করেছেন, তারা ছাড়া অন্যের কাছে এ (পরিবর্তন) নিশ্চয়ই কঠিন ব্যাপার। … আর যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে, তুমি যদি তাদের কাছে সব প্রমাণ নিয়ে আসো, তবু তারা তোমার কেবলার অনুসরণ করবে না; এবং তুমিও তাদের কেবলার অনুসারী নও। …’ (সুরা বাকারা: ১৪২-১৪৫)
দ্বিতীয় হিজরির রজব অথবা শাবান মাসে মুসলমানদের ইবাদতের কেবলা পরিবর্তন হয়। ফিলিস্তিনের বায়তুল মোকাদ্দাসের বদলে মক্কার পবিত্র কাবাঘরের দিকে মুখ করে নামাজ পড়ার নির্দেশ আসে। এ ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা দেখিয়েছেন, মুসলমানেরা কোনো দিক, স্থাপনা বা নির্দিষ্ট জায়গার ইবাদত করে না। বরং তারা আল্লাহর নির্দেশিত পথে তাঁরই ইবাদত করে। এখানে কেবলা পরিবর্তনের ঘটনাটি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—
হজরত আদম (আ.)-কে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেওয়ার আগেই ফেরেশতাদের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কাবাঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। আদম (আ.) ও তাঁর সন্তানদের জন্য কাবাঘরকেই প্রথম কেবলা সাব্যস্ত করা হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর বানানো হয়, তা মক্কায় অবস্থিত এবং এ ঘর বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়ত ও বরকতের উৎস।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৬)
আদম (আ.) থেকে নুহ (আ.) পর্যন্ত সব নবীর কেবলাও ছিল পবিত্র কাবাঘর। নুহ (আ.)-এর আমলে সংঘটিত মহাপ্লাবনের সময় পবিত্র কাবাঘরের দেয়াল ধসে পড়ে। এরপর হজরত ইবরাহিম ও ইসমাইল (আ.) আল্লাহর নির্দেশে কাবাঘর ফের নির্মাণ করেন। কাবাঘরই ছিল তাঁদের ও তাঁদের উম্মতের কেবলা। এরপর বনি ইসরাইলের নবী-রাসুলদের জন্য বায়তুল মোকাদ্দাসকে কেবলা নির্ধারণ করা হয়। মুফাসসির ইমাম কুরতুবি হাদিস বর্ণনাকারী (রাভি) আবুল আলিয়ার সূত্রে বলেন, আগের নবীগণ বায়তুল মোকাদ্দাসে নামাজ পড়ার সময় এমনভাবে দাঁড়াতেন, যাতে বায়তুল মোকাদ্দাসের সখরা (হলুদ গম্বুজ) ও কাবাঘর দুটোই সামনে থাকে। (কুরতুবি)
নামাজ ফরজ হওয়ার সময় কেবলা
মহানবী (সা.) মক্কায় অবস্থানকালে মিরাজের রাতে আল্লাহ তাআলা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দেন। তখন মুসলমানদের কেবলা কাবাঘরই ছিল। অধিকাংশ সাহাবি ও তাবিয়িগণ এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তাঁদের মত অনুযায়ী, মক্কার কিছু মানুষ ইবরাহিম (আ.)-এর ধর্মের অনুসারী ছিলেন। আর হজরত ইবরাহিম ও ইসমাইল (আ.)-এর কেবলা কাবাঘরই ছিল। সুতরাং ইসলামে নামাজ ফরজ হওয়ার সময় কাবাঘরই কেবলা ছিল। মহানবী (সা.) মক্কায় অবস্থানকালে কাবাঘরের দিকে মুখ করেই নামাজ পড়তেন। হিজরতের আগ পর্যন্ত কাবাঘরের দিকেই মুখ করে নামাজ আদায় করেছেন। (কুরতুবি, ইবনে কাসির ও মাআরিফুল কোরআন)
তবে ইবনে আব্বাস (রা.)–এর বর্ণনা অনুযায়ী, শুরু থেকেই কেবলা ছিল বায়তুল মোকাদ্দাস। হিজরতের পরও ষোলো-সতেরো মাস পর্যন্ত বায়তুল মোকাদ্দাসই কেবলা ছিল। এরপর পবিত্র কাবাঘরকে কেবলা করার নির্দেশ আসে। তবে মহানবী (সা.) মক্কায় অবস্থানকালে হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামানির মাঝখানে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তেন, যাতে কাবাঘর ও বায়তুল মোকাদ্দাস দুটোই সামনে থাকে। মদিনায় পৌঁছার পর এমনটি করা সম্ভব ছিল না। তাই তাঁর মনে কেবলা পরিবর্তনের বাসনা দানা বাঁধতে থাকে। (ইবনে কাসির)
তবে ইমাম কুরতুবি (রহ.) প্রথম মতটিকেই অধিক শুদ্ধ বলেছেন। কারণ মহানবী (সা.)-এর মদিনায় আগমনের পর যখন ইহুদিদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু হয়, তখন তাদের আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে আল্লাহর নির্দেশে তিনি তাদের কেবলাকেই কেবলা হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু যখন পরে অভিজ্ঞতায় দেখা গেল, ইহুদিরা হঠকারী মনোভাব ত্যাগ করবে না, তখন মহানবী (সা.)-কে আগের কেবলার দিকে মুখ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পবিত্র কাবাঘর তাঁর পূর্বপুরুষ হজরত ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর কেবলা হওয়ার কারণে তিনি স্বভাবতই সেদিকে নামাজ পড়তে পছন্দ করতেন। (মাআরিফুল কোরআন)
কেবলা পরিবর্তনের ঘটনা
ওপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, হিজরতের পর ষোলো-সতেরো মাস মহানবী (সা.) বায়তুল মোকাদ্দাসকে কেবলা মেনে নামাজ আদায় করেছেন। এরপর আল্লাহ তাআলা তাঁকে কাবাঘরের দিকে ফিরে নামাজ পড়ার আদেশ দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি যেখান থেকেই বের হও না কেন, মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফেরাও এবং যেখানেই থাক না কেন, সেদিকেই মুখ ফেরাও, যাতে তাদের মধ্যে সীমালঙ্ঘনকারীরা ছাড়া অন্য কোনো লোক তোমাদের সঙ্গে বিতর্ক করতে না পারে। সুতরাং তাদের ভয় পেয়ো না; বরং একমাত্র আমাকেই ভয় করো, যাতে আমি আমার অনুগ্রহ তোমাদের পুরোপুরি দিতে পারি এবং যাতে তোমরা সৎ পথ পেতে পার।’ (সুরা বাকারা: ১৫০)
কেবলা পরিবর্তনের এ নির্দেশ দ্বিতীয় হিজরির রজব অথবা শাবান মাসে নাজিল হয়। হাদিস বর্ণনাকারী ইবনে সাআদ বলেন, রাসুল (সা.) উম্মে বিশর ইবনে বারা ইবনে মারুর ঘরে দাওয়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে জোহরের সময় হলে লোকজন নিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে যান। দুই রাকাত নামাজ শেষে তৃতীয় রাকাত আদায়কালে অহির মাধ্যমে এই আয়াত নাজিল হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অন্যদের নিয়ে বায়তুল মোকাদ্দাসের দিক থেকে কাবাঘরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেন। (তাবাকাতে ইবনে সাআদ: ১ / ২৪২)
মহানবী (সা.)-এর আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন
মহানবী (সা.) মদিনায় যাওয়ার পর থেকেই কাবাঘরের দিকে ফিরে নামাজ আদায়ের ইচ্ছা পোষণ করতেন। তিনি অনুভব করছিলেন, বনি ইসরাইলের নবীদের যুগ শেষ হয়ে গেছে এবং বায়তুল মোকাদ্দাসের কেন্দ্রীয় মর্যাদার অবসান ঘটেছে। এখন ইবরাহিম (আ.)-এর কেবলার দিকে মুখ ফেরানোর সময় হয়ে গেছে। কাবা মুসলিমদের কেবলা সাব্যস্ত হোক—এটাই ছিল তাঁর আন্তরিক বাসনা। এ জন্য তিনি আল্লাহর কাছে দোয়াও করছিলেন। বারবার আকাশের দিকে চাইতেন—কখন ফেরেশতা কেবলা পরিবর্তনের নির্দেশ নিয়ে আসবেন। (তাফসিরে যাকারিয়া)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আকাশের দিকে তোমার বারবার মুখ ফেরানোকে আমি প্রায় লক্ষ্য করি। সুতরাং আমি তোমাকে সেই কেবলার দিকে অবশ্যই ফিরিয়ে দেব, যা তুমি পছন্দ করো। অতএব তুমি মসজিদে হারামের দিকে মুখ ফেরাও। তোমরা যেখানেই থাক না কেন, সেই দিকে মুখ ফেরাও। আর যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে, তারা (আগের আসমানি কিতাবের মাধ্যমে) নিশ্চিতভাবে জানে যে, এ তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে আসা সত্য। তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ উদাসীন নন।’ (সুরা বাকারা: ১৪৪)
ইহুদি, মুশরিক ও মুনাফিকদের প্রতিক্রিয়া
কেবলা পরিবর্তনের ঘটনা জানার পর মক্কার মুশরিকেরা বলতে শুরু করল, মুহাম্মদ যেভাবে আমাদের কেবলার দিকে ফেরত এসেছেন, তেমনি অচিরেই আমাদের ধর্মেও ফেরত আসবেন। আমাদের কেবলা সত্য মনে করেই তিনি ফিরে এসেছেন। ইহুদিরা বলতে লাগল, মুহাম্মদ তাঁর আগের নবীদের কেবলার বিরোধিতা করেছেন। মুনাফিকেরা বলতে লাগল, জানি না, তিনি কোন দিকে যাচ্ছেন? প্রথম কেবলা সঠিক হয়ে থাকলে তিনি সত্য বর্জন করেছেন। আর দ্বিতীয়টি সঠিক হয়ে থাকলে প্রথমটির ব্যাপারে তিনি ভ্রষ্ট ছিলেন। (তাফসিরে জাকারিয়া)
এসবের জবাব দিতেই আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘বোকারা অচিরেই বলবে, তারা এত দিন যে কেবলার অনুসরণ করে আসছিল, তা থেকে কীসে তাদের ফিরিয়ে দিল? বলো—পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন। তুমি এত দিন যে কেবলার অনুসরণ করছিলে, তা এই উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম, যাতে আমি জানতে পারি—কে রাসুলের অনুসরণ করে এবং কে ফিরে যায়? আল্লাহ যাদের সৎ পথে পরিচালিত করেছেন, তারা ছাড়া অন্যের কাছে এ (পরিবর্তন) নিশ্চয়ই কঠিন ব্যাপার। … আর যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে, তুমি যদি তাদের কাছে সব প্রমাণ নিয়ে আসো, তবু তারা তোমার কেবলার অনুসরণ করবে না; এবং তুমিও তাদের কেবলার অনুসারী নও। …’ (সুরা বাকারা: ১৪২-১৪৫)
একজন মুমিনের জন্য তার জীবনকে ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক পরিচালিত করা এবং ইসলামে যা কিছু নিষিদ্ধ, তা ত্যাগ করা আবশ্যক। হাদিস শরিফে এটাকে উত্তম ধার্মিকতা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন...
৪ ঘণ্টা আগেআসর শব্দের অর্থ সময়। পবিত্র কোরআনে আসর নামে একটি সুরা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আসর বা সময়ের শপথ করেছেন। মুসলিমরা দৈনন্দিন যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তার তৃতীয় ওয়াক্তকে আসর নামে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনে এটিকে সালাত আল-ওসতা বা মধ্যবর্তী নামাজ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।
১ দিন আগেজ্ঞানগর্ভ ও উপদেশে ভরা কোরআন জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি গাইড বই। মানুষ কোথায় কখন কী করবে, কেন করবে, কীভাবে করবে—তা বলে দেওয়া হয়েছে কোরআনে। কোরআন তথা আল্লাহপ্রদত্ত আসমানি কিতাবের হিদায়াতের বাইরে কোনো সঠিক জীবনদর্শন নেই, কোনো ধর্মদর্শন নেই, কোনো মুক্তির পথ নেই। মানবজাতির সূচনালগ্নেই কথাটি জানিয়ে দেওয়া
২ দিন আগেএকজন মুমিনের কাছে রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। মহানবী (সা.) এ পবিত্র মাসকে বেশ গুরুত্ব দিতেন। অন্যান্য কাজকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে অধিক পরিমাণে ইবাদতে মশগুল হতেন। সাহাবিদের অভ্যাসও ছিল একই রকম। গুরুত্ব বিবেচনায় রমজানের প্রস্তুতিও শুরু হতো বেশ আগে থেকেই। রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকেই মহানবী (সা.) অধীর আগ
২ দিন আগে