ধর্ম ও জীবন ডেস্ক
ইসলাম উন্নত জীবনের পথ দেখায়। চালচলন, কথাবার্তা, খাওয়া-দাওয়াসহ জীবনের সব ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) উম্মতকে উত্তম শিষ্টাচার শিখিয়েছেন। আর প্রকৃত মুসলিমরা যুগ যুগ ধরে তা মান্য করে আসছে। আজ আমরা মহানবী (সা.)-এর খাবার গ্রহণের সুন্নত ও আদবগুলো জানব।
আল্লাহর নামে শুরু করা
রাসুল (সা.) খাওয়ার শুরুতে সব সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতেন এবং তাঁর সঙ্গীদেরও তা বলতে উৎসাহিত করতেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে এবং ডান হাতে খাবার খাও। এবং তোমার দিক থেকে খাও।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৬৭; তিরমিজি, হাদিস: ১৯১৩)। অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘যখন তোমরা খাবার খেতে শুরু করো, তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বলো— বিসমিল্লাহি আওওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু। (রিয়াজুস সালেহিন: ৭২৯)
সোনা-রুপার পাত্রে না খাওয়া
সোনা-রুপার পাত্রে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘তোমরা সোনা-রুপার পাত্রে পানাহার কোরো না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৩৩; মুসলিম, হাদিস: ২০৬৭)
খাওয়ার আগে-পরে হাত ধোয়া
খাওয়ার আগে হাত ধোয়া মুস্তাহাব। খাওয়ার পরে হাত ধোয়া সুন্নত। (তুহফাতুল আহওয়াজি: ৫ / ৪৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৭৪৮৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪৯৩)
ডান হাতে খাওয়া
রাসুল (সা.) আজীবন ডান হাত দিয়ে খাবার খেয়েছেন এবং বাঁ হাত দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দিয়ে পানাহার কোরো না। কেননা, শয়তান বাম হাতে পানাহার করে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৯১২)
বসে খাওয়া
বসে পানাহার করাই মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন দাঁড়িয়ে পান না করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ২০২৬)
মাটিতে বসে খাওয়া
মহানবী (সা.) মাটির ওপর বসে খাবার খেতেন। (শুআবুল ইমান, হাদিস: ৭৮৪৩)। মাটির ওপর বসে খাওয়ার অর্থ—সমতল স্থানে খাওয়া এবং পাত্র ওপরে রেখে না খাওয়া।
তিন আঙুলে খাওয়া
শুকনো খাবার তিন আঙুলে খাওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) শুকনো খাবার খাওয়ার সময় বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল ব্যবহার করতেন। (মুসলিম, হাদিস: ২০৩২)। তবে অসুবিধা হলে সব আঙুল ব্যবহার করা যাবে।
দস্তরখান ব্যবহার করা
খাবার পড়ে গেলে তুলে খাওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। এই সুন্নত আদায়ের জন্য আরেকটি সহায়ক আদব হলো দস্তরখান বিছানো। নবী (সা.) চামড়ার দস্তরখানায় খাবার খেতেন। (বুখারি, হাদিস: ৫৪১৫)। দস্তরখানা পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খাওয়া যায়।
খাওয়ার সময় বিনয়ী হওয়া
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করে বিনয়ের সঙ্গে খাওয়া উচিত। মহানবী (সা.) বলতেন, ‘দাসের মতো খাই, দাসের মতো বসি।’ (শুআবুল ইমান, হাদিস: ৫৫৭২)
উপুড় হয়ে শুয়ে না খাওয়া
উপুড় হয়ে শুয়ে খাওয়া আদবের খেলাপ। মহানবী (সা.) উপুড় হয়ে খেতে নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৩৭০; আবু দাউদ, হাদিস: ৩৭৭৪)
প্লেটের একপাশ থেকে খাওয়া
খাবার প্লেটের এক পাশ থেকে খাওয়া সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘খাবারের মধ্যখানে বরকত নাজিল হয়। তোমরা একপাশ থেকে খাও। মধ্যখান থেকে নয়।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৮০৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৭৭)
পড়ে গেলে উঠিয়ে খাওয়া
