মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
প্রশ্ন: সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা কী দিয়ে দিতে হয়? টাকা দিয়ে দিলে তা আদায় হবে কি? শরিয়তের আলোকে বিস্তারিত জানতে চাই।
মিজানুর রহমান, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম
উত্তর: মূলত হাদিসে ছয়টি খাবারের যেকোনো একটি দিয়ে সদাকাতুল ফিতর আদায় করার কথা এসেছে। আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমরা এক সা পরিমাণ (৩.৩ কেজি প্রায়) খাদ্য (ভুট্টা), যব, খেজুর, পনির অথবা কিশমিশ দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। অন্য হাদিসে অর্ধ সা (১.৬৫ কেজি প্রায়) গমের কথা বর্ণিত হয়েছে। (বুখারি, মুসলিম ও আবু দাউদ)
উল্লিখিত খাবারগুলোর মধ্য থেকে যেকোনো একটি দিয়ে বর্ণিত পরিমাণ অনুযায়ী দান করলে সর্বসম্মতিক্রমে ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। তবে সরাসরি খাদ্য না দিয়ে তার বাজারমূল্য দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম মালিক, শাফিয়ি ও আহমদ (রহ.)-এর মতে মূল্য দেওয়া যাবে না, সরাসরি খাদ্যপণ্য দিতে হবে। (আল মুগনি, কিতাবুল ফুরু)
তবে ইমাম আবু হানিফাসহ হানাফি মাজহাবের সব ফকিহ, হাসান বসরি, ওমর ইবনে আবদুল আজিজ, সুফইয়ান সাওরি, ইমাম বুখারি (রহ.)সহ অসংখ্য ইমামের মতে, হাদিসে বর্ণিত খাদ্যদ্রব্যসমূহের মূল্য দিয়েও সদকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে, বরং পরিস্থিতি বিবেচনায় তা উত্তম। (ফিকহুল ইবাদাত আলাল মাজহাবিল হানাফিয়ি)
আরেক দল আলিম বলেন, সাধারণ অবস্থায় খাদ্যদ্রব্য দিয়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু গরিবদের যদি খাদ্যদ্রব্যের চেয়ে নগদ টাকাপয়সার জরুরত বেশি হয়, তখন টাকা দিয়ে আদায় করা জায়েজ। এটাই ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর মত। (হুকমু ইখরাজি জাকাতিল ফিতরি নকদান)
বোঝা গেল, অনেক আলিমের মতে, টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় সঠিক। এ বিষয়ে তাঁরা কয়েকটি প্রমাণ পেশ করে থাকেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
সহিহ বুখারির শিরোনামে এসেছে, মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) ইয়ামেনবাসীদের বললেন, ‘তোমরা যব ও ভুট্টার পরিবর্তে চাদর বা পরিধেয় বস্ত্র আমার কাছে সদকাস্বরূপ নিয়ে আসো। এটা তোমাদের পক্ষেও সহজ এবং মদিনায় নবী (সা.)-এর সাহাবিগণের জন্যও উত্তম।’ এ কথার ব্যাখ্যায় বুখারি শরিফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) বলেন, ‘মূল্য দিয়ে জাকাত ও সদাকাতুল ফিতর দেওয়া জায়েজ হওয়ার পক্ষে এই বর্ণনা আমাদের ইমামগণের দলিল। এ জন্যই ইবনে রুশাইদ (রহ.) বলেন, হানাফি মাজহাবের সঙ্গে অনেক মাসআলায় ইমাম বুখারির মতানৈক্য থাকলেও দলিলের দিক থেকে শক্তিশালী হওয়ায় এই মাসআলায় তিনি হানাফি মাজহাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।’ (উমদাতুল কারি)
বিভিন্ন বর্ণনা ও মুহাদ্দিসগণের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, মুআজ (রা.) এমনটি করেছিলেন রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশাতেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১০৫৩৮; কিতাবুল আমওয়াল, আবু উবাইদ, পৃ-৪৫৬; তাহকিকুল আমাল ফি ইখরাজি জাকাতিল ফিতির বিল মাল, আহমাদ আলগুমারি, পৃ-৫২)
