ইজাজুল হক, ঢাকা
হজ আদায় করতে মক্কায় যাওয়ার সময় হাজিদের কাফেলায় উটের পিঠে করে একটি যাত্রীহীন সাজানো পালকি নিয়ে যাওয়া হতো, একেই মাহমাল বলা হয়। ইসলামের পবিত্র স্থানগুলোর প্রতি সুলতানদের দায়বদ্ধতা প্রকাশের জন্য তাঁদের ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে হাজিদের সঙ্গে মাহমাল পাঠাতেন তাঁরা। সব মাহমালেরই একটি গাম্ভীর্যপূর্ণ কারুকাজ করা আবরণ থাকত, যাকে কিসওয়া বা সিতর বলা হতো। ১৩ শতক থেকে ২০ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই ঐতিহ্যের প্রচলন ছিল।
আরবি মাহমাল শব্দের অর্থ বহনকৃত। উটের পিঠে বহনযোগ্য কাঠের ফ্রেমে এটি তৈরি করা হতো। ওপরের দিকে চাঁদ খচিত একটি শীর্ষ বিন্দু থাকত। সবচেয়ে পুরোনো (মামলুক আমল) মাহমালগুলোর কিসওয়ার রং হলুদ ছিল; পরে লাল ও সবুজ সেই স্থান দখলে নেয়। কিসওয়ার কারুকাজে কোরআনের আয়াত এবং সুলতানদের মনোগ্রাম আঁকা থাকত। তবে যাত্রাপথের ধুলাবালু থেকে রক্ষা পেতে আসল কিসওয়ার ওপর একটি সাধারণ নকল কিসওয়া পরিয়ে দেওয়া হতো।
লিখিত দলিত মতে, মামলুক আমলের মিসরীয় শাসক সুলতান রুকুনুদ্দিন বাইবার্স কায়রো থেকে প্রথম মাহমাল পাঠান। এরপর দামেস্ক, ইয়েমেন, দারফুর, হায়দরাবাদ ও ইরানের তিমুরিদ সাম্রাজ্য থেকেও বিভিন্ন সময়ে মাহমাল পাঠানো হয়। এ ছাড়া ১৪ শতকের শেষের দিকে মিসরের আসয়ুত থেকেও স্বতন্ত্র একটি কাফেলার সঙ্গে মাহমাল পাঠানো হয়। ১৯২৬ সালে মক্কায় মাহমাল পাঠানোর এই ঐতিহ্যের ইতি ঘটলেও কায়রোতে তা ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সাড়ম্বরে প্রদর্শন করা হয়।
বিভিন্ন স্থান থেকে মাহমাল পৌঁছালে মক্কায় উৎসবের আমেজ দেখা যেত। স্থানীয় লোকজন ও হাজিরা তা দেখতে পথের দুই পাশে ভিড় করতেন। শহরে প্রবেশের আগমুহূর্তে ওপরের সাধারণ ধুলোময় কিসওয়াটি খুলে ভেতরের সুন্দর কারুকাজে শোভিত আসলটি উন্মোচন করা হতো। পবিত্র কাবাঘরের সামনে জুতসই জায়গা পেতে বিভিন্ন দেশের মাহমালগুলোর মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলত। হজ শেষে যখন মাহমালগুলো নিজ নিজ দেশে ফেরত নেওয়া হতো, তখন মানুষ তা স্পর্শ করে বরকত নিত। কাফেলা শহরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের নিয়ে তা স্পর্শ করতে বেরিয়ে পড়তেন। অনেকে মাহমালের ভেতরে রুমাল রেখে বরকত নিতেন।
কখন থেকে মাহমালের প্রচলন শুরু হয়েছিল, তা ঠিক জানা যায় না। তবে তুর্কি পরিব্রাজক ইভলিয়া চেলেবি লিখেছেন, সবচেয়ে প্রাচীন মাহমালটিতে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জুতা, জামা, বাটিসহ বিভিন্ন পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন বহন করা হয়েছিল এবং এ কারণে এটিকে মহানবীর রওজার প্রতিনিধি হিসেবে দেখা হয়েছিল। আরেকটি সূত্রমতে, মিসরের সুলতানাখ্যাত নারী শাসক সাজার আল-দুর হজে যেতে একটি রঙিন পালকি বানিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে নেতারা খালি পালকিটি প্রতিবছর হজে নিয়ে যেতেন। এভাবে মাহমালের প্রচলন হয়।