খাওয়ার সময় কিছু পড়ে গেলে তা উঠিয়ে ময়লা পরিষ্কার করে খাওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) এমনটি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৪২১৮; মুসলিম, হাদিস: ২০৩৪)
হেলান না দেওয়া
কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে খেতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। আবু হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-এর দরবারে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, ‘আমি হেলান দেওয়া অবস্থায় কোনো কিছু খাই না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৯০; তিরমিজি, হাদিস: ১৯৮৬)
খাবারের দোষ না ধরা
রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষত্রুটি ধরতেন না। তাঁর পছন্দ হলে খেতেন আর অপছন্দ হলে ত্যাগ করতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৯৮, ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৩৮২)
খাবারে ফুঁক না দেওয়া
খাবারের মধ্যে ফুঁক দেওয়া অনেক রোগ সৃষ্টির কারণ। রাসুল (সা.) খাবারে ফুঁ দিতে নিষেধ করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কখনো খাবারে ফুঁক দিতেন না। ফুঁক দিতেন না কোনো কিছু পানকালেও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৪১৩)
পরিমিত খাওয়া
ভোজনবিলাসিতায় নিরুৎসাহিত করে ইসলাম। অতিভোজন নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো পাত্র মানুষ পূর্ণ করে না। মানুষের জন্য পিঠ সোজা রাখার মতো খাওয়াই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি খেতে হলে সে যেন পেটের তিন ভাগের এক ভাগ খাবারের জন্য, এক ভাগ পানির জন্য এবং এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বরাদ্দ রাখে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮০; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৩৪৯)
যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাক
ঘরে সব সময় ভালো খাবার থাকে না। তাই যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। (মুসলিম, হাদিস: ২০৫২)
একসঙ্গে বেশি খাবার মুখে না দেওয়া
খাবার সামনে এলে একসঙ্গে অনেক খাবার মুখে পুরে না দেওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। খাওয়ার সময় কয়েকটি খেজুর একসঙ্গে মুখে পুরে দিতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। (মুসলিম, হাদিস: ২০৪৫; বুখারি, হাদিস: ২৪৫৫)
খাবার অপচয় না করা
খাবার অপচয় করা কঠিন গুনাহ। কোরআনে আল্লাহ তাআলা অপচয়কারীকে ‘শয়তানের ভাই’ আখ্যা দিয়েছেন। অন্য আয়াতে বলেছেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো; কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা: আরাফ, আয়াত: ৩১)
প্রতিযোগিতা করে না খাওয়া
একত্রে খাবার খাওয়ার সময় সবার চেয়ে বেশি খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। বরং সবার চেয়ে কম খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে সবার সমান খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। আর খাওয়ার সময় ভালো জিনিসটি আগেভাগে তুলে না খাওয়া এবং বড় বড় লোকমা মুখে পুরে না দেওয়া। মহানবী (সা.) সঙ্গীর অনুমতি ছাড়া একসঙ্গে দুটি করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ২৪৫৫; মুসলিম, হাদিস: ২০৪৫)
পানীয় তিন শ্বাসে পান করা
পানীয় এক নিশ্বাসে পান না করে তিন শ্বাসে পান করা সুন্নত। পাত্রের ভেতরে নিশ্বাস ফেলা উচিত নয়। মহানবী (সা.) তিন শ্বাসে পানি পান করতেন এবং বলতেন, ‘এতে বেশি তৃপ্তি আসে, পিপাসার কষ্ট থেকে অথবা কোনো ব্যাধি সৃষ্টির হাত থেকে বাঁচা যায় এবং হজম, পরিপাক ও দেহের উপকার বেশি হয়।’ (মুসলিম, হাদিস: ২০২৮)
বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান না করা
কলসি, জগ বা এ জাতীয় বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান করা উচিত নয়। মহানবী (সা.) এভাবে পান করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি: হাদিস: ৫৬২৭ ও ৫৬২৯; মুসলিম, হাদিস: ১৬০৯)