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস কুররা (রহ.) বলেন, ‘আমাদের কাছে ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.)-এর ফরমান পৌঁছেছে যে সদকাতুল ফিতর হচ্ছে প্রত্যেক (সামর্থ্যবান) ব্যক্তির পক্ষ হতে অর্ধ সা গম কিংবা তার মূল্য হিসাবে অর্ধ দিরহাম প্রদান করা।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা)
বিশিষ্ট তাবেয়ি আবু ইসহাক (রহ.) যিনি ৩০-এরও অধিক সাহাবি থেকে সরাসরি হাদিস বর্ণনা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের (সাহাবা-তাবেয়িগণকে) খাবারের মূল্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে দেখেছি।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা)
উল্লিখিত প্রমাণসমূহ এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় হানাফি মাজহাবের বাইরেরও অনেক গবেষক আলেম টাকা দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় হওয়ার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন। তাঁদের মধ্যে ড. ইউসুফ কারজাবি, ড. আলি মুহাম্মদ সাল্লাবি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
উত্তর দিয়েছেন: শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক
প্রশ্ন: সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা কী দিয়ে দিতে হয়? টাকা দিয়ে দিলে তা আদায় হবে কি? শরিয়তের আলোকে বিস্তারিত জানতে চাই।
মিজানুর রহমান, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম
উত্তর: মূলত হাদিসে ছয়টি খাবারের যেকোনো একটি দিয়ে সদাকাতুল ফিতর আদায় করার কথা এসেছে। আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমরা এক সা পরিমাণ (৩.৩ কেজি প্রায়) খাদ্য (ভুট্টা), যব, খেজুর, পনির অথবা কিশমিশ দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। অন্য হাদিসে অর্ধ সা (১.৬৫ কেজি প্রায়) গমের কথা বর্ণিত হয়েছে। (বুখারি, মুসলিম ও আবু দাউদ)
উল্লিখিত খাবারগুলোর মধ্য থেকে যেকোনো একটি দিয়ে বর্ণিত পরিমাণ অনুযায়ী দান করলে সর্বসম্মতিক্রমে ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। তবে সরাসরি খাদ্য না দিয়ে তার বাজারমূল্য দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম মালিক, শাফিয়ি ও আহমদ (রহ.)-এর মতে মূল্য দেওয়া যাবে না, সরাসরি খাদ্যপণ্য দিতে হবে। (আল মুগনি, কিতাবুল ফুরু)
তবে ইমাম আবু হানিফাসহ হানাফি মাজহাবের সব ফকিহ, হাসান বসরি, ওমর ইবনে আবদুল আজিজ, সুফইয়ান সাওরি, ইমাম বুখারি (রহ.)সহ অসংখ্য ইমামের মতে, হাদিসে বর্ণিত খাদ্যদ্রব্যসমূহের মূল্য দিয়েও সদকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে, বরং পরিস্থিতি বিবেচনায় তা উত্তম। (ফিকহুল ইবাদাত আলাল মাজহাবিল হানাফিয়ি)
আরেক দল আলিম বলেন, সাধারণ অবস্থায় খাদ্যদ্রব্য দিয়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু গরিবদের যদি খাদ্যদ্রব্যের চেয়ে নগদ টাকাপয়সার জরুরত বেশি হয়, তখন টাকা দিয়ে আদায় করা জায়েজ। এটাই ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর মত। (হুকমু ইখরাজি জাকাতিল ফিতরি নকদান)
বোঝা গেল, অনেক আলিমের মতে, টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় সঠিক। এ বিষয়ে তাঁরা কয়েকটি প্রমাণ পেশ করে থাকেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