কেউ কেউ বলেন, মাহমালের ভেতর কিছুই থাকত না। তবে অনেকে পবিত্র কোরআন থাকার কথা বলেছেন। ১৫৭৫ সালের একটি ঐতিহাসিক দলিলে বড় সোনার অক্ষরে লেখা কোরআন বহন করা একটি মাহমালের কথা বলা হয়েছে। আনিসুল হুজ্জাজ বইয়ে ১৬৭৭ সালের হজের বিবরণে দামেস্কের মাহমালকে কোরআনসহ চিত্রিত করা হয়েছে। সুইস পর্যটক জন লুইস বার্কহার্ট ১৮১৪ সালে মিসরের একটি হজ কাফেলা পর্যবেক্ষণ করে লেখেন, মাহমালে একটি ধর্মীয় বই ছিল, সেটি কোরআন নয়। মক্কা থেকে ফেরার সময় লোকজন সেই বইয়ে চুমু খেয়ে এবং হাত লাগিয়ে বরকত নিত। ১৮৩০ সালে ব্রিটিশ পর্যটক অ্যাডওয়ার্ড উইলিয়াম লেইন একটি মাহমাল সম্পর্কে লিখেছেন, মাহমালটি খালি ছিল, তবে বাইরের দিকে ওপরে রুপার খাপে দুটি কোরআন ছিল—একটি খোলা এবং আরেকটি গোটানো।
সূত্র: ইউরোপিয়ানা ডট ইইউ, নুনপোস্ট ডটকম, খলিলি কালেকশনস, দ্য হজ: কালেক্টেড এসেজ, হজ: জার্নি টু দ্য হার্ট অব ইসলাম।
হজ আদায় করতে মক্কায় যাওয়ার সময় হাজিদের কাফেলায় উটের পিঠে করে একটি যাত্রীহীন সাজানো পালকি নিয়ে যাওয়া হতো, একেই মাহমাল বলা হয়। ইসলামের পবিত্র স্থানগুলোর প্রতি সুলতানদের দায়বদ্ধতা প্রকাশের জন্য তাঁদের ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে হাজিদের সঙ্গে মাহমাল পাঠাতেন তাঁরা। সব মাহমালেরই একটি গাম্ভীর্যপূর্ণ কারুকাজ করা আবরণ থাকত, যাকে কিসওয়া বা সিতর বলা হতো। ১৩ শতক থেকে ২০ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই ঐতিহ্যের প্রচলন ছিল।
আরবি মাহমাল শব্দের অর্থ বহনকৃত। উটের পিঠে বহনযোগ্য কাঠের ফ্রেমে এটি তৈরি করা হতো। ওপরের দিকে চাঁদ খচিত একটি শীর্ষ বিন্দু থাকত। সবচেয়ে পুরোনো (মামলুক আমল) মাহমালগুলোর কিসওয়ার রং হলুদ ছিল; পরে লাল ও সবুজ সেই স্থান দখলে নেয়। কিসওয়ার কারুকাজে কোরআনের আয়াত এবং সুলতানদের মনোগ্রাম আঁকা থাকত। তবে যাত্রাপথের ধুলাবালু থেকে রক্ষা পেতে আসল কিসওয়ার ওপর একটি সাধারণ নকল কিসওয়া পরিয়ে দেওয়া হতো।
লিখিত দলিত মতে, মামলুক আমলের মিসরীয় শাসক সুলতান রুকুনুদ্দিন বাইবার্স কায়রো থেকে প্রথম মাহমাল পাঠান। এরপর দামেস্ক, ইয়েমেন, দারফুর, হায়দরাবাদ ও ইরানের তিমুরিদ সাম্রাজ্য থেকেও বিভিন্ন সময়ে মাহমাল পাঠানো হয়। এ ছাড়া ১৪ শতকের শেষের দিকে মিসরের আসয়ুত থেকেও স্বতন্ত্র একটি কাফেলার সঙ্গে মাহমাল পাঠানো হয়। ১৯২৬ সালে মক্কায় মাহমাল পাঠানোর এই ঐতিহ্যের ইতি ঘটলেও কায়রোতে তা ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সাড়ম্বরে প্রদর্শন করা হয়।
বিভিন্ন স্থান থেকে মাহমাল পৌঁছালে মক্কায় উৎসবের আমেজ দেখা যেত। স্থানীয় লোকজন ও হাজিরা তা দেখতে পথের দুই পাশে ভিড় করতেন। শহরে প্রবেশের আগমুহূর্তে ওপরের সাধারণ ধুলোময় কিসওয়াটি খুলে ভেতরের সুন্দর কারুকাজে শোভিত আসলটি উন্মোচন করা হতো। পবিত্র কাবাঘরের সামনে জুতসই জায়গা পেতে বিভিন্ন দেশের মাহমালগুলোর মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলত। হজ শেষে যখন মাহমালগুলো নিজ নিজ দেশে ফেরত নেওয়া হতো, তখন মানুষ তা স্পর্শ করে বরকত নিত। কাফেলা শহরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের নিয়ে তা স্পর্শ করতে বেরিয়ে পড়তেন। অনেকে মাহমালের ভেতরে রুমাল রেখে বরকত নিতেন।