আঙুল ও প্লেট চেটে খাওয়া
খাবার গ্রহণের পর আঙুল ও প্লেট চেটে খাওয়ার কথা বলেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ খাবার খেলে আঙুল চেটে না খেয়ে হাত মুছবে না। কারণ সে জানে না, কোন খাবারে বরকত আছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৩৮০৯; মুসলিম, হাদিস: ২০৩৩)
অপ্রয়োজনীয় আলাপ না করা
খাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কথা বলতে অসুবিধা নেই। খাবারের মেন্যু নিয়ে আলাপ করতেও সমস্যা নেই। বরং মহানবী (সা.) এমনটি করেছেন। তবে অহেতুক গল্পগুজব এড়িয়ে যাওয়া উচিত। (বুখারি, হাদিস: ৩৩৪০; মুসলিম, হাদিস: ১৯৪)
খাবার শেষে কুলি করা
খাবার শেষে কুলি করে মুখের ভেতর পরিষ্কার করে নেওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) খাবার শেষে কুলি করতেন। (বুখারি, হাদিস: ৫৩৯০)
পরিবেশনকারী সবার শেষে খাওয়া
যে ব্যক্তি খাবার পরিবেশন করবেন, তাঁর জন্য মুস্তাহাব হলো, তিনি সবার শেষে খাবেন। মহানবী (সা.) এমনটি করেছেন এবং বলেছেন, ‘যে লোকদের পানি পান করায়, সে যেন সবার শেষে পান করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৮১)
একাকী না খেয়ে একত্রে খাওয়া
একাকী না খেয়ে একাধিক লোক একত্রে খাওয়া ভালো। মহানবী (সা.) বলেন, ‘একজনের খাবার দুই জনের জন্য, দুজনের খাবার চার জনের জন্য এবং চার জনের খাবার আট জনের জন্য যথেষ্ট।’ (মুসলিম, হাদিস: ৫৪৮৯; তিরমিজি, হাদিস: ১৮২০; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৫৪)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা একসঙ্গে খাও এবং পৃথক পৃথক খেয়ো না। কারণ জামাতের সঙ্গে খাওয়ায় বরকত আছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৮৭)
খাওয়ার সময় কেউ এলে তাঁকে ডাকা
খাওয়ার সময় বাইরে থেকে কেউ এলে তাঁকে খাবারের দস্তরখানে ডাকা মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৯৯)
খাওয়ার আগে যাচাই করা
খাওয়ার আগে হালাল-হারাম যাচাই করা সুন্নত। খাবারের উৎস সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) খাবার সম্পর্কে না জেনে তা গ্রহণ করতেন না। (বুখারি, হাদিস: ৫৩৯১)
পরিচারকদের সঙ্গে নিয়ে খাওয়া
খাবার প্রস্তুতকারী পরিচারককে সঙ্গে নিয়ে খাওয়া সুন্নত। তা সম্ভব না হলে খাবারের ভালো অংশ থেকে তাঁর জন্য রেখে দেওয়া উচিত। (বুখারি, হাদিস: ৫৪৬০; মুসলিম, হাদিস: ১৬৬৩)
দোয়া পড়া
খাবার খাওয়া শেষ হলে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করা উচিত। রাসুল (সা.) খাবার শেষে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাতেন। দোয়া পড়তেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) খাওয়া শেষে এই দোয়া পাঠ করতেন।
الْحَمْدُ لله الَّذِي أَطْعَمَنَا، وَسَقَانَا، وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আতআমানা, ওয়াসাকানা, অজাআলানা মুসলিমিন।
অর্থ: সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং মুসলিম বানিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৫০)
আল্লাহ তাআলা আমাদের খাবার গ্রহণের সুন্নত ও আদবগুলো পালন করার তাওফিক দিন।
ইসলাম উন্নত জীবনের পথ দেখায়। চালচলন, কথাবার্তা, খাওয়া-দাওয়াসহ জীবনের সব ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) উম্মতকে উত্তম শিষ্টাচার শিখিয়েছেন। আর প্রকৃত মুসলিমরা যুগ যুগ ধরে তা মান্য করে আসছে। আজ আমরা মহানবী (সা.)-এর খাবার গ্রহণের সুন্নত ও আদবগুলো জানব।
আল্লাহর নামে শুরু করা
রাসুল (সা.) খাওয়ার শুরুতে সব সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতেন এবং তাঁর সঙ্গীদেরও তা বলতে উৎসাহিত করতেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে এবং ডান হাতে খাবার খাও। এবং তোমার দিক থেকে খাও।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৬৭; তিরমিজি, হাদিস: ১৯১৩)। অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘যখন তোমরা খাবার খেতে শুরু করো, তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বলো— বিসমিল্লাহি আওওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু। (রিয়াজুস সালেহিন: ৭২৯)
সোনা-রুপার পাত্রে না খাওয়া
সোনা-রুপার পাত্রে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘তোমরা সোনা-রুপার পাত্রে পানাহার কোরো না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৩৩; মুসলিম, হাদিস: ২০৬৭)
খাওয়ার আগে-পরে হাত ধোয়া
খাওয়ার আগে হাত ধোয়া মুস্তাহাব। খাওয়ার পরে হাত ধোয়া সুন্নত। (তুহফাতুল আহওয়াজি: ৫ / ৪৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৭৪৮৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪৯৩)
ডান হাতে খাওয়া
রাসুল (সা.) আজীবন ডান হাত দিয়ে খাবার খেয়েছেন এবং বাঁ হাত দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দিয়ে পানাহার কোরো না। কেননা, শয়তান বাম হাতে পানাহার করে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৯১২)
বসে খাওয়া
বসে পানাহার করাই মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন দাঁড়িয়ে পান না করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ২০২৬)
মাটিতে বসে খাওয়া
মহানবী (সা.) মাটির ওপর বসে খাবার খেতেন। (শুআবুল ইমান, হাদিস: ৭৮৪৩)। মাটির ওপর বসে খাওয়ার অর্থ—সমতল স্থানে খাওয়া এবং পাত্র ওপরে রেখে না খাওয়া।
তিন আঙুলে খাওয়া
শুকনো খাবার তিন আঙুলে খাওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) শুকনো খাবার খাওয়ার সময় বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল ব্যবহার করতেন। (মুসলিম, হাদিস: ২০৩২)। তবে অসুবিধা হলে সব আঙুল ব্যবহার করা যাবে।
দস্তরখান ব্যবহার করা
খাবার পড়ে গেলে তুলে খাওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। এই সুন্নত আদায়ের জন্য আরেকটি সহায়ক আদব হলো দস্তরখান বিছানো। নবী (সা.) চামড়ার দস্তরখানায় খাবার খেতেন। (বুখারি, হাদিস: ৫৪১৫)। দস্তরখানা পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খাওয়া যায়।
খাওয়ার সময় বিনয়ী হওয়া
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করে বিনয়ের সঙ্গে খাওয়া উচিত। মহানবী (সা.) বলতেন, ‘দাসের মতো খাই, দাসের মতো বসি।’ (শুআবুল ইমান, হাদিস: ৫৫৭২)
উপুড় হয়ে শুয়ে না খাওয়া
উপুড় হয়ে শুয়ে খাওয়া আদবের খেলাপ। মহানবী (সা.) উপুড় হয়ে খেতে নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৩৭০; আবু দাউদ, হাদিস: ৩৭৭৪)
প্লেটের একপাশ থেকে খাওয়া
খাবার প্লেটের এক পাশ থেকে খাওয়া সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘খাবারের মধ্যখানে বরকত নাজিল হয়। তোমরা একপাশ থেকে খাও। মধ্যখান থেকে নয়।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৮০৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৭৭)
পড়ে গেলে উঠিয়ে খাওয়া
খাওয়ার সময় কিছু পড়ে গেলে তা উঠিয়ে ময়লা পরিষ্কার করে খাওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) এমনটি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৪২১৮; মুসলিম, হাদিস: ২০৩৪)
হেলান না দেওয়া
কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে খেতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। আবু হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-এর দরবারে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, ‘আমি হেলান দেওয়া অবস্থায় কোনো কিছু খাই না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৯০; তিরমিজি, হাদিস: ১৯৮৬)
খাবারের দোষ না ধরা
রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষত্রুটি ধরতেন না। তাঁর পছন্দ হলে খেতেন আর অপছন্দ হলে ত্যাগ করতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৯৮, ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৩৮২)
খাবারে ফুঁক না দেওয়া
খাবারের মধ্যে ফুঁক দেওয়া অনেক রোগ সৃষ্টির কারণ। রাসুল (সা.) খাবারে ফুঁ দিতে নিষেধ করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কখনো খাবারে ফুঁক দিতেন না। ফুঁক দিতেন না কোনো কিছু পানকালেও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৪১৩)
পরিমিত খাওয়া
ভোজনবিলাসিতায় নিরুৎসাহিত করে ইসলাম। অতিভোজন নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো পাত্র মানুষ পূর্ণ করে না। মানুষের জন্য পিঠ সোজা রাখার মতো খাওয়াই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি খেতে হলে সে যেন পেটের তিন ভাগের এক ভাগ খাবারের জন্য, এক ভাগ পানির জন্য এবং এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বরাদ্দ রাখে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮০; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৩৪৯)
যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাক
ঘরে সব সময় ভালো খাবার থাকে না। তাই যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। (মুসলিম, হাদিস: ২০৫২)
একসঙ্গে বেশি খাবার মুখে না দেওয়া
খাবার সামনে এলে একসঙ্গে অনেক খাবার মুখে পুরে না দেওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। খাওয়ার সময় কয়েকটি খেজুর একসঙ্গে মুখে পুরে দিতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। (মুসলিম, হাদিস: ২০৪৫; বুখারি, হাদিস: ২৪৫৫)
খাবার অপচয় না করা
খাবার অপচয় করা কঠিন গুনাহ। কোরআনে আল্লাহ তাআলা অপচয়কারীকে ‘শয়তানের ভাই’ আখ্যা দিয়েছেন। অন্য আয়াতে বলেছেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো; কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা: আরাফ, আয়াত: ৩১)
প্রতিযোগিতা করে না খাওয়া
একত্রে খাবার খাওয়ার সময় সবার চেয়ে বেশি খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। বরং সবার চেয়ে কম খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে সবার সমান খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। আর খাওয়ার সময় ভালো জিনিসটি আগেভাগে তুলে না খাওয়া এবং বড় বড় লোকমা মুখে পুরে না দেওয়া। মহানবী (সা.) সঙ্গীর অনুমতি ছাড়া একসঙ্গে দুটি করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ২৪৫৫; মুসলিম, হাদিস: ২০৪৫)
পানীয় তিন শ্বাসে পান করা
পানীয় এক নিশ্বাসে পান না করে তিন শ্বাসে পান করা সুন্নত। পাত্রের ভেতরে নিশ্বাস ফেলা উচিত নয়। মহানবী (সা.) তিন শ্বাসে পানি পান করতেন এবং বলতেন, ‘এতে বেশি তৃপ্তি আসে, পিপাসার কষ্ট থেকে অথবা কোনো ব্যাধি সৃষ্টির হাত থেকে বাঁচা যায় এবং হজম, পরিপাক ও দেহের উপকার বেশি হয়।’ (মুসলিম, হাদিস: ২০২৮)
বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান না করা
কলসি, জগ বা এ জাতীয় বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান করা উচিত নয়। মহানবী (সা.) এভাবে পান করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি: হাদিস: ৫৬২৭ ও ৫৬২৯; মুসলিম, হাদিস: ১৬০৯)
আঙুল ও প্লেট চেটে খাওয়া
খাবার গ্রহণের পর আঙুল ও প্লেট চেটে খাওয়ার কথা বলেছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ খাবার খেলে আঙুল চেটে না খেয়ে হাত মুছবে না। কারণ সে জানে না, কোন খাবারে বরকত আছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৩৮০৯; মুসলিম, হাদিস: ২০৩৩)
অপ্রয়োজনীয় আলাপ না করা
খাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কথা বলতে অসুবিধা নেই। খাবারের মেন্যু নিয়ে আলাপ করতেও সমস্যা নেই। বরং মহানবী (সা.) এমনটি করেছেন। তবে অহেতুক গল্পগুজব এড়িয়ে যাওয়া উচিত। (বুখারি, হাদিস: ৩৩৪০; মুসলিম, হাদিস: ১৯৪)