সহিহ বুখারির শিরোনামে এসেছে, মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) ইয়ামেনবাসীদের বললেন, ‘তোমরা যব ও ভুট্টার পরিবর্তে চাদর বা পরিধেয় বস্ত্র আমার কাছে সদকাস্বরূপ নিয়ে আসো। এটা তোমাদের পক্ষেও সহজ এবং মদিনায় নবী (সা.)-এর সাহাবিগণের জন্যও উত্তম।’ এ কথার ব্যাখ্যায় বুখারি শরিফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) বলেন, ‘মূল্য দিয়ে জাকাত ও সদাকাতুল ফিতর দেওয়া জায়েজ হওয়ার পক্ষে এই বর্ণনা আমাদের ইমামগণের দলিল। এ জন্যই ইবনে রুশাইদ (রহ.) বলেন, হানাফি মাজহাবের সঙ্গে অনেক মাসআলায় ইমাম বুখারির মতানৈক্য থাকলেও দলিলের দিক থেকে শক্তিশালী হওয়ায় এই মাসআলায় তিনি হানাফি মাজহাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।’ (উমদাতুল কারি)
বিভিন্ন বর্ণনা ও মুহাদ্দিসগণের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, মুআজ (রা.) এমনটি করেছিলেন রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশাতেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১০৫৩৮; কিতাবুল আমওয়াল, আবু উবাইদ, পৃ-৪৫৬; তাহকিকুল আমাল ফি ইখরাজি জাকাতিল ফিতির বিল মাল, আহমাদ আলগুমারি, পৃ-৫২)
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস কুররা (রহ.) বলেন, ‘আমাদের কাছে ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.)-এর ফরমান পৌঁছেছে যে সদকাতুল ফিতর হচ্ছে প্রত্যেক (সামর্থ্যবান) ব্যক্তির পক্ষ হতে অর্ধ সা গম কিংবা তার মূল্য হিসাবে অর্ধ দিরহাম প্রদান করা।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা)
বিশিষ্ট তাবেয়ি আবু ইসহাক (রহ.) যিনি ৩০-এরও অধিক সাহাবি থেকে সরাসরি হাদিস বর্ণনা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের (সাহাবা-তাবেয়িগণকে) খাবারের মূল্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে দেখেছি।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা)
উল্লিখিত প্রমাণসমূহ এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় হানাফি মাজহাবের বাইরেরও অনেক গবেষক আলেম টাকা দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় হওয়ার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন। তাঁদের মধ্যে ড. ইউসুফ কারজাবি, ড. আলি মুহাম্মদ সাল্লাবি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
উত্তর দিয়েছেন: শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক
দুনিয়ার সফরের শেষ গন্তব্য মৃত্যু। মৃত্যু এক অপ্রিয় সত্য, যা সুনিশ্চিত অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রতিটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৮৫)
১১ ঘণ্টা আগেএকজন মুমিনের জন্য তার জীবনকে ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক পরিচালিত করা এবং ইসলামে যা কিছু নিষিদ্ধ, তা ত্যাগ করা আবশ্যক। হাদিস শরিফে এটাকে উত্তম ধার্মিকতা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন...
১ দিন আগেআসর শব্দের অর্থ সময়। পবিত্র কোরআনে আসর নামে একটি সুরা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আসর বা সময়ের শপথ করেছেন। মুসলিমরা দৈনন্দিন যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তার তৃতীয় ওয়াক্তকে আসর নামে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনে এটিকে সালাত আল-ওসতা বা মধ্যবর্তী নামাজ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।
২ দিন আগেজ্ঞানগর্ভ ও উপদেশে ভরা কোরআন জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি গাইড বই। মানুষ কোথায় কখন কী করবে, কেন করবে, কীভাবে করবে—তা বলে দেওয়া হয়েছে কোরআনে। কোরআন তথা আল্লাহপ্রদত্ত আসমানি কিতাবের হিদায়াতের বাইরে কোনো সঠিক জীবনদর্শন নেই, কোনো ধর্মদর্শন নেই, কোনো মুক্তির পথ নেই। মানবজাতির সূচনালগ্নেই কথাটি জানিয়ে দেওয়া
৩ দিন আগে