কখন থেকে মাহমালের প্রচলন শুরু হয়েছিল, তা ঠিক জানা যায় না। তবে তুর্কি পরিব্রাজক ইভলিয়া চেলেবি লিখেছেন, সবচেয়ে প্রাচীন মাহমালটিতে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জুতা, জামা, বাটিসহ বিভিন্ন পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন বহন করা হয়েছিল এবং এ কারণে এটিকে মহানবীর রওজার প্রতিনিধি হিসেবে দেখা হয়েছিল। আরেকটি সূত্রমতে, মিসরের সুলতানাখ্যাত নারী শাসক সাজার আল-দুর হজে যেতে একটি রঙিন পালকি বানিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে নেতারা খালি পালকিটি প্রতিবছর হজে নিয়ে যেতেন। এভাবে মাহমালের প্রচলন হয়।
কেউ কেউ বলেন, মাহমালের ভেতর কিছুই থাকত না। তবে অনেকে পবিত্র কোরআন থাকার কথা বলেছেন। ১৫৭৫ সালের একটি ঐতিহাসিক দলিলে বড় সোনার অক্ষরে লেখা কোরআন বহন করা একটি মাহমালের কথা বলা হয়েছে। আনিসুল হুজ্জাজ বইয়ে ১৬৭৭ সালের হজের বিবরণে দামেস্কের মাহমালকে কোরআনসহ চিত্রিত করা হয়েছে। সুইস পর্যটক জন লুইস বার্কহার্ট ১৮১৪ সালে মিসরের একটি হজ কাফেলা পর্যবেক্ষণ করে লেখেন, মাহমালে একটি ধর্মীয় বই ছিল, সেটি কোরআন নয়। মক্কা থেকে ফেরার সময় লোকজন সেই বইয়ে চুমু খেয়ে এবং হাত লাগিয়ে বরকত নিত। ১৮৩০ সালে ব্রিটিশ পর্যটক অ্যাডওয়ার্ড উইলিয়াম লেইন একটি মাহমাল সম্পর্কে লিখেছেন, মাহমালটি খালি ছিল, তবে বাইরের দিকে ওপরে রুপার খাপে দুটি কোরআন ছিল—একটি খোলা এবং আরেকটি গোটানো।
সূত্র: ইউরোপিয়ানা ডট ইইউ, নুনপোস্ট ডটকম, খলিলি কালেকশনস, দ্য হজ: কালেক্টেড এসেজ, হজ: জার্নি টু দ্য হার্ট অব ইসলাম।
জুবাইদা বিনতে জাফর ইবনে মানসুর পঞ্চম আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী ও জাফর ইবনুল মানসুরের কন্যা। তাঁর মা ছিলেন আল-খায়জুরানের বড় বোন সালসাল ইবনে আত্তা। জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। দাদা আল-মানসুর তাঁকে আদর করে জুবাইদা (ছোট মাখনের টুকরা) নামে ডাকতেন এবং এ নামেই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।
১ ঘণ্টা আগেকুয়েতে অনুষ্ঠিত ১৩তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হাফেজ আনাস মাহফুজ। বিশ্বের ৭৪টি দেশের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে দেশের জন্য এ গৌরব বয়ে আনেন তিনি।
১ ঘণ্টা আগেবিয়ে ইসলামি জীবনব্যবস্থার একটি মৌলিক অংশ। এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও স্থিতি নিয়ে আসে। তবে বিয়ের আগে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বিয়ে-পরবর্তী জীবনে দায়িত্ব পালনের জন্য ব্যক্তিকে সক্ষম করে।
১ ঘণ্টা আগে