খাবার শেষে কুলি করা
খাবার শেষে কুলি করে মুখের ভেতর পরিষ্কার করে নেওয়া সুন্নত। মহানবী (সা.) খাবার শেষে কুলি করতেন। (বুখারি, হাদিস: ৫৩৯০)
পরিবেশনকারী সবার শেষে খাওয়া
যে ব্যক্তি খাবার পরিবেশন করবেন, তাঁর জন্য মুস্তাহাব হলো, তিনি সবার শেষে খাবেন। মহানবী (সা.) এমনটি করেছেন এবং বলেছেন, ‘যে লোকদের পানি পান করায়, সে যেন সবার শেষে পান করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৮১)
একাকী না খেয়ে একত্রে খাওয়া
একাকী না খেয়ে একাধিক লোক একত্রে খাওয়া ভালো। মহানবী (সা.) বলেন, ‘একজনের খাবার দুই জনের জন্য, দুজনের খাবার চার জনের জন্য এবং চার জনের খাবার আট জনের জন্য যথেষ্ট।’ (মুসলিম, হাদিস: ৫৪৮৯; তিরমিজি, হাদিস: ১৮২০; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৫৪)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা একসঙ্গে খাও এবং পৃথক পৃথক খেয়ো না। কারণ জামাতের সঙ্গে খাওয়ায় বরকত আছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৮৭)
খাওয়ার সময় কেউ এলে তাঁকে ডাকা
খাওয়ার সময় বাইরে থেকে কেউ এলে তাঁকে খাবারের দস্তরখানে ডাকা মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৯৯)
খাওয়ার আগে যাচাই করা
খাওয়ার আগে হালাল-হারাম যাচাই করা সুন্নত। খাবারের উৎস সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) খাবার সম্পর্কে না জেনে তা গ্রহণ করতেন না। (বুখারি, হাদিস: ৫৩৯১)
পরিচারকদের সঙ্গে নিয়ে খাওয়া
খাবার প্রস্তুতকারী পরিচারককে সঙ্গে নিয়ে খাওয়া সুন্নত। তা সম্ভব না হলে খাবারের ভালো অংশ থেকে তাঁর জন্য রেখে দেওয়া উচিত। (বুখারি, হাদিস: ৫৪৬০; মুসলিম, হাদিস: ১৬৬৩)
দোয়া পড়া
খাবার খাওয়া শেষ হলে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করা উচিত। রাসুল (সা.) খাবার শেষে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাতেন। দোয়া পড়তেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) খাওয়া শেষে এই দোয়া পাঠ করতেন।
الْحَمْدُ لله الَّذِي أَطْعَمَنَا، وَسَقَانَا، وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আতআমানা, ওয়াসাকানা, অজাআলানা মুসলিমিন।
অর্থ: সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং মুসলিম বানিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৫০)
আল্লাহ তাআলা আমাদের খাবার গ্রহণের সুন্নত ও আদবগুলো পালন করার তাওফিক দিন।
ইবাদতের নিয়তে করা সব কাজই নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত। আর নেক আমল মানুষের জীবনের প্রকৃত সম্পদ। এর মাধ্যমে পাওয়া যাবে জান্নাত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং যারা ইমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তারাই জান্নাতের অধিকারী, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।’ (সুরা বাকারা: ৮২)
২১ ঘণ্টা আগেভ্রমণের সময় নামাজের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়েছে ইসলাম। কোনো ব্যক্তি নিজের আবাসস্থল থেকে ৪৮ মাইল তথা ৭৮ কিলোমিটার দূরের কোনো গন্তব্যে ভ্রমণের নিয়তে বের হয়ে তাঁর এলাকা পেরিয়ে গেলেই শরিয়তের দৃষ্টিতে সে মুসাফির হয়ে যায়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ১/৪৩৬)
২ দিন আগেজুবাইদা বিনতে জাফর ইবনে মানসুর পঞ্চম আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী ও জাফর ইবনুল মানসুরের কন্যা। তাঁর মা ছিলেন আল-খায়জুরানের বড় বোন সালসাল ইবনে আত্তা। জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। দাদা আল-মানসুর তাঁকে আদর করে জুবাইদা (ছোট মাখনের টুকরা) নামে ডাকতেন এবং এ নামেই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।
৩ দিন আগে