জুমার দিনে গোসল করা কি জরুরি

মুফতি ইশমাম আহমেদ
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭: ৩১

প্রশ্ন: এখন দেশজুড়ে তীব্র শীত পড়ছে। এই সময়ে গোসল করা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর। জুমার নামাজের আগে গোসল করার যে বিধান ইসলামে রয়েছে, তা কি আবশ্যক? জুমার দিনে গোসল না করলে কি গুনাহ হবে? শরিয়তের আলোকে জানতে চাই। 
আবদুল কুদ্দুস, পাবনা

উত্তর: গোসল যদি আপনার জন্য ফরজ হয়ে থাকে, তবে তা করা অবশ্যই ফরজ। এ ছাড়া অজু-নামাজ কিছুই আদায় করা যাবে না। আর গোসল ফরজ না হলে জুমার দিনে গোসল করা জরুরি কি না—এ বিষয়ে ফকিহদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, ওয়াজিব বা আবশ্যক। কেউ বলেছেন, সুন্নত এবং কেউ বলেছেন, মুস্তাহাব। তবে অধিকাংশ আলিম জুমার দিনে গোসল করাকে সুন্নত বলেছেন। সুতরাং বিশেষ কারণ তথা তীব্র শীতের কারণে গোসল না করলে কোনো গুনাহ হবে না। (ফিকহুস সুন্নাহ: ১ / ৫৩-৫৫)

আলিমদের মধ্যে মতভেদ হওয়ার কারণ হলো, হাদিসে কখনো নির্দেশ এবং কখনো ঐচ্ছিক হিসেবে জুমার দিনের গোসলের কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন এক হাদিসে রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘জুমার দিনে প্রত্যেক সাবালক ব্যক্তির জন্য গোসল করা ওয়াজিব।’ (বুখারি: ৮৭৯; মিশকাত: ৫৩৮)। অন্য এক হাদিসে এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমায় যাবে, সে যেন গোসল করে।’ (বুখারি: ৮৮২; মুসলিম: ৮৪৫)। আরেক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন শুধু অজু করে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট। আর যে গোসল করে, সেটা অবশ্যই উত্তম।’ (তিরমিজি: ৪৯৭; মিশকাত: ৫৪০)। তবে ইবনে আববাস (রা.) বলেন, জুমার দিন গোসল করা ওয়াজিব নয়; তবে উত্তম। তাতে গোসলকারীর অধিকতর পবিত্রতা অর্জিত হয়।’ (আবু দাউদ: ৩৫৩; মিশকাত: ৫৪৪)

উল্লিখিত হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, জুমার দিনে গোসল করা জরুরি না হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল এবং বড় সওয়াবের কাজ। জুমার দিনে গোসল করে মসজিদে যাওয়ার ফজিলত সম্পর্কে নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করে, যদি তার কাছে থাকে, তারপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়, নির্ধারিত নামাজ আদায় করে। তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে, তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব সগিরা গুনাহর জন্য কাফফারা হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৪৩)

তাই তীব্র শীত হলেও এই দিনে প্রত্যেক মুমিনের গোসল করা উচিত, প্রয়োজনে গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ জুমা সাপ্তাহিক ঈদের দিন; সমাজের সব স্তরের মানুষ এই দিনে মসজিদে সমবেত হন। তাই নিজেকে পরিচ্ছন্নভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করা এবং গায়ের দুর্গন্ধে যেন কোনো মুসল্লি কষ্ট না পান, সেদিকে খেয়াল রাখা সবার একান্ত কর্তব্য।

উত্তর দিয়েছেন,মুফতি ইশমাম আহমেদ, শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত