বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ: ফার্মেসিতে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার

মো. তৌফিকুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪, ০৮: ১৫
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ১৩: ৩৩

দ্রুত বর্ধনশীল বৈশ্বিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশে দেশে-বিদেশে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়াশোনার বিষয় হলো ‘ফার্মেসি’। বর্তমানে ফার্মেসি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা তরুণদের কাছে পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ফার্মেসি শিক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসের ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক মো. তৌফিকুল ইসলাম। 

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ফার্মেসি বেশ পছন্দের বিষয়। প্রথমত, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবায় পেশাদারদের চাহিদা থাকায় ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েটদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিকভাবে ভালো চাকরির সম্ভাবনা থাকে। দ্বিতীয়ত, অনেক সংস্কৃতিতে স্বাস্থ্যসেবা পেশাটি বেশ সম্মানজনক। তাই ডাক্তার ও ফার্মাসিস্ট হওয়াকে মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। তৃতীয়ত, স্বাস্থ্যসেবা খাতের প্রবৃদ্ধি হওয়ায় হাসপাতাল, ফার্মেসি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য ফার্মাসিস্টদের চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনা ও গবেষণার সুযোগ—সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে ফার্মেসি।

প্রয়োজনীয়তা
ফার্মাসিস্ট মানেই ওষুধ বিক্রেতা—এটি আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের ধারণা। তবে ওষুধ বিক্রেতা হলেন একজন ফার্মেসি টেকনিশিয়ান। মূলত তিন মাসের কোর্স করে ফার্মেসি টেকনিশিয়ান হিসেবে সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বিভিন্ন পেশায় কাজ করা মানুষ মাত্র ৩-৪ মাস ওষুধের দোকানে কাজ করে তথা ওষুধ বিক্রির কাজ শিখে হয়ে যাচ্ছে ফার্মেসি টেকনিশিয়ান। আবার কোনো কোনো দোকানে ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি চলে প্রাথমিক চিকিৎসার কাজ। বিক্রেতাদের মধ্যে অনেকে আবার রোগের কথা শুনে স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা ছাড়াই নির্দ্বিধায় ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেন রোগীদের, রোগীরাও সাদরে গ্রহণ করে চলেছেন সেই সেবা বা চিকিৎসা; আর এই চর্চার মধ্য দিয়ে ৩-৪ মাসের ওষুধ বিক্রির ব্যবহারিক ধারণা থেকেই সাধারণ মানুষের কাছে ফার্মাসিস্ট হিসেবে মর্যাদা লাভ করছেন, যা মূলত উভয় পক্ষের সচেতনতার অভাব বলা যেতে পারে। এ জন্য মনে রাখা উচিত যে ‘একজন ডাক্তার ভুল করলে রোগী মারা যাবে, কিন্তু একজন ফার্মাসিস্ট ভুল করলে জাতি বড় একটি সংখ্যা হারাবে।’ কারণ, ওষুধ প্রস্তুতকরণ থেকে শুরু করে গুণগতমান নির্ধারণ, ওষুধ নির্ধারণ, ডোজ নির্ধারণ, কিংবা ওষুধের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ—এ সবই একজন ফার্মাসিস্টের কাজ। তাই স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে দেশে হসপিটাল ফার্মেসিতে ‘এ’ গ্রেড ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করা একটি সময়ের দাবি।

দক্ষতা অর্জনের পরামর্শ
ফার্মেসি শিক্ষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও ফিজিওলজি, এনাটমি ও ফার্মাকোলজির মতো শক্তিশালী মৌলিক বিষয়গুলো বিকশিত ও বিষয়গুলোর মৌলিক নীতি বোঝার ওপর ফোকাস করতে হবে। এই বিষয়গুলো মূলত ফার্মেসি শিক্ষার ভিত্তি তৈরি করে। পাশাপাশি ফার্মেসিতে ভালো করার আপডেট থাকাও জরুরি। আপডেট থাকার জন্য নিয়মিত অ্যাকাডেমিক জার্নাল পড়া যেতে পারে। সেমিনার ও ওয়ার্কশপে যোগ দিয়েও ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণা ও স্বাস্থ্যসেবা অনুশীলনের অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত থাকা যায়। বিষয়কেন্দ্রিক ব্যবহারিক শিক্ষায় সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকাও সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি সমালোচনামূলক চিন্তার দক্ষতা গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। ফার্মেসি শিক্ষার জন্য বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা প্রয়োজন। গবেষণাপত্র, কেস স্টাডি ও ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার অনুশীলন করতে হবে শিক্ষার্থীদের। ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে সহকর্মী, অধ্যাপক এবং পেশাদারদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা খুব জরুরি। তাই গ্রুপ প্রকল্পে সহযোগিতা করুন, ছাত্রসংগঠনে যোগ দিন, কিংবা নেটওয়ার্ক প্রসারিত করতে শিল্প ইভেন্টেও অংশ নেওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে অধ্যাপক বা অনুশীলনকারী ফার্মাসিস্টের মধ্যে যাঁরা আপনার শিক্ষাগত যাত্রা, এমনকি পরবর্তী জীবনেও নির্দেশিকা, সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবেন—সেই রকম বুঝেশুনে পরামর্শদাতা শনাক্ত করতে হবে। সবশেষে নৈতিকতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকুন। গবেষণা, রোগীর যত্ন এবং সহকর্মী ও ক্লায়েন্টদের সঙ্গে নৈতিক মানগুলো মেনে চলা উচিত। এই পরামর্শগুলো মেনে চললে সফল ক্যারিয়ারের জন্য শিক্ষার্থীরা একটি শক্ত ভিত্তি স্থাপন করতে পারবেন বলে আশা করা যায়।

ক্যারিয়ারের সুযোগ
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক—উভয় পর্যায়েই ফার্মেসি বিষয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন চাকরির সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা দেশে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি (৩৫০+), হাসপাতাল, সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান (BCSIR) এবং একাডেমিয়ায় (বিভিন্ন পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়) কাজ করার সুযোগ অর্জন করেন। পাশাপাশি বিদেশে অবস্থিত নানা বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি, গবেষণা সংস্থা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় ও পরামর্শক সংস্থাগুলোতে কাজের সুযোগের কথা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, কমিউনিটি ফার্মেসি, হসপিটাল ফার্মেসির মতো ক্ষেত্রগুলো সেই সম্ভাবনার মধ্যে অন্যতম। স্নাতক শিক্ষার্থীরা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, ড্রাগ ডেভেলপমেন্ট, ফরমুলেশন, ম্যানুফ্যাকচারিং, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স, মার্কেটিং, সেলস এবং ফার্মাকোভিজিল্যান্সের মতো ক্ষেত্রগুলোতে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। পাশাপাশি ওষুধ সরবরাহ, রোগীকে পরামর্শ প্রদান, স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং পরিচালনা, টিকা পরিচালনা এবং ওষুধ থেরাপি ব্যবস্থাপনা পরিষেবা তথা কমিউনিটি ফার্মেসিতেও কাজের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ওপর ক্রমবর্ধমান ফোকাসসহ কমিউনিটি ফার্মেসির ভূমিকা প্রসারিত হচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় ওষুধ ব্যবস্থাপনা, জীবাণুমুক্ত রাখা, স্বাস্থ্যসেবা দলের সঙ্গে সহযোগিতা, ওষুধ বিতরণব্যবস্থা পরিচালনা, ওষুধের নিরাপদ ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত বা হসপিটাল ফার্মেসি উপখাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব। 

অনুলিখন: নাজমুল ইসলাম শাকিল

